ঈশ্বর আছেন কি নেই সায়েন্স এবং লজিক প্রয়োগের মাধ্যমে যাচাই করাই এই প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য। চলুন বিজ্ঞানের আলোকে যাচাই করা যাক -
টপিক-১: পরিবর্তন (Changes):
মহাবিশ্বের সবকিছু পরিবর্তনশীল। প্রশ্ন হল পরিবর্তন কি স্বত:স্ফূর্ত? নিজে নিজে হতে পারে? নিউটনের প্রথম সূত্র বলে, “বাহ্যিক কোন বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির ও গতিশীল বস্তু চিরকাল গতিশীল থাকবে”। এককথায়, বস্তু নিজে তার অবস্থার পরিবর্তন করতে পারেনা, করতে হলে বাইরের বল (শক্তি) প্রয়োজন। বিজ্ঞান যদি এটাই বলে তবে বিশ্বজগতের পরিবর্তন নিজে হয়েছে নাকি বাইরের কোন শক্তির প্রয়োজন লেগেছে? বক্তব্য সহজ জাজমেন্ট আপনার কাছে।
বাস্তবে ১টি এনড্রয়েড জিঞ্জারব্রেড মোবাইল লক্ষকোটি বছর ফেলে রাখলেও তা নিজে নিজে জেলিবিনে আপডেট হবেনা যদি না তৃতীয় কোন পক্ষ আপডেট করে। বিবর্তনবাদ মানুষের আপডেট হবার যে থিউরী দেয় সেটা হচ্ছে কিভাবে? মানুষ কি নিজেই নিজেকে আপডেট করল নাকি তৃতীয়পক্ষ প্রয়োজন? বস্তুবাদী লজিক বলে গায়েবী মোজেজা স্টাইলে কোন বস্তু নিজে নিজে পরিবর্তিত হয়না। অটো আপডেটের জন্য আপডেট হবার প্লান, নকশা বা ব্লুপ্রিন্ট থাকতে হয়। মেরু (ঠান্ডা) অঞ্চলের প্রাণীদের চর্বি বেশী থাকবে মরুভূমিতে থাকলে পানি সঞ্চয়ের ব্যবস্থা থাকবে এটা জানা কথা। এইযে মেরু অঞ্চলে চর্বি বেশী আর মরু অঞ্চলে পানি সঞ্চয়, এই নকশা- প্লান -ব্লুপ্রিন্ট কোথা থেকে এল? প্রকৃতি? প্রকৃতি কি বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন কোন অস্তিত্ব যার প্ল্যানিং এর ক্ষমতা আছে? অবশ্য প্রকৃতি নামটা ঈশ্বরের সমার্থ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সেটা বাদ দিয়ে যদি প্রকৃতি মানে যদি আবহাওয়া জলবায়ু ইত্যাদির সমষ্টি বিবেচনা করি তবে এগুলোর কি স্বাধীন বুদ্ধিমত্তা আছে? যদি না থাকে তো বৈচিত্রময় প্রাণিজগত তৈরীর জন্য কোন গ্রান্ড ডিজাইনারের প্রয়োজন আছে কি নেই সেটা ভাববার বিষয়।
টপিক-২: শক্তির নিত্যতা:
শক্তির নিত্যতা বা থার্মোডিনামিক্সের ১ম সূত্র বলে “শক্তির কোন সৃষ্টি নেই, ধ্বংস নেই এটা কেবল একরূপ থেকে অন্যরূপে রূপান্তরিত হয়।” মহাবিশ্ব হচ্ছে শক্তির সমষ্টি। E=mc2 সূত্রানুসারে বস্তুর ভরটাও হল শক্তি। প্রশ্ন, শক্তিকে যদি সৃষ্টি নাই করা যায় তাহলে দুনিয়ারী শক্তির উৎপত্তি কোথায়?
- উত্তর হল: শূন্যতা থেকে! (কোয়ান্টাম তত্ত্ব)
- শূণ্যতা থেকে?
- জ্বি! কোয়ান্টাম বলে, শূণ্যতা আসলে শূন্যতা নয় এটা হল বিশাল হিগস ক্ষেত্র। এর ভেতরে আছে কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশন ভ্যাকুয়াম এনার্জি!
প্রশ্ন হল, এই ভ্যাকুয়াম এনার্জিটা কোথা থেকে আসে? যেহেতু এটা একটা এনার্জি (শক্তি) তাই এই শক্তিটা অন্যকারো রূপান্তরিত রূপ হতে বাধ্য। প্রশ্ন সহজ, এটা কার থেকে ধরা করা সেটাই বলুন?
শূণ্য থেকে শূণ্য হয়, শূণ্য থেকে শক্তি হয়না। সায়েন্স আলিফ লায়লা নয়। গায়েব থেকে লাউ-কদুর জন্ম সায়েন্সে সম্ভব নয়। কথিত শূণ্যতার ক্ষেত্রে ভ্যকুয়াম এনার্জি থাকে এটা ভাল। কিন্তু এই ভ্যাকুয়াম এনার্জি কই থেকে আসে তার তার বিশ্নেষণ কি কখনো বিবেচনা করেছেন?
