বাংলাদেশের সাথে মায়ানমারের আইনি লড়াই চলছে সমুদ্র-আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে। মামলার শুনানি চলছে, এই বছরের মধ্যেই (হয়ত সামনের মাসেই) রায় জানা যাবে। প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশ ও মায়ানমার দু’বার করে তাদের তরফে কাগজপত্র জমা দিয়েছে, এর পরে মৌখিক শুনানি শুরু হয়েছে। মৌখিক শুনানির প্রথম পর্যায়ে এখন বাংলাদেশের পক্ষের আইনজীবীরা সওয়াল করছেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখা থেকে অনেকেই জানেন হয়ত যে বাংলাদেশের সাথে মায়ানমারের সমুদ্রসীমা বিরোধের গুরুত্ব অনেকটা - বিশেষত বাংলাদেশ-মায়ানমার বিরোধপূর্ণ অঞ্চলটিতে গ্যাস পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্টই।
প্রাথমিক পর্যায়ের চারটি ডকুমেন্ট পড়েছি ও তার ভিত্তিতে কিছু কিছু বিষয় সবার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করি। প্রথমত বাংলাদেশের মিডিয়াতে যতটা অঞ্চল বিরোধপূর্ণ বলে জানানো হচ্ছে, বাংলাদেশ কোর্টে কার্যত ততটা অঞ্চলের দাবী জানায়নি। উল্লেখ্য যে মায়ানমারও তাদের পুরোনো দাবী থেকে সরে কিছুটা কম অঞ্চল দাবী জানিয়েছে - দুয়ের ফলে বিরোধপূর্ণ অঞ্চল আয়তনে অনেক কমে গেছে। মায়ানমারের পুরোনো দাবী ছিল লম্বরেখার সাথে ২৪৩ ডিগ্রি রেখা বরাবর(ছবিতে হাল্কা নীল রেখা), যা এখন হয়েছে লম্বরেখার সাথে ২৩০ ডিগ্রি(মোটা নীল রেখা) রেখা বরাবর। একইভাবে বাংলাদেশের পুরোনো দাবী ছিল মোটা লাল রেখা বরাবর - অর্থাৎ ১৮০ ডিগ্রিতে, যা এখন হয়েছে ২১৫ ডিগ্রিতে - হাল্কা লাল রঙের রেখায়। এই অবস্থান পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ ও মায়ানমার - উভয়েরই মামলা জেতার সম্ভাবনা কিছুটা বেড়েছে। একই সাথে বাংলাদেশ জানিয়েছে তাদের আগের দাবীর যে ভিত্তি - সেই ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশের সমুদ্র-আইনের বেশ কিছু অংশ ১৯৮২ সালের আন্তর্জাতিক আইনের সাথে মেলে না। তাই তারা তাদের দাবী কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। দুঃখের বিষয়, এই পরিবর্তনের কথা সরকার পার্লামেন্ট বা জনগণকে জানায়নি - ফলে এখনও পত্রপত্রিকায় সমুদ্রসীমা বিষয়ক যে লেখা আসে তাতে বাংলাদেশের দাবী বলতে পুরোনো সীমাই দেখানো হয় ও পুরোনো যুক্তিই লেখা হয়ে আসছে।
কিছুদিন আগে পত্রপত্রিকায় একটি লেখা এসেছিল যে সুগত হাজরা নামে একজন গবেষক দাবী করেছেন যে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ তলিয়ে গেছে। বাংলাদেশের প্রদত্ত ডকুমেন্টেও সেরকমই লেখা আছে।
“when a patch of sedimentary mud near the Bangladesh-India boundary known as South Talpatty emerged above the waterline in 1971 following a massive cyclone. No sooner had the feature emerged, however, than waves and storms began to wash it back into the sea. By 1990, satellite imagery showed that it had disappeared completely.”
ডকুমেন্টের সাথে লাগানো ছবিতে দেওয়া আছে ১৯৭৩ ও ১৯৯০ সালের ওই দ্বীপের ছবি। এর মানে বোঝা যাচ্ছে, দ্বীপটি যে তলিয়ে গেছে, তা বিভিন্ন সরকারের পক্ষে জানানো সম্ভব ছিল ১৯৯০ থেকেই - কিন্তু তা জনগণকে জানানো হয়নি।
সচলায়তনে আরো বিস্তারে লেখা আছে। কোর্টের পৃষ্ঠায় দেখুন মামলার হালহকিকত।
১. ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ৯:০৫ ০