গতকাল ৭ জুন নির্বাচন কমিশনের সাথে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের বৈঠকের খবর আজকে ৮ জুন প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদপত্রের রিপোর্টে বিভ্রান্তিকরভাবে পরিবেশনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী জনাব আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ আজ ৮ জুন ২০১০ নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেনঃ-
“গতকাল ৭ জুন নির্বাচন কমিশনের সাথে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের বৈঠকের খবর আজকে ৮ জুন প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদপত্রের রিপোর্টে বিভ্রান্তিকরভাবে পরিবেশিত হয়েছে। এভাবে বিভ্রান্তিকর রিপোর্ট পরিবেশন করা সংবাদপত্র ও সৎ সাংবাদিকতার নীতিমালার শুধু পরিপন্থীই নয়, পেশাগত সততা ও ন্যায়-নীতিরও বিরোধী। কয়েকটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার এ ধরনের ন্যক্কারজনক ভূমিকা দু:খজনক। এ সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো- নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের ৬টি বিষয় ব্যাখ্যা চেয়ে জামায়াতে ইসলামীর নিকট পত্র দিয়েছিল। জামায়াতে ইসলামী সেগুলো সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের নিকট সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন কমিশনের নিকট যে ব্যাখ্যা দিয়েছে সে সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনও একমত হয়ে গ্রহণযোগ্য মনে করছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। শুধুমাত্র নারী নেতৃত্ব সম্পর্কে জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে যে ফুট নোট দেওয়া হয়েছিল তা গঠনতন্ত্রের অর্ন্তভূক্ত করার জন্য নির্বাচন কমিশন পরামর্শ দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পরামর্শ গ্রহণ করে তা গঠনতন্ত্রের অর্ন্তভুক্ত করতে জামায়াত রাজী হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, গত ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের যে সব ধারা ও উপধারা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন একমত হয়েছে এবং কোন আপত্তি করেনি, সেই সব ধারা সম্পর্কেও নির্বাচন কমিশন নতুনভাবে আপত্তি করে ব্যাখ্যা চেয়ে গত ২৪ জানুয়ারী-১০ জামায়াতে ইসলামীর নিকট একটি চিঠি পাঠিয়েছে। গতকালের বৈঠকে জামায়াত নেতৃবৃন্দ নির্বাচন কমিশনের সেই আপত্তির অত্যন্ত জোড়ালো ও যুক্তিপূর্ণ জবাব প্রদান করে তা খণ্ডন করেন। জামায়াত নেতৃবৃন্দের যুক্তি নির্বাচন কমিশন গ্রহণযোগ্য মনে করে একমত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। যা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে বর্ণিত লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও প্রস্তাবনা সবই ঠিক আছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের কোন ধারা ও উপধারাই আরপিও এবং সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বা পরিপন্থী নয়। এ সম্পর্কে গতকাল ৭ জুন নির্বাচন কমিশনের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পরে আমি সাংবাদিকদের সামনে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছি। তা সত্ত্বেও জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অসৎ উদ্দেশ্যেই কয়েকটি পত্রিকায় আজকে প্রকাশিত রিপোর্টে গতকাল ৭ জুন-১০ নির্বাচন কমিশনের সাথে অনুষ্ঠিত জামায়াত নেতৃবৃন্দের বৈঠকের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে ‘গঠনতন্ত্রে আল্লাহর আইনের ধারা সংশোধনে রাজী জামায়াত’ এবং ‘আল্লাহই একমাত্র বিধানদাতা বলবে না আর জামায়াত’ ইত্যাদি যে সব মন্তব্য করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন গ্রহণ করার সময় জামায়াতের গঠনতন্ত্রের ২য় ধারার ৫ উপধারার যে অংশটুকু আমরা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি সেই অংশটুকু বাদ দিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের ২য় ধারার ৫ উপধারার চূড়ান্ত বর্তমান রূপ সংশ্লিষ্ট পত্রিকাগুলোসহ সকলের অবগতির জন্য হুবহু নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
“৫) আল্লাহ ব্যতীত অপর কাহাকেও বাদশাহ, রাজাধিরাজ ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মানিয়া লইবে না, কাহাকেও নিজস্বভাবে আদেশ ও নিষেধ করিবার অধিকারী মনে করিবে না, কেননা স্বীয় সমগ্র রাজ্যের নিরঙ্কুশ মালিকানা ও সৃষ্টিলোকের সার্বভৌমত্বের অধিকার আল্লাহ ব্যতীত অপর কাহারও আসলেই নাই।” অর্থাৎ এই অংশটুকু জামায়াতের গঠনতন্ত্রে চূড়ান্তভাবে বর্তমানে আছে।
এ ছাড়াও জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের ২য় ধারার ১ থেকে ৪ উপধারা পর্যন্ত আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতা সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে। গঠনতন্ত্রের ২য় ধারার (খ)-এর ১ থেকে ৭ উপধারা পর্যন্ত শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর নি:শর্ত ও একনিষ্ঠ আনুগত্যের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। একজন ধর্ম বিশ্বাসী মুসলমান হিসেবে এ আক্বীদা ও বিশ্বাস উপেক্ষা করার কোন সুযোগ নেই।
উপরের উদ্ধৃতি থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, সংশ্লিষ্ট পত্রিকাগুলো বিভ্রান্তি সৃষ্টির অসৎ উদ্দেশ্যেই জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের ২য় ধারার ৫ উপধারা সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর মিথ্যা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। যে সব পত্রিকাগুলো জামায়াতে ইসলামীর ইতিবাচক খবরগুলো অদৃশ্যমানভাবে প্রকাশ করে এবং জামায়াত সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর বনোয়াট রিপোর্ট তৈরি করে তা ফলাও করে দৃশ্যমানভাবে প্রচার করে সেই সব পত্রিকাগুলোই আজকে বিভ্রান্তিকর রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তারা জামায়াতের গঠনতন্ত্রের ইসলামী আক্বিদা সম্পর্কিত কিছু কিছু ধারা উল্লেখ করে লিখে এই গুলো বাংলাদেশের সংবিধান এবং আরপিও পরিপন্থী। আবার যখন সেগুলো সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেয়া হয় তখন আবার লিখে ইসলামী আদর্শ থেকে জামায়াত সরে এসেছে। সংশ্লিষ্ট পত্রিকাগুলোর এ ধরনের দ্বৈত ভূমিকা মানবাধিকার, পেশাগত সততা, নৈতিকতারও পরিপন্থী। সংশ্লিষ্ট পত্রিকাগুলোর এ ধরনের ভূমিকা সততা ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। জামায়াতে ইসলামীর কোন কিছু তাদের কাছে পছন্দ বা গ্রহণযোগ্য না হলে তারা তার সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু এইভাবে অসৎ উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত বিভ্রান্তিকর রিপোর্ট প্রকাশ করা কোনক্রমেই তাদের উচিত নয়।
আমরা আশা করি এ বক্তব্যের পরে সকল বিভ্রান্তির অবসান হবে এবং সংশ্লিষ্ট পত্রিকাগুলোর কর্তৃপক্ষ অত্র প্রতিবাদটি যথাস্থানে ছেপে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসন করবেন।”