গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত সেমিনারে বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেছেন, সরকার রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্র প্রতিষ্ঠার নামে ৩৪ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। শেয়ারবাজার থেকে লোপাট করেছে ৮০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও সোনালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আত্মসাত্ করেছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। এসব টাকা দিয়ে কয়েকটি পদ্মা সেতু করা যেত। তারা বলেন, রাষ্ট্র ও এর সম্পদ এখন চোরদের নিয়ন্ত্রণে।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘ব্যাংক ও লোপাট, পুঁজি পাচার, লুণ্ঠনের অর্থনীতি ও বাংলাদেশের ভবিষ্যত্’ শীর্ষক
এ সেমিনারে বক্তব্য রাখেন তেল গ্যাস ও বিদ্যুত্-বন্দর রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, প্রবীণ সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, অর্থনীতিবিদ ড. স্বপন আদনান, আবুল হাসান রুবেল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গণসংহতি আন্দোলনের সভাপতি জোনায়েদ সাকি।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, সরকার দেশে মূলত লুটের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। ৩৩ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে শেয়ারবাজার থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের পৃষ্ঠপোষকতায় সোনালী ব্যাংক থেকে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত্ করেছে। রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের নামে ৩৪ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিদেশি ব্যাংকগুলোর যে পরিমাণ ঋণ দেয়ার কথা ছিল তারচেয়ে বেশি অর্থ লুট হয়েছে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল প্রকল্পের নামে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের সব খাতকে পঙ্গু করে দিয়ে লুটে নেয়া অর্থ এখন বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে নানা ফাঁকফোকর থাকায় ওইসব চোরাই টাকার মালিকরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, কোনো ব্যাংক থেকে একজন কৃষক পাঁচ-দশ হাজার টাকা ঋণ নিলে তার কোমরে দড়ি বেঁধে তা আদায় করা হয়। অপরদিকে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পাঁচ-দশ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে প্রতারকরা। সরকার তাদের ধরার পরিবর্তে রক্ষার চেষ্টা করছে।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, শুধু ব্যাংক নয়, সবকিছুতেই লোপাট চলছে। সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্কের চার হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এটা কোনো টাকাই নয়। সরকার দেশ থেকে এত পরিমাণ টাকা লুট করেছে যে, এখন ৪ হাজার কোটি টাকাও তাদের কাছে কিছুই মনে হচ্ছে না।
তিনি বলেন, জনগণের সম্পদ চোরদের হাতে চলে যাচ্ছে। রাষ্ট্র চোর ধরছে না। তাই দেশের জনগণকেই চোর ধরতে হবে। এখন আমাদের সামনে দুটি পথ আছে—একটি হচ্ছে, চুপ করে সব সহ্য করা আর অন্যটি হচ্ছে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। জনগণ চোরদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় চুপ করে বসে থাকার সময় নেই।
এই সরকারের বিভিন্ন কেলেঙ্কারির বিষয়ে তিনি বলেন, ছোটখাটো কর্মচারীদের ধরা বা বরখাস্ত করে জনগণের আইওয়াশ করা হচ্ছে। এসব কেলেঙ্কারির পেছনে বড় বড় হোতারা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।