একঃ বিনিয়োগ পরামর্শ
যদি আপনি ১ বছর আগে $১০০০ এর ডেল্টা এয়ার লাইনসের শেয়ার কিনে থাকেন, তবে আজ আপনার কাছে অবশিষ্ট থাকার কথা $৪৯।
ফেনি মের স্টক কিনলে, $১০০০ ডলারের $২.৫ মাত্র অবশিষ্ট থাকবে।
এআইজির ক্ষেত্রে অবশিষ্ট থাকবে $১৫।
কিন্তু আপনি যদি $১০০০ দিয়ে ১ বছর আগে বিয়ার কিনে রাখতেন, তবে সারা বছর বিয়ার খাওয়ার পরে- এলুমিনিয়াম রিসাইক্লিং এর মধ্য দিয়ে আপনি কম করে হলেও $৫০ পেতে পারতেন। এবং এই পরিমাণ টাই বর্তমানে সবচেয়ে ভালো।
সুতরাং, বর্তমানে সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগ পরামর্শ হতে পারে এটাই : "ভালো করে ড্রিংক করুন এবং রিসাইকেল করুন"।
দুইঃ বানরের গল্প
একদা জনৈক পরিপাটি ভদ্রলোক একটি শহরে আসেন, এবং সেখানকার অভিজাত হোটেলে উঠেন। পরদিনই তিনি স্থানীয় পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন দেনঃ "বানর ক্রয় করা হইবে। প্রতিটি $১০"। শহরের পাশে একখানা বন ছিল, ফলে এলাকাবাসী সেই বনে ছুটলো। কিছুদিন পরে যখন বনটিতে বানরের সংখ্যা কমে গেল, এলাকাবাসীর উৎসাহ কমে গেল। এবারে পত্রিকায় আরেকটি বিজ্ঞাপন দেখা গেলো: "বানর ক্রয় করা হইবে। প্রতিটি $২০"। ফলে, আবার এলাকাবাসী বনে ছুটলো। আরো কিছুদিন পরে যখন বন ঘাটলে কালে ভদ্রে বানর মিলতে লাগলো- তখন এলাকাবাসীর আগ্রহ ধৈর্য সবই প্রায় নাই হওয়ার উপক্রম হলো। কিন্তু এমন সময়ে বিজ্ঞাপন দেখা গেলো: "বানর ক্রয় করা হইবে। প্রতিটি $৫০"। কি আর করা, এলাকাবাসীকে আবার বনে ছুটতে হলো।
কিন্তু এবারে অদ্ভুত আরেকটি ঘটনা ঘটলো। সেই পরিপাটি ভদ্রলোক কিছুদিনের জন্য শহরের বাইরে চলে গেলো। ইত্যবসরে তার বানর সংরক্ষণকারী কর্মচারীটি এসে এলাকাবাসীকে সে সুযোগে জানালো যে, তার কাছ থেকে $৩০ এ বানর কিনতে পারে তারা, ফলে সেটি সেই ভদ্রলোককে বিক্রয় করলে প্রতিটিতে $২০ লাভ এই চিন্তায় সকলে সহায় সম্বল বিক্রয় করে কর্মচারীর কাছ থেকে বানর ক্রয় করা আরম্ভ করে।
সেদিনের পর থেকে সেই ভদ্রলোক এবং তার কর্মচারীকে আর কেউ কোনদিন দেখেনি।
উপরের গল্প (কৌতুক) দুটিই ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত, বর্তমান দুনিয়াজুড়ে ফিনান্সিয়াল সংকটের প্রেক্ষাপটে এ ধরণের গল্প/কৌতুক ইউরোপ-আমেরিকায় মুখে মুখে প্রচারিত। সেগুলোর মধ্য থেকে এদুটো বাছাই করার উদ্দেশ্য, শেয়ার বাজার বা স্টক মার্কেটকে কিছুটা বুঝা।
প্রথম গল্পটি থেকে আমরা দেখি- যারা ১ বছর আগে ডেল্টা এয়ার লাইনসের স্টক কিনেছে, তাদের $৯৫১ খোয়া গিয়েছে, যারা এআইজির শেয়ার কিনেছে তাদের $৯৮৫ এবং যারা ফেনি মে'র কিনেছে তাদের $৯৯৭.৫ ই খোয়া গিয়েছে। যারা এই বিনিয়োগ করেছিল- অবশ্যই আরো বেশী লাভের আশায় করেছিল, কিন্তু তারা আজ সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত। এখন প্রশ্ন হলো: এই যে খোয়া যাওয়া অর্থ- এটা কোথায় গেল?
