তখন ‘মনের মানুষ’ মুক্তি পেয়েছে বেশ কয়েক মাস হয়েছে। পরিচালক গৌতম ঘোষ এই মুভির কারণে তখন নতুন করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। চারদিকে তখন কেবলই এই মুভির নাম। পেপারে হররোজই লেখা হচ্ছে মুভিটি নিয়ে। এর কাহিনি কিংবা নির্মাণশৈলী যে বেশ ভাল, আমি সে ব্যাপারে মোটামুটি শিওর হয়ে যাই চাঁছাছোলা রিপোর্টার দাউদ হোসাইন রনির রিভিউ পড়ে।
স্বাভাবিকভাবেই তাই মুভিটির প্রতি আমার আগ্রহের সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি এর পরিচালক গৌতম ঘোষের ব্যাপারেও টুকিটাকি খোঁজ নিতে থাকি। জানতে পারি ১৮ বছর আগে নির্মিত ‘'পদ্মা নদীর মাঝি'’ মুভিটির পরিচালক উনিই। এটা আমি আগে যখন ছোট ছিলাম, তখন দুই - একবার দেখেছি। তখন তেমন ভাল লাগেনি। দেখতাম কিছু মাঝি নৌকা বায় আর একে অপরের নাম বলে বিশাল লম্বা ডাক দেয়। কি যে বিরক্তি লেগেছিল তখন! এরপর সুযোগ থাকলেও আর সেটা দেখার চেষ্টা করিনি। কিন্তু এখন পেটের দায়ে কিংবা আগ্রহ বশত -– যাই বলুন না কেন, '‘পদ্মা নদীর মাঝি’'–র প্রতি আবার কৌতুহলের সৃষ্টি হয়।
যাই হোক, আসল কথায় ফেরত আসি। গৌতম ঘোষের ব্যাপারে জানার পর থেকে আমি পেপারে যখনই তাঁর কোন খবর আসে, তা পড়ে দেখার চেষ্টা করি। এমনই একদিন কালের কণ্ঠের একটা খবরে আমার চোখ আটকে যায়। সেখানে দেখি পরিচালক গৌতম ঘোষকে সিনেমাতে অভিনয়ের জন্য অফার করা হয়েছে। অফার করেছেন প্রসেনজিৎ ও শ্রীজিৎ মুখার্জী নামক এক ব্যক্তি। তখন "“আমাকে আমার মত থাকতে দাও ... ..."” ও '‘অটোগ্রাফ'’ নিয়ে পাগলামি থাকলেও শ্রীজিৎ মুখার্জীকে ভালো করে বুঝে উঠতে পারিনি। তাই খবরটি পড়ে মনে করেছিলাম কোন উলটা পালটা পরিচালকের নাম হবে হয়ত শ্রীজিৎ মুখার্জী, যার সাথে প্রসেনজিৎ গিয়েছেন বিখ্যাত পরিচালক গৌতম ঘোষের বাসায় অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে!
এরপর সময় আরো কেটেছে। সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ততাও। কলেজ, প্রাইভেট, মোটামোটা বইয়ের ভিড়ে মাথা তোলাই দায়। তবুও কষ্ট করে একদিন ‘'অটোগ্রাফ'’ মুভির সিডি কিনে বাসায় এনে দেখলাম। এ মুভির গানগুলো শুনতে শুনতে প্রায় মুখস্থ হয়ে গেছিল, তাই মুভিটি নিয়েও অনেক প্রত্যাশা ছিল। মুভির পুরোটা দেখে তার একশভাগ না মিটলেও অনেকটাই মিটেছিল, যদিও কাহিনির প্যাঁচে পড়ে তার মর্মোদ্ধার ভাল করে করতে পারিনি!
সঠিক মর্মোদ্ধার করতে না পারলেও তখন এর পরিচালক শ্রীজিৎ মুখার্জীকে বেশ ভাল করেই চিনে গেছি। ঘরে বসে ষ্টার জলসা, জি বাংলা ইত্যাদির ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড দেখতে দেখতে এই হাল হয়েছিল।
এরপর আরো সময় চলে গেল। আমিও বিভিন্ন ভেজালে পড়ে ভাজা ভাজা হয়ে গেলাম। মাথা গরম থাকে প্রতিনিয়ত, কিছুই ভাল লাগে না - এমনই একটা অবস্থা! বিরক্তিকর এই পরিস্থিতিতে একদিন দেখলাম ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘'নৌকাডুবি'’। চমৎকার লাগল। প্রসেনজিৎ এর আগেকার আধপচা বাণিজ্যিক ছবিগুলো দেখতে দেখতে যে বিরক্তির সৃষ্টি হয়েছিল, তার অনেকটাই '‘অটোগ্রাফ'’ দিয়ে দূরীভুত হলেও তা পুরোপুরি দূর হয় এটা দেখে। বুঝতে পারি প্রসেনজিৎ আসলেই পাল্টেছে।
যাই হোক, এবার আসল কথায় ফেরত আসি। কয়েকদিন আগে কালের কন্ঠে একটা মুক্তি প্রতীক্ষিত মুভি নিয়ে রিপোর্ট দেখি। দেখে আগ্রহ হয়, পড়তে আরম্ভ করি। পড়ার পর বুঝতে পারি আরেকটা চমৎকার মুভি রিলিজ করতে চলছেন সেই উলটা পালটা, ‘'অটোগ্রাফ'’ খ্যাত পরিচালক শ্রীজিৎ মুখার্জী।
মুভির নাম '‘বাইশে শ্রাবণ'’। রবীন্দ্রনাথ ঘেঁষা নাম হলেও তাতে কবির কোন স্পর্শ নেই। এ মুভির কাহিনি গড়ে উঠেছে সিরিয়াল কিলিং কেস নিয়ে। তিন পুলিশ, দুই সাংবাদিক ও এক কবিকে নিয়ে কাহিনি এগিয়ে গেছে।
তিন পুলিশের একজন হচ্ছেন প্রবীর গুহ নিয়োগী। বয়স হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তার কোন স্ত্রী বা গার্লফ্রেন্ড নেই। তবুও তার মাঝে রোমান্টিকতাও অভাব থাকে না। শারীরিক প্রয়োজনে সে পতিতার সাথে মাঝেমধ্যে রাত কাটায়। অন্যদিকে রিপোর্টার অমৃতার সাথে ঘনিষ্ঠতা পুলিশ ডিপার্টমেন্টের আরেক অফিসার অভিজিতের। তাদের মাঝে বাধা হবার চেষ্টা চালায় অমৃতার সহকর্মী সূর্য। আবার প্রতিশোধের নেশায় দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে এক কবি। কিন্তু কিসের প্রতিশোধ?
আপাতত দুর্গা পূজায় মুক্তি প্রতীক্ষিত এই মুভি নিয়ে আর কিছু বলতে পারছি না। কারণ এ ব্যাপারে আমিও খুব বেশি কিছু জানি না! তবে এটুকু তথ্য দিতে পারি যে, তিন পুলিশের দুইজন হচ্ছেন প্রসেনজিৎ ও পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, রিপোর্টার দুইজন হলেন রাইমা সেন ও আবির চট্টোপাধ্যায় এবং কবির চরিত্রে আছেন সেই গৌতম ঘোষ!
মুভিটির উল্লেখযোগ্য গানগুলো হচ্ছে -– "‘যে কটা দিন তুমি ছিলে পাশে’", ‘"একবার বল’", "‘এই শ্রাবণ ধুয়ে ফেলুক’", "‘গভীরে যাও"’ ও "‘মাটি খুঁড়ে"’। আমি প্রত্যেকটা গানই শুনেছি। সবকটা ভালো লাগেনি। প্রথম চারটা ভালো লেগেছে; বিশেষ করে প্রথম তিনটি।
মুভিটির যে ব্যাপারটা নিয়ে খানিকটা বেশি আগ্রহ আছে সকলের, সেটা হল ১৮+ ব্যাপার! খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুভিটিতে ২২টির মত ঘনিষ্ঠ সিন আছে রাইমার। এ ব্যাপারে আমি আর কিছু বলতে চাই না। যা বোঝার বুঝে নেন ... ... না বুঝলে আমার কি!
সম্ভবত গত বৃহস্পতিবার মুভিটির ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে। মুভির ব্যাপারে খোঁজ নেবার জন্য সেখানে গেলাম। প্রথমেই লোডিং হল। লোডিং এর ব্যাপারটা চমৎকার। প্রথমে একটা বার আসবে। এরপর পহেলা শ্রাবণ থেকে শুরু করে ২২ শে শ্রাবণ পর্যন্ত লোডিং হবে। এরপর রুপম ইসলামের ‘"এই শ্রাবণ ধুয়ে ফেলুক"’ এই গানটা চলবে, সাথে সাথে আসতে থাকবে মুভির প্রধান পাঁচটি চরিত্র।
'বাইশে শ্রাবণ’ মুভির সংগীত পরিচালক হলেন অনুপম রায় যিনি “আমাকে আমার মত থাকতে দাও” গানটি গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। এখানে তার গাওয়া গানটি হচ্ছে “একবার বল”। গানটা মুক্তির পরপরই ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে গেছে।
মুভিটিতে প্রসেনজিৎ আসছে নতুনভাবে। '‘মনের মানুষ'’, '‘অটোগ্রাফ'’, '‘নৌকাডুবি'’, '‘চলো পাল্টাই'’, '‘হাউসফুল'’ প্রভৃতি মুভিতে প্রশংসনীয় অভিনয়ের বদৌলতে তাঁকে আবার এখানে আনা হয়েছে।
'বাইশে শ্রাবণ’' এর ট্রেইলারটা নীচে দিলাম, দেখতে পারেন। এখন পর্যন্ত এটা ৩০৯৬০ বার দেখা হয়েছে।
পোষ্টের ইতি টানি আমার এ মুভির প্রিয় একটি গানের লিরিক দিয়ে। গানটা হল "“যে কটা দিন তুমি ছিলে পাশে”"। ডুয়েটে ছিলেন সপ্তর্ষি মুখার্জী ও শ্রেয়া ঘোষাল; সিঙ্গেলে আছেন অনিন্দ্যা চ্যাটার্জি।
যে কটা দিন তুমি ছিলে পাশে
কেটেছিল নৌকার পালে চোখ রেখে
আমার চোখে ঠোঁটে গালে তুমি লেগে আছ ...
যেটুকু রোদ ছিল লুকোনো মেঘ
দিয়ে বুনি তোমার সালে ভালোবাসা
আমার আঙুল হাতে কাঁধে তুমি লেগে আছ ...
তোমার নখের ডগায় তীব্র প্রেমের মানে
আমিও গল্প সাজাই তোমার কানে কানে
তাকিয়ে থাকি হাজার পর্দা উড়া বিকেল
শহর দুমড়ে মুছড়ে থাকুক অন্যদিকে
ট্রাফিকের এই ক্যাকার ফোনই আমাদের স্বপ্ন চুষে খায় ...
যেভাবে জলদি হাত মেখেছে ভাত
নতুন আলুর খোসা আর এই ভালোবাসা
আমার দেয়াল ঘড়ি কাটায় তুমি লেগে আছ ...
যেমন জড়িয়ে ছিলে ঘুম ঘুম বরফ পাশে
আমিও খুঁজি তোমায় আমার আশে পাশে
আবার সন্ধ্যে বেলায় ফিরে যাওয়া জাহাজ বাঁশি
বুকে পাথর রাখা মুখে রাখা হাসি
যে যার নিজের দেশে আমরা স্রোত কুড়োতে যাই ...
যেভাবে জলদি হাত মেখেছে ভাত
নতুন আলুর খোসা আর এই ভালোবাসা।
গানটা বেশ প্রিয় বলে নীচে ভিডিওটাও দিলাম। দেখতে পারেন। কিন্তু আগেই বলে রাখছি, এটা ১৮+ গান! নিজ দায়িত্বে দেখেন!
'বাইশে শ্রাবণ'’ এর গান ডাউনলোডের জন্য এখানে বা এখানে যেতে পারেন বা গুগলে সার্চ করে দেখতে পারেন।
মুভির ওয়েবসাইট রয়েছে এখানে আর ফেসবুক ফ্যান পেইজ আছে এখানে। পাশাপাশি চোখ বুলাতে পারেন রাইমা সেনের এই সাক্ষাৎকারটিতে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:০১