বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের উন্নয়নশীল একটি দেশ। এ মহাদেশের প্রায় সব ক’টি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, রীতি-নীতি একই ধাঁচের। এখানকার সমাজব্যবস্থা পরিবারকেন্দ্রিক। বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদা-দাদিসহ আরও অনেক সদস্য নিয়ে একেকটি পরিবার গঠিত হতো একসময়। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, ও পাকিস্তানে পরিবারে এ ধারা এখনও অনেকাংশে বিরাজমান। কিন্তু আমাদের দেশে বর্তমানে সে অবস্থা তেমন আর চোখে পড়ে না। শুধু কি তাই? এখন সন্তানেরা বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে পারলেই যেন বাঁচে। আর এসব কুলাঙ্গার সন্তানদের শিক্ষা দেয়ার লক্ষ্যেই যেন সরকার বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণের জন্য আইন পাস করেছে। কোনো সন্তান পিতামাতার ভরণপোষনের ব্যবস্থা না করলে এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে সর্বোচ্চ তিন মাসের জেলের বিধান করে সংসদে একটি বেসরকারি বিল পাস হয়েছে। বিল অনুযায়ী পিতামাতা আলাদাভাবে বসবাস করলে তাদেরকে সন্তানের আয়ের ১০ ভাগ দিতে হবে।
তবে সত্যি কথা বলতে কি আইন করে কি ভালবাসা হয়?
আইন করে কি কারো প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ানো যায়?
যে ছেলে তার বাবা-মাকে ভালবাসে, সে যত কষ্টেই থাকুক, তাদের ফেলে দেয় না। স্ত্রী না চাইলেও সে গোপনে বাবা-মাকে হাত খরচ দেয়। যে মেয়ে তার বাবা-মাকে ভালবাসে, সে স্বামী না চাইলেও লুকিয়ে তাদের সাহায্য করে। এবং এই ভালোবাসাই আমাদের দেশের সম্পদ। আমাদের অহংকার। এই সম্পদের পরিমাণ কি এতোই কমে এসেছে যে আইন করে বাবা-মা য়ের ভরণ পোষণ বাধ্যতামূলক করতে হচ্ছে?
নিশ্চয় কমে এসেছে। নইলে এমন আইন করতে হলো কেন?
ধরে নেই, কোনো একজন সন্তানের আয় ৩০ হাজার টাকা। আইন অনুসারে মাস শেষে বৃদ্ধ বাবা-মাকে তিন হাজার টাকা সে ধরিয়ে দিল। এতে কি পিতা-মাতার প্রতি তার দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে। এমন অনেক ছেলে আছে যে ৩০ হাজার টাকা বেতন থেকে মাস শেষে বাবা-মাকে সাত হাজার টাকা তুলে দেয়। এখন আইন অনুসারে সে কি টাকার পরিমাণ কমিয়ে দেবে? এই আইনে বরং পরোক্ষভাবে একক পরিবারকে উৎসাহিত করা হয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে। মানবিক দায়িত্বকে পদদলিত করে অধিকাংশ স্ত্রী এখন তার স্বামীকে বলবে-‘আইন অনুযায়ী তাদের মাস শেষে টাকা দিয়ে দাও, আলাদা সংসার চাই। ’সন্তানের আয়ের ১০ ভাগ দিয়ে এইসব বাবা-মায়ের বৃদ্ধাশ্রমে থাকার টাকাটাও যে হবে না!
সমস্যার মূলে না যেয়ে, আগাছা কাটা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সব সংসারেই টুকটাক মনোমালিন্য, এর সঙ্গে ওর ভুল বোঝাবুঝি আছে। বৌয়ের সঙ্গে শাশুড়ির সম্পর্কের টানপোড়েন আছে কম-বেশি। এগুলো থাকবেই। এ কারণেই এর নাম সংসার। কিন্তু তাই বলে স্ত্রী যদি স্বামীকে প্রভাবিত করে শ্বশুর-শাশুড়িকে দেখাশোনা না করার জন্য, এর সমাধান আইন দিয়ে হবে না। ঘরে ঘরে মাথা নষ্ট করা হিন্দি সিরিয়াল দেখা বন্ধ করতে হবে। স্কুল কলেজের বইতে পারিবারিক নীতি, আদর্শ, শ্রদ্ধা, দায়িত্ত অম-র্ভুক্ত করতে হবে। অধিকাংশ মেয়ে শ্বশুর বাড়িকে নিজের বাড়ি ভাবতে পারে না, একটা ভীতি নিয়ে সে বড় হয়। এই ভীতি দূর করে শ্রদ্ধার সুযোগ তৈরি করতে হবে। পরিবারে বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য থাকলে সন্তান মাদকাসক্ত হওয়া বা বিপথে যাবার আশংকা কমে আসবে ৯০ ভাগ। অতএব, স্বামীর টাকার উপরে কূটনীতি বন্ধ করে কিভাবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে, নিজে কমর্ক্ষম হতে পারে একটি নারী, সেই দৃষ্টিভঙ্গিই তাকে শেখানো উচিত। শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে নিজের সন্তান যতটা নিরাপদ, শুধু কাজের লোকের কাছে ঠিক ততটাই অনিরাপদ! এই বিষয়গুলো বুঝতে হবে।
আবার যারা বৃদ্ধ, তাদেরও আমাদের দেশের পত্র-পত্রিকা, টিভি চ্যনেলের মাধ্যমে সচেতন করতে হবে। শাশুড়িরা
(বেশিরভাগ) নতুন বউ ঘরে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পেছনে লেগে সম্পর্কটা শুরুতেই তিতে করে ফেলবেন না। মনে রাখবেন, ছেলের বৌয়ের পিছে লাগা মানে কার্যত ছেলের পেছনে লাগা। সংসারে শান্তির জন্য ছেলে দুরে সরে যেতে চাইবে। ইট মারলে পাটকেলটি খেতে হয়। বৌকে ইট না মেরে ফুল দিন। ফুল দিতে না চাইলে মুখ এবং চোখ বন্ধ রাখুন। বউ দেখতে ভালো না কেন-এই চিন্তা বাদ দিন। বউ দেখতে এত সুন্দর কেন-এই চিন্তাও বাদ দিন। নাতি-নাতনিদের কাছে ওদের মায়ের বদনাম করবেন না। জিভ ছোট রাখুন। দোষ করলে নিজের সন্তান ভেবে মাফ করে দিন, বুঝিয়ে বলুন। ছেলে আর ছেলের বৌয়ের সম্পর্কের মধ্যে অযথা নাক গলাবেন না। ভালবাসুন, ভালোবেসে একটা মায়ার সম্পর্ক গড়ুন। ছেলের সংসারে যখন থাকবেন, মনে করবেন আপনি মেয়ের সংসারে আছেন। জামাইয়ের কাছে যেমন নিজের মেয়ের প্রশংসার ফুলঝুরি তোলেন, ছেলের কাছে বৌয়ের বেলায় তার ব্যতিক্রম করবেন না। দেখবেন, আপনি রানীর আসনে আছেন।
লিখেছেন-মেহের নিগার
সুত্রঃ রমনীয়
দৈনিক পূর্বকোণ
আলোচিত ব্লগ
ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।
ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!
সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন
কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী
ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন