somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভৌতিক গল্পঃ সেই রাতে (১ম পর্ব)

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেয়ালঘড়িটার দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠলাম। রাত দুইটা বাজে। পড়তে পড়তে কখন এতোটা রাত হয়ে গেছে খেয়াল করিনি। আমি নিজেই অবাক হলাম। গ্রামের বাড়িতে থাকতে যদি কোনমতে রাত এগারোটা পর্যন্তও পড়তাম, তাহলে বাবা মার অতীব প্রিয়পাত্র হয়ে যেতাম। রুই মাছের বড় মাথাটা আমার পাতে উঠতো। কিন্তু তখন দুষ্টামি করে দিন কাটিয়েছি। কার ক্ষেতে শশা ফলেছে প্রচুর, কার গাছে ডাব ধরেছে এসব হিসেব কষতে কষতে দিন পার হয়ে যেতো। আর রাত হলে সমবয়সী বন্ধুদের নিয়ে শুরু হতো চুরি অভিযান। চুরি শেষে রাত দুইটা তিনটার দিকে যখন উত্তর বিলে বসে ভাগাভাগি করে খেতাম, তখনকার মজাটা বলে বোঝানো যাবেনা। অবশ্য দুই একদিন যে ধরা পড়তামনা তা নয়। কথায় আছে চোরের দশদিন, গৃহস্থের একদিন। ধরা পড়লে সেদিন আর রেহাই ছিলোনা। বাবার কানে নালিশ চলে আসতো। মারপিট হতো প্রচুর পরিমানে। আমাকে নিয়ে আমার বাবা মা সর্বক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকত, কখন কি অঘটন ঘটিয়ে ফেলি। তারা যদি আজ দেখতো তার দস্যি ছেলেটা রাত দুইটা পর্যন্ত পড়ালেখা করে তাহলে আমি নিশ্চিত, খুশিতে তারা হার্টফেল করতো। নিজের চোখকেই হয়তো বিশ্বাস করতে পারতোনা। শরীরে চিমটি কেটে দেখতো এটা স্বপ্ন নাকি সত্যি।

মানুষ কত সহজে বদলে যায়! আমার নিজেরও বিশ্বাস হতে চায়না যে আমি এতোটা বদলে যাবো। যে আমি আগে দুষ্টামি করার জন্য সারারাত জেগে থাকতে পারতাম, অথচ পড়তে বসলেই ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসতো, সেই আমি আজ অবলীলায় বইয়ের সামনে রাত দুইটা পার করে দিলাম। ভাবা যায়!

গল্প শুরু করার আগে নিজের সম্বন্ধে একটু বলে নিই। আমি হিমেল (ভালো নাম শাহরিয়ার কবির হিমেল। আমার একটা প্রশ্ন হলো ডাকনাম কে কেউ ভালো নাম বলেনা। কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে যদি ডাকনাম বলা হয় তাহলে উল্টে জিজ্ঞেস করে ভালো নাম কি? ডাকনামটা কেনো ভালো হলোনা এর রহস্য আমি আজও ভেদ করতে পারিনি। বড়দের কাছে জিজ্ঞেস করিনি চড় খাওয়ার ভয়ে। এরকম টাইপ প্রশ্ন তাদের কাছে ফালতু বলে মনে হয়। তাদের বিরক্তি উৎপাদন করার জন্য যথেষ্ট।) একটা মফস্বল শহরের কলেজে পড়ি। গ্রাম থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর অনার্স লেভেলে এই মফস্বল শহরে এসে ভর্তি হই একটা কলেজে। অতীতে সায়েন্সের ছাত্র ছিলাম। তবে ভালো ছাত্র ছিলামনা কখনোই। অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতা আমার ছিলোনা। শেষমেষ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে মফস্বল শহরের একটা কলেজে চান্স পাই। সাবজেক্ট টা অবশ্য উঁচু ধরণের। রসায়ন। এই একটা সাবজেক্ট কে আমি যমের মতো ভয় পাই। বিক্রিয়াগুলো কিছুতেই বুঝতে পারিনা। আর আমার ঘাড়ে চাপলো সেই সাবজেক্ট। প্রকৃতির কি নিষ্ঠুর খেলা। আমার সায়েন্স নিয়ে কখনোই কোন আগ্রহ ছিলোনা। কিন্তু বাবা মা জোরপূর্বক ক্লাস নাইনে সায়েন্সে ভর্তি করালেন। উদ্দেশ্য ডাক্তার বানানো। আর গ্রামাঞ্চলে কারো সন্তান সায়েন্সে পড়লে তাদের সামাজিক মানমর্যাদা উঁচু হয়। অন্য সবাই তাদের সমীহ করে চলে। এই বিষয়টাও আমার সায়েন্সে পড়ার মূল কারণ।

