somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ টেষ্ট ক্রিকেটের ১২ বছর পূর্তি উপলক্ষে টুকটাক (!) স্মৃতি রোমন্থন (একটা আনঅফিশাল অর্ধ-‘রিমেক’ও বটে! ) :D

১২ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




২০০০ সালে টেষ্ট ষ্ট্যাটাস পাবার পর বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত খেলেছে ৭৩টা টেষ্ট ম্যাচ যাতে জয় আর পরাজয়ের অনুপাত ১:২১। রয়েছে ৬৩ হারের বিপক্ষে মাত্র ৭টি ড্র যেগুলোর বেশিরভাগই এসেছে বৃষ্টির বদৌলতে। এ কাহিনী শুনলে মনে হয় বাংলাদেশ রেজাল্টের ব্যাপারে বিশ্বাসী, ড্রতে নয়। সেকারণেই সাবেক কোচ বিদায়ের পর বলেন, “ ... তাদের সমস্যা হচ্ছে তারা হয় বোঝে আক্রমণ নয়তো আত্মসমর্পণ। এখানে মাঝামাঝি বলে কিছু নেই।” জিম্বাবুয়ে টেষ্ট ষ্ট্যাটাসের পর যে সকলের মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়, তার পিছনে ঐ ‘মাঝামাঝি’র অবদান ছিল অন্যতম।


যাই হোক। সামনে ওয়েষ্ট ইণ্ডিজের সাথে বাংলাদেশের টেষ্ট সিরিজ শুরু হতে চলেছে। এদিকে আবার বাংলাদেশের টেষ্ট ষ্ট্যাটাস পাবার ১২ বছর পূর্তিও হল। সে উপলক্ষেই ক্রিকইনফো গত ১০ তারিখ একটা ফিচার প্রকাশ করে যাতে বাংলাদেশের গত ৭৩টি টেষ্ট পর্যালোচনা করে একটা শর্টকাট রিভিউ লেখা হয়। তা পড়বার পর আমার মনে হল এটাকে অনুবাদ করি। দীর্ঘদিন ধরে পোষ্ট লিখি না বলে হাত নিশপিশ করছিল। তাই আর দেরি না করে লেখা আরম্ভ করি। লিখতে গিয়ে দেখি আমি আনুবাদের বদলে কিছু আবোলতাবোল বকবক করছি! আসল কাজ ফেলে নকলের পিছনে ছোটাছুটি। মায়া লাগল, তাই আর লেখা মুছে না দিয়ে কন্টিনিউ করি। শেষমেশ যা দাঁড়িয়েছে, তাকে আর ঠিক অনুবাদ বলা যায় না। হয়ত এটা আংশিক অনুবাদ বা ছোটখাট স্মৃতি রোমস্থন কিংবা দিনশেষে নিজের কিছু ক্রিকেটীয় জ্ঞান-দানের প্রয়াস!


অগোছালো পোষ্ট। তাই নিজের মত করে বুঝে নেবার দায়িত্বটা থাকল ব্লগারদের উপর।


********************************************************************

(মূল লেখা Highs এবং Lows – এই দুই অংশে বিভক্ত। তাই প্রথমে থাকল Highs তথাপি উত্থানপর্ব)

উত্থানপর্ব


১. যাহা প্রথম, তাহাই দীর্ঘতম ...

২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক টেষ্ট ম্যাচ। বাংলাদেশের স্কোয়াড নিয়ে তেমন সমস্যা নেই। তবে একটা প্রশ্ন প্রায় সকলের মনে, “বুলবুল কেন দলে?” নিজের জাতটাকে তার আগেই চেনানো হয়ে গেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক ফর্ম বেশি খারাপ হবার দরুণ তাকে এ কথা শুনতে হয়। মানসিক চাপ তাই নিজে থেকেই বাড়তে থাকে। একারণে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে যাওয়া বাংলাদেশের দুই নাম্বার উইকেটের যখন পতন ঘটে, তখন বুলবুলের টার্গেট ছিল কোনমতে ৩০-৪০ করা! কেন? “ ... যদি তা করতে পারি তাহলে এ যাত্রা টিকে যাব।” হুম, পরিস্থিতি মানুষকে অনেকটাই পালটে দেয়।

যাই হোক। এরপরের কাহিনী অনেক ভাল। নিজের পরিকল্পনা মত খেলে আমিনুল ইসলাম বুলবুল সেঞ্চুরী করে। দেশের এবং অবশ্যই নিজের প্রথম টেষ্টে সেঞ্চুরী করা ক্রিকেটারদের ছোট্ট একটা লিস্টে ঢুকে যায় সে। যখন অষ্ট্রেলিয়ার চার্লস ব্যানারম্যানের ১৬৫ রানের ইনিংসকে রীতিমত চোখ রাঙাচ্ছিল, তখনই বেরসিক অজিত আগারকার তাকে আউট করে দেয়। কিন্তু তাতে খুব বেশি আফসোসের কিছু নেই। কারণ ততক্ষণে বাংলাদেশের ইতিহাসে স্থায়ী হয়ে যাওয়া একটা চমৎকার ইনিংস সে উপহার দিয়ে ফেলেছে। খেলেছে ৩৮০ বল, রান করেছে ১৪৫; যাতে চার ১৭টা এবং কোন ছয় নেই। সবচেয়ে বড় কথা, সে ক্রিজে ছিল ৫৩৫ মিনিট! এটাই তার ইনিংসটির প্রধান মাহাত্ম্য।

এরপর বাংলাদেশ আরো ৭২টা টেষ্ট ম্যাচ দেখেছে। কিন্তু এরকম পারফেক্ট ইনিংস আর চোখে পড়ে নি। ব্যক্তিগতভাবে দুইবার এই ইনিংসকে ক্রস করতে পারলেও তাতে ছিল বর্তমান যুগের চাহিদা মেটানো টি-টোয়েণ্টির ছোঁয়া। তাই এখনো ৫৩৫ মিনিটের ঐ মহাকাব্যিক ইনিংসটিই বাংলাদেশের হয়ে টেষ্টে সর্বোচ্চ ইনিংসের মর্যাদা পাচ্ছে। ক্রিকইনফো একে ‘উত্থানপর্বে’ রাখলেও কেন জানি এখানে আমি ব্যর্থতার চিহ্ন পাই।


২. হৃদয়বিদারক টেষ্ট ... মুলতান টেষ্ট

আমার মাঝেমধ্যে মনে হয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুইজন জাতীয় শত্রু আছে। একজন মুত্তিয়া মুরালিধরন, আরেকজন অশোকা ডি সিলভা।

২০০৩ সাল। বাংলাদেশের পাকিস্তান ট্যুর। সফরকারীরা তিন টেষ্টের প্রথম দুইটাতে হেরে অলরেডি ০-২ তে পিছিয়ে আছে। শেষ টেষ্ট অনুষ্ঠিত হল মুলতানে। ফিল্ড আম্পায়ারিং এর দায়িত্বে আছে অশোকা ডি সিলভা এবং রাসেল টিফিন। আগের দুই টেষ্টে ভাল করা বাংলাদেশ এবারও প্রথম ইনিংসে মোটামুটি একটা স্কোর এনে দেয়, ২৮১। পরে পাকিস্তান ১৭৫ করাতে বাংলাদেশের সামনে চলে আসে লিড বাড়িয়ে নেবার সুবর্ণ সুযোগ। কিন্তু টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় তা ধূলিসাৎ হবার দশা। মাঝে দিয়ে অলক কাপালি এবং রাজিন সালেহ্‌ কিছুটা চেষ্টা করে। কিন্তু প্রথমে আহত এবং পরে পাকিস্তানি অধিনায়ক ও কিপার রশিদ লতিফের চোট্টামির কারণে ঐ জুটিও খুব একটা সফল হয়নি। বাংলাদেশ সর্বসাকল্যে তুলতে পারে ১৫৪ রান।

পাকিস্তানের টার্গেট ২৬১। ছোট কিন্তু একেবারে না। এদিকে আবার বাংলাদেশের বোলাররা জেগে উঠেছে। নিয়মিত বিরতিতে পড়ছে উইকেট। কিন্তু এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে গেল ইনজামাম উল হক। আর শুরু থেকেই ত অশোকা এক প্রান্ত ধরে বসে আছেন। ব্যস ... যা হবার তাই হল। এই দুই গ্রেটের (!) মাহাত্ত্ব্যে পাকিস্তান ১ উইকেটে জিতে গেল। মোহাম্মদ রফিক উমর গুলকে একটা নিশ্চিত রান আউট থেকে বাঁচায় স্রেফ “ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা” বলে, যাতে চোট্টামির স্থান নাই। কিন্তু অশোকা আর ঐ কিপার লতিফের তা মনে ছিল না। অশোকা অনেক জেনুইন রান আউটকে অস্বীকার করে গেছে আর কিপারের কথা ত আগেই বলেছি। পরে অবশ্য তাকে পাঁচ ওডিআইয়ের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু অশোকা ফাঁকেতলে বেঁচে যায়।

মুত্তিয়াকে তাঁর ক্রিকেটীয় কাণ্ডের জন্য বাংলাদেশের শত্রু মনে হয় আমার। আর অশোকাকে করি তার এসব ফাজলেমির জন্য। মুলতান বাদেও সে আরো বাজে সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাংলাদেশের বিপক্ষে, যেগুলো তার ক্রিকেটীয় মর্যাদা কতটুকু বাড়িয়েছে তা আমার জানা নেই। কারোর জানা থাকলে বলবেন প্লিজ।


৩. অতঃপর আশরাফুল

মোহাম্মদ আশরাফুলের ব্যাপারে একটা কথা কান পাতলেই শোনা যায় ... বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিভাবান ক্রিকেটার। কিন্তু ঐ প্রতিভা কিভাবে সে কাজে লাগাল, তা তার পরিসংখ্যান ঘাঁটলেই বুঝা যায়। এমনিতে এই রেকর্ড-টেকর্ড তার বেশ মুখস্ত থাকে। কিন্তু ব্যাটিং এর জন্য মাঠে গেলেই সবচেয়ে প্রয়োজনীয় – শট সিলেকশানের ব্যাপারটাই বেমালুম ভুলে যায়! প্রতিশ্রুতিশীল একটা ক্রিকেটারের এরকম অপমৃত্যু সত্যিই সহজে মানা যায় না।

যাই হোক। আসল কথায় ফিরি। আশরাফুলের প্রতিভা কিংবা ক্রিকেটীয় বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আলোচনা এই পোষ্টের আসল বিষয় নয়।

মোহাম্মদ আশরাফুলের ৫টা টেষ্ট সেঞ্চুরীর মধ্যে সবচেয়ে আলোচ্যটা হচ্ছে অভিষেক টেষ্টের সেঞ্চুরীটি। কারণ এখনো সবচেয়ে কম বয়সী ক্রিকেটার হিসেবে টেষ্ট সেঞ্চুরী করার রেকর্ড ওটাই। কিন্তু ক্রিকইনফো ওটাকে বেছে না নিয়ে নিল চট্টগ্রাম টেষ্টে তার করা ১৫৮ রানের ইনিংসটি, ভারতের বিপক্ষে। কেন? হুম, যুক্তি আছে। ঐ সময়ে বাংলাদেশের টেষ্ট ষ্ট্যাটাস নিয়ে খুব বেশি কথা হচ্ছিল। খারাপ পরিসংখ্যান এর পিছনে দায়ী। সাথে যুক্ত হয়েছে আশরাফুলের ফর্মহীনতা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঐ অভিষেক টেষ্টের পর তার আর কোন সেঞ্চুরী ছিল না। যদিও বাংলাদেশ নিজে একটা ভাল পজিশানে যেতে পারেনি, তারপরেও তাদের সেরা ব্যাটসম্যানটিন পক্ষ থেকে একটা সেঞ্চুরী সবসময়ই আশা করত। যেটা না পাওয়াতে সমালোচনা হতে থাকে এবং তার ফলশ্রুতিতে বেড়িয়ে আসে ১৫৮ রানের একটা ঝকমকে ইনিংস। স্থায়িত্ব ২৭৫ মিনিট, বল ১৯৪, ফোর ২৪, সিক্স ৩টা এবং ষ্ট্রাইক রেট ৮১.৪৪! পারফেক্ট আশরাফুলীয় ইনিংস! :)

