বাংলাদেশে অনলাইনে কেনাকাটা এখন আস্তে আস্তে বেশ জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। এবার ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদে আমরা দেখেছি যে মানুষের মধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কেনাকাটায় বেশ আগ্রহ ছিল। পত্র পত্রিকায় রিপোর্টে এও এসেছে যে কয়েকশো কোঁটি টাকার কেনাকাটা হয়েছে রোজার মাসে অনলাইনে এবং এর ফলে আশা করা যায় যে ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতে চলেছে এ দেশে। আর অল্প কয়েকদিনের মধ্যে শুরু হতে যাচ্ছে ঢাকা ই-কমার্স ফেয়ার ২০১৪। এতে অনেক প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে যাচ্ছে এবং ই-কমার্সের সঙ্গে সম্পর্কিত সকল প্রতিষ্ঠানকে মানুষ একই যায়গায় দেখতে পাবে।
ই-কমার্সের ইতিহাস বাংলাদেশে একদম নতুন নয়। সেই ১৯৯৮ সালে কয়েকটি কোম্পানি এখাতে লক্ষ্য করা গিয়েছিল যাদের মধ্যে মুন্সিজি ডট কম বেশ নাম করেছিল। তবে সেই প্রতিষ্ঠান গুলো হারিয়ে গেছে এবং এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ২০০৮ সাল পর্যন্ত অনলাইনে লেনদেনের জন্য সত্যিকারের কোন আইন, ব্যাংকিং সাপোর্ট ও অবকাঠামো না থাকা। সেই অবস্থা বদলে যেতে শুরু করেছে ২০০৯ সাল থেকে। তবে ই-কমার্সের ক্ষেত্রে সত্যিকারের তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে ফেব্রুয়ারি ২০১৩ থেকে। ঢাকার শাহাবাগস্থ পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে দেশের সর্ব প্রথম ই-কমার্স মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেই মেলাতে হাজার হাজার লোক গিয়েছিল এবং এর ফলে অনলাইনে কেনাকাটায় এক প্রাণের সূচনা হয়। মাত্র দেড় বছরের মধ্যে এর সুফল লক্ষ করা যায়। কেনাকাটায় এক প্রাণের সূচনা হয়।
ই-কমার্স সেবা প্রদানকারী প্রতিস্থানের সংখ্যা অনেক বেড়েছে দেড় বছরে এবং শুধু তাই নয় গত দেড় বছরে ঢাকার পরে সিলেট, চট্টগ্রাম, লন্ডন ও বরিশালেও ই-কমার্স মেলার আয়োজন করা হয়। আর এর পিছনে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা ছিল বাংলাদেশের প্রথম সর্বাধিক জনপ্রিয় আইসিটি ম্যাগাজিন কমপিউটার জগৎ এবং সরকারের সাবেক আইসিটি মন্ত্রণালয় যা বর্তমানে আইসিটি ডিভিশন নামে পরিচিত।
গত বছরের মেলার পর বাংলাদেশে ফেইসবুক কমার্স (এফ-কমার্স) এবং মোবাইল কমার্স (এম-কমার্স) এর জোয়ার শুরু হয়েছে। এ দুটো ই-কমার্স এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এদের প্রসার বাড়তেই থাকবে। দেশে এখন ফেইসবুক একাউন্ট এর সংখ্যা ৫০ লাখ থেকে ১ কোটির মধ্যে আর মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা ১০ কোটির বেশী। অনলাইনে কেনাকাটা নিয়ে ভয় যত কমতে থাকবে ততই ই-কমার্স এর প্রসার ঘটতে থাকবে।
ই-কমার্স মেলা ২০১৪ ঢাকা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শাহাবাগস্থ সুফিয়া কামাল পাবলিক লাইব্রেরিতে। মেলার ভেনু সম্পর্কে বললে বলতে হয় যে পাশেই রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অল্প একটু দূরেই রয়েছে ইডেন কলেজ ও ঢাকা কলেজের মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো। শাহাবাগ তরুণ প্রজন্মের জন্য সব সময় একটি আকর্ষণীয় যায়গা। তাই তরুণ ভোক্তা বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার মত স্থান এই মেলার ভেন্যু। আর সবাইকে আরও আকৃষ্ট করার জন্য মেলায় কোন টিকেটের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। অর্থাৎ বিনামুল্যে যে কেউ এই মেলা উপভোগ করতে পারবে।
‘ক্লিকের ছোঁয়ায় বাণিজ্য’- এই হল এবারের মেলার স্লোগান। ই-কমার্স মানে কেবল ঘরে বসে কেনাকাটা নয় বরং তার থেকেও অনেক বেশী কিছু। যে কোন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই ই-কমার্স গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে- পাশ্চাত্য বিশ্বে তাই দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশী কোম্পানিগুলোর সময় এসেছে এ বাস্তবতা অনুধাবন করার।
