ছবিঃ সংগৃহীত
আজকে সামুর অন্ধকার ব্লগার নামে খ্যাত ফয়সাল আরেফিন দীপনের মৃত্যু দিবস। ২০১৫ সালে আজকের এই দিনে জঙ্গি হামলায় দীপন মারা যান নিজ প্রকাশনীর কার্যালয়ে । যে ছেলে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বাবার সাথে সময় কাটিয়েছিলেন সেই তিনি কয়েক ঘণ্টা পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
একই দিন শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজনকে হত্যার চেষ্টা করে জঙ্গিরা লালমাটিয়ায়।
দীপনের মৃতদেহ যেভাবে পাওয়া যায়
নিহত ফয়সালের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক আবুল কাশেম ফজলুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আজ দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ফয়সাল তাঁর সঙ্গেই বাসায় ছিলেন। পরে তিনি শাহবাগে তাঁর প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানে যান। খোঁজ নেওয়ার জন্য তিনি কয়েকবার ছেলেকে ফোন করেন। কিন্তু ছেলে ফোন ধরেননি। বিকেল চারটার দিকে তিনি আজিজ সুপার মার্কেটের তিন তলায় ১৩১ নম্বর রুমের সামনে যান। এটি তাঁর ছেলের কার্যালয়।
এই সময় তিনি কার্যালয়ের দরজা খুলতে গিয়ে বন্ধ পান। এ সময় কাচের দরজা দিয়ে ভেতরে আলো জ্বলতে দেখেন। ছেলে বাইরে গেছে ভেবে তখন তিনি সেখান থেকে চলে যান। পরে ছেলের বউকে ফোন করলে জানতে পারেন, দুর্বৃত্তরা লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে জখম করেছে। এই কথা শুনে তিনি লোকজন নিয়ে আবার ছেলের কার্যালয়ে গিয়ে দরজা ভেঙে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁর ছেলে পড়ে আছে। (প্রথম আলো)
ওই অবস্থায় ফয়সাল আরেফিনকে উদ্ধার করে তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
২০১৫ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি বইমেলায় নিহত অভিজিৎ রায়ের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ ও ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ বই দুইটির প্রকাশক তিনি। দীপন ও অভিজিৎ রায়ের বন্ধুত্ব শুরু উদয়ন স্কুল থেকে। তাঁরা সহপাঠী ছিলেন।
সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ,২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি দীপন হত্যা মামলায় ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এরা হল— মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া, কিলিং স্কোয়াডের প্রধান মঈনুল হাসান শামীম, প্রশিক্ষক আবদুর সবুর এবং টপ অপারেটিভ খাইরুল ইসলাম, শেখ আবদুল্লাহ, আবু সিদ্দিক সোহেল, মোজাম্মেল হুসাইন এবং আকরাম হোসেন।
রায়ের পর ডেইলি স্টারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তাঁর পিতা বলেছিলেন,
‘এটা প্রত্যাশিত রায়। আদালত থেকে জানানো হয়েছে, আট জনের ফাঁসির আদেশ হয়েছে। যারা আসামি তাদের সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। সরকারি ধারায় বিচার হয়েছে। গোয়েন্দা শাখা থেকে যে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, সেখানে যেমন বিবরণ এসেছে, সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিয়েছেন, আসামিদের আইনজীবীরা ছিলেন, সে সবের ভিত্তিতে বিচারক বোঝার চেষ্টা করেছেন এবং রায় দেওয়া দিয়েছেন। আমার ধারণা সেসব সঠিকভাবে হয়েছে।
আর ২০২২ সালের ২০ শে নভেম্বর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২ আনসার আল ইসলাম সদস্য মাইনুল হাসান শামীম এবং আবু সিদ্দিক আদালত থেকে পালিয়ে যায় ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপকমিশনার ফারুক হোসন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমি যতটুকু শুনেছি, ২ আসামি আদালতে হাজিরা দেয়। আদালত থেকে বের হওয়ায় সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের চোখে জঙ্গিরা এক ধরনের স্প্রে করে। পুলিশ সদস্যরা চোখ কচলে যখন তাকায় তখন দেখতে পায় আসামিরা মোটরসাইকেলে পালিয়ে যাচ্ছে।
টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে আরেফিন দীপনের স্ত্রী ডা. রাজিয়া রহমান জলি বলেন, 'আমি শকড। কোনোভাবেই হিসাব মেলাতে পারছি না যে এ ধরনের ঘটনা কীভাবে সম্ভব। এটা খুবই ভয়ের ব্যাপার।'
তিনি আরও বলেন, 'এটা শুধু আমার জন্য ভয়ের জায়গা না, এটা পুরো দেশের জন্যেই একটা ভীতিকর ঘটনা। এই জঙ্গিরা যে শুধু আমাকেই মারতে পারে তা নয়। আপনাকেও মারতে পারে, যে কাউকে মারতে পারে।'
দীপনের বাবা লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা বিস্ময়কর। বিষয়টি আতঙ্কের। তাদের গ্রেপ্তারে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে বলে খবর দেখলাম। দেখা যাক কী হয়।'
