সচলায়তন ব্লগে হিমু নামের এক ব্লগারের একটা লেখা দেখলাম আজকে। পোষ্টের শিরোনাম "হুমায়ূন আহমেদ কি হুমায়ুন আজাদের পুত্রকন্যার কাছে ক্ষমা চাইবেন ?" লেখাটা পড়ে একটা জবাব দেওয়ার তাড়না অনুভব করলাম। নানা কারনে আমি হুমায়ুন স্যারের কাছে অনেক ঋণী, কতবার যে মন খারাপ অবস্থার মধ্যে উনার বই পড়ে মন হালকা হইছে, কলিজাটা প্রশস্ত হইছে সেইটার কোন হিসাব দিতে পারব না। কাজেই স্যারের ঋণ খানিকটা পরিশোধ করার একটা চেষ্টা হিসাবে এই লেখাটা লিখতেছি।
সচল-ব্লগার হিমুর লেখাটা পড়ে যেইটা বুঝলাম সেইটা হইল ২০০৮ সালে হুমায়ুন আহমেদ দৈনিক সমকালকে একটা সাক্ষাতকার দেন, সেইখানে তাঁকে প্রশ্ন করা হইছিল "বাংলাদেশের লেখকরা স্বাধীন কিনা" তিনি হ্যাঁ বাচক উত্তর দেওয়ায় পুনরায় প্রশ্ন করা হইছিল "তাহলে ড. হুমায়ুন আজাদকে মরতে হল কেন?" এই কথার জবাবে হুমায়ুন আহমেদ বলছিলেন "কারন যে বইটা তিনি লিখেছিলেন, তা এতই কুৎসিত যে, যে কেউ বইটা পড়লে আহত হবে। তার জন্য মৌলবাদী হতে হয় না। "
সচলায়তন ব্লগার হিমু একজন উচ্চ-শ্রেনীর চিন্তাশীল সমালোচক। উনার মতে ক্যানসার চিকিৎসারত হুমায়ুন স্যার মৃত্যু ভয়ে আক্রান্ত হওয়ার কথা, ধীরে ধীরে এই ভয়টা নাকি বাড়তে থাকবে, ব্লগার হিমু নাকি একধরনের অসুস্থ কৌতুহল নিয়ে অপেক্ষা করতেছেন, যে কবে এই মৃত্যুভয়ের কারনে হুমায়ুন স্যারের আচরন পরিবর্তন হইতে আরম্ভ করবে এবং উনার লেখালেখিতে সেইটার প্রভাব পড়বে (হুঃ আজাদের চ্যালারা এত সাইকো হয় এই প্রথম জানলাম)। কিন্তু উনি খুবই হতাশ যে হুমায়ুন স্যারের লেখালেখিতে কোন রকমের মৃত্যুভয়ের ছাপ এখনও পড়তেছে না (শকুনের দোয়ায় গরু মরলে তো কামই আছিল)। এইটার কারণ হিসাবে উনি অবশ্য হুমায়ুন স্যারের কমার্শিয়াল মনোভাবকে দায়ী করছেন (এইটা হুমায়ুন বিদ্বেষী সুশীলদের অনেক পুরানো একটা ভাংগা রেকর্ড, এখনও মাঝে মাঝে বাজে আরকি)।
সচলায়তন ব্লগার হিমু সম্ভবত একজন প্রবাসী। দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে তিনি নাকি ওরহান পারমুকের লেখা "দ্য ব্ল্যাক বুক" নামের একখানা উপন্যাস পড়েছিলেন। সেই উপন্যাসে এক্সিডেন্ট করে খাদে পড়া গাড়ির মধ্যে পাওয়া দুইটা নর কংকালের মত সুক্ষ বিষয়ও নাকি কাহিনীকার উল্লেখ করতে ভুলেন নাই। হুমায়ুন আহমেদের লেখা জার্নালে "সচল-ব্লগার হিমু" সেইরকম সুক্ষ বিষয় আশা করছিলেন। কিন্তু হুমায়ুন স্যার তাকে হতাশ করছেন। পানির নিচে থাকা দুইটা নরকংকালের কাহিনীর মত সুক্ষ বিষয় নিয়ে লিখে হুমায়ুন স্যার নাকি তাঁর পাঠকদের একটা বৃহৎ অংশের সমর্থন হারাতে চান নাই, যদিও সচল ব্লগার হিমু কথামত হুমায়ুন স্যারের উপরোক্ত টাইপের কাজ করা অতি অবশ্যই উচিৎ ছিল [ইহা সচল-ব্লগার হিমুর মামা বাড়ির আবদার আরকি ]
হুমায়ুন স্যার সম্পর্কে উনার অভিযোগের শেষ নাই। হুমায়ুন স্যার নাকি আত্মীয় ভক্ত পরিবেষ্টিত একজন ক্লান্ত, নিঃসংগ মানুষ। এই গন্ডি পেরিয়ে বের হয়ে আর কিছু লেখার শক্তি নাকি তার আর নাই। [এই খানে সচল-ব্লগার হিমুর kind information এর জন্য আমি একটা কথা বলতে চাই, আমাদের হুমায়ুন স্যার "পুতু পুতু সুশীল লেখকদের" মত ঘরের কোনায় বসে থেকে কলম দিয়ে রাজা বাদশাহ মারা টাইপ কাপুরুষ খেলা খেলেন না, পারলে নিজের গন্ডির বাইরে গিয়ে সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ৫০ বয়সে নিজের প্রেয়সীকে বিয়ে করার মত কাম কইরা দেখান, তখন বুঝা যাইব গন্ডির বাইরে যাওয়ার মত কলিজা আছে কোন বাপের ব্যাটার ]
এই সমস্ত উচ্চ-শ্রেনীর সুশীলরে কি আর কমু। আমি অর্ধ-শিক্ষিত মুর্খ লোক, তাই হুঃ আজাদদের ভাষার কারসাজি দেইখা মুগ্ধ হই না। কারন কঠিন কঠিন ভাষার মার-প্যাচ আমার মগজে ঢুকে না। যেইটা মগজে ঢুকে সেইটা হইল "কঠিন কঠিন ভাষার মার-প্যাচের অন্তরালে লেখকের মনের মধ্যে কি আছে"।
হুমায়ুন স্যারের লেখায় ভাষার মার-প্যাচ থাকে না। সহজ-সরল ভাষায় মানুষের মনের কথা উনি লেখেন। এইজন্য নাকি উনি একজন বাজারি লেখক। উনার বই এই দেশের অবুঝ তরুন-তরুণীরা গোগ্রাসে গিলে। অন্যদিকে হুমায়ুন আজাদদের জটিল এবং কুটিল টাইপের লেখার অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যে কিছু অসুস্থ মানসিকতার সুশীল বিকৃত আনন্দ পাইলেও অবুঝ তরুন-তরুণীদের কাছে সেইসব লেখার (পর্নো হিসাবে পড়া ছাড়া) কোন বেইল নাই।