অর্থায়ন নিয়ে এই জটিলতা ও সার্বিক পরিস্থিতিতে নিজের অবস্থান নিয়ে মসিউর আক্ষেপ করে বলেন, “আগে রাশিয়ায় কাউকে অবাঞ্ছিত করলে তাকে গোলাগে নিয়ে যাওয়া হতো। আমার জীবনটা গোলাগে প্রবেশ করেছে। আমি আপনাদের সহানুভূতি চাই। আমাকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করুন। এই রকম চাপে যে কোনো লোকের হার্ট অ্যাটাক করতে পারে বা ব্রেইন স্ট্রোক করতে পারে।”
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, দুদিন আগেই আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হওয়ায় তিনি ভেবেছিলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে তার উপস্থিতি আরো বেশি উত্তেজনার সৃষ্টি করতে পারে।
“আমি উত্তেজনা অ্যাভয়েড করার জন্য যাইনি”, বলেন তিনি।
ঢাকা, সেপ্টেম্বর ১৮ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ছুটিতে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়টি গৌণ- এমন মন্তব্য করে ঢাকায় বিশ্ব ব্যাংকের একটি ‘গুপ্তচর চক্র’ থাকার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের ফেরার পথ তৈরি করতে মসিউরের ছুটিতে যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে আসার পর মঙ্গলবার হেয়ার রোডে নিজের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “যেহেতু বলি নাই যে, আমি দরখাস্ত করেছি এবং দরখাস্ত দেওয়ার পরে যারা সিদ্ধান্ত নেবেন এমন কেউ কিছু বলে নাই, সেজন্য আমি এ বিষয়ে আলোচনায় যেতে চাই না।”
এ সময় তিনি বিশ্ব ব্যাংকের একটি গুপ্তচর চক্র সক্রিয় থাকার কথা তোলেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের ইন্টিগ্রিটি অ্যাডভাইজার মসিউর।
“আমার ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি গৌণ। এর চেয়েও বড় বিষয় হলো দেশের স্বার্থবিরোধী গুপ্তচরবৃত্তির সাথে যারা জড়িত তাদের নাম প্রকাশ করা।”
মসিউর বলেন, “যারা পয়সা দেবে তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা কোনো এক সময় আমাদের দেশের কিছু লোককে গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ দেয়। তারা গোপনে তাদেরকে তথ্য সরবরাহ করে, যার কোনো ভিত্তি নেই। এবং তাদেরকে পরামর্শ দিয়েছে কি করতে হবে।”
“বিশ্ব ব্যাংক যে স্পাই নেটওয়ার্ক করেছে সেটা গর্হিত। এই যে গোপন তথ্য এবং পরামর্শদাতা- তাদের নামও সরকারের কাছে প্রকাশ করতে পারবে না। একটা হলো, যারা তাদের সহযোগিতা করেছে তাদের রক্ষা করতে হবে। আর নামগুলো প্রকাশ করতে পরবর্তীতে তারা গোপন সহযোগিতা আর পাবে না।”
এই ‘গুপ্তচরদের’ কিছু ইমেইলও তার কাছে আছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। বলেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও এ বিষয়ে অবহিত।
তাদের পরিচয় জানতে চাইলে মসিউর বলেন, মেইলগুলো এসেছে ‘বেনামে’।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর সরকারকে কয়েকটি শর্ত দেয় বিশ্ব ব্যাংক। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটিতে পাঠানোর কথাও ছিল। শর্তগুলো পালন হয়নি- এমন অভিযোগে গত জুনে অর্থায়ন বাতিল করে বিশ্ব ব্যাংক।
পদ্মা প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংককে ফেরাতে তাদের শর্ত মেনে মসিউর পদত্যাগ করছেন- গণমাধ্যমে এম খবর এলে অগাস্টের শেষ দিকে তিনি বলেন, “যদি সরকার ও প্রধানমন্ত্রী মনে করেন- বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করছি না, তাহলে পদত্যাগ করব।”
সোমবার দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মসিউরকে না দেখে তার ছুটিতে যাওয়ার গুঞ্জন শুরু হয়। এরপর সন্ধ্যায় সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘দুর্নীতির’ জন্য ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের চাপের মুখে মসিউর রহমান ছুটিতে গেছেন।
তবে রাতেই তা অস্বীকার করে মসিউর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন পর্যন্ত আমি কোনো ছুটির আবেদন করিনি। আবেদন করার প্রয়োজনও হয়নি।”
এ বিষয়ে সরকারি সূত্র জানায়, ছুটিতে যেতে উপদেষ্টাকে চাপ দেয়া হলেও তিনি সে সিদ্ধান্ত মানতে রাজি হচ্ছেন না। এর ফলে সরকার বেদায়দায় পড়েছে।
মসিউর ছুটিতে গেলে বিশ্ব ব্যাংক সিদ্ধান্ত বদলাবে- আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শনিবার বলেন একথা প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে।
এ বিষয়ে মসিউর বলেন, “যখন ওরা (বিশ্ব ব্যাংক) বলে সরকার এটা করলে, মশিউরকে সরালে তারা কাজ শুরু করবে, আমি কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেছি, তাদের কাছে যতগুলো চুক্তি পাঠানো হয়েছে তার একটি বাদে কোনোটিতে তারা সম্মতি দেয়নি।”
অর্থায়ন জটিলতা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে বিশ্ব ব্যাংকের টাকায় এ সরকারের মেয়াদে পদ্মা সেতু সম্ভব নির্মাণ হবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা।
“চুক্তিতে সম্মতি দেওয়ার আগে যদি তারা বলে যে এই বিষয়ে তাদের আর কোনো সন্দেহ নাই, তাহলে তারা দোষ স্বীকার করে নেবে। তাহলে এটা স্বীকার করা হবে যে তারা অন্যায়ভাবে আটকে রেখেছে। তাদের নিজেদের দোষ ঢাকার জন্যই আমার সন্দেহ হয়, এটা তারা দিতে পারবে না।
“যদি না দিতে পারে তাহলে এই সরকারের কার্যকর দায়িত্বভার ত্যাগ করার আগে অথবা বিরোধীদল যদি সফল হয় এবং এটাকে সাফল্যের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে তাহলে এই সরকারের মেয়াদে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে করা সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয় না।”
বিশ্ব ব্যাংক ‘না’ বলে দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সংসদে ঘোষণা দেন, প্রয়োজনে নিজেদের অর্থেই পদ্মা সেতু হবে। এ জন্য অনুদান হিসাবে অর্থ সংগ্রহেরও উদ্যোগ নেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে মসিউর বলেন, নিজেদের অর্থে বড় আকারে (গ্র্যান্ড স্কেলে) পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব না হলেও ‘ব্যবহার উপযোগী’ একটি সেতু বাংলাদেশ বানাতে সক্ষম।
“এটা করার সঙ্গতি আমাদের আছে। চার থেকে পাঁচ বছরে করলে আমাদের গায়ে আঁচ লাগবে না।”