"মরনরে..তুহু মম শ্যাম সমান"
যৌবনে এই টাইপের ডায়লগ সবার মুখেই শুনা যায়।কিন্তু একবার মরন কাছে চলে আসলেই মেরুদন্ড আপনিতেই ঠিক হয়ে যায়।
অনেকেই ঠেলাগাড়ীর ধাক্কা খেয়ে মাটিতে আছাড় খেয়ে.....এসেই পোস্ট দেন...
"মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে এলাম"
কিন্তু এটা কি জানেন....ইতিহাসে এমন কেউ আছেন....যাকে হত্যা করার জন্য এটেম্প্টই নেয়া ৬৩৮ বার!!!!মৃত্যুকে বুড়ো আঙ্গুল দেখায়ে এখোনো দিব্যি বেঁচে আছেন....
তিনি ফিদেল কাস্ত্রো।
তার মতো আরো অনেকেই আছেন যারা প্রতিনিয়ত লড়াই করে গেছেন আজরাইলের সাথে,কেউ কেউ শেষমেশ হার মানলেও ইতিহাসে তারা অমর হয়ে আছেন।তাদের কারো সাথে পরিচিত হয়ে যাওয়া যাক আজকে.........
এডলফ হিটