ব্যাটারিচালিত তিন চাকার অটোরিক্সা বা সংক্ষেপে অটো । রিক্সার চেয়ে সস্তা এবং চলে অপেক্ষাকৃত জোরে । তাই অটোই প্রেফার করি । কিন্তু মাঝখানে ঘটে যাওয়া দু'টি ঘটনার পর অটোতে উঠা তো দূরে থাক, অটো দেখলেই আমি রীতিমত আতংকিত বোধ করি ।
ঘটনা-১
ফাগুনের প্রথম দিন। বসন্তকে বরণ করতে দু’খানা অটো বোঝাই হয়ে ঘোরাঘুরি করতে বের হলাম সে উপলক্ষে। আমরা ১৫ জন। গন্তব্য মহিপুর।
নৌকা ভ্রমণ হল। ফটোসেশন হল। ‘তেলুয়া’ পিঠাও খেলাম অনুপম দাদার কল্যাণে।
ফিরতে ফিরতে অন্ধকার।
বসছি সামনে, অটোওয়ালার ডানে। আবিষ্কার করলাম মামার অটো কানা উরফে হেডলাইট নষ্ট। কি উপায়? অন্য অটোকে আগে দেওয়া হল। আমাদের সামনে থেকে ‘অটো উইথ দ্য হেডলাইট’ পথ দেখিয়ে নিয়ে চললো।
ভাঙ্গা রাস্তার সুবাদে ফ্রি ফ্রি ঝাঁকি খেতে খেতে যাচ্ছি। হঠাৎ আমাদের চালকের মনে হল সামনের পথপ্রদর্শনকারী অটো অযথাই সুপার স্লো মোশনে চলছে। আমাদের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অটো ‘জিপি ইন্টারনেটের মত ধীর গতিতে চলমান’ সামনের অটোটিকে পিছনে রেখে নিজেই লিড নিল।
আমাদের অটো চালক তখন মাইকেল শুমাখার। গতি পেয়ে বসেছে তাকে। সাঁই সাঁই করে একে একে সাইকেল, রিক্সাকে পিছনে ফেলে উনি ছুটে চলেছেন।
ঠিক তখনই ঘটলো ব্যাপারটা।
“ধুম” খ্যাত জন ইব্রাহিম বাইক নিয়ে আসছিলেন আমাদের বিপরীত দিক থেকে।
আমাদের সামনে একটা অটো, ডানে ভ্যান।
মাইকেল শুমাখার এবং জন ইব্রাহিম দু’জনেই মনস্থির করে ফেলেছেন। একজন ওভারটেক করবেন অটো , অন্যজন ভ্যান।
প্লানদ্বয় ছিল পরস্পরছেদী। ফলশ্রুতিতে যা হবার তাই হল।
বাইক অটোর সামনের দিকে একটা ধাক্কা দিয়ে ভারসম্য হারাল। আমি উরু আর পায়ে প্রচণ্ড একটা ধাক্কা অনুভব করলাম মুহূর্তের জন্য; তারপর অনুভূতিশূন্য। পিছনে আরও ‘কিছু একটায়’ ধাক্কা খেল বাইক। আমি অজানা আশংকা নিয়ে পিছে তাকিয়ে দেখলাম জন ইব্রাহিম স্লো মোশনে রাস্তার দিকে পড়ছেন।
ঘটনার আকস্মিকতা কাটার পর আবিষ্কার করলাম বাইক পিছনের যে ‘কিছু একটায়’ ধাক্কা দিছিলো সেটা হল আমাদের অনুপম দাদা। বেচারা পায়ে ভাল রকম ব্যাথা পাইছেন।
আর আমার অবস্থা ভাল। পায়ে খানিকটা কাটছে। আর উরুর দিকে সেলাই করতে হইছে। মানে জিন্সের আর কি! ‘L’ এর মিরর ইমেজ শেপে ছিঁড়ে গেছে জিন্স।
এ দিকের পকেটেই ক্যামেরাটা ছিল। ভয়ে ভয়ে বের করলাম। নাহ! ঠিক আছে ব্যাটা।
তো এই ছিল আমার বসন্তের সূচনা ।
ঘটনা-২
দ্বিতীয় ঘটনাটা এবার বাসায় আসার সময় ।
আড়াইটায় বাস । তাড়াহুড়া করে টার্মিনালের উদ্দেশ্যে এক অটোতে চড়ছি ।
যাত্রাপথে আমার অটোর ব্রেক গেল নষ্ট হয়ে । টার্মিনাল পৌঁছাতে আরও কিছুটা পথ বাকী ।
অটোওয়ালায় কইলো, ''মামা! আস্তে আস্তে আগাই । বেকায়দা দেখলে সামনের অটোত টুক্কুস কইরা লাগায়া দিবো !"
আমার ব্রেকবিহীন অটো চলতেছে । বেকায়দা দেখলেই আমার অটোওয়ালা সামনের অটোর সাথে 'টুক্কুস' করে লাগিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুত!
হক মাওলা!!