somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

*~*..সিলি স্পাইং..*~* -- ২

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


*~*..সিলি স্পাইং..*~* -- ১

কমলাপুর রেলষ্টেশন থেকে এক সিলটি বন্ধুকে কার্ড ফোনে ফোনদিয়ে জেনে নিলাম... সিলেটের সবচেয়ে ভাল হোটেল কোনটা...

ব্যাস...আপাততঃ আর কিছুর দর্রকার নেই... বিনা চিন্তায় উঠে পড়লাম উপবনে- ১০.০০টায় ছাড়বে...

-----------------------------------------------------------------------------------

প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে পরদিন সকাল ৮.৩০টায় সিলেট পৌছলাম... সোজা তেলিহাওড়ের হোটেল হিলটাউনে...

শুরু কর্লাম ডেস্কের সাথে আমার চাঁপাবাজীর মহড়া...

-- এক্সকিউজ মি! আজ আমাদের এক্টা সেমিনার আছে... স্যার আর এক্জন ফরেইনার থাকবেন আপনাদের এখানে... একটু কি দেখবেন কোন কোন রুম গুলো বুকিং নেয়া হয়েছে? :P

রিসিপশনিষ্ট জানালো... ওদের জন্য তিনটা রুম বুকিং দেয়া হয়েছে... আমি বললাম, হ্যাঁ একজন ম্যাডামও আসছেন... (যাক, এটলিষ্ট ট্র্যাক টা পাওয়া গেলু) B-)

-- আমার জন্যও এক্টা সিঙ্গেল রুম রাখবেন প্লিজ, এটার বিল আমি পে করবো...

বের হওয়ার আগে ওদের ওখান থেকেই জিএমজি'র সিলেট শাখায় ফোন দিয়ে জেনে নিলাম ঢাকার ফ্লাইট ক'টায় পৌছবে...

হাতে ম্যালা টাইম... কি করি?

(হায়রে বৃষ্টি আর বৃষ্টি... চারিদিকে বিশাল আয়োজন- আর মাত্র একদিন বাকি পূজা'র )

কোনভাবে বের হয়ে লোকাল হোটেল থেকে ইন্জিনে তেল-পানি লোড দিয়ে গেলাম সিলেট পর্যটনের মোটেলে... পরিচিত একজন আছে তাঁর সাথে দেখা করতে...

ঘন্টা খানেক গল্প করার পর ছুট লাগালাম টেম্পুতে করে এয়ারপোর্টের দিকে...

জিএমজির কাউন্টারে গিয়ে এরাইভ্যাল টাইম জিজ্ঞেস করলাম ফ্লাইটের সাথে প‌্যাসেন্জার লিষ্টও চেক করে নিলাম (সব ঠিকৈ আছে)...

সিডিউল টাইমেরও অনেক্ষণ পর প্লেন ল্যান্ড করলো...

আমি আড়ালে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম ওদের জন্য... অনেক্ষণ... হায় হায়- কোন বিদেশী- টিদেশী তো দেখিনা... মুন্নীই বা গেল কোথায়... উফ্... অপেক্ষার সময়গুলো তখন যে কত কষ্টে শেষ হয়েছিলো :((

অনেক অপেক্ষার পর দেখি সাদা চুলের প্রায় ৬ ফুটি বাঁশের মাথা দেখা যায়...হালে পানি পাইলাম এতক্ষনে :D

পিছনে আমাদের পরী আর তার পাশে ডঃ ... লুল :P

পিংক কালারের শাড়িতে অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো ওকে... বাঁ দিকের আঁচল- মাটি ছুঁই ছুঁই প্রায়... বাপ্রেহ্ =p~

মাথায় কাজ শুরু হয়ে গেছে- কিভাবে মুন্নীর সাথে কন্টাক্ট করা যায়... (সিগ্রেটও খাইনা যে বুদ্ধির গোড়ায় এক্টু ধূয়া দিবো :( )

উপায়- অন্তর না দেখে বের হওয়ার গেট টাকেই টার্গেট করলাম...

ওরা কেউ আমাকে দেখেনি এখনও... ঠিক যে মুহুর্তে এয়ারপোর্ট হল থেকে গেট দিয়ে বের হবে মুন্নী -- আমিও বের হতে চাইলাম একই সাথে... গায়ে ধাক্কা লাগলো হাল্কা (অবশ্যই ইচ্ছাকৃত) ... আমি স্যরি বলেই বললাম- রুম নাম্বার ২২৫, তারপর বাঁয়ে সরে গেলাম...অপেক্ষমান গাড়িতে করে ওরা রওনা দিল হিলটাউনের উদ্দেশ্যে...

আমি এক মুহুর্তের চাহনীতে ওর ঝুলে পড়া চোয়াল দেখেছিলাম তখন...

তারপর আমি টেম্পুতে করে ফিরতি পথ ধরে চলে এলাম হোটেলে... ডেস্কে এসে জেনে নিলাম রুম গুলো কতদিনের জন বুকড...

অপেক্ষা করছি হোটেলের লবিতে... খাওয়ার জন্য হলেও নীচে নামবে- এই আশায় :)

সত্যতা প্রমাণ করার জন্যই নাকি- একপর্যায়ে ওরা তিনজনই নীচে নেমে এলো... রেষ্টুরেন্টে লাঞ্চ করবে বলে... মুন্নীর সাথে চোখাচোখি হচ্ছে কিন্তু ঐ পর্যন্তই...

