(গল্প্)
প্রথমে নাকে বার দুই উঁহু করে বিহি বলল - বাবা, পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি।
সকাল হলে সুইপার ঝাঁট দিয়ে আবর্জনা বয়ে নিয়ে হবে বলে কোণার দিকে আগুন লাগায়। অনেকবার ভবেন বলেছে। রামশরণ প্রতিবার বলে - এই ক'টা তো। এক্ষুণি নিভে যাবে।
- আরে বাবা এখন তো আবর্জনা মানেই পলিথিন। বিচ্ছিরি গন্ধ। ঘরের মধ্যে এই গন্ধ সারাদিন থাকে। এখানে একদম পোড়াবে না।
ঠিক আছে বলেও রামশরণ দু চার দিনের মধ্যে আবার পোড়ায়।
আজও তাই ভবেন বারান্দায় বেরিয়ে দেখে রামশরণ আসে নি। দেখে এসে বলে - কি জানি কোথায় কি পুড়ছে? কিছু দেখছি না তো। তুমি রেডি হও স্কুলগাড়ি এসে যাবে।
গতরাতের কথা মনে করে হতাশার গলায় বিহি বলে - ঠিক আছে।
ভবেন বুঝতে পারে বিহির আক্ষেপ। শুরু করেছিল ভবেন। অধিকার চলে যাচ্ছে। ভালো হোক খারাপ হোক ভবেন জানবে না তা কি করে হয়? অনেকদিন ধরে মনের মধ্যে বারুদ জমা করে রেখেছিল। মেয়েদের শ্বশুরবাড়িকে প্রায়োরিটি দিতে হবে। তাই বলে নিজের মাবাবাকে ভাইবোনকে লুকিয়ে যা দেয় সেটা ভবেনের মা বাবা ভাইবোনের দিকেও কেন থাকবে না? আবার বিহির সমস্ত খরচ বা ভবিষ্যৎ জমা সব দায়িত্ব
কিন্তু ভবেনের। কেন না সংসার পেতেছে ভবেন। মেয়েরা শুধু সংসারে আসে। দুজনে মিলে সমানভাবে ভাবা উচিত নয় কি?
এসব প্রশ্ন ও উত্তর বীথিকার সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে সোফা বিছানা টিভি বাসনপত্র জামা কাপড় গয়নাগাঁটি রান্নাঘর ছাড়িয়ে ফ্ল্যাটের মধ্যে তিনজনের গায়ে এসেও পড়েছিল।
তারও কিছু অবশিষ্টে আজ বীথিকা বিহিকে 'অফিস যাচ্ছি, কাজ আছে' বলে খুব সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে।
ফোন করেছিল বিহি। সুইচ অফ। ভবেন জানে এ আগুন হৃদয়ের। নেভার নয়। এখন কি তাহলে তারই গন্ধ পাচ্ছে। কিন্তু বিহির জন্য এই সংসারে যেন দুজনের একসঙ্গে জয় হোক কিংবা হোক পরাজয়। যেন আগুনে পোড়া ছাই না হয়।
রাত সাতটা নাগাদ অফিস থেকে ফেরার পথে ঘরের সামনে মিলনবাবুর সাথে ভবেনের দেখা। উনি উপরতলায় থাকেন। সাথে ছিল নিচের তলার সুমিতবাবু। বলল - আপনি মশাই পারেন বটে। আমরা সবাই ভয়ে ছিলাম।
কি ব্যাপার? বুঝতে না পেরে তিনতলায় চলে এল ভবেন।
ফ্ল্যাটের দরজা খুলল বীথিকা। বলল - গ্যাসে দুধ চাপিয়ে ভুললে চলবে? সবসময় গ্যাস শেষ হওয়া ভাগ্যের সাথে থাকবে না। হাত পা ধুয়ে নাও। চা মুড়ি দিচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১৬