আব্বার মোবাইল নোকিয়া। সাদা কালো ডিসপ্লে না, কালার ডিসপ্লে। ক্যামেরাও আছে পিছনে, ভিজিএ। তবে সেই ক্যামেরায় খুব বেশি ছবি তোলা হয় নাই। কারণ মোবাইলে মেমোরি কার্ড সিস্টেম নাই। আর মোবাইল মেমোরি কত সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে, যে ১০ মেগাবাইট বা এর চেয়ে কম কিনা।
তো সেই মোবাইলে ঈদের আগের দিন এসএমএস আসছে ১৭ টা ! ঈদ মোবারক জানিয়ে, আব্বা এসএমএস জিনিসটা ঠিক পড়ে না। ৪-৫টা পড়েছে, বাকিগুলো আসছে যখন ফোনটা চার্জে লাগানো ছিল। এসএমএস গুলো খুব মজার। খুব অফিশিয়ালি ইংরেজীতে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে লেখা। মেসেজের শেষে সেন্ডারের নাম এবং পদবী উল্লেখ করা ! এশার নামাজ পড়ে আব্বা বলল,'মেসেজগুলোর রিপ্লাই দেয়া দরকার, তুমি সুন্দর দেখে রিপ্লাই লিখে ড্রাফট করে নিয়ে আসো, আমি দেখব'। ড্রাফট মানে মোবাইল ড্রাফট না কিন্তু, কাগজে লিখে তাঁকে দেখাতে বলেছে ! উনি দেখে ঠিক করে দিবে।
এখন আমরা হইলাম এই যুগের ইয়ো ইয়ো কিডস! আমরা লিখি hw r u, f9,thnx, wlcm এমনে। তো লিখতে গিয়া বিপদে পড়সি। বার বার এম্নেই লিখা চলে আসে, আবার মুছে ঠিক করি। যাই হোক, মেসেজ লেখা হল। যেহেতু সারাক্ষণ ল্যাপটপ নিয়া বইসা থাকি, সেহেতু মাথা খাটায়া সব সেন্ডারের নাম পিসিতে টাইপ করলাম। তারপর সেন্ড করলাম। পাক্কা ২০ মিনিট লাগসে এই কাজ করতে। ভাবলাম বড় কাজ শেষ করসি। কিন্তু আব্বা বলে কথা, ওইটা ট্রেইলার ছিল। সিনেমা তখনো শুরু হয় নাই।
আব্বা ছোট প্যাডের তিনটা পাতা আমার দিকে এগিয়ে বলল, যাদের নাম লেখা আছে, তাদের সবাইকে ঈদ গ্রিটিংস জানিয়ে মেসেজ করে দাও। মেসেজটা আমাকে দেখায় নিও ! আমি কাগজ খুলে দেখি ৪০ টা নাম ! মেসেজ লেখা হল, সেন্ড করা হল, স্মার্ট আব্বার আনস্মার্ট ফোন দিয়েই।
ঈদের দিন, সকাল ১১ টার দিকে আব্বা গম্ভীর মুখে বলল, যাদের নাম দিসিলাম সবাইকে মেসেজ দিসিলা ? বললাম, হ্যাঁ, সবাইকে দিসি। আব্বা মুখ কালো করে বলল, ৪ জন রিপ্লাই দেয় নাই। বুঝলাম না !আমার মোবাইলে ঈদের মেসেজ আসছে সাকুল্যে ৫টা ! এর মধ্যে একটা ঈদ-উল-আযহার। যে পাঠাইসে সে এডিট করতে ভুলে গেসিলো!
আর আমরা নাকি জেনারেশন নেক্সট!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:২৩