জুলাই ২৩ : কোটা আন্দোলন ঘিরে যে রক্তপাত ও হত্যাকাণ্ড ঘটেছে , তার পরিপ্রেক্ষিতে আগের দিন কোটা সংস্কার করে জারি করা সরকারি প্রজ্ঞাপনকে প্রত্যাখান করে বৈষম্যবিরোধি ছাত্র আন্দোলন। এক সংবাদ সম্মেলনে চার দফা আল্টিমেটাম দেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।সেখানে উপস্থিত ছিলেন সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ ও মাহিন সরকার। নাহিদ ইসলাম বলেন , কোটা আন্দোলন ঘিরে যে রক্তপাত ও হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তার দায় সরকার এড়াতে পারে না। সারাদেশে কারফিউ প্রত্যাহার, ইন্টারনেট সংযোগ চালু, বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ও সারা দেশের সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন আন্দোলনকারীরা।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যপক গ্রেফতার ও ধর পাকর অভিযান অব্যাহত থাকে। দুই দিনে শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকা থেকেই ১,১১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বা ডিএমপি। বাড়িতে বাড়িতে মধ্যরাতে অতর্কিত হানা দিয়ে বিশেষ করে ছাত্রদের গ্রেফতার অভিযান চলতে থাকে। পুলিশের ভয়ঙ্কর থাবা থেকে রেহাই পায় না স্কুলে পড়ুয়া ছাত্ররাও। কতটা ভয়ঙ্কর প্রক্রিয়ায় পুলিশ গ্রেফতার অভিযান চালায় তা সোস্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে। কাধে গুলি খাওয়া দশম শ্রেনীতে পড়া এক শিক্ষার্থী তামিমের মা জানায় ‘’ “রাত চারটার দিকে বাসার দরজা নক করছে। বলছে আমরা পুলিশের লোক, আপনার ছেলের সাথে কথা বলবো। দরজা খোলার সাথে সাথে সাত-আটজন হুড়মুড় করে আমার বাসায় ঢুকলো। ঢুকে আমার ছেলেকে একটা থাপ্পড় মারলো। আমি বলছিলাম, মাইরেন না, ওরে নিয়া যান,”।
সংবাদ সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকেরা থানায় ঢুকতে চাইলে তাদের বাধা দেয়া হয়। বিবিসি বাংলার এক সাংবাদিক জানান যে, “থানায় পরিস্থিতি খুব গরম। সাংবাদিক-টাংবাদিক কাউরে ঢুকতে নিষেধ করছে। ভেতরে ডিসি স্যারও আছেন,” বলছিলেন গেটে প্রহরারত একজন পুলিশ সদস্য।
view this link
টানা পাঁচদিন ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার রাতে আবার সীমিত আকারে চালু হয়। তবে গতি অত্যন্ত ধীর এবং ফেসবুক, ইউটিউব বন্ধ রাখা হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করায় ৫৭ জন বাংলাদেশিকে দীর্ঘ মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে সেখানকার একটি আদালত। বাংলাদেশে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশে বিক্ষোভ অব্যহত রয়েছে।
view this link
জুলাই ২৪ : ৪ দিন নিখোঁজ থাকার পর ২৪ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া যায়। আসিফ তার ফেসবুক পোস্টে জানায় ‘’ আমি আসিফ মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক। গত শুক্রবার ১৯ জুলাই রাত ১১ টায় আমাকে হাতিরঝিলের, মহানগর আবাসিক এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায়। আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়। না মানায় ইনজেকশন দিয়ে সেন্সলেস করে রাখা হয়। এই চার/পাঁচদিনে যতবার জ্ঞান ফিরেছে ততবার ইনজেকশন দিয়ে সেন্সলেস করে রাখা হয়। আজ ২৪ জুলাই, বুধবার সকাল ১১ টায় আবার একই জায়গায় চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে দিয়ে যায়৷ এখন আমি পরিবারের সাথে হাসপাতালে চিকিৎসারত আছি৷ এই কয়দিনে যা ঘটেছে তা জানার চেষ্টা করছি। কিছুটা সুস্থ হলেই সমন্বয়কদের সাথে কথা বলে আন্দোলনের বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলবো।’’
আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ছাপা হতে থাকে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের খবরাখবর। ।AFP News Agency নাহিদ ইসলামের সাক্ষাৎকার প্রচার করে।
বিবিসিতে সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশি সাংবাদিক কামাল আহমেদ জানান যে , এই আন্দোলন এখন আর কোটা সংস্কার আন্দোলনে সীমিত থাকার উপায় নাই। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্ররা আপিল বিভাগের জারী করা নতুন প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করেছে। মানুষের মাঝে দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভের বিস্ফোরন ঘটছে।
পুলিশের তীব্র দমন নীপিড়ন এবং গ্রেফতার অভিযানের মধ্যেও দেশব্যপী বিক্ষিপ্তভাবে চলতে থাকে সমাবেশ , মিছিল ও শ্লোগান । অনলাইনেও চলতে থাকে ব্যপক প্রতিবাদ। যে যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে থাকেন। তবে দঃখজনক হলেও তিক্ত সত্য যে শিক্ষিত সমাজের মাঝে বিড়াট একটা অংশ বিশেষ করে যারা পাবলিক ফিগার হিসাবে পরিচিত তাদের নিরাবতা পালন জন মানুষের মাঝে ব্যপক ক্ষোভ সৃষ্টি করে। ছাত্ররা বিভিন্ন গ্রুপে, প্রোফাইলে এসব ভন্ডদের পরিত্যাগ করার ঘোষনা দেয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - পর্ব ১
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - পর্ব ২
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - পর্ব ৩
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - পর্ব ৪