সিনেমা সৃষ্টির শুরু থেকে গুনিজনেরা নানাভাবে সিনেমাকে মানুষের কাছাকাছি আনার জন্য এবং আরও জীবন্তভাবে উপস্থাপন করার জন্য নানা ধরনের টেকনিকের আশ্রয় নেন। সূত্রানুসারে, এই মুভিটিও শুরু হয় বহুল পরিচিত একটা বিশেষ টেকনিকের ব্যবহারের মাধ্যমে। পুরো সিনেমাটা উপলব্ধি করার জন্য মনটাকে একটু হালকা করার জন্যে লেখক প্রথমেই আমাদের বলে দুর্ভিক্ষ আক্রান্ত একটা গ্রামের কথা। যেখানে একটু খাবারের জন্য ছেলে,মেয়ে,বৃদ্ধ,শিশু সকলকেই সুযোগ খুজতে হচ্ছে। অর্থের প্রচলন সেখানে ব্যর্থ, প্রাচীনকালের মতো শুরু হয়েছে বিনিময় প্রথা।
এসব দেখতে দেখতে মনটা একটু হালকা হয়ে এল।
এরপর আমরা দেখতে পারি একজন মায়াবী তরুনী। মায়াবী তরুনী নির্বাচনের উদ্দেশ্য যাতে খুব সহযেই মেয়েটাকে আমরা আপন করে নেই। অল্পতেই কাছের মানুষ ভাবতে শুরু করি। সেটাও হলো। ২য় দফায় মন হালকা হলো।
এবার আমরা দেখতে পারি,অভাবে মায়াবীনির চালচলন। একদম খারাপ কিছু নয়। জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে খাবারের সন্ধান করা তার পরিবারের জন্য। এই অবস্থায় গল্পে ঢুকে পরে মায়াবীনির প্রেমিক। একটু আগ পর্যন্তও দ্বন্দ ছিল, গল্প অতী প্রাচীন কালের কিনা। নাহ,গল্প প্রাচীন কালের না,হয়তো বর্তমানের, নায়কের পোষাক দেখে তা বোঝা যাচ্ছে। সাথে সাথে আবার বোঝানো হলো, কাহিনি বর্তমানেরও না, গল্প অনে অনেক পরের। মানে অদুর ভবিষতের। বোঝা গেল,গল্পে একটা বিশাল আকাশযানের উপস্থিতিতে। হাই টেকনলজিতে বানানো এই আকাশযান আগামীর কথা বলে।
আকাশযান থেকে পরিচিত খুব মানুষ। কেন তারা পরিচিত ? কেননা, তাদের সবাই চেনে একটা রিয়েলিটি শো এর মাধ্যমে। এই রিয়েলিটি শো জগত বিখ্যাত। মানুষে মাননুষে হানাহানির এই রিয়েলিটি শো সকলে সাদরে গ্রহন করেছে।
এই অঞ্চলের মানুষও এ সম্নধে ধারনা রাখে। তাদের এই অঞ্চলে আসার প্রধান কারন, The Hunger Games এর ৭৪ তম সিজনের জন্য অডিশন গ্রহন। অধিক টাকা প্রাপ্তির লক্ষে অনেকেই এখানে অডিশন দিতে যায়। গল্পের ধারাবাহিকতায় নায়িকা ও তার পরিচিত এক ছেলে চ্যান্স পেয়ে যায়। তাদের গ্রুপের নাম হয় Distick 12.
এরপর তারা যায় স্টেজে,সেখানে ট্রেনিং চলে The Hunger Games এর জন্য।
The Hunger Games টা কি ?
