বুক রিভিউ: One Night @the Call Center
লেখক: চেতন ভগত
ছয় জন মানুষ, একটা মাত্র রাত । মানুষগুলো আমাদের আশেপাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাধারন কিছু মানুষ, কিন্তু সেই রাতটা মোটেও সাধারন কোন রাত নয় ।
One Night @the Call Center ইতোমধ্যেই অল টাইম বেস্ট সেলার উপাধি পেয়ে যাওয়া চেতন ভগতের দ্বিতীয় উপন্যাস । উপন্যাসের শুরুতে দেখা যায় চেতন ভগত রাতের জার্নিতে ট্রেনে করে এক জায়গায় যাচ্ছেন। খালি কম্প্যার্টমেন্টে পাশাপাশি সিট পরা এক সুন্দরী তরুনীর সাথে তার পরিচয় হয়। একঘেয়ে সময়টা দূর করার জন্যে লেখককে সে প্রস্তাব দেয় একটা সত্য ঘটনা শোনানোর। কিন্তু একটা শর্ত ছিলো । লেখককে তার বলা কাহিনী নিয়ে একটা বই লিখতে হবে। প্রথমে না করলেও, লেখক পরে অনেকটা বাধ্য হয়েই রাজী হন।
কারন কাহিনীটা ছিলো অসম্ভব পর্যায়ের । ছয়জন ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষের সাথে ঈশ্বরের কথা হওয়া নিয়ে, তাও আবার মোবাইল ফোনে!
কাহিনীটা তিনজন পুরুষ এবং তিনজন নারী চরিত্রের একটা রাতকে নিয়ে ; উপন্যাসের চরিত্র গুলোর নাম শ্যাম, বরুন, মিলিটারি আঙ্কেল, রাধিকা, প্রিয়াংকা এবং এষা । জীবনে একেকজন একেক ধরনের ইচ্ছা এবং ট্র্যাজেডির স্বীকার। একসাথে সবাই কাজ করে Connexions নামের এক কল সেন্টারে যা American এক কোম্পানির কাস্টমার কেয়ার হিসেবে পরিচালিত । কল সেন্টারে তারা নিজেদের নামে পরিচিত না । সেখানে শ্যাম হয়ে যায় স্যাম, বরুন হয় ভিক্টর ।
ছয়জন চরিত্র ছয় রকমের এবং সমাজের ছয় স্তরের। শ্যাম ম্রিয়মান, পলায়নপর এবং ব্যক্তিত্বহীন মানুষ। সে নিজেকে লুকিয়ে রাখতেই বেশী পছন্দ করে, অন্যদের কাছে তার কোন গুরুত্বও নেই । বরুন ডিভোর্সি বাবা-মায়ের ছেলে; একগুঁয়ে, জেদী । চাকা আছে এমন সবকিছুই তার পছন্দ। এজন্যে তার নামই হয়ে গেছে গাড়ির স্টার্ট হওয়ার শব্দ মিলিয়ে; ভ্রুম! মিলিটারি আঙ্কেল নীরব, দুনিয়ার সবকিছুর উপর বিরক্ত একজন মানুষ। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর থাকতেন ছেলের সংসারে, সেখানে থেকে তার বের করে দেওয়ায় এখন থাকেন একা। কল সেন্টারে চাকরি করে জীবন চালান।
রাধিকা গৃহিণী, কলেজ জীবনের প্রেমে থেকে বিয়ে এবং তার যাবতীয় ব্যস্ততা স্বামীর বাড়ির সবাইকে খুশী রাখার জন্যে। চেষ্টার কোন ত্রুটি সে করে না, কিন্তু প্রাগৈতিহাসিক যুগের শ্বশুড়, শ্বাশুড়িকে সন্তুষ্ট করা অসম্ভব কাজ। শ্যামের প্রাক্তন প্রেমিকা প্রিয়াংকা স্বাধীনচেতা, বাস্তববাদী এবং প্রখর ব্যক্তিত্ববান। সে বাস করে মায়ের সাথে, যিনি মেয়ের প্রতিটা কাজে আপত্তি জানানো কে নিজের দায়িত্ব বলে মনে করেন। কল সেন্টারের চাকরিটা প্রিয়াংকা করে যাচ্ছে কিছু টাকা জমানোর জন্যে, যা দিয়ে সে পড়াশুনা চালিয়ে যাবে। আর সর্বশেষ চরিত্র এষা কিছুটা উচ্ছৃঙ্খল এবং সৌখিন। বাবা - মা'র অমতে বাসা থেকে সে বেড়িয়ে আসে মডেলিং করে ক্যারিয়ার গড়ার জন্যে। রাতে কল সেন্টারে ডিউটির পর দিনে তার প্রধান কাজ হয় বিজ্ঞাপনের এজেন্সিগুলোতে মডেলিংয়ের সুযোগ খোঁজা ।
....... চরিত্রের মধ্যে আরও আছে ভয়াবহ একজন বস। নাম বকশী ; যার কাজই হলো কর্মচারীদের নানাভাবে হেনস্তা করা। কল সেন্টারের অসংখ্য কর্মচারী চাকরি হারাতে বসেছে তার কারনে।
ডিউটির একরাতে পরিস্থিতি সব মিলিয়ে সহ্যের বাইরে চলে গেলো। আমাদের গল্পের প্রধান ছয় চরিত্র নিশ্চিত হয়ে যায় পরদিন সকাল থেকে তাদের আর চাকরি থাকছে না। জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে গভীর রাতে কল সেন্টারের ডিউটি বাদ দিয়ে তারা বাইরে বেড়িয়ে পড়ে এবং পৌঁছে যায় মৃত্যুর খুব কাছাকাছি।........... তখনই ঘটে তাদের জীবনের অদ্ভুততম ঘটনা। নেটওয়ার্ক শূন্য জায়গায় একটা ফোন আসে, ফোনকারী আর কেউ নন; স্বয়ং ঈশ্বর! কিন্তু এ কিভাবে সম্ভব!
তারপর ঈশ্বর কি এমন শোনান তাদের যা আমূল বদলে দেয় তাদের জীবন? কি ঘটে কল সেন্টারের হাজারো কর্মীর ভাগ্যে? কিংবা জঘন্যতম চরিত্র বকশীর?
চেতন ভগতের লেখার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলে সাবলীলতা এবং মন্ত্রমুগ্ধ করার মতো গল্প বলার ভঙ্গী। তার প্রতিটা লেখাই জীবন ধর্মী, যেন আমাদের চারপাশের মানুষদের নিয়েই লেখা; কিন্তু একবার পড়া শুরু করলে আপনি নিমিষেই ঢুকে যাবেন কাহিনীর ভেতরে। এক বসায় শেষ করার আগে আর বেরিয়ে আসতে পারবেন না ।
....... তো প্রিয় পাঠক, আপনি প্রস্তুত তো ঈশ্বরের দেওয়া কলটা রিসিভ করার জন্যে??
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৩