কিন্তু কোন কাজ হয়নি! নাহ্‌, আসলেই হয়নি। বাংলাদেশকে নিয়ে বকবকানি কিছুটা কমেছিল সম্ভবত, কিন্তু আশরাফুল তার ফর্মহীনতাকে নিয়মিত কাজে পরিণত করতে থাকল। যার শুরুটা হল ঐ চট্টগ্রাম টেষ্টের দ্বিতীয় ইনিংস দিয়ে ... ২১ বল খেলে মাত্র ৩ রানে আউট! এলবিডব্লিউ ব অনিল কুম্বলে।

এক্ষেত্রে আমার একটা কাহিনী মনে পড়ছে। সম্ভবত চট্টগ্রাম টেষ্টের পরবর্তী ঘটনা। সিরিজ শেষ। রাহুল দ্রাবিড়, টেণ্ডুলকাররা এল বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে টিপস দিতে। ওখানে দ্রাবিড় আশরাফুলকে ব্যক্তিগতভাবে কিছু কথা বলে। যার সারমর্ম মোটামুটি এমন ... আশরাফুল যদি তাড়াহুড়ো করে ঐ ইনিংসটা না খেলে ধীরেসুস্থে মাত্র ৫৮ রান করে পুরো দিন কাটাতে পারত, তাহলে তার মাহাত্ত্ব্য হত আরো বেশি। ১৫৮ হয়ত বা তাকে একটা ম্যান অব দা ম্যাচের পুরষ্কার এনে দিয়েছে, কিন্তু কষ্ট করে করা ৫৮ রান বাংলাদেশকে আরেকটা অতিরিক্ত দিন খেলতে দিতে পারত, টেষ্টের আসল ব্যাপারটা তারা ধরতে পারত। ফলে তাদের নিয়ে ফিসফিসানিও কম হত!

এর উদাহরণ দিব? ঐ টেষ্টেই রাহুল নিজে ১৬০ রান করেছিল ৩০৪ বল খেলে। স্থায়িত্ব ৩৮৭ মিনিট, চার চব্বিশটা। হায় আশরাফুল! এত কিছু পেয়েও তোমার আর জাগা হল না!


৪. প্রথম টেষ্ট জয় ... অতঃপর দ্বিতীয় ও তৃতীয়

যেহেতু ক্রিকেট-পাগলা একটা দেশে জন্ম, তাই ছোট থেকে ব্যাট-বল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতাম। কিন্তু ক্রিকেট আর সেভাবে দেখা হত না। মনে আছে, ক্রিকেটের প্রতি সিরিয়াসনেস বৃদ্ধি পায় ২০০৩ বিশ্বকাপের সময়। সেবার অষ্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ান হওয়ায় তাদের খেলার এক মহা ভক্ত হয়ে গেছিলাম। কিন্তু নিজের দেশ যে ক্রিকেট খেলে, তাদের খোঁজ খবর রাখা ... এগুলো তখন মাথাতেই আসত না। আমার কাছে ক্রিকেট বলতে ছিল দুইটা টীম; এক, আমি যে টীমে খেলি সেটা :P দ্বিতীয়, অষ্ট্রলিয়া। :D

২০০৫ সাল। জিম্বাবুয়ে এসেছে বাংলাদেশে খেলতে। সেবারই প্রথম বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে কিছু ফিসফাস আমার কানে আসে পত্রিকা মারফত। ‘এবার বাংলাদেশের জেতার সম্ভাবনা আছে’ - এই কথাটাই ঘুরে ফিরে আসত বিভিন্ন লেখাতে। জিম্বাবুয়ের তখন খারাপ অবস্থা। শুরুর দিকে যে ঝলকানি দিয়ে তাদের টেষ্ট ক্রিকেটে আগমন, কিছু গ্রেট প্লেয়ারের বিদায়ে তখন তা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। তাই উঠতি ক্রিকেট শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের একটা ভাল সম্ভাবনা ছিল জিম্বাবুয়েকে হারাবার। তাতে যদি সমালোচনাটা কিছু কমে!

প্রথম টেষ্ট। ভেন্যু এমএ আজিজ ষ্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম যা পরে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে পয়া ভেন্যুতে পরিণত হয়। টস জিতে ব্যাটিং এ নেমে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করে ৪৮৮, যা খুব সম্ভবত তখনকার হাইয়েষ্ট টেষ্ট স্কোর ছিল বাংলাদেশের ... যেকোন এক ইনিংসে। ‘মি ফিফটি’ খ্যাত হাবিবুল বাশারের ৯৪, রাজিন সালেহ্‌র ৮৯ (সংযমী ইনিংস। ষ্ট্রাইল রেট মাত্র ৪৮.৯), পারফেক্ট ওপেনিং জুটি আর লোয়ার অর্ডারের চমৎকার ব্যাটিং - সবমিলিয়ে দারুণ একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি করে বাংলাদেশ। জবাবে জিম্বাবুয়ে টাটেণ্ডা টাইবু আর এল্টন চিগুম্বুরার ব্যাটে চড়ে করে ৩১২ রান। লিড এখন ১৭৬ রান! তৃতীয় ইনিংসে আবারো বাশার হাফ সেঞ্চুরী করে ২০৪ রান পর্যন্ত বাংলাদেশকে নিয়ে ডিক্লেয়ার করে। ফলে জিম্বাবুয়ের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় সর্বমোট ৩৮১ রানের। চতুর্থ ইনিংসে এত বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড তেমন নেই। আর ভঙ্গুর জিম্বাবুয়ের সে শক্তিটুকুও নেই। তাই যে দল নিজেদের প্রথম ইনিংসে করে ৩১২, তারা কিনা শেষে এসে অলআউট হয় মাত্র ১৫৪ রানে! আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে লিড করে এনামুল হক জুনিয়র, যে কিনা মাত্র ৭.৫ গড়ে ৬টা উইকেট তুলে নেয়! ওটাই পরবর্তী চার বছর টিকে ছিল বাংলাদেশের পক্ষে সেরা টেষ্ট বোলিং ফিগার হিসেবে। মজার জিনিস হচ্ছে এনামুল হক জুনিয়র কিন্তু প্রথম ইনিংসে কোন উইকেটই পায়নি! কিন্তু কঠিন একটা সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু উইকেট তুলে নেওয়ায় ম্যান অব দা ম্যাচের অ্যাওয়ার্ড তাকেই দেওয়া হয়।

মনে আছে ... টেষ্ট জয়ের পর বাংলাদেশ দল পুরো মাঠ ঘুরে বেড়াচ্ছিল, সমর্থকরাও শেষ বিকেলে জয় পেয়ে চেঁচিয়ে তাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিল। আর আমি কিছুটা অবাক হয়েছিলাম এদের এই কাণ্ড দেখে। একটা টেষ্ট জিতলে কি এমন উদযাপন করতে হয়? কে জানে!

এরপরের কাহিনী ২০০৯ এর, ১৯৪৩ নং আন্তর্জাতিক টেষ্ট। বাংলাদেশ গেছে ওয়েষ্ট ইণ্ডিজে। তখনকার ওয়েষ্ট ইণ্ডিয়ান ক্যাপ্টেন ক্রিস গেইলের নেতৃত্বে জাতীয় টিমের সব ক্রিকেটার বেঁকে বসল বেতন ভাতার দাবিতে। বোর্ডও কম ঝামেলার না, তারা তাদের বাদ দিয়ে একটা নিম্ন সারির দল ঘোষণা করল বাংলাদেশের জন্য। সুতরাং আবারও সম্ভাবনা মনের কোণে উঁকি দিল ... আরেকটা টেষ্ট সিরিজ জয় এবং একই সাথে প্রথম বিদেশের মাটিতে!

প্রথম টেষ্ট। নতুন বোলার কেমার রোচের নেতৃত্বে ওয়েষ্ট ইণ্ডিজ বাংলাদেশকে মাত্র ২৩৮ রানে গুটিয়ে দিল। দুঃখ! আরো দুঃখের বিষয়, ওয়েষ্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করে লিড নিল ৬৯ রান!! বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল করেছে মাহ্‌মুদউল্লাহ্‌, ৩ উকেট নিয়েছে ৩.০০ ইকোনমিতে।

