somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাকিবের সাথে আমরা এরকম করি কেন?

০৮ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৬:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকালকে ইফতারের পর ফুটবল খেললাম। কাঁঠাল ডিজাইনের কাঁটাওয়ালা প্লাস্টিকের বল দিয়ে আমি আর আমার সাড়ে চার বছর বয়সী কন্যা নিঃসীমা চট্টগ্রামে আমাদের লালখানবাজারের বাসায় ফুটবল খেললাম! বলে কিক নিতে নিয়ে নিঃসীমা বলল- বাবা আমি মেসি! তুমি কি? আমি নিঃসীমা’র থেকে বল কেড়ে নিয়ে কাটাতে কাটাতে বললাম-আমি নেইমার!আমি নেইমার!!

একটু পরে গিন্নি এসে আমাদের সাথে খেলায় যোগ দিল। আমাদের ‘মেসি, নেইমার’ শুনে গিন্নি বলল- মেয়ে মেসি, মেয়ের বাপ নেইমার, আমি কি?
‘তুমি আলেসান্দ্রো সাবেলা!আর্জেন্টিনার কোচ!’ নেইমারের(!) জবাব শুনে পুঁচকে মেসি ‘হি হি...হি হি...’ করে হাসতে লাগল আর টিভিতে দেখা সাবেলার বয়স অনুমান করে আমার সাবেলা গম্ভীর হয়ে গেল!

বলা বাহুল্য সবই বিশ্বকাপ জ্বর। এই জ্বর আবেগের। ফুটবল নামক অসম্ভব সুন্দর একটা খেলার বিশ্ব উৎসব এরকম জ্বোরো আবেগ তৈরি করবে- এটাই স্বাভাবিক। এই খেলার মহানায়কদের মাঝে দ্রবীভূত হবে আমাদের স্বত্বা। নিজেকে আমরা কখনো ভাবব মেসি, কখনো নেইমার, কখনো বা হামেশ রড্রিগেজ!

কিন্তু আমাদের সত্যিকারের মেসি, আমাদের নেইমার, আমাদের হামেশ কে নিয়ে আমরা কি করছি?

আমাদের সাকিব আল হাসান কে নিয়ে আমরা কি করছি??

আমাদের ক্রীড়া জগতে চোখ ফেলা যাক। শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরা এই উপমহাদেশেরই প্রথম গ্র্যান্ড মাস্টার হলেন আমাদের নিয়াজ মোর্শেদ। নিয়াজ মোর্শেদ গ্র্যান্ড মাস্টার হয়েছিলেন সম্ভবত সেই আশির দশকে। সেই সময় জাতীয় ভাবে যদি আমরা সেটাকে সত্যিকারের গৌরব হিসাবে নিয়ে দাবা কে এগিয়ে নেবার পথ তৈরি করতাম তাইলে দাবায় বাংলাদেশ থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এতদিনে আসা সম্ভব ছিল। আশির দশক এবং নব্বুই এর শুরুতেও বাংলাদেশে ফুটবল খেলোয়াড় রা ছিল তারকা এবং আমাদের ফুটবলের বর্তমান ছিল জ্বলজ্বলে এবং ভবিষ্যৎ ছিল উজ্জ্বল। ক্রিকেট এর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নাম লেখানোর সাথে সাথেই ‘ফুটবল’ কে আমরা লাথি মারলাম! ক্রীড়া জগতে এখন ফুটবল খেলার তারকা মানে যা, হাডুডু খেলার তারকা মানেও তা।

এইসব নষ্ট ভ্রষ্ট সময়ের ঝড়ো ক্যানভাসে নিয়াজের পরে আমাদের একটু খানি মাথা উঁচু করার সুযোগ টা যে ছিপছিপে দেহের, আত্নবিশ্বাসী চোখের এবং ক্ষুরধার মস্তিষ্কের টগবগে যুবক টা দিয়েছিল তার নাম সাকিব আল হাসান।

সাকিব আল হাসানের কথাবার্তা একটু সোজাসাপ্টা। তার পজিশনের একটা লোকের কথাবার্তায় যে ধরনের ভণ্ডামি( বিশেষ করে লোক দেখানো দেশপ্রেম। আমাদের দেশে দেশ কে ভালোবাসা জরুরি নয়।‘আমি দেশ কে ভালোবাসি’ এটা দেখানো জরুরি।) থাকা উচিত সেটা সাকিবের কথাবার্তায় নাই! সাকিব নিজের মেধা এবং সামর্থ্যের উপর আস্থাশীল। সে যেটা বিশ্বাস করে সেটাই বলে।

আমদের সমস্যা হচ্ছে আমরা নিজেরা কারো কথাবার্তা বলার যে ‘তেলিয় মাপকাঠি’ ঠিক করে দিই তার বাইরে কেউ কথা বললে সাথে সাথে তার প্রতি ঘৃণা অনুভব করা শুরু করি এটা না ভেবেই যে ঠিক যে পয়েন্টে আমরা তাকে ঘৃণা করছি সেই পয়েন্টেই তার কতটুকু অবদান! সাকিবের সমস্যা হচ্ছে সে ‘দেশপ্রেমের ছিঁচ-কাঁদুনি’ গেয়ে ‘কারো মন’ ঠিক রাখার চেয়ে নিজের সেরা খেলাটা দিয়ে বিশ্ব দরবারে ‘দেশের মান’ ঠিক রাখার উপর বেশি জোর দেয়। প্রকৃতি’র যে নিয়ম মেনে কেউ ই সব সময় সফল হয়না, সেই একই নিয়ম মেনে সাকিব ও সব সময় সফল হয় না।

সাকিব কে যারা অসন্মান করছেন তারা আবার একটু ভাবুন। সাকিবই হচ্ছে একমাত্র খেলোয়াড় যার হাতে বল দেখলে আমাদের মাঠে কোন কিছুকেই অসম্ভব মনে হয় না। সাকিব ই হচ্ছে একমাত্র খেলোয়াড় যে ব্যাট হাতে ক্রিজে থাকলে আমাদের মাঠে কোন কিছুই অসম্ভব বলে মনে হয় না। সাকিব ই একমাত্র খেলোয়াড় যে ‘কার বিরুদ্ধে খেলছি’ এসব কখনোই ভাবে নি এবং যে সব সময় ‘জয়ের জন্য খেলছি’ এই বডি ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে জয়ের জন্য খেলে।

তেলতেলে ব্যক্তিত্বের ‘তেলোয়ার’ দিয়ে জাতি’র শির উন্নত হবে না। চাঁচাছোলা স্পষ্ট ব্যক্তিত্বের ‘তলোয়ার’ সাকিব দের কেই দরকার জাতি’র শির উন্নত করার জন্য!
১৩টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×