গ্রীষ্মকালের গরমে, অবস্থাটা চরমে...
গত ক’দিনের কাঁঠালপাকা গরমে এক্কেবারে ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা । গাছের পাতাগুলোর সাথে ‘গরম’ বোধ হয় ‘বরফ-পানি’ খেলছে । ছুঁয়ে দিয়ে বলেছে, “বরফ” । ব্যস, একদম স্ট্যাচু । কোনও নড়ন-চড়ন নাই । ‘হাওয়া’ কখন এসে গাছের পাতাগুলোকে ছুঁয়ে দিয়ে বলবে, ‘‘পানি’’ – সেই অপেক্ষা । কিন্তু ‘হাওয়া’ বাবাজীর টিকিটির দেখা নেই।
এই অসহনীয় গরমের কারণে সৃষ্টি হতে পারে নানা শারিরীক সমস্যা, বিশেষ করে হিটস্ট্রোক বা সানস্ট্রোক কথাটা আমরা প্রায়ই শুনছি । চলুন দেখে নেই হিটস্ট্রোকের টুকিটাকি...
হিটস্ট্রোক কি ?
হিট স্ট্রোক হচ্ছে শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে সৃষ্ট এক ধরনের জটিলতা । আমরা জানি মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট । কোন কারণে যদি তা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে চলে যায় তাহলে হিট স্ট্রোক হতে পারে ।
হিটস্ট্রোক কেন হয়?
আমরা জানি বিপাক ক্রিয়ার ফলে আমাদের শরীরে তাপ উৎপন্ন হয় । ঘামের মাধ্যমে শরীর অতিরিক্ত তাপ বের করে দেয়ার কাজটি করে থাকে । কিন্তু অত্যধিক গরম ও উচ্চ আর্দ্রতার কারণে এই তাপ বের করে দেয়ার কাজটি যখন সম্ভব হয় না, তখনই হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা দেখা দেয় ।
হিটস্ট্রোকের আরেকটি কারণ হল ডিহাইড্রেশন । একজন ডিহাইড্রেটেড ব্যক্তি ঘামের মাধ্যমে যথেষ্ট দ্রুত তাপ বের করে দিতে সক্ষম হন না । যার ফলশ্রুতিতে শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক রকম বেড়ে গিয়ে হিট স্ট্রোক হতে পারে ।
যাদের হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি
•শিশু ( শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করার সিস্টেম ঠিকভাবে ডেভেলপড না হওয়ার কারণে )
•বৃদ্ধ ( শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করার সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে )
•অ্যাথলেট
•প্রচণ্ড রোদে যারা বাইরে কাজ করেন, যেমন- দিনমজুর
এই চার শ্রেনী হিটস্ট্রোকের জন্য সবচে' বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
শরীরের তাপমাত্রা অসহনীয়মাত্রায় বেড়ে গেলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেবে-
• মাথা ঝিম ঝিম করা
• বমি করা
• অবসাদ
• দুর্বলতা
• মাথা ব্যাথা
• মাংশপেশির খিঁচুনি
• চোখে ঝাপসা দেখা
হিটস্ট্রোকের লক্ষণসমূহ
• দেহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া
• ঘামের অনুপস্থিতি, চামড়া খসখসে লাল হয়ে যাওয়া
• পালস বেড়ে যাওয়া
• শ্বাস নিতে কষ্ট
• ব্যবহারের অসংলগ্নতা
• হ্যালুসিনেশন
• কনফিউশন
• খিটখিটে মেজাজ
• খিঁচুনি
• কোমায় চলে যাওয়া
হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির শুশ্রূষা
প্রথম এবং প্রধান করণীয় হবে আক্রান্ত ব্যক্তির তাপমাত্রা কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করা । এজন্য-
• হিটস্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলেই আক্রান্ত ব্যক্তিকে ছায়াযুক্ত একটি জায়গায় নিয়ে আসুন, গায়ের ভারি কাপড় খুলে দিন এবং ঠান্ডা বরফ পানি দিয়ে গা মুছে দিন । তাকে ফ্যানের নিচে বা এসি রুমে নিয়ে আসুন। সম্ভব হলে তার বগল ও রানের খাঁজে আইস প্যাক দিন।
• যদি আক্রান্ত লোকটি পানি খাওয়ার মত অবস্থায় থাকে তাহলে তাকে ঠান্ডা পানি বা পানীয় পান করতে দিন।
• একটি থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মেপে দেখুন এবং ১০১-১০২ ডিগ্রী ফারেনহাইটে না আসা পর্যন্ত তাকে ঠান্ডা করা চালিয়ে যান।
• হিট স্ট্রোক হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্থানীয় হাসপাতালে নিতে হবে।
মনে রাখবেন হিট স্ট্রোক এক প্রকার মেডিকেল ইমার্জেন্সি যেখানে সাথে সাথে রোগিকে যথাযথ চিকিৎসা না দেয়া হলে রোগি মৃত্যুবরন করতে পারে।
হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয়
• সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাটি হবে দেহকে dehydrated হতে না দেয়া । এজন্য প্রচুর পরিমাণে পানি, ফলের রস খান ।
• ঘামের সাথে দেহের লবণ বেরিয়ে যায় । দুর্বল বোধ করলে স্যালাইন খেতে পারেন ।
• বেশি গরমে ভারি কাজ পরিহার করা । যদি করতেই হয় তাহলে কাজের ফাকে ফাকে প্রচুর পরিমানে তরল পান করা । খেয়াল রাখুন সেটি যেন আবার ক্যাফেইন সমৃদ্ধ না হয় (সফট ড্রিংক, চা ইত্যাদি)
• বাইরে বের হওয়ার সময় ঢিলেঢালা ও হাল্কা রঙের পোশাক পরা ।
• ক্যাপ বা ছাতা ব্যবহার করুন ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৯