somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভৌতিক গল্পঃ সেই রাতে (৩য় পর্ব)

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

' আমি নিউমার্কেট থেকে ফিরেছি দশটা সাড়ে দশটার দিকে। হোটেল থেকে খেয়ে এসেছিলাম। বাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যাগ গোছাতে গোছাতে প্রায় সাড়ে এগারোটা বেজে গেলো। ভাবলাম, হাতমুখ ধুয়ে এসে একটু পড়ি। নন মেজর সাবজেক্ট রসায়ন। আমার কাছে হাজারী নাগের বইটা ছিলোনা। তোর কাছে আছে কিনা ফোন দিলাম। তোর ফোন বন্ধ পেলাম। ভাবলাম সকালে বাড়ি যাওয়ার সময় তোর কাছ থেকে নিয়ে যাবো যদি থাকে। বাড়ি গিয়ে টুকটাক পড়ালেখা করবো। পরীক্ষার তো বেশি দেরী নেই।'

আমি বললাম, মূল ঘটনা বল।
-- আচ্ছা বলছি। তোর কাছে ম্যাচ আছে দোস্ত। সিগারেট ধরালে তোর কি অসুবিধা হবে?
-- হ্যা ম্যাচ আছে। ঝড় বৃষ্টির দিন। ইলেক্ট্রিসিটি থাকে কি না থাকে এইজন্য মোমবাতি আর ম্যাচ এনে রেখেছি। তোর ভাগ্য ভালো।
-- সিগারেট ধরালে কি তোর অসুবিধা হবে?
-- না। আমার রুমমেট সিগারেট খায়। যদিও আমি খাইনা, তবে গন্ধটা আমার সহ্য হয়ে গেছে। তুই সিগারেট ধরা। আর গল্প শুরু কর। রাত ফর্সা হতে আর বেশি বাকি নেই।

' যখন লাইট নিভিয়ে শুতে যাবো, মশারি ফেলেছি, তখন শুনি সিঁড়িতে পায়ের শব্দ। থপ থপ করে পা ফেলে কে যেনো উপরে উঠছে। আস্তে আস্তে শব্দটা স্পষ্ট হতে লাগলো। আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। মেসে একা আমি ছাড়া আর কেউ নেই। এতো রাতে কে আসবে। আমি নিঃশব্দে বসে থাকলাম। আস্তে আস্তে পায়ের আওয়াজ স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হতে লাগলো। শব্দটা আমার দরজার সামনে এসে থেমে গেলো। আমি ভুত প্রেতে বিশ্বাস করিনা। কিন্তু মেসের বাড়িওয়ালার ছেলে সৌরভের কাছে একটা ঘটনা শুনেছিলাম এই বাড়ি নিয়ে। শুনে গায়ে কাটা দিয়েছিলো আমার। সেই ঘটনাটার সাথে আজকের ঘটনাটার মিল পাচ্ছি। এইজন্য ভয়টা বেশি করতে লাগলো।

এই বাড়ি নিয়ে ভয়ঙ্কর ঘটনাটা কিছুদিন আগে শুনেছি। ঘটনাটা হলো এই বাড়ির কনস্ট্রাকশনের সময় একজন মহিলা শ্রমিকের মাথায় সিমেন্টের বস্তা পড়ে। মহিলাটি মাথায় প্রচন্ড আঘাত পায়। তৎক্ষনাৎ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বাঁচানো যায়নি। আহত হওয়ার ঘন্টাখানেক পর উনি মারা যায়। মহিলাটির ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি। শোনা যায় গ্রামের এককোণে তার সাত বছরের একটা মেয়ে নিয়ে থাকতেন। তার আর কোন আত্নীয় স্বজনের খোঁজ কখনো পাওয়া যায়নি। পুলিশ কেসের ভয়ে বাড়িওয়ালা মেয়েটার দায় দায়িত্ব নিয়ে নেয়। পরিবারের টুকটাক কাজে হেল্প করতো মেয়েটি। শুধুমাত্র খাওয়া পরা দিয়ে এমন একটি কাজের লোক পাওয়া গেলো এটা পরিবারের জন্য সৌভাগ্যই হলো।

কনস্ট্রাকশনের কাজ শেষ হওয়ার পর বাড়িটাকে মেস হিসেবে ভাড়া দেওয়া হলো। এক ঈদের ছুটিতে সবাই বাড়ি গেলে মেসে একজন থেকে যায়। সে রোজিনা নামের মেয়েটিকে ভুলিয়ে ভালিয়ে দোতলায় নিয়ে রেপ করে হত্যা করে। সেই রাতেই লোকটা পালিয়ে যায়।

