যে আনন্দ নিয়ে আমি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি সে শুধু আমি জানি। নয়তো ঈদের মতো এমন দিনে সবাইকে ছেড়ে কেউ দূরে থাকে? যার জীবনে আনন্দ বলে আর কিছু নেই, সেই কেবল এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যুক্তি অনেক, কিন্তু মন এর উপর আর কোনো যুক্তি কি আছে?
জীবনের পূর্ণতা কিসে? এই প্রশ্নে আমি কোনো উত্তর খুঁজে পাইনি। যে হাহাকার বুকে বাজে তাকেও দূরে সরাতে পারিনা কিছুতে। কিছু করবো, সেও যেনো পেরে উঠছি না। কি করবো আমি? কি করা উচিত আমার? জীবনে বাঁচার মতো করে বাঁচতে চাইলে অনেক জীবনী শক্তি লাগে, সেটাও মনে হয় নেই আমার। কে দিবে আমায় সেই শক্তি?
ভ্রমনে বিনোদনের চেয়ে দূরে থাকতে পারার অথবা চিন্তাকে একপাশে রাখা যাবে এই ভাবনা থেকেই সিদ্ধান্ত নেয়া। জানিনা কতটুকু পারবো। বারবার মনে হবে এই তো পাশে অথবা যদি পাশে থাকতো? কি করবো তখন? পরিচিত কেউ নেই। তবু, পরিচিত হতে কতক্ষণ? অন্ততঃ এই বিশ্বাসটুকু আছে, একেবারে অবহেলা করতে পারবে না কেউ। যদি করেও তাতেও কি যায় আসে আমার।
অনেকের কাছে ঋণী আমি। যাদের দোয়া সব সময় আমার কাছে আছে বলে মনে করি, তাদের কি দোয়া কাজে লাগবে না, আমার ইচ্ছা-অনিচ্ছায়? আমার ভালো-মন্দে? আমার আশা-নিরাশায়? জানি না, মানুষ হিসাবে কতক্ষানি ব্যর্থ আমি, অথবা কতটুকু আমার নেই, অথবা কি সে আমার কমতি, অথবা আমার অযোগ্যতা ঠিক কতটুকু? অর্থ-বিত্ত ছাড়া আরো কিছু যদি আমার কম থাকে, তবে সেই সব এর দায় সারা জীবন বয়ে যেতে হবে। এমন ব্যর্থ জীবন কতদিন বয়ে চলা যায়?
একদিন হয়তো অর্থের চাহিদা আর থাকবে না, কিন্তু এই সময়? এই অমূল্য সময় আমি কোথায় পাবো? জীবনে মানুষকে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়, আমি সেই সিদ্ধান্ত কবে নিতে পারবো? মরে যাওয়া যদি প্রকৃত সমাধান হতো, তবে মৃত্যূকে আলিঙ্গন করতে আমার ভয় নেই। কিন্তু আমিতো জানি, মৃত্যূ প্রকৃত সমাধান নয়। তবে সমাধান কি? তবে কি সারা জীবন এই কষ্টকে বয়ে চলাই এর সমাধান? কেউ কি বুঝবে আমাকে? আমিই কি বোঝার চেষ্টা করেছি কাউকে?
আর যদি অভিশপ্ত মানুষ হয়েই থাকি, তবে জন্ম নেয়ারই দরকার কি ছিলো। কেনো আমার বড় জনের মতো জন্মের আট-দশ মাসের মাথায় জান্নাতে গেলাম না! এখন জান্নাতের দরজাও তো এতো সহজে খুলবে না। কত পাপ করেছি, সেই পাপের হিসাব দিতে দিতেই পরকাল শেষ হবে। জাহান্নাম অবধারিত যেনেও কষ্ট নেই, শুধু অপূর্ণতা টুকু যদি পূর্ণ হতো। মানুষ হিসেবে অপূর্ণ থাকার কষ্ট কি জাহান্নামের কষ্টের চেয়েও কিছু কম?
কেউ আমায় যেন না ডাকে, সেই প্রার্থনা করি, কেন করি? কেউ আমায় যেন কিছু জিজ্ঞাস না করে, এই চাই, কেন চাই? কেননা, আমার মুখ ফুটে বলার মতো কিছু নেই। কেউ জিজ্ঞাস করলে আমার বুক ফেটে কান্না আসে। আমি অনেক কষ্টে আগলে রাখি। বেধে রাখার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে মুখ ধোয়ার মধ্যে দিয়ে লুকাই কান্নার জল। ভাগ্যিস কান্নার ভিন্ন রঙ নেই। তবে বিপদেই পড়তে হতো। এমন মন খারাপ কারো যেনো না হয়, এমন কি আমার চির শত্রুর ও না। যদিও আমার শত্রু বলে কিছু আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না।
‘সম্ভব না’ এই ছোট্ট কথাটি আমাকে, আমার অনেক সম্ভবনাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই ছোট্ট কথাটি আমাকে পোড়াতে পোড়াতে কয়লা করেছে, এরপর ছাই করেছে। সেই ছাই তুলোর মতো বাতাসে উড়ে ছড়িয়ে পরেছে। সেই ছাইয়ের এক কণা যদি তোমার কাছে যেয়ে, তোমার কানে ফিস ফিস করে বলে দেয়, যন্ত্রণা কত ভয়ংকর তবে তুমি আঁতকে উঠতে। আমি চাইনা কোনো সিদ্ধান্ত ভেঙ্গে যাক, কোনো স্বপ্ন ভেঙ্গে যাক, কোনো ইচ্ছা নষ্ট হোক। প্রত্যেকের সুন্দর ইচ্ছা পূর্ণ হোক। সকলেই শান্তিতে থাকুক। কেবল আমিই যেন শুষে নিতে পারি মানুষের সমস্ত অশান্তিকে। যেমন করে একটা টিস্যু পেপার শুষে নেয় সামান্য পানি।
মানুষের হাসি দেখে দেখে একটা জীবন পার করে দেওয়া কি খুব কঠিন? কতটুকু কঠিন? কঠিনেরে ভালোবেসেছি, তাই কঠিনেরে করতে হবে জয়।