১৯৯২ সালে মাত্র ৫টি বই দিয়ে জাগৃতি প্রকাশনী’র দীপ জ্বালিয়ে ছিলেন। নীলিমা ইব্রাহিমের লেখা বিখ্যাত বই 'আমি বীরাঙ্গনা বলছি' সেই বছরই অমর একুশে বই মেলায় প্রকাশ করেছিলেন।
যেভাবে শুরু করেছিলেন প্রকাশক হিসেবে যাত্রা
ছোট বেলা থেকেই বইয়ের প্রতি অন্যরকম একটা টান ছিল। বই হাতে পেলে সব কিছু ভুলে যেতাম। কখন সেটা শেষ করবো সেই ব্যস্ততা কাজ করত মনে। বইয়ের প্রতি এই নিবিড় ভালোবাসাই আমাকে এ পেশায় এনেছে।
আমার বাবার ছাত্র ফিরোজ সারোয়ারের একটা স্টল ছিল একুশে বই মেলায়। যার নাম ছিল 'চারদিক'। আমি এই স্টলে নিয়মিত বসতাম। বই বিক্রি করতাম। নতুন কোন বই এলে সেটা পড়তাম, ক্রেতাদেরকে বইটি পড়তে বলতাম। এভাবে ৫/৬ বছর বসেছি। তারপর এক সময় ফিরোজ সারোয়ার তার স্টলটি বিক্রি করে দিলেন। আমি বসার জায়গাটা হারালাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম নিজেই একটা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান দেওয়া যায় কিনা। ব্যস, শেষ পর্যন্ত দিয়েই ফেললাম। আর সেটা ১৯৯২ সালে। (ক)
যারা প্রকাশনা ব্যবসায়ে আসতে চান, তাদের জন্য কিছু পরামর্শও দিয়েছিলেন,
নতুন যারা এই পেশায় আসতে চায়, তাদের লেখালেখি ও প্রকাশনা সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকতে হবে। প্রকাশনার টেকনিক্যাল বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রশিক্ষণ থাকলে ভাল হয়। সাহিত্যের ব্যাকগ্রাউন্ড হলে সেটা হবে প্লাস পয়েন্ট। তবে কে কোন সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশোনা করলো, সেটা খুব জরুরি নয়। আসল যে জিনিসটা দরকার, তা হল যোগ্যতা।
এক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। তাকে অবশ্যই পড়ুয়া হতে হবে। দেশ বিদেশের বিখ্যাত লেখকদের লেখা বই পড়তে হবে। বাংলা ভাষা সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকতে হবে। যদি কেউ এই পেশাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চায়, তাহলে তার প্রিন্টিংয়ের টেকনিক্যাল দিক, কম্পিউটারের কিছু দরকারি প্রোগ্রাম জানা থাকতে হবে। আমাদের দেশে এই শিল্পে ভাল এডিটর ও প্রুফ রিডারের অভাব আছে। প্রুফ রিডার তৈরির ও কোন ব্যবস্থা নেই। বই বেরুচ্ছে প্রতি বছর। হাজার হাজার বই বেরুচ্ছে কিন্তু সেটা কতটা নির্ভূল হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। একজন প্রকাশককে অবশ্যই সেসব ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। এসব সমস্যা সমাধানের মতো যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে তাকে।
কড়ায় গন্ডায় যদি লাভ লোকসানের হিসেব করা হয়, তাহলে এই পেশায় আসা যাবে না। কারণ বইয়ের প্রতি অপরিসীম ভালবাসা থেকেই এ পেশায় আসতে হয়। এখানে লাভ লোকসানের চুলচেরা হিসেব করলে চলে না। (ক)
একসময় এই ব্লগে নিয়মিত ছিলেন। কিন্তু কোন এক অজানা অভিমানে বেশিরভাগ পোস্ট মুছে দিয়ে নীরব হয়ে যান ।
একজন ব্লগারের বই প্রকাশের তিক্ত অভিজ্ঞতারনবীন লেখকদের প্রতি সাবধান বার্তা ও আমার প্রতিবাদ এই পোস্টে তাঁর সর্বশেষ মন্তব্য ছিল ২০ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:০৮
[ ব্লগে আজকাল একেবারেই ঢোকা হয় না। একসময় নিয়মিত ছিলাম, লিখতাম। সেও প্রায় দশ বছর হতে চললো। সব লেখা মুছে ফেলেছিলাম একদিন। তারপর খুব কম আসা হতো। আজ একজনের লেখা পড়তে ঢুকেছিলাম। কিভাবে যেন আপনার পোস্টে চোখ পড়লো! পুরো লেখা এবং সবগুলো মন্তব্য পড়লাম। প্রথমেই দুঃখপ্রকাশ করছি আপনার বিব্রতকর অভিজ্ঞতার জন্য। একটা পরামর্শ দেব, কাজ করার আগে একটু যাচাই করে নেবেন। একজন প্রকাশক কত বছর ধরে বইমেলায় অংশ নিচ্ছে, বইমেলায় কয় ইউনিটের স্টল পায়, বিগত পাচ বছরের গ্রন্থতালিকা, নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র আছে কিনা... ইত্যাদি। নতুনদের বই প্রকাশ করা নিয়ে নানা যন্ত্রণা পোহাতে হয়। এ সব বিষয় যারা লেখালেখির সাথে যুক্ত তারা জানেন। একটু জানার চেষ্টা করলে অবশ্যই জানা সম্ভব। যিনি পেশাদার প্রকাশক তিনি কখনোই এধরনের কাজ করবেন না। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো। নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতির স্বীকার হতে হবে না।
তথ্যসুত্রঃ ক (প্রকাশকের সাক্ষাৎকার
https://www.facebook.com/legacy/notes/278426308904149/
ফয়সাল আরেফিন দীপন (প্রকাশক, জাগৃতি প্রকাশনী)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৫৩