পরে ডাক্তারি পরীক্ষায় ধরা পড়ে রেপ করার বিষয়টি। আর সুজন নামের ছেলেটা রোজিনাকে প্রায় সময় ডেকে কথাবার্তা বলতো। একবার একটা সস্তা মেকাপ বক্স কিনে দিয়েছিলো। তাই দেখে রোজিনা খুশিতে গদগদ। তারপর থেকে মাঝেমাঝে রোজিনা সুজনের ঘরে যেতো। এভাবে তাদের ঘনিষ্টতা শুরু হয়। বাড়িওয়ালা এসব ঘটনা জানতে পারে রোজিনার মৃত্যুর পর তার মেস বোর্ডারদের মুখে। তারপর থেকে সব ছেলেদের মেস থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

বাড়িওয়ালা বেশ টাকাপয়সা ছেড়ে ঘটনা সামাল দেয়। আর রোজিনার কোন অভিভাবক না থাকায় খুব বেশি ঝামেলা হয়নি এটা নিয়ে।

এরপর বাড়িটাতে ফ্যামিলি ভাড়া দেওয়া হয়। কিছুদিন থাকার পর ফ্যামিলিটা বাড়িটা ছেড়ে দেয়। অভিযোগ ছিলো গভীর রাতে সিঁড়ি বেয়ে কে যেনো উপরে ওঠে। দোতলার বারান্দা দিয়ে হাটাহাটি করে। একদিন রহমান সাহেব কৌতুহল বসত বাইরে বেরিয়ে দেখে কোণের ঘরটার সামনে একটা মানুষ দাড়িয়ে আছে। অন্ধকারে খুব বেশি স্পষ্ট দেখা গেলোনা। তবে অবয়বটা কমবয়সী মেয়েদের মতো।

তারপর আরো দুইটা ফ্যামিলি এসেছিলো। তারাও একই অভিযোগে বাড়িটা ছেড়ে দেয়। তারপর বাড়িওয়ালা সস্তায় মেস হিসেবে ভাড়া দিয়েছে। অনেকদিন কোন সমস্যা হয়না। যখন মেস খালি হয়ে যায়, দুই একজন থাকে তখন আবার ঘটনাটা ঘটে। আমি আজ দেখতে চেয়েছিলাম ঘটনাটা সত্য কিনা। ভুত বলে কিছু আছে কি নেই। যখন পায়ের শব্দ দরজার কাছে এসে দাড়ালো আমি আর সাহস করে বাইরে যেতে পারলাম না। একটু পর হাটতে হাটতে কোণের ঘরটার দিকে গেলো তখন বাইরে বেরিয়ে দৌড় দিয়েছি। কোনমতে সিগারেটের প্যাকেট আর বিস্কুটের প্যাকেট নিয়েছি।
আচ্ছা, তোর কাছে কি হাজারী নাগের রসায়ন বইটা আছে?'
-- হ্যা আছে। সকালে নিয়ে যাস। আর যাওয়ার সময় অ্যাস্ট্রে থেকে সমস্ত ছাই পরিস্কার করে যাবি। রুমমেটের অ্যাস্ট্রে তো, এসে নোংরা দেখলে বকাবকি করবে।
-- আচ্ছা, ঠিক আছে তুই বয়। আমি একটু বাথরুমে যাবো।
-- আচ্ছা যা।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:৩১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দীপনের দীপ নেভে না

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯


ছবিঃ সংগৃহীত
আজকে সামুর অন্ধকার ব্লগার নামে খ্যাত ফয়সাল আরেফিন দীপনের মৃত্যু দিবস। ২০১৫ সালে আজকের এই দিনে জঙ্গি হামলায় দীপন মারা যান নিজ প্রকাশনীর কার্যালয়ে । যে ছেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বজলুল হুদাকে জবাই করে হাসিনা : কর্নেল (অব.) এম এ হক

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৫৯

মেজর বজলুল হুদাকে শেখ হাসিনা জবাই করেছিলেন।

(ছবি ডিলিট করা হলো)

শেখ মুজিবকে হত্যার অপরাধে ২৮শে জানুয়ারী ২০১০ এ মেজর (অব.) বজলুল হুদা সহ মোট ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×