যে সিনেমাটা কাঁদিয়েছিল এখনো কাঁদায় । খুব ছোটবেলায় টিভিতে দেখেছিলাম সিনেমাটা । দেখার আগেই শুনেছিলাম এর বেদনাদায়ক কাহিনি । এই সিনেমা বাংলা সিনেমার সুবর্ন সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে এখনো । কাহিনি , অভিনয় সবই অসাধারণ ছিল তখনকার সিনেমাগুলোতে তাই মনে করিয়ে দেয় বারবার । একজন পুরোনো সময়ের মানুষের কাছে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় আপনার জীবনে দেখা সবচেয়ে বেদনাদায়ক একটা সিনেমার নাম বলুনতো? সে নিঃসন্দেহে এই সিনেমাটার নাম বলবে । এই সিনেমাটা দেখে কাঁদেনি বা দুঃখবোধ জন্ম হয়নি এমন লোক পাওয়া দুস্কর । যেখানে অভিনেতাদের অনবদ্য অভিনয়, পরিচালকের পরিচালনা, কাহিনিকারের কাহিনি প্রস্ফুটিত হয়েছে সাবলীলভাবে । সেই সিনেমাটার নাম "ছুটির ঘন্টা" ।
স্কুল বলেন, কলেজ বলেন কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় অথবা চাকরিজীবী সবাই ছুটির জন্য প্রতিক্ষা করেন অধীর আগ্রহে প্রতিটা সময়, প্রতিটা ক্ষন । যতই বহুল প্রতিক্ষিত ছুটির দিন এগিয়ে আসে ততই অন্যরকম আনন্দে সবার মন ভরে থাকে , মাথায় গিজ গিজ করে ছুটির দিনগুলো কাটানোর জন্য বহুরকম পরিকল্পনা । একজন বাচ্চা ছেলের জন্য এটা একটু বেশি আনন্দের বিশেষ করে যারা স্কুলে পড়ে । ছুটির দিনে দুষ্টমিতে মেতে উঠার উপলক্ষ্যে তারা বুভুক্ষের ন্যায় অপেক্ষা করে দিনের পর দিন । কবে স্কুল ছুটি হবে ? কবে নানা বাড়ি যাবে? মেতে উঠবে দুষ্টমিতে ? তার জন্য যে অপেক্ষা করছে নানা বাড়ির ফলের গাছগুলি । অপেক্ষা করছে দুষ্টমিতে মেতে উঠার উপকরন সহজ সরল নদী । এটাই এই সিনেমার মুল উপজীব্য ।
খোকন নামের ছেলে যে স্কুলের দপ্তরি চাচার কাছে খোকাবাবু, স্বপ্ন আঁকে আসন্ন ছুটি নিয়ে । সেই স্বপ্নগুলোর করুণ মৃত্যু ঘটে, স্কুলের লম্বা ছুটির প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত বাথরুমে আটকা পড়ে ।
সিনেমাটা শুধু দুঃখের কাহিনিতে আবর্তিত নয় । হেসে উঠতে হবে স্কুলের বাংলা স্যার (এ টি এম শামসুজ্জামান) এর কথা বলার স্টাইল এবং শুদ্ধ খাটি বাংলা বলা দেখে কিংবা সুরত আলীর বোকামি দেখে । ভালবাসা জেগে উঠতে পারে দপ্তরি (রাজ্জাক) এবং আঙ্গুরীর (শাবানা) খুটখাট ঝগড়া আর অভিমানী হয়ে উঠা দেখেও । তবে এসব সব ভুলে যেতে হবে, খোকাবাবুর হারিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ।
চোখে জল এনে দেবে খোকাবাবুর আকুতি, অভিমান, ক্রোধ আর পরাজীত হওয়া দেখে । পানি, কাগজ এবং শেষ পর্যন্ত কমোডের পানি খেয়ে একজন ধনীর দুলাল কিংবা একটা ছোট বাচ্চার বেঁচে থাকার চেষ্টা দেখে যে কোনো কঠিন হৃদয়ের মানুষ ও কেঁদে উঠবে নির্দ্বিধায় ।
একদিন ছুটি হবে
অনেক দূরে যাব
নিল আকাশে
সবুজ ঘাসে
খুশিতে হারাব
একদিন ছুটি হবে
অনেক দূরে যাব
নিল আকাশে
সবুজ ঘাসে
খুশিতে হারাব
যেখানে থাকবেনা কোনো বাঁধন
থাকবেনা নিয়মের কোনো শাসন(২)
পাখি হয়ে উড়ব
ফুল হয়ে ফুটব(২)
পাতায় পাতায়
শিশির হয়ে
হাসি ছড়াব
একদিন ছুটি হবে
অনেক দূরে যাব
নিল আকাশে
সবুজ ঘাসে
খুশিতে হারাব
অজানা পথে
অচীন দেশে
ঝর্ণাধারা হয়ে
যাব ভেসে
ওহো ওহ ওহ
তারা হয়ে উঠব
মেঘ হয়ে ভাসব
লুকোচুরি খেলার ছলে
লুকিয়ে রব
একদিন ছুটি হবে
অনেক দূরে যাব
নিল আকাশে
সবুজ ঘাসে
খুশিতে হারাব ।।
খোকাবাবুর স্কুলের অনুষ্ঠানে গাওয়া গান তার জীবনে এত মর্মান্তিকভাবে মিলে যাবে সেটা হয়ত কেউ কল্পনাও করেনি ।
বর্তমানঃ অনেকদিন বাংলা সিনেমা দেখা হয়না । একটা সময় ছিল শুক্রবারের জন্য অধীর আগ্রহবোধ করতাম । একটা সময় ছিল নতুন সিনেমার জন্য হলের দিকে চেয়ে থাকতাম । এখন আর আগ্রহবোধ করিনা । এখন সিনেমার কাহিনি গুলো একই আবর্তে ঘুরপাক খায় । সেরকম অভিনেতা বের হয়নি বা দর্শকেকে সিনেমার মাঝে নিয়ে যাওয়ার মত অভিনেতা পরিচালক দেখিনা । এটাই বর্তমানের বাস্তবতা । ফিরে আসুক স্বর্ণালি সময় বাংলা সিনেমার । বৈচিত্রে ভরপুর হয়ে উঠুক আমাদের সংস্কৃতি সেই কামনা করি ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৫:০২