শক্তি নিজেই পরিচয় বহণ করে সে অন্যকারো পরিবর্তিত রূপ। তাহলে কোঁচো খুড়তে গেলে গোড়ায় একটি আদিম বা প্রাইমেটিভ শক্তির অস্তিত্ব বাধ্যতামূলক। প্রশ্ন হল, ওই প্রাইমেটিভ শক্তিটা কি ছিল? শুরুতে এমন কোন প্রাইমেটিভ শক্তি ছিল যা শূণ্যতাকেও ভ্যাকুয়াম এনার্জি দিল? সমঝদারদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট। বক্তব্য সহজ, জাজমেন্ট আপনার।
টপিক-৩: প্রাণের উৎপত্তিঃ
প্রাণ কি? প্রাণ কিভাবে জন্ম নেয়? প্রশ্নগুলোর জবাব আধুনিক বিজ্ঞানে অস্পস্ট। বর্তমানে মোট মৌল ১১০ যা ১১৮ পর্যন্ত যাবে। এই ১১০ টি মৌল এবং শক্তির সমন্বয়ে প্রাণ তৈরী মানুষের মস্তিষ্কের মত অত্যাধুনিক যন্ত্র দ্বারাও সম্ভব হয়নি। যেটি আমাদের মত বুদ্ধিমান প্রাণীরাও তৈরী করতে পারলনা সেটি হাজার কোটি বছর আগে নির্বোধ আবহাওয়া তৈরী করল?
আলিফ লায়লার আগুন থেকে ফিনিক্স পাখির জন্ম আর উত্তপ্ত দুনিয়া থেকে প্রাণের জন্ম দুটোই গাল-গপ্প যা লোকদের ক্ষণিকের বিনোদন দেয় মাত্র। আমাদের মত বুদ্ধিমান প্রাণী যারা কম্পিউটারকে জন্ম দিতে পারল তারাও প্রাণ তৈরী করতে পারলনা? মানুষের বুদ্ধিমত্তা যখন ব্যর্থ তখন মানুষের চেয়ে উন্নত বুদ্ধিমত্তার কিছু প্রয়োজন যা প্রাণ তৈরীতে সমর্থ, নইলে নিজেদের অস্তীত্বকেই অস্বীকার করা হচ্ছে। নিজেরা প্রাণ বানাতে পারছিনা অথচ ভাবছি আমার প্রাণ নিজে নিজেই তৈরী হয়েছে! প্রাণের ফর্মূলা এতটাই সহজ যে নিজে নিজে তৈরী হয়? যে জিনিষ নিজে নিজেই তৈরী হয় তা আবার আমরা তৈরী করতে পারিনা এতটাই বোগদা মানবজাতি?
স্বল্পবোদ্ধারা ভাবেন টেস্টটিউব, ক্লোনিং হেন তেন করে তো জীব তৈরী হচ্ছে, এগুলো কি প্রাণের জন্ম দিচ্ছে না? উত্তর হল- না। ক্লোনিং হল জীব থেকে জীব বানানো গাছ কলম করবার মত। গাছের ডাল কেটে কলম করলে নতুন প্রাণের জন্ম দেয়া হয়না পূর্বের জন্ম নেয়া প্রাণের স্থান পরিবর্তন হয় মাত্র।
ওপারিনের তত্ব অনুসারে প্রাণের জন্মলগ্নে পৃথিবী উত্তপ্ত ছিল। নানা মৌল জোড়াতালি লেগে প্রাণের সৃষ্টি। সমস্যা হল- নানা মৌল কে কার সাথে মিশবে কোথায় কোন জোড়াতালি দিয়ে RNA, DNA, প্রোটিন তৈরী হবে সেই জ্ঞানটা মৌলগুলো কোথায় পেল? তবে কি মৌলদের নিজস্ব বিবেক বুদ্ধি আছে?
DNA অনু যা খালি চোখে দেখা না গঠন অত্যন্ত জটিল এর একটা খন্ডে যে তথ্য থাকে তা প্রিন্ট করে বই বানানো হলে পৃথিবী চাদের মধ্যবর্তী দূরত্বের চেয়েও ৫০০ গুণ বেশী দূরত্ব হবে! এই বিশাল কোড নকশা করার জন্য সাধারণ নয় সুপার ইন্টেলিজেন্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন। কাকতালীয় ভাবে এক মৌল অন্যকে কামড়ায় ধরে পানি তৈরী হতে পারে DNA অনু নয়। DNA তে কাকতালীয়ের কোন বালাই নেই এখানে একটি কোড A (এডিনিন) এর বদলে T (থাইমিন) বসালে জীবের বিশাল পরিবর্তন হয়ে যাবে। এতটাই সেনসেটিভ যেই অণু সেখানে কোটি কোটি পরমাণু এত নিখুঁত নির্ভুলভাবে নিজ নিজ পজিশনে বসল কিভাবে? ভেবে বিবেচনা করার দায়িত্ব আপনার।
দ্বিতীয় কথা DNA তথ্য বহন করে। কোন প্রাণী কিরকম, তার হাত কেমন, চোখ কেমন, ইত্যাদি তথ্য। এই তথ্যগুলা কোথা থেকে আসল ? পৃথিবীর গরম বাতাস নিজের তাপমাত্রার তথ্য না দিয়ে হাত, পা, চোখ তৈরীর তথ্য দিল? আমরা কি প্রতিবন্ধি যে মেনে নেব মানুষের হাত, পা, চোখ তৈরীর তথ্য বা ব্লুপ্রিন্ট দেবার ক্ষমতা বাতাস, পানি, তাপমাত্রার আছে? যদি না থাকে তবে এই জটিল গঠনের জন্য কোন সুপার ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনারের প্রয়োজন কিনা তার জাজমেন্টের দায়িত্ব আপনার।
পোষ্টটির পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করুন এখানে

ফেসবুকে কর্ণেল সামুরাই