উপরের প্রশ্নটির জবাব দ্বিতীয় গল্পটিতে পাওয়া যেতে পারে।
আসলে দ্বিতীয় গল্পটি স্টক মার্কেটকে বুঝতে খুব সাহায্যকারী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে হয়। স্টক মার্কেটে এই ঘটনাটিই ঘটে থাকে। অর্থাৎ সেই ভদ্রলোক $১০ এ বানর কিনে $৩০ এ বিক্রয় করে দিয়ে চলে আসে, মানে বানর প্রতি লাভ $২০। কিন্তু যারা $৩০ দিয়ে বানর কিনলো, তাদের বানরের মূল্য কি থাকলো? সেই বানরের যদি কোন ক্রেতা না থাকে, তখন সেটার কি কোন দাম পাওয়া যাবে? না যাবে না। স্টক মার্কেটে অনুরূপটাই ঘটে। শুধু বানরের জায়গায় কিছু কাগজের কথা কল্পনা করতে হবে, যে কাগজগুলোকে বলা হয় শেয়ার সার্টিফিকেট। এগুলো আসলে হলো সেকেণ্ডারি শেয়ার। এগুলোর দাম দিনে দিনে উঠা-নামা করে, এসবের উঠানামা দিয়েই স্টক মার্কেটের সূচক উঠানামা করে।
মজার ব্যাপার হলো- সূচকের উঠানামা মানে কিন্তু উৎপাদনের কম বেশি না, বস্তুত উৎপাদনের সাথে এর কোন সম্পর্কই নেই, একই কাগজ বিভিন্ন হাতবদলের সাথে সাথে তার দামের কম-বেশি হওয়া, কোন কোম্পানির গুড উইল- ব্যাড উইল, স্টক মার্কেটে নানা রকম প্রেডিকশন-এজাম্পশন, সেই সঙ্গে নানা গুজব এমন সবকিছুর সাথে সম্পর্কিত সেই কাগজের দাম বাড়া বা কমার বিষয়টি।
যাহোক, ২য় গল্পের সাথে সংগতিপূর্ণ স্টক মার্কেটের আরেকটি সত্য গল্প শুনাই:
'ক' কোম্পানীর শেয়ার $১০ দামে কিছু লোক কেনা আরম্ভ করলো। কোম্পানীটির শেয়ার অল্প সময়ে প্রচুর যখন কেনা হচ্ছে, তখন সেটির সূচক দেখাবে ঊর্ধমুখী। ফলে সেটি অনেকের দৃষ্টিগোচরে আসবে, অনেকেই আকৃষ্ট হবে। এরপরের দিনে সেই কিছু লোক $২০ দামে 'ক' কোম্পানীর শেয়ার কেনা আরম্ভ করলো। ফলে, কোম্পানীটির সূচক বাড়ছে তরতর করে। এর মধ্যে ঐ কোম্পানীর অধিকাংশ শেয়ার তাদের হাতে। এর পরদিনে যখন আরো অনেকেই এর প্রতি আকৃষ্ট, দাম বাড়ার এই হার দেখে 'ক' কোম্পানীর শেয়ার কিন্তে আসছে- তখন সেই কোম্পানীর শেয়ার কেনার জন্য বিশাল চাহিদার কারণে শেয়ারের দামও উর্ধমুখী। এমন মুহুর্তে সেই কিছু লোক তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রয় করা আরম্ভ করলো। সেদিনে সেই কোম্পানীর শেয়ারের দাম ইতোমধ্যে $৩০ এ উঠেছে। ফলে, সমস্ত শেয়ার বিক্রয় করে সেই কিছু লোক লাভ বাগিয়ে লাপাত্তা। এরপরের ঘটনাটি আরো মজার, যদিও একইসাথে অনেকটা বেদনারও। এরপরে দেখা যাবে, কোম্পানীটির শেয়ার যখন বাজারে খুব এভেইলেবল (সেই কিছু লোক তাদের হাতে রাখা সমস্ত শেয়ার এর মধ্যে ছেড়ে দিয়েছে), অনেকেই এটা বিক্রয় করতে চাচ্ছে, কিন্তু পর্যাপ্ত ক্রেতা নেই। ফলাফল- এক ধাক্কায় $৩০ এ কেনা কাগজগুলোর দাম কমে প্রায় শূণ্যের কোঠায় চলে আসা।
ঠিক এমন ঘটনাই ঘটেছিল বাংলাদেশে। কত মানুষ যে পথে নেমেছে, চড়াদামে কেনা কাগজ গুলো চোখের সামনে দামহীন কাগজে পরিণত হয়ে গেল এমনটা প্রত্যক্ষ করা মানুষের সংখ্যাও তখন কম নেই। (এখন অবশ্য বাংলাদেশ সরকার কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে দিয়েছে)। সবক্ষেত্রেই স্টক মার্কেটে হুবহু এমনটি না ঘটলেও সেখানে ফটকাবাজিটাই প্রধান। সরাসরি উৎপাদনের সাথে সম্পর্কিত না হয়েও আজকের পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়ায় স্টক মার্কেট খুব গুরুত্বপূর্ণ, এখানে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হচ্ছে, এবং এর পতনের সাথে সাথে পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা টালমাটাল হয়ে পড়ছে। কিউবার সাবেক রাষ্ট্রপতি বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ট্রো যেমন জানাচ্ছেন, "Cuba has no stock exchange" এবং উন্নয়নের জন্য স্টক মার্কেটের কোন প্রয়োজনীয়তাই নেই; কিন্তু পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নিশ্চয়ই স্টক মার্কেট বাদ দিয়ে কেউ কল্পনাই করতে পারবে না।
স্টক মার্কেট কিভাবে কাজ করে, কোথায় কিকরে এটা পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হলো, এটি কিভাবে বিভিন্ন ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটকে পর্যন্ত প্রভাবিত করতে পারে -এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজাটা আজ তাই খুব জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধীরে ধীরে সে চেস্টাই করবো_____
চলবে___
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:০৫