somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভৌতিক গল্পঃ সেই রাতে (শেষ পর্ব)

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এতক্ষণ পর একটা বিষয় খেয়াল করলাম। গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো আমার। সোহেল এই বৃষ্টির মাঝে এসেছে, অথচ ওর শরীর শুকনা থাকলো কিভাবে? ছাতা নিয়ে আসলে তো দেখতে পেতাম। একবারও গা মোছার জন্য তোয়ালে চায়নি ও। দেখি ও বাথরুম থেকে আসুক। জিজ্ঞেস করতে হবে।

মোবাইল ফোনটা অন করলাম। অন করার প্রায় দুই মিনিট পর একটা ফোন আসলো অচেনা নম্বর থেকে। এতো রাতে কে ফোন দিতে পারে? আজ কি সব আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটছে নাকি? অবশ্য প্রায় সময় আজকাল অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে। মাঝে মাঝে জ্বীনের বাদশা নামে কারো কাছ থেকে ফোন আসে। আর মাঝে মাঝে ফোন কোম্পানী থেকে অনেক রাতে ফোন এসে বলে, ওয়েলকাম টিউন সেট করতে চাইলে হ্যান চাপুন ত্যান চাপুন।

নিতান্ত অনিচ্ছায় ফোনটা ধরলাম। ওপাশ থেকে একজন বলল, আপনি কি হিমেল নামে কেউ?
-- হ্যা। আমি হিমেল। আপনি কে বলছেন?
-- আমাকে আপনি চিনবেন না। আজ রাত নয়টার দিকে নিউমার্কেটের পাশে একটা একসিডেন্ট ঘটেছে। আহত ব্যক্তির ডায়ালে আপনার নম্বরটা ছিলো। তারপর থেকে আপনার নম্বরে ফোন দিচ্ছি। ফোনটা বন্ধ ছিলো। দ্রুত আপনি নার্গিস হাসপাতালে চলে আসুন।

আমি হতবাক হয়ে গেলাম। এখানে আমার পরিচিত কে থাকতে পারে একসিডেন্ট ঘটার মতো। ডায়ালে আমার নাম্বার থাকবে এমন কে আছে। দেখি সোহেলকে বলে কি করা যায়। বাথরুমের দিকে যেতে গিয়ে অবাক হলাম। বাথরুম ফাঁকা। দরজা খোলা। ভেতরে কেউ নেই। উঁচুগলায় সোহেলকে বেশ কয়েকবার ডাকলাম। কোন সাড়া পাওয়া গেলোনা। সমস্ত ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম। কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলোনা। একটা অজানা আশংকায় আমার বুকের ভেতর ধক ধক করতে লাগলো। কোন এক অজানা টানে উদভ্রান্তের মতো ঘর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে গেলাম। নার্গিস হাসপাতাল এখান থেকে অনেকদুর। ফজরের আজান পড়ে গেছে। আকাশ অল্প অল্প ফর্সা হচ্ছে। বড় রাস্তার মোড় পর্যন্ত ছুটে যেতে হবে। তারপর রিকশা টিকশা পাওয়া যায় কিনা দেখতে হবে।

হাসপাতালে পৌছলাম। রাতের নাম্বারে ফোন দিয়ে দেখি লোকটা আমার পাশেই দাড়িয়ে আছে। বললো, রোগি আপনার কে হন। আমি বললাম, রোগিটা কে আগে দেখতে হবে। কোনো জায়গায় নাম ঠিকানা লেখা পাননি? মানিব্যাগে কোন ঠিকানা লেখা নেই?
-- অত খোঁজ করার সময় পাইনি। ডায়ালে শুধু আপনার নাম্বারটাই ছিলো।
-- ওহ আচ্ছা। এখন কোথায় আছে?
-- আই সি ইউতে। চলেন দেখে আসি।

আই সি ইউ এর ভিতরে ঢুকে রীতিমতো অবাক হলাম। যে শুয়ে আছে সে আর কেউ নয়, সোহেল। তাহলে রাতের ঘটনা সত্যি নাকি আমার হ্যালুসিনেশন বুঝতে পারলাম না। এমন কি হতে পারে? অলৌকিক কোন কিছুতে আমার বিশ্বাস নেই। যা কিছু ঘটে তার কোন না কোন ব্যাখ্যা থাকে। এই ঘটনাটার কি ব্যাখ্যা হতে পারে?