এটা এমন এক খেলা যা জীবনের জন্য খেলতে হয়। এই খেলার খেলোয়াড়রা কেউ কারও উপর মায়া দেখাতে পারবেনা। এটা বর্বরদের খেলা। যাকে সামনে পাবে তাকে মেরে ফেলতে হবে। একজন একজন করে সবাই মারা যাবে। যে থাকবে শেষমেশ সেই হবে বিজয়ী। এবং এই খেলার লাইভ ব্রডকাষ্ট হবে টিভি চ্যানেলে।
রক্তপাতের এই খেলার ট্রেনিং শেষ হয়। নায়িকা খেলায় নামে। গল্প এগোতে থাকে চরম বর্বতায়। মুভিতে এই অংশে রঙ এবং ক্যামেরার কাজ এবং সাউন্ড ইফেক্ট দ্বারা ব্রেনে পেশার দেওয়া হয়। যাতে ওদের টেনশন এবং মৃত্যুভয় খানিকটা দর্শকের ভিতরেও কাজ করে।
লেখক শুধু গল্প ফেদে বসে থাকেননি অথবা একটানা রক্তপাতের কথা বলে যাননি। মাঝে মাঝে দুলকি চালে ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে জঙ্গলের কথা, বলা হয়েছে মায়ার কথা। নায়িকার সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় অন্য পুরুষকে টিভিতে সরাসরি দেখে প্রেমিকের চোখের জল ঢাকার দৃশ্যকে চড়াভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই মনকে যথেষ্ট পরিমান নরম করা। মন নরম হয়ে গেল সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় বর্বরতা। আর এভাবেই শেষ ১.৩০ ঘন্টা The Hunger Games টিম খেললো খেলোয়ারদের সাথে। আর পরিচালক এবং গল্পের লেখক খেললেন দর্শকের সাথে।
মায়াবী নায়িকার সাথে এখানে এসে অন্তরংতা বাড়ে পিটা নামের এক ছেলের সাথে যে তার গ্রুপের এবং মায়াবীনির সাথে তার পুর্ব পরিচয় ছিল। জিবনের শেষ মুহুর্তে আহত পিটার মায়াবীনির দেখা পায় এবং তার সাহায্য আবার সুস্থ হয়ে ওঠে। এখানে কতৃপক্ষ দ্বারা নিয়ম বদলানো হয়। এবারের খেয়াল জয়ী চাইলে দুজন হতে পারবে, কিন্তু দুজনকে অবশ্যি এক গ্রুপের হতে হবে। এটা ছিল একটা চা্লবাজি। লাইভ ব্রডকাষ্টে তরুন-তরুনীর রোমান্সকে উপস্থাপন করাই প্রাধান উদ্দেশ্য। এবং গেমসের শেষে এই নিয়ম বদলে ফেলা হয়। তখন একটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সেটা মুভিতেই দেখা ফেলা ভালো।
Hunger Games শুধু দুক্ষ কষ্ট অথবা বর্বরতার কথাই বলেনি, কোথাও কোথাও, হঠা্ত হঠাত ভালোবাসার কথা বলেছে। এই বিষয়টাই আমাকে সব থেকে বেশী টেনেছে।
একদম শেষে,যখন নায়িকা আর পিটা বিজয়ী হয়ে নিজেদের অঞ্চলে ফেরত আসে। তখন ট্রেনে,পিটা নায়িকাকে তাদের এই ক্ষনিকের সম্পর্কের কথা সম্নধে জানতে চায়।
Peeta Mellark: So what happens when we get back?
Katniss Everdeen: I don't know. I guess we try to forget.
মায়াবীনি গ্রামে এসে পৌছে তার দুচোখ খুজে বেড়ায় তার পরিবারকে। এবং অন্য একজনকে। তার প্রেমিককে। শত শত মানুষের ভিড়ে পরিবারকে খুজে পেয়ে যায়। অন্যজনকে খুজতে হয় না। প্রেমিক মায়াবীনির ছোট বোনকে ঘাড়ে করে পরিবারের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। স্পষ্টত, পরিচালক এবং লেখক সম্মোলিতভাবে প্রেমিককে মায়াবীনির পরিবার সাথে যুক্ত করে দিয়ে সমাপ্তি টানলেন।
কিছু কিছু চলচিত্র হয় যেগুলো মনের ভিতরে একটা শুন্যতার সৃষ্টি করে। এটা তেমন একটা ফিল্ম। আমার সেরা সিনেমাদের মধ্যে এটা অবশ্যি অন্যতম। এত অসাধারন সিনেমা এই দশকে কম হয়েছে।
অনেকে ফিল্মকে দুভাবে ভাগ করেন।
১। আর্ট ফিল্ম
২। কমার্শিয়াল ফিল্ম।
আমিও ফিল্মকে দুইভাগে ভাগ করি।
১। উপভোগ্য ফিল্ম
২। উপলব্ধি ফিল্ম
The Hunger Games একটা উপলব্ধি করার মতো ফিল্ম। সাংঘাতিক উপলব্ধি শক্তি ছাড়া এই ফিল্ম ভালোলাগার কথা না।
Hunger Game নিয়ে আরও কয়েকটি মুভিঃ
Battle Royale (2002)
The Tournament (2009)
The Condemned (2007)
Luck ( Hindi)
The Hunger Games Download link Torrent
The Hunger Games Download link Direct
http://q.gs/1cHOZ
http://q.gs/1cHOa
http://q.gs/1cHOb
http://q.gs/1cHOc
PassWord=moviedetector.com
মুভি বিষয়ভিত্তিক পোষ্ট সংকলন-আপডেটিত
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:৫৪