টাইগাররা ম্যাচে ভালভাবেই ছিল! মাশরাফির প্রথম ওভারে থিরুমান্নের ক্যাচটা আনামুল নিতে পারলে ম্যাচের দিকটাই হয়ত পরিবর্তন হয়ে যেত। দিলশান প্রথম দিকে খেলতেই পারছিল না, নন-স্ট্রাইকে ছিল বেশির ভাগ সময়। সাঙ্গা আগের দুই ম্যাচে একেবারেই নিষ্প্রভ ছিল। তাই প্রথমে চাপটা যদি বাংলাদেশ ফেলতে পারত, আজকেও ওই অবস্থায় সে কতখানি ভাল করত সে প্রশ্ন থেকেই যায়। টাইগাররা একের পর এক ক্যাচ, স্টাম্পিং মিসের মহড়া দিয়ে গেছে। ২৫ ওভারের পরেও সার্কেলে মিনিমাম ৩ ফিল্ডার নিয়ে টাইট ফিল্ডিং দিয়েছিল, আশা ছাড়ে নাই, এটা দেখতে ভাল লেগেছিল। কিন্তু সেই নিয়ম একটা আগের, ব্যাটসম্যান যদি ক্রিজে সেট হয়ে যায় এমসিজির মত বড় মাঠে অনেকটা অভ্যাসের মত হয়ে যায় রান নেয়া।
৪০ ওভার পর্যন্ত উইকেট উইকেট ১ টা পড়লেও রান যা ছিল, এক সময় মনে হচ্ছিল ২৭০-৮০ হতে পারে। তাসকিন ১৬ রান দেবার পর সেটা মনে হতে থাকে ৩০০। কিন্তু লেইট ওভারে সেই পুরনো দশা, লাইন লেংথের দিশেহারা অবস্থা, মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁ এর মত ক্রিজে দুই সেট ব্যাটসম্যান। যা হবার তাই হল। স্কোর বোর্ডে ৩৩২/১।
বোলিং এ করনীয়ঃ
১। ক্যাচ মিসের মহড়া, মিসড স্টাম্পিং
২। মাশরাফি দেশের সবচেয়ে পুরনো পেসার এবং ইনজুরিতে বার বার আক্রান্ত হওয়া একটা মানুষ। হাঁটুতে ২ বার সার্জারি করে ফিরে আসার অনন্য দৃষ্টান্ত তার। বয়সের সাথে তার রানাপ কমেছে, কমেছে বলের গতিও। কিন্তু এই মাশরাফি এখনও ১ নম্বর বোলার। কারণ তার আত্নত্যাগ, ভাল কিছু করার সুতীব্র ইচ্ছা। নিখুঁত লাইন লেংথে বল করে আজও প্রথম ওভারেই ব্রেক থ্রু দিতে পারত, ক্যাচ মিস না করলে। কিন্তু আমাদের বাকি দুই পেসার তাসকিন আর রুবেল। এরা উইকেট টু উইকেট বল করতে ব্যার্থ। লাইন লেংথ ঠিক ছিল না অনেক ওভারেই। ওদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হল, বলের গতি। কিন্তু মাশরাফির বলে গতি নেই, আছে নিখুঁত নিশানা। মাশরাফির কাছ থেকে শেখা উচিত দুই পেসারের।
ব্যাটিং এর শুরু থেকেই বিপর্যয়ের শুরু। তামিম এতদিন খেলার পরেও তার অফস্ট্যাম্প কোথায় সেটাই মাঝে মাঝে ভুলে যায়! তার ফুট ওয়ার্কও ছিল আলসে ধরনের। তাই ওভারের ২য় বলেই ক্লিন বোল্ড। এর পরে যা ফেবুতে যা হওয়ার তাই হল, ভাতিজা কোটা বাদ দেবার দাবীতে সোচ্চার আজ সব টাইগার সমর্থক। মুদ্রার অপর পিঠ আরকি। কিন্তু এ কথা ভুলে গেলে কী হবে যে তামিমই আসলে এখন এদেশের সবচেয়ে ভাল ওপেনার। অন্তত ওর চাইতে ভাল কেউ খেলার আগ পর্যন্ত ওকে বাদ দেবার কথা চিন্তা করা বোকামী। আপনি ওর জায়গায় কাকে খেলাবেন। সামসু, ইমরুল কায়েস ? সবাইকেই চেষ্টা করা হয়েছে। এটা ঠিক যে তার খেলার এপ্লিকেশনে সমস্যা আছে, সে নিজেকে হয়ত অবধারিত ধরে নিয়েছে দলের খাতিরে, তার প্রভাবও পড়তে পারে। কিন্তু তার নিজের তাগিদ থেকে ভাল খেলা না আসলে অন্তত এই বিশ্বকাপে দেখা ছাড়া আর অন্য পথ নেই। কারণ আর দলে আর ওপেনার নাই।
ওয়ান ডাউনে সৌম্য সরকারের শুরুটা অসাধারণ ছিল। ম্যাচে সুনীল গাভাস্কারের ধারাভাষ্যের ধরন পর্যন্ত আমুল বদলে গিয়েছিল ওর ব্যাটিং এর সময়! কিন্তু বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেনি।
৪ নম্বরে মুমিনুল কেবলই টাইগার শিবিড়ে একটা জায়গার অপচয়। ওর জায়গায় স্পিনার অথবা নাসির হোসেন কে জায়গা দিলেও হত। টেস্টে মুমিনুল ভাল, ওয়ানডেতে আপাতত না।
৫ আর ৬ এ খেলা সাকিব, মুশফিকের আসলে এই দুই পজিশনে খেলারই কথা না, উচিতও না। সবচেয়ে অভিজ্ঞ এবং সবচেয়ে ইনফর্ম ব্যটসম্যান কে এত পরে খেলানোর কী যৌক্তিকতা থাকতে পারে আমার বোধগম্য না। কারণ হিসেবে সম্প্রতি জিম্বাবুয়ে সিরিজে এবং অস্ট্রেলিয়ার অফিসিয়াল-আনঅফিসিয়াল ম্যাচে ৪ এ ভাল খেলা মাহমুদুল্লাহর কথা বলতে পারেন অনেকে। কিন্তু একজনের একটু ভাল ফর্ম মানে কিন্তু এই না যে আসল ভাল ফর্ম করা, কাজের সময় বল কম নষ্ট করে যেই ব্যাটসম্যান রান করছে, তাকে ৫-৬ এ খেলানো। এটা অবশ্য মাহমুদুল্লাহর দোষ না। দোষ ম্যানেজমেন্টের। লোয়ার অর্ডারে সাব্বির নতুন হিসেবে বেশ ভাল খেলেছে। তার ব্যাপারে কিছু বলার নাই। টাইগাররা বলের গতিতে রান নেয়ার জন্যে ছুটেছে, এটা ভাল, আগেই হার মেনে নেয়নি। এই করতে গিয়ে মেরে খেলতে গিয়ে উইকেট দ্রুত পড়েছে। কিন্তু ৩০ ওভারের ভেতর ১৮০-২০০ এর কাছাকাছি রান হলে হয়ত টাইগাররা জেতার আশা করতে পারত, এই উদ্দেশ্যই ছিল
ব্যাটিং এ যা করনীয়ঃ
১। টপ অর্ডারে দায়িত্ব নিয়ে খেলা, খেলতে না পারলে স্বেচ্ছায় জায়গা ছেড়ে দেয়া।
২। মুশফিক, সাকিব কে যথাক্রমে ৪, ৫ এ খেলানো যাতে তারা বেশি বল পায় খেলার জন্যে।
৩। মুমিনুল কে বাদ দেয়া, তার জায়গায় অন্য স্পিনার বা নাসির কে খেলানো।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৪৩