বাংলাদেশ যেখানে ফেভারিট, সেখানে এমন উলটো ঘটনা স্বাভাবিক ব্যাপার। কাজেই ঐ টেষ্ট হেরে গেলে খুব একটা অবাক হবার ছিল না। কিন্তু তখনই ‘ফেভারিট তত্ত্ব’ খাটল। তামিমের টেষ্ট সেঞ্চুরী গুলোর মধ্যে সবচেয়ে পারফেক্টটি এখানে মঞ্চায়িত হল। ৩১১ মিনিট খেলে ১২৮ রান। সাথে জুনায়েদের ৭৮ আর মিডল অর্ডারের খানিকটা সহযোগিতা। টোটাল উঠল ৩৪৫ রান। আর দিনশেষে ওয়েষ্ট ইণ্ডিজের সামনে টার্গেট ২৭৭। অনভিজ্ঞ দলের সামনে যা পর্বত সমান। চতুর্থ ইনিংসে মাহ্‌মুদউল্লাহর পুনরায় ভাল বোলিং এ তারা গুটিয়ে গেল মাত্র ১৮১ রানে। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ টেষ্টটা জিতল ৯৫ রানে! :)



দ্বিতীয় টেষ্টটাও মোটামুটি এরকম দোটানার মধ্যে বাংলাদেশ জিতে নেয়। সেখানে সাকিব আল হাসানের অলরাউণ্ডিং পারফর্মম্যান্স ছিল খুব ভাল। এ টেষ্টে সে বোলিং এ আট উইকেট নেয় আর ব্যাটিং এ ১১২ গড়ে ঐ একই রান। ফলে ম্যান অব দা ম্যাচ আর আগেওমোটামুটি ভাল করায় সিরিজের পুরষ্কারও তার ভাগ্যে জুটে। সাথে নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের প্রথম বিদেশে টেষ্ট সিরিজ জয়ের আনন্দ।



আর কোন কাহিনী নাই। এরপরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের আরেকটা টেষ্ট জয়ের সুযোগ ছিল। কিন্তু নিজেদের খামখেয়ালিপনা আর জিম্বাবুয়ের কঠিন প্রস্তুতির মুখে তাতে বাংলাদেশ তেমন একটা পাত্তা পায়নি। ফলে টেষ্ট জয়ের সংখ্যাও সে-ই তিনে আটকে আছে।


এবং ৫. তামিমের ইংল্যাণ্ড ও উইজডেন জয়

সময়টা ২০১০ সাল। লর্ডসে বাংলাদেশ-ইংল্যাণ্ড টেষ্ট ম্যাচ। টসে হেরে ইংল্যাণ্ড প্রথম ইনিংসে ৫০৫ রানের এক বিশাল সংগ্রহ গড়ে তুলেছে। ফলো অন এড়াতে বাংলাদেশকে ৩০৫ রান করতে হবে। কিন্তু তারা করল মাত্র ২৮২। তাতে তামিম ইকবালের অবদান ৫৫; ৬২ বলের ইনিংসে আছে ৮টা চার।

এই ৫৫ রানের জোরে সে গেল লর্ডসের বিখ্যাত অনার্স বোর্ডে নাম তুলতে। কিন্তু ঐ দায়িত্বে থাকা এক কর্মী তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিল যে এখানে নাম তুলতে হলে তাকে সেঞ্চুরী করে আসতে হবে। ততক্ষণে বাংলাদেশও রেডি হচ্ছে তাদের দ্বিতীয় ইংস শুরু করবে বলে। তামিমও গেল এবং ইংল্যাণ্ড বোলিং লাইনআপের উপর তার ব্যাট গত ইনিংসের মতই চড়াও হতে লাগল। তার ধার এত বেশি ছিল যে ঐ ইনিংসটাকে ঐ সময়ে ইংল্যাণ্ডের বোলিং-এর উপর সেরা অ্যাটাক বলে রায় দেওয়া হয় এবং তামিম তার আরাধ্য সেঞ্চুরী পায়। সেঞ্চুরী পাওয়ার পরপরই সে মাঠ থেকে ড্রেসিংরুমে বসা সতীর্থদের ইংগিত দিতে থাকে অনার্স বোর্ডে নাম লিখে আসার জন্য। শেষে তাতে শাহাদাত আর তামিমের নাম উঠে যথাক্রমে ৫ উইকেট ও সেঞ্চুরীর জন্য।