যাই হোক, ওসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে। আগে সোহেলের পরিবারকে জানানো উচিৎ ঘটনাটা। তবে সোহেলদের পরিবারে কারো ফোন নেই। জানাতে হলে আমার বাবাকে ফোন করতে হবে। তারপর বাবা গিয়ে সোহেলের বাবাকে বলবে। আপাতত অবস্থা গুরুতর মনে হচ্ছে। বাড়িতে জানানো ঠিক হবে কিনা বুঝছিনা। অনেক টেনশনে পড়ে যাবে সোহেলের বাবা মা। আবার না জানালেও নয়। টাকাপয়সার একটা ব্যাপার আছে। আবার বাড়িতে ফোন করে বোকা বনে যাই কিনা সন্দেহ হচ্ছে। দেখা গেলো একসিডেন্ট মেন্ট কিছু হয়নি। যেসব ঘটনা ঘটছে সবই আমার হ্যালুসিনেসন। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমার চোখের সামনেই ঘটছে সবকিছু। অথচ একই ব্যক্তির দুইটা ঘটনার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত। দুইটা ঘটনাই কাল রাতের। অথচ কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা কিছুই বুঝছিনা। নিজের প্রতি আমার অনেক রাগ হচ্ছে।

আই সি ইউ রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। সেই লোকটাকে ধন্যবাদ দিয়ে বললাম, আপনি অনেক উপকার করেছেন। রোগির দায়িত্ব আমার উপর ছেড়ে দেন। আপনার অনেক কষ্ট হয়েছে। আমি ওর পরিবারকে খবর দিচ্ছি। টাকা পয়সার ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

রাস্তায় বেরিয়ে এলাম। নিজেকে অনেক ক্লান্ত মনে হচ্ছে। কোন কিছুই মেলাতে পারছিনা। মাতালের মতো হাটছি। রিকশা নিয়ে বাসায় যাবো। একটা রিকশা ঠিক করলাম। ফোন বেজে উঠলো। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন বের করলাম পকেট থেকে। অনেক অঘটন ঘটে গেছে। আবার কোন অঘটন ঘটলো কিনা কে জানে। দেখি বাবা ফোন করেছে। ভালোই হলো। সোহেলের বিষয়টা বলা যাবে। ডাক্তারকে বলে এসেছি যত্ন রাখতে। সন্ধ্যার ভিতর টাকাপয়সার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। অবস্থা খুব বেশি গুরুতর নয়। বাসের ধাক্কাটা হাতে লেগেছে। হাতটা গুরুর জখম হয়েছে। আর ছিটকে পড়েছিলো রাস্তায় সেকারণে কোমরে ব্যাথা পেয়েছে।

ফোন ধরলাম। বাবা বলল, সোহেল তো বাড়ি এসেছে কাল রাতে। তুই কবে আসবি?
আমি হতবাক হয়ে গেলাম। কি বলবো কিচ্ছু ভেবে পেলাম না। বাবা বললো, কিরে কথা বলছিস না কেনো?
আমি কোনমতে বললাম, আসবো। আজ কালের মধ্যে চলে আসবো।

বাইরে রোদ উঠে গেছে। ফোন বের করে গতকাল রাতে যে অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এসেছিলো ওই নাম্বারটা খুঁজলাম। কোথাও খুঁজে পেলামনা। নিজেই আশ্চর্য হয়ে গেলাম। আমার সাথে এসব কি ঘটছে?

ক্লান্ত হয়ে বাসায় আসলাম। মনে মনে ভাবলাম গোসল করে একটা ঘুম দেবো। গত রাতে অনেক রাত জাগার কারণে মস্তিষ্ক এলোমেলো হয়ে হয়ে গেছে। একটা ঝাড়া ঘুম দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

ঘরে ঢুকে আমার বিস্ময়ের সীমা রইলোনা। লাইট তখনও জ্বলছে। অ্যাস্ট্রেতে আধখাওয়া সিগারেট।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:১৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দীপনের দীপ নেভে না

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯


ছবিঃ সংগৃহীত
আজকে সামুর অন্ধকার ব্লগার নামে খ্যাত ফয়সাল আরেফিন দীপনের মৃত্যু দিবস। ২০১৫ সালে আজকের এই দিনে জঙ্গি হামলায় দীপন মারা যান নিজ প্রকাশনীর কার্যালয়ে । যে ছেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বজলুল হুদাকে জবাই করে হাসিনা : কর্নেল (অব.) এম এ হক

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৫৯

মেজর বজলুল হুদাকে শেখ হাসিনা জবাই করেছিলেন।

(ছবি ডিলিট করা হলো)

শেখ মুজিবকে হত্যার অপরাধে ২৮শে জানুয়ারী ২০১০ এ মেজর (অব.) বজলুল হুদা সহ মোট ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×