সত্য ও মিথ্যা আসলে কি ? সত্য হচ্ছে কোন কিছুর বাস্তব নমুনা বা আসল রূপ। আর মিথ্যা হচ্ছে সেই বাস্তব বা আসল রুপকে অস্বীকার করে ভিন্ন কিছু বলা। আসলে সত্য বা মিথ্যার ফারাক সাদা কালর মতই পরিষ্কার। কে সত্য বলছে বা কে মিথ্যা বলছে তা মানুষ মাত্রই ধরতে পারে। আমাদের দেশের প্রধান একটা সমস্যা হচ্ছে মিথ্যাবাদিরা খুব বেশি সরব এবং সত্যবাদীরা নিশ্চপ। সভ্য দেশে এর উল্টো চিত্র দেখা যায়। সভ্যতার অন্যতম শর্তই হচ্ছে সত্যবাদিতা। মিথ্যাকে তাই সভ্য দেশে অসম্ভব ঘৃ্নার চোখে দেখা হয়। বাচ্চা বয়স থেকেই স্কুলে বাচ্চাদের সত্য কথা বলার উপড় অত্যন্ত জোড় দেয়া হয়। সমাজের সর্বস্তরে মিথ্যাকে কোন প্রকার প্রশ্রয়ই দেয়া হয় না।
বিগত স্বৈরাচারী সরকার ও তার সমর্থকদের ক্ষমতায় টিকে থাকার অন্যতম এক অস্ত্র ছিল মিথ্যাচার। সৎ ও সত্যবাদী মানুষ এতকাল কোন ধরনের সমস্যায় যাতে না পড়তে হয় , তাই চুপচাপ থাকাটাই শ্রেয় মনে করত। গুমের যেই ভয়ঙ্কর কালচার চালু ছিল দেশে, তাতে মানুষের বোবা কালা হয়ে থাকায় দোষও দেয়া যায় না। কিন্ত নীরিহ ছাত্র জনতার এত রক্তপাতের বিনিময়ে স্বৈরাচারী সরকার পতনের পরেও যদি আপনি মিথ্যাচার দেখে চুপ থাকেন বা প্রশ্রয় দেন তাহলে আপনি সুবিধাবাদি শ্রেনী হিসেবেই চিহ্নিত হবেন।
এই ব্লগে বয়োজোষ্ঠ ব্লগার সোনাগাজি , কামাল ১৮ দিনের পর দিন মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। ব্লগারদের ব্যক্তি আক্রমন করার জন্য ব্লগার সোনাগাজী বিখ্যাত। এ বিষয়ে বিগত বছরগুলোতে প্রচুর পোস্ট এসেছে। আজ আমি বলব , উনার প্রতিনিয়ত মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ান। সাবেক তথ্যমন্ত্রী আলী আরাফাত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও মাদকাসক্ত আখ্যা দিয়েছিল। ব্লগার সোনাগাজীও এই ধারাবাহিকতায় ছাত্রদের শুরু থেকেই ব্যঙ্গাত্বকভাবে কোমলমতি ডাকছেন। তাদেরকে ভেড়ার চামরা গায়ে দিয়ে শিবির হিসাবে সঙ্গায়িত করছেন। বলছেন বৈষম্যবিরোধি আন্দোলনের মাষ্টার-মাইন্ড হচ্ছে পাকিস্তান মিলিটারীর ইন্টেলিজেন্স, আইএসআই!!! আরেক ব্লগার কামাল১৮ এর প্রতিটা কমেন্টে মিথ্যাচারে ভরপুর। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দেখুন ইনি কি বলেছেন -
কামাল১৮ বলেছেন: আন্দোনকারীরা শীবিরের চেলা- চামুন্ডা।দেড়শ জনের মতো সমন্বয়কের মধ্যে একজন হিন্দু নাই এক জন বামপন্থী নাই।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন -’ ‘মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? ‘’ মুলত এই কথার পরিপ্রেক্ষিতেই শিক্ষার্থীরা বারুদের মত জ্বলে উঠে শ্লোগান দিতে থাকে ‘আমি কে তুমি কে, রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’ । আসলে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভুত জমা ক্ষোভের উদগিরন হয়েছে এই শ্লোগানের মাধ্যমে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই এই জামাত/ শিবির ট্যগিং হয়ে উঠেছিল বিগত সরকারের অন্যতম এক হাতিয়ার। মিথ্যাচারের এক চরম রুপ হচ্ছে এই ট্যাগিং । এই ব্লগেও শুধু সোনাগাজী বা কামাল১৮ নয় , আরো বেশকিছু লীগপন্থী ব্লগার দিনের দিনের পর দিন ব্লগারদের জামাত/শিবির ট্যগিং করেছেন এবং এখনও করে যাচ্ছেন।
১৯৭১ এ পাকিস্তানের পক্ষালম্বন করা জামাতকে এ দেশের জনগনের পছন্দ করার কোন কারনই নাই। তবে জামাতের সবাই যুদ্ধপরাধি বা রাজাকার নয় ।রাজাকাররা ছিল পূর্ব পাকিস্তানি আধা সামরিক বাহিনী যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে সাহায্য করতো। তাই জামাত বা শিবিরের সবাইকেই গনহারে রাজাকার বলাটাও একটা মিথ্যাচার। ১৯৭১ এ যারা শিশু বা যাদের জন্ম ১৯৭১এর পরে তারা কিভাবে রাজাকার হয়? সত্য আপনার /আমার অপছন্দ হলেও যা সত্য সেটা বলতেই হবে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশে ইসলামি শাষন ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখিয়ে জামাত মুলত এক শ্রেনীর মানুষের কাছে প্রিয়ভাজন হয়েছে । তবে জামাতের এই আদর্শ দেশকে আফগানিস্তান বানানোর পায়তারা বলেই মনে হয়। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত কোন মানুষ জামাতকে সমর্থন করার কথা কোন অবস্থাতেই ভাবতে পারে না। অথচ ভেবে দেখুন যে এই জামাত শিবির ট্যগিং কত মানুষকে করা হয়েছে স্রেফ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায়! কত মানুষকে গুম, খুন করা হয়েছে এই ট্যগিং করে! এত বড় রক্তক্ষয়ী এক আন্দোলনের পর এবার এই মিথ্যাচার বন্ধে পার্মানেন্ট কোন ব্যবস্থা নেয়া হোক।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১১