এই মফস্বল শহরের একটা মেসে থাকি। বাড়ি থেকে প্রতি মাসে কিছু টাকা পাঠায়। আর নিজে ছোটখাটো টিউশনি করি। এতে কোনরকমে আমার চলে যায়। একই কলেজে আমার এক বন্ধু পড়ে। ছোটবেলার বন্ধু। নাম সোহেল। ভালো নাম আক্তারুজ্জামান সোহেল। ও জুয়োলজি অর্থাৎ প্রানীবিদ্যার ছাত্র। প্রথমে আমরা চেয়েছিলাম একই মেসে থাকতে। তবে সিট খালি না থাকায় দুই জন দুই মেসে থাকি। আমার মেস থেকে ওর মেসের দুরত্ব হাটাপথে প্রায় বিশ মিনিট। মোটামুটি দুরত্ব বলা যায়। ঈদের ছুটিতে সবাই বাড়ি চলে গেছে। আমি পরীক্ষার প্রিপারেশন নেয়ার জন্য মেসে আছি। ভাবছি ঈদের একদিন আগে বাড়ি যাবো। মেসে রান্না করা বুয়াকে ছুটি দেয়া হয়েছে। আর শুধুমাত্র একজনের জন্য সে রান্না করতে আসেনা। আমি কোনমতে পাশের হোটেল থেকে খেয়ে নিই। চৌরাস্তার গলিতে একটা ভালো ভাতের হোটেল আছে। সাশ্রয়ী মূল্যে পেটপুরে খাওয়া যায়। ওদের লাউ দিয়ে সবজি রান্না টা চমৎকার। কুচি কুচি ডিম ছড়ানো থাকে। খেতে লাগে অমৃতের মতো। আজ দুই দিন এভাবেই চালিয়ে দিচ্ছি।

বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। এখন যে শ্রাবন মাস এটা জানি। তবে বাংলা কত তারিখ এটা জানিনা। আমরা বাঙালি হলেও বাংলা দিন তারিখ ব্যবহার করিনা। সবকিছু ইংরেজী নিয়মে চলে। বাংলা কথাবার্তার মধ্যেও ইংরেজী ঢুকিয়ে জগাখিচুড়ি তৈরী করে ফেলি। এটাই আজকালকার স্মার্টনেস। আমিও মানুষের সামনে স্মার্ট হওয়ার জন্য বাংলা ইংরেজী মিশিয়ে কথা বলার অভ্যাস করছি।

যাই হোক, এতক্ষণ পর বুঝতে পারলাম খিদেয় আমার পেট চো চো করছে। ভেবেছিলাম নয়টার দিকে হোটেল থেকে কিছু খেয়ে আসবো। পড়তে পড়তে এতো রাত হবে ভাবিনি। এতো রাতে হোটেল খোলা আছে কিনা কে জানে। মফস্বল শহরে রাত দশটার পর সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। আর এতো রাতে বৃষ্টির মাঝে বাইরে বেরোনোটাও সমস্যা। আর ঘরে কোন ছাতা নেই। দুই বছর এখানে এসেছি। একটা ছাতাও কেনা হয়নি। আলতু ফালতু অনেক টাকা খরচ করেছি কিন্তু একটা প্রয়োজনীয় জিনিস ছাতা কেনা হয়নি। ভাবছি পানি খেয়ে শুয়ে পড়বো।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দীপনের দীপ নেভে না

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯


ছবিঃ সংগৃহীত
আজকে সামুর অন্ধকার ব্লগার নামে খ্যাত ফয়সাল আরেফিন দীপনের মৃত্যু দিবস। ২০১৫ সালে আজকের এই দিনে জঙ্গি হামলায় দীপন মারা যান নিজ প্রকাশনীর কার্যালয়ে । যে ছেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বজলুল হুদাকে জবাই করে হাসিনা : কর্নেল (অব.) এম এ হক

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৫৯

মেজর বজলুল হুদাকে শেখ হাসিনা জবাই করেছিলেন।

(ছবি ডিলিট করা হলো)

শেখ মুজিবকে হত্যার অপরাধে ২৮শে জানুয়ারী ২০১০ এ মেজর (অব.) বজলুল হুদা সহ মোট ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×