একঃ ব্যর্থতা
রবার্ট দ্য ব্রুস ছিলেন স্কটিশ রাজা, আর তিনি ইংলিশদের বিরুদ্ধে প্রথম স্কটিশ স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তো যুদ্ধের এক পর্যায়ে ইংলিশরা তাকে বেশ দৌড়ের উপর রাখছিল, আর তাতে বাধ্য হয়ে তিনি উত্তর আয়ারল্যান্ড উপকুলের রাথলিন দ্বীপের এক গুহায় আশ্রয় নিলেন। সেখানেই তিনি সেই বিখ্যাত মাকড়শাটার দেখা পেলেন। বেচারা কড়িকাঠে তিন তিন বারের (মতান্তরে সাত বার) প্রচেস্টায় জাল লাগাতে পেরে ইতিহাস হয়ে গেল, আর রবার্ট আরোও একবার ইংলিশদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাড়ানোর অনুপ্রেরণা পেয়ে গেলেন।
প্রায়ই একটা কথা শুনে থাকবেন...
"ফেইলর ইজ দ্য পিলার অফ সাকসেস।"
কিন্তু মনে রাখা ভাল, প্রয়োজনের অতিরিক্ত পিলার কিন্তু নির্মানব্যয় বহুগুন বাড়িয়ে দেয় আর স্থাপনার স্থাপত্য শৈলীরও বারোটা বাজিয়ে দেয়। তাই পিলার সংখ্যার দিকে লক্ষ্য রাখুন।
আবার অনেকেই বলে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েও ফের উঠে দাড়ানোতেই আসল কৃতিত্ব। কিন্তু ব্যাপারটা ডিপেন্ড করে আসলে কোথায় হোঁচটটা খাচ্ছেন তার ওপর। খাদের একেবারে কিনারায় গিয়ে হোঁচট খেলে কিন্তু খবরই আছে।
মোদ্দাকথাঃ
আপনার কাজ আপনাকেই করতে হবে, আর আপনার যা মনে চায় ঘুরেফিরে আপনি ঐটা করতেই থাকবেন। তাই যা ই করেন না ক্যান, ভাল মত করেন।
দুইঃ টিম ওয়ার্ক
আফ্রিকান একটা প্রবাদ আছে, যদি তুমি দ্রুত আগাইতে চাও তাহলে... একলা চল রে। কিন্তু যদি বহুদূর যাইতে চাও, তাহলে দলবেঁধে চল।
টিমওয়ার্ক আসলেই একটা ইম্পর্ট্যান্ট ইস্যু। ফোর্ড গাড়ি কোম্পানির হেনরি ফোর্ড সাহেবও কহেন, কয়েকজন এক সাথে হওয়া মানেই একটা কিছুর শুরু, একত্রে থাকা মানেই উন্নতি, আর একসাথে কাজ করা মানেই সাফল্য।
আর জেনারেল প্যাটন স্যারের তো সাফ কথা, আর্মি মানেই হল টিমওয়ার্ক। আর্মিতে ইন্ডিভিজুয়াল হিরোইজম স্রেফ ঘোড়ার নাদি ছাড়া আর কিছুই না।
বাস্কেটবল গুরু মাইকেল জর্ডানের মতে ট্যালেন্ট দিয়া আপনে ম্যাচ জিতবেন, কিন্তুক চ্যাম্পিয়ন হইতে হইলে টিমওয়ার্কের বিকল্প নাই।
আর মহান মারফি মশাই তো আরেক কাঠি সরেস, তার মতে টিমওয়ার্ক অতিশয় জরুরী জিনিস কারন দলবদ্ধ হয়ে চললে শত্রুর গুলি ভাগাভাগি হয় আর নিজের গায়ে না লেগে দলের অন্যকারো গায়ে লাগবার একটা চান্সও থাকে।
টিমওয়ার্ক আসলেই ইম্পর্ট্যান্ট একটা ইস্যু, দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ। সো ভ্যালু ইয়োর টিম, রেস্পেক্ট ইয়োর টিমমেটস, বি আ টিমম্যান।
বিঃদ্রঃ
ব্যাটম্যান, স্পাইডারম্যান আর সুপারম্যানদের জন্য উপরোল্লিখিত বক্তব্য প্রযোজ্য নহে।
তিনঃ সীমাবদ্ধতা
মায়ের দু চোখ বেয়ে দরদর করে পানি বেয়ে পড়তে দেখে ছোট্ট ছেলেটা খুব অবাক হল। আজ স্কুল থেকে ফেরার পথে তার স্কুল টিচার তাকে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল চিঠিটা মা কে দিতে। সেই চিঠিটা পড়েই তার মা অঝোরে কাঁদছেন।
বিস্মিত কন্ঠে সে তার মা র কাছে জানতে চাইল যে চিঠিটাতে কী এমন লেখা আছে যা পড়ে তিনি এভাবে কাঁদছেন? উত্তরে মা চিঠিটা জোরে জোরে পড়তে শুরু করলেন, "শ্রদ্ধেয়া, আপনি জেনে গর্বিত হবেন যে আপনার ছেলের মত অসম্ভব প্রতিভাধর ছেলে আমাদের স্কুলে আর একজনও নেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এমন অসামান্য প্রতিভাবান একজন ছাত্রকে পড়ানোর মত যোগ্য শিক্ষক আমাদের স্কুলে একজনও নেই। তাই আমরা বিনীত অনুরোধ করছি যে ওকে আর অযথাই এই স্কুলে না পাঠিয়ে আপনি নিজেই এখন থেকে নিজ গৃহেই আপনার ছেলেকে পড়াবেন। ধন্যবাদ।" চিঠিটা শুনে কাধ ঝাকিয়ে ছেলেটা খেলতে চলে গেল।
অনেকদিন পর সেই ছোট্ট ছেলেটা যখন মানব ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আর আবিস্কারক, তখন একদিন বাসায় পুরানো বক্স ঘাটতে গিয়ে হঠাতই সেই খামটা তার চোখে পড়ল। নিস্পাপ কৌতুহল নিয়ে সে খাম থেকে সেই চিঠিটা বের করে পড়তে শুরু করল, "শ্রদ্ধেয়া, আমরা অতীব দুঃখের সাথে জানাতে বাধ্য হচ্ছি যে আপনার ছেলেটি একজন নিরেট গবেট এবং সে কোন স্কুলেই যাবার উপযুক্ত নয়। আমরা আজ থেকে আপনার ছেলেকে আর আমাদের স্কুলে না পাঠানোর জন্য আপনাকে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। ধন্যবাদ।"
প্রয়াত মায়ের জন্য সুগভীর শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতায় টমাস আলভা এডিসন চিঠিটা মুখে চেপে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন...
বটম লাইনঃ
আসুন, অন্যের দুর্বলতাকে কটাক্ষ করার ফালতু অভ্যাস থেকে বিরত থাকি। মনে রাখি, ২৩ জোড়া ইউনিক সেট অব ক্রোমোজোম নিয়ে আপনি আমি, আমরা সবাই কিন্তু এক অর্থে অনন্য। আপনি আপনার স্রষ্টার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবেন?
চারঃ আউট অব দ্য বক্স।
রোমেল ছিলেন কঠিন এক জেনারেল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নর্থ আফ্রিকান ক্যাম্পেইনে লোকে তারে ডাকত 'ডেজার্ট ফক্স' নামে। বৃটিশ জেনারেল মন্টগোমারি ওরফে 'মন্টি' রোমেলের প্রতিপক্ষ হিসেবে আফ্রিকার মাটিতে পা দেবার আগ পর্যন্ত জেনারেল অচিনলেক ছিলেন বৃটিশ বাহিনীর দায়িত্বে।
৮৮ মিলিমিটার বিমান বিধ্বংসী কামান তখন জার্মান-বৃটিশ দুই পক্ষই ধুমায়া কিনতেছে। তো এই কামানটা আদতে বিমান বিধ্বংসী রোলেই ব্যবহারের কথা থাকলেও চাইলে ট্যাংক বিধ্বংসী রোলেও ব্যবহারের অপশন ছিল।
নভেম্বর, ১৯৪১ এ ত্যক্তবিরক্ত অচিনলেক যখন রোমেলের বিরুদ্ধে মেজর অফেন্সিভ লঞ্চ করলেন, 'ডেজার্ট ফক্স' তখন 'আন অর্থোডক্স' একটা সিদ্ধান্ত নিলেন। সংগত কারনেই পেনযার কমান্ডার হিসেবে এই ট্রুপার জেনারেল ট্যাংক আর ট্যাংক রণকৌশলে সমসাময়িক আর দশজনের চে কাবিল ছিলেন। তিনি সব ৮৮ মিঃমিঃ বিমান বিধ্বংসী কামানের রোল পাল্টে ট্যাংক বিধ্বংসী গ্রাউন্ড রোলে ব্যবহারের নির্দেশ দিলেন। আর ফলাফল হল ভয়াবহ।
অচিনলেকের ট্যাংক রেজিমেন্ট এই নতুন উপদ্রবের জ্বালায় আগাইতেই পারল না। তিনটা ট্যাংক প্রুফ লোকালিটি নিয়ে রোমেল দিব্যি বসে থাকলেন দিনের পর দিন। এই অবস্থা চলল জার্মান রসদে টান পরার পর রোমেল পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেবার আগ পর্যন্ত।
মোদ্দাকথাঃ
ব্যাকরণের বিরুদ্ধ যাওয়াটা নিঃসন্দেহে এক ধরনের ধৃস্টতা। কিন্তু শর্ত হল ব্যাকরণ বিরুদ্ধদের যে কোন মুল্যে জয়ী হতেই হয়। অন্যথায় ফেল্টু বলে লোকে টিটকারি মারে
কিছু কথা ইংরেজিতে ভাল শোনায় আর ভাল বোঝান যায়, তাই ইংরেজি তর্জমাটাও দিলাম, ইনভার্টেড কমা খুঁজে লাভ নেই
~being unorthodox is undoubtedly an audacious act, but the fair condition is that u must b successful at any cost~
otherwise u will b simply blamed as a poor conventional~
পুনশ্চঃ
ইতিহাসে 'সাইফুল্লাহ' খালিদ বিন ওয়ালিদ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কাভুলরি কমান্ডার হিসেবে স্বীকৃত; তার পরেই আছেন 'ডেজার্ট ফক্স' রোমেল!
পুনঃ পুনশ্চঃ
মার্চার, ট্রুপার, গানার, স্যাপার
=
পদাতিক, সাজোয়া, গোলন্দাজ, ইঞ্জিনিয়ার
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৫৪