আয়োজক কমপিউটার জগতের পক্ষ থেকে এবারের মেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপহার হল ই-কমার্স ডিরেক্টরি। ই-কমার্স এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম, ওয়েবসাইটের ঠিকানা, ই-মেইল ঠিকানা, ফোন ও মোবাইল ফোন নম্বর এবং প্রতিষ্ঠান গুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে এতে। উল্লেখ্য বাংলাদেশের ই-কমার্স সেক্টরের উপর এটিই প্রথম ডিরেক্টরি। এখন থেকে প্রতিবছর এই ডিরেক্টরি আপডেট করা হবে বলে কমপিউটার জগত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ই-কমার্স ফেয়ার ২০১৪ স্পন্সররা হচ্ছেন প্লাটিনাম স্পন্সর এখানেই ডট কম, তথ্য আপা, গোল্ড স্পন্সর টিম ইঞ্জিন, ওয়েব টিভি নেক্সট, আর সিলভার স্পন্সর হল আড়ং। এছাড়া ই-কমার্স সম্পর্কিত অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। আর মেলার আয়োজকদের সহযোগিতায় বিভিন্ন ধরণের প্রায় ১৫টি প্রতিষ্ঠান পার্টনার হিসাবে কাজ করছে। তার মধ্যে রয়েছে ইংরেজি পত্রিকা দি ডেইলে স্টার, সামহোয়্যারইন ব্লগ , বাংলানিউজ২৪ ডট কম, ঢাকা এফএম, চ্যানেল একাত্তর টিভি, ইত্যাদি।
মেলায় দর্শনার্থীরা বিভিন্ন স্টলে ঘুরে দেখার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর পণ্য ও সেবার সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্বভাবতই আকৃষ্ট করার জন্য ছাড়, উপহার দিবে। এছাড়া একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। মেলার সেমিনার গুলোর মধ্যে রয়েছে ই-বাণিজ্য শুরু ও চালিয়ে নেওয়া, বাংলাদেশে মোবাইল অ্যাপস এবং মোবাইল গেমস এর অবস্থা, তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আইসিটি, ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং সার্ভিস, ই-কমার্সের সফল ভবিষ্যতের জন্য বর্তমান বাংলাদেশের প্রস্ত্ততি-আমরা কোথায়? ইত্যাদি। এসব সেমিনারে বিপুল উপস্থিতি আশা করা যাচ্ছে এবং অনেকেই ইতিমধ্যেই রেজিস্ট্রেশন করেছে।
মেলার প্রচারণা শুরু হয়েছে বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই। আগস্ট মাসে প্রেস ক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এছাড়া বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিগাবাইট গেমিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এবং কম্পিউটার জগৎ ই-কমার্সের উপর সেমিনারের আয়োজন করে। তাছাড়া ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার পাশাপাশি ইন্টারনেটে বিশেষ করে ফেইসবুকে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। মেলার তথ্য তুলে ধরার জন্য একটি ওয়েবসাইট রয়েছে যার ঠিকানা হলঃ http://e-commercefair.com/. ই-কমার্স ফেয়ার-২০১৪ অ্যাপস ডাউনলোড লিংক: Click This Link
এই মেলা কেন দরকার? আয়োজক কম্পিউটার জগতের মতে এই মেলার মাধ্যমে বাংলাদেশের ই-কমার্সের সকল প্রতিষ্ঠান গুলোর একই সঙ্গে তাদের পণ্য ও সেবা তুলে ধরতে পারছে। এরফলে এই খাতে আরও গতি আসবে বলে ধারণা করা যায়। বাংলাদেশে এখন ই-কমার্স সেক্টরের প্রবৃদ্ধির জন্য যা থাকা দরকার তার অনেক কিছুই রয়েছে কিন্তু অনেক মানুষই এর সুবিধা সমূহ সম্পর্কে তেমন জানেন না। অনেকেই তাদের ক্রেডিট কার্ড অনলাইনে ব্যবহার করতে ভয় পান। অনেকে একে ঝামেলা মনে করেন। তাই আমাদের দেশে এখনো এদিকটাতে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি সাধিত হয়নি।
বাংলাদেশে ই-কমার্সের অগ্রগতি করা দরকার। ই-কমার্স শুধু ইন্টারনেটের মাধ্যমে কেনাবেচা না বরং এর মাধ্যমে মানুষের অনেক উপকার হয়। ঢাকার মত ব্যস্ত শহরে যেখানে ট্রাফিক জ্যামে অনেক মুল্যবান কর্ম ঘণ্টা নষ্ট হয় সেখানে কেনাকাটা যদি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা যায় তাহলে অনেকেরই সময় বাঁচবে। তাছাড়া আমরা প্রতিনিয়ত অর্থনৈতিক অগ্রগতি বা জিডিপি গ্রোথ এর কথা বলে থাকি। টাকার লেনদেন যত বেশী স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে করা যাবে তা জিডিপি বৃদ্ধিতে কিছুটা হলেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
ই-কমার্স মেলা শুধু ঢাকা নয় বরং প্রতিটি জেলায় হওয়া উচিত এবং ঢাকার থেকে ঢাকার বাহিরের যারা ক্রেতা তারা এই বিষয়ে আরও এগিয়ে আসুন সেটাই দরকার আমাদের দেশের জন্য।