আমি শ্রমিক, এই বাংলার ক্ষুদে এক শ্রমিক।
বাংলার মাটিতে নাই যাহাদের অধিকার ধারা ক্রমিক।
মোধের কারণে দেশের শিল্প আজি মুখোরিত।
তবুও নাই মোদের তরে নিরাপত্তা অবধারিত!
মোদের দিয়া বাড়ায় দেশ বৈদেশিক আয়-
তবুও বেঁচে থাকা-ই আজি মোদের ভিষণ দায়!
যেদিন থেকে পোশাক কারখানায় কাজ করিতে হইলো স্বাদ-
সেদিনই মানুষের খাতা থেকে মোর নামটি পড়িলো বাদ!
মোদের কারখানার অকুস্থল যেথায় নাম নিশ্চিন্তপুর।
জানে সবাই তা এখন শুধুই ধ্বংস্তূপের ক্ষুর।
কিছুদিন আগে সেথায় পড়িল বুঝি অনলের বাজ!
পুড়িল শতাধিক প্রাণ পরিয়া মরণের তাজ।
সহকর্মী মোর অনেকেই পাইল অনলে অক্কা।
তাজ্জব ভাবে যেন সেথা হতে পাইয়াছিলাম আমি রক্ষা।
হারিয়েছিনু সেথায় আমি কত চেনাজানা মুখ।
ভাবিলে সেই কথা এখনো ধড়পড় করে মোর বুক।
আগুনে পুইড়া কয়লা হইলো সহকর্মী রানা।
আগুনেই মিশিয়া গেল তরুণী মেয়ে রেহানা।
আরো পুড়িলো গোলাপী, শিউলি, জুলেখা, সারমিন-
বাদ পড়িল না নয়ন, দুলাল, ফারুক, আজিমুদ্দিন।
দুই সন্তানের জননী রোকসানার দেহটা হইলো নিশ্চিহ্ন
স্বামী তাহার পাইলেন না তাহার দেহের কোন চিহ্ন!
আকাশ- জয়ামণি জানে মা তাদের হাসপাতালে-
বলা হয় নাই আসলে মা যে তাদের কেল্লাফতে।
পাড়াপড়শী যদিও দিলেন তাহাদের মিথ্যা বলিয়া আশ্বাস-
কিন্তু স্বামী জিয়ারুল সে আশ্বাসে করিতে পারিলেন না বিশ্বাস।
বাবা মাকে হারাইয়া রিক্তা বানুর চারদিক আজি শূন্য-
লবাণাক্ত নীর দ্বারা আঁখি দুটি তাহার এখনো পূর্ণ।
রংপুরের একই গ্রামের পুড়িল আঠারটি তাজা প্রাণ-
একই সাথে পায়নি এ গ্রামের মাটি এত লাশের গ্রাণ।
সে গ্রামের একই পরিবারের মরিল চারিজন-
পরিবারের ছোট্ট ছেলেটি কাঁন্দে এখনো বলে প্রিয়জন।
নিশ্চিন্তপুরের পরিবেশে বইয়াছিল লাশের তীব্র গন্ধ-
তবুও প্রিয়জন খোঁজার অভিযান হইলো না বন্ধ।
কেউবা পাইয়াছিল লাশের বিভাজিত খন্ড-
কেবা কাহার স্বজন তথায় চিত্তে লাগিল দ্বন্দ্ব।
বিদ্যালয়ের বারান্দায় হইলো দীর্ঘ লাশের সারি-
মৃত্যুকূপ হইতে আরো লাশ আসিয়া করিল তাহাকে ভারী।
এ ভাবেই অকালে ঝরিল শত তাজা জীবন-
অশ্রু দ্বারা সিক্ত হইলো তাহাদের স্বজনের ভুবন
শ্রমিকের রক্ত-ঘামেই তৈরী হয় বড় বড় দালান
অথচ শ্রমিকরাই পাই না যোগ্য মজুরি-সম্মান।
জাতির উন্নয়নে যাঁরা জীবন করে' বলিদান
কেউ মনে রাখে না তাঁদের অসামান্য অবদান??
ওরে বাংলাদেশি আর কত থাকবি সুখে মাতি'??????
চেয়ে দেখ অকালে নিভে যাচ্ছে কত জীবনবাতি!!!
লোকমুখে এ ট্রাজেডি এক সময় হইয়া যাইবে খতম।
রংপুরের সেই পল্লীতে সদা বইবে কিন্তু শোকের মাতম।
পাব না কি মোরা শ্রমিকেরা কখনো আশার বাণী ?
এভাবে আর কত টানিতে হইবে বেদনার গ্লাণি ?
এভাবেই কি চলিতে থাকিবে মোদের মরণ খেলা ?
লাশের সংখ্যা গুণতে গুণতে ফুরাবে বুঝি মোদের বেলা!
পোশাক কারখানার পরিবেশ আজি হচ্ছে তেজষ্ক্রিয়-
দেশমাথা শাসকরা তথায় খুবই নিস্ক্রিয়!
নির্বিঘ্নে দোষী মালিকেরা আজি পেয়ে যাচ্ছে ছাড়া-
প্রিয়জনের স্মৃতি বুকে জড়িয়ে যেথায় স্বজনেরা পাগলপারা।
অবিচারের ধারা বয়ে যাচ্ছে এ দেশে অনন্তকাল-
দিনে দিনে বাড়ছে তাইতো মৃতে ভরা খাল!
দেশমাথা নিচ্ছে তথায় কত নিষ্ক্রিয় পদক্ষেপ-
তাইতো জনমনে ভেসে বেড়াচ্ছে আজি সক্রিয় আক্ষেপ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:৪২