বেশ কয়েক বছর আগের কথা।
ঢাকায় আসিয়া কলেজে ভর্তি হইলাম। রাস্তায় তো হাটি না, যেমন আসমানে উড়িয়া বেড়াইতেছি,এমন একখানা ভাব। যাইহোক, কলেজে আসিয়াই বুঝিলাম, আমার চেয়ে বড় ভাবিস্টরা এইখানে আছে!!!

মেয়েদের ক্লাস হইতো মর্নিং শিফ্টে, আর আমাদের ডে শিফ্টে!!



আমাদের ক্লাসরুমটা ছিলো ৪তলায় একেবারে সিড়ির পাশে। আমরা তাই ক্লাসের ফাকে সিড়ির সাথে করিডোরে দাড়াইয়া থাকিতাম। এরই মধ্যে একদিন, এক ছেলে আসিয়া ক্লাসের সবাইকে ডাকিতেছে, "ঐ তুফান আইতাছে"। দেখিলাম সকলেই দৌড়ায়া সিড়ির কাছে গেলো। সকলের পেছনে পেছনে আমিও গেলাম। গিয়া দেখিলাম একটা চুইট আপু, তাহার আরো ৩/৪টা বান্ধবীসহ ৫তলা হইতে নামিতেছেন। :!> :#> তুফান কি, তা বুঝিতে কারোরই বেগ পাইতে হইলো না।
এরপর হইতে আমরা প্রায় প্রতিদিনই কারো তুফান আইতাছে সিগন্যাল শুনিলেই, সিড়ির সামনে যাইয়া ভিড় জমাইতাম। আমাদের দেখাদেখি আশেপাশের ক্লাস হইতেও পুলাপাইন দৌড়ায়া আসিতো কি হইতাছে, বুঝিবার জন্যে। অন্য ক্লাসের এক ছেলে আমাদের বলিলো, "জানোস এইটা কে?? এইটা এক সিনিয়র টিচারের মেয়ে!!" ইহা আমদের জানাইয়া সে এমন একটা ভাব লইলো, যেমন ভিলেন জাম্বুর ২মণ ওজনের ঘুষি হইতেআমাদের রক্ষা করিলো!!

তো যথারীতি একদিন আমরা সিগন্যাল পাইয়া সবাই সিড়ির সামনে উপস্থিত। ইয়ামিন নামের এক ছেলে ছিলো, শয়তান ও মনে হয় তাহার কাছে আসিয়া তালিম লইয়া যাইতো!! দুষ্ট হইলেও সে আদব-কায়দা জানিতো। আপুদের দেখিয়াই সে সালাম দিলো!! কিন্তু তুফান আপু আজকে নিচে না নামিয়া দেখিলাম আমাদের দিকে ধেয়ে আসিতেছে। আমরা দূর্বলচিত্তের পুলাপাইন এক-দুই পা পিছাইতে পিছাইতে প্রায় ক্লাসের দরজার সামনে। দাড়াইয়া রইলো শুধু ঐ ইয়ামিন।
সেই আপু আসিয়া তারে বলিলো....কি, ফাইজলামি করো???!!!
ইয়ামিনের সহজ-সরল উত্তর... না, সালাম দিলাম।

এইবার বলিলো....তুমি চিনো, আমি কে??!!
ইয়ামিন নম্রভাবে জবাব দিলো....তুফান!!!
এই কথা শুনিয়া একদল পুলাপাইন উচ্চস্বরে হাসিয়া উঠিল। আর আমার মত ভীতু প্রজাতির যাহারা, আমরা ঢোক গিলিলাম।
এইবার সেই আপু তেলে বেগুনে জ্বলিয়া উঠিল। তাহার পরিচয় দিলো। এবং সত্যই যে তিনি একজন শিক্ষকের কন্যা, তা আমরা জানিতে পারিলাম।
এইবার আমরা সকলেই ঢোক গিলিলাম।
ইতোমধ্যে, আমাদের স্যার ক্লাস লইবার জন্য আসিয়া পরিয়াছেন। আমরা আশংকা করিলাম, তুফান আপু বুঝি এইবার স্যারের কাছেই বিচার দিয়া বসেন!! কিন্তু তিনি তা না করিয়া উদার মনের পরিচয় দিয়া প্রস্থান করিলেন।আমরা বাচিলাম। তবে মনের ভিতর হইতে সেই শংকা কাটিতে বহুদিন লাগিয়াছিলো। আর কোনোদিন আমরা তুফান দেখিতে বাহিরে যাই নাই, এ কথা বলিবো না; তবে অন্যদের ডাকাডাকি করা হইতো না।