এ টেষ্টে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস বাদে বাদবাকি ভালোই করে। কিন্তু হার এড়ানো সম্ভব হয়নি। ইংল্যাণ্ড ম্যাচটা জেতে ৮ উইকেটে।

দ্বিতীয় টেষ্টেও বাংলাদেশ হারে ইনিংস ও ৮০ রানে। আগের টেষ্টের তুলনায় বাংলাদেশ এক্ষেত্রে বেশহ বাজে খেলে। কিন্তু একজনের ব্যাট ঠিকই হেসে উঠে ... তামিম ইকবাল! আরেকটা চোখ ধাঁধাঁনো সেঞ্চুরী তাকে বাংলাদেশের বীরেন্দর শেবাগে পরিণত করে। এটা অবশ্য আমাকে প্রশংসা না, স্বয়ং জেমি সিডন্স ওকে এই উপাধি দিয়েছিল। /:)



ঐ বছরেরই শুরুতে ভারতের বিপক্ষে টেষ্টে ১৫১ রান আর ইংল্যাণ্ডের বাংলাদেশ সফরে দুর্ধর্ষ কিছু ইনিংস – সব মিলিয়ে ২০১১ সালে তামিম ক্রিকেটের বাইবেল খ্যাত উইজডেন প্রাইজ জিতে নেয়। এক বছরের ব্যবধানে দুই বাংলাদেশী পায় এটি; ২০০৯ এ সাকিব আল হাসান আর ২০১১ তে তামিম।

এখানে এসে আমার আরেক কাহিনী মনে পড়ছে। এটা এক ব্লগারের লেখার মাধ্যমে জানতে পারি। ২০১১ তে তামিমকে উইজডেন প্রাইজ দেবার পর নাকি অনেক ইণ্ডিয়ান ফেইসবুক কাঁপিয়ে (!) ফেলেছিল শচীনকে বাদ দিয়ে কেন তাকে দেওয়া হল বলে। এখানেই আমার কথাটা। যতদূর জানি, উইজডেন প্রতি বছর যে পাঁচজন টেষ্ট ক্রিকেটারের লিষ্ট করে, তাদের পরের কোন লিষ্টেই আর স্থান দেওয়া হয় না; তা যতই ভাল করুক না কেন। ১৯৯৭ সালে টেণ্ডুলকার একবার সেরা পাঁচে ছিল, সে তবে কেন আবার ২০১১ তে থাকবে? আমার মাথায় ঢুকছে না।:|


********************************************************************


তো যাই হোক। লেখা অনেক বড় হয়ে গেছে। আর বড় করে লাভ নেই। ক্রিকইনফোর ফিচারটাতে যে ‘পতনপর্ব’ এর উল্লেখ আছে, তা ইচ্ছা থাকলেও আর তাই আলোচনা করা যাচ্ছে না। তবে তাতে কীসের কীসের উল্লেখ আছে, তা একবার বলে নেই। ওখানে ২০০২ এ ওয়েষ্ট ইণ্ডিজের বিপক্ষে ১৯ বলে সাত উইকেট পড়ার উল্লেখ আছে।:| সাথে আছে বাংলাদেশের বিপক্ষে নাইটওয়াচম্যান জ্যাস্ন গিলেস্পির ডাবল সেঞ্চুরী (এখানে আমার আবার একটা কাহিনী মনে পড়ছে ... থাক, পরে বলি!) :D , ২০০৭ এ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আশরাফুলের নেতৃত্বে এক ইনিংসে মাত্র ৬২ রানে গুটিয়ে যাবার কাহিনী আর ২০০৮ এ দেশের মাটিতে সাউথ আফ্রিকাকে হাতের মুঠোয় পেয়েও ছেড়ে দেবার সকরুণ কাহিনী! আচ্ছা, এখানে আশরাফুলের সেই বিখ্যাত বোলিং এর কথা মনে আছে যাতে আউট হয়ে এবি ডি ভিলিয়ার্স খুব হম্বিতম্বি করল? ;)

ওহ্‌, আরেকটা আছে! মাশরাফির সেই বিখ্যাত হাঁটুর ইনজুরি ... যা তাকে বিভিন্নভাবে ভুগিয়েছে, সাথে বাংলাদেশকেও।



ওক্কে, Bদায়!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৩১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×