ওরা উপরে চলে যেতেই আমি গোসল করে ভাত খেয়ে (অবশ্যই বাইরের হোটেলে) ফ্রেস হয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই হোটেলের সেমিনার রুমে পৌছলাম... যদি মুন্নী আগে আগে আসে বা কিছু জানাতে চায়...

কত মানুষ আসে যায় কিন্তু আমাদের পরী আর আসেনা...

নাহ্- ওরা হলে আসলো নির্ধারিত সময়েই...

লেকচার শুরু করলো ৬ ফুটি আর ডাবিং করলো ডঃ লুল... পাশে দাড়ানো আমাদের পরী...

ডঃ লুল আমাকে দেখেই চিনে ফেলছে... (ওনার চোখ অন্ততঃ সে কথাই বল্ছে) কিন্তু কিই বা করার আছে :D

এক সময় লেকচার পর্ব শেষ হলো আর মুন্নী টেকনিক্যাল সাইড নিয়া ত্যানা প‌্যাঁচাইতে লাগলো... সিলেটের ক্লায়েন্টরা বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকলো আর ও সুন্দর ভাবে উত্তর দিতে থাকলো... মাঝে মধ্যে আমার দিকেও তাকাচ্ছে... আমি অভয়ের হাসি দিচ্ছি...

এক সময় সেমিনার শেষ হলে ডঃ আর ৬ ফুটি রুম ছেড়ে বেড়িয়ে গেল... আমি চট করে ওর কাছে গিয়ে বর্তমান ষ্ট্যাটাস আর নেক্সট প্ল্যান জেনে নিলাম...আপসুস, আমার সাথেও ক্লায়েন্টের আচরনই করলো... B:-)

যাক... এক ফাঁকে ও বললো বাইরে বের হবে ওরা কিন্তু কোথায় যাবে সে বুঝতে পারছেনা... প্রোগ্রাম শেষে আমি গিয়ে হোটেলের সামনে পজিশন নিলাম... বেশ কিছুক্ষন পর ডঃ লুল আর মুন্নী বের হলো... গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে... চোখাচোখি হলো আমার সাথে... ও দু'হাত তুলে মোনাজাতের ভঙ্গি করতেই যা বোঝার বুঝে নিলাম...গাড়ি চলে এলো... অনেক ভীড় ঠেলে আমি এক্খান রিক্সা নিয়া চৈলা গেলাম সোজা হযরত শাহজালাল (রঃ) -এর মাজারে...

বোন আমার জন্য অপেক্ষা করছে... কাছে গিয়া জিজ্ঞেস করলাম লুল কৈরে ?

... জানলাম, ওই ব্যাটা গেছে জিয়ারতে... সে যায় নাই (আমার জন্যই নাকি অপেক্ষা কর্তাছে, সে নাকি জানতো আমি আসবৈ ) :|

বললো- রাতেই ঢাকা ফিরে যাচ্ছে... বাসায় ফিরতে ফিরতে নাকি ৯/৯.৩০ টার মতো বাজবে...

আশ্চর্য- ছোট ভাইকে যেভাবে বোন মাথার চুল ঠিক করে দেয় আমাকেও সে চুল ঠিক করে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করছে পাগলামী করার দরকার কি ছিল, একটু রেষ্ট করলেই তো পারতাম, ভাত খেয়েছি কিনা, চা-নাস্তা কিছু করেছি কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি... (আমার তো শরমে মৈরা যাইতে মঞ্চাইতেছিলো-- এত মাইনসের সামনে আমার চুল ঠিক করনের কি হৈলো)...বললাম - হাত সরা মাথা থিকা :!> :!>

কিছুক্ষণ কথা বলে আমি সটকে পড়লাম ডঃ লুল-কে দেখে... :-0

অনেকটা ভাড় মুক্ত হওয়ার স্বাদ নিয়ে হোটেলে ফিরলাম হেঁটেই... 8-| 8-| 8-|
এতক্ষণে সিলেট শহরকে দেখতে লাগলাম... কত মানুষ শেষ মূহুর্তের শপিং সেরে নিচ্ছে, বিভিন্ন যায়গায় প্রতিমাকে সাজানো হচ্ছে সুনিপুন- সুদক্ষ হাতে... বাঁশির শব্দ- কোলাহল- রিক্সার ভীড়- কেমন আনন্দ আনন্দ অনুভূতি...



~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বাসায় ফোন করলাম রাত পৌনে দশটার দিকে... বোন আমার সহি সালামতেই বাসায় ফিরে এসেছে...

হোটেলের ফর্মালিটি শেষে রাত দশটার টিকেট কেটে অপেক্ষায় আছি বাস ছাড়ার...

(মনটা বিষন্ন- একদিনের চাকরীটা খোয়া যাওয়ায়, আর এই প্রথম নিজের দিকে একটু সুযোগ হলো তাকানোর... সারাদিনের স্মৃতি আর দূর্গা পূজার ঢাকের আর বৃষ্টির শব্দের অপূর্ব সংমিশ্রনে কখন যে ঘুমের অতলে তলিয়ে গেলাম... এক ঘুমেই সবুজের রাজ্য পিছনে ফেলে চলে এসেছি কর্মচাঞ্চল্য ঢাকায়)

শান্ত- স্নিগ্ধ শিউলী ফোটা ভোরে একটা রিক্সা নিয়ে রওনা দিলাম বাসার পথে...
*******************************************************





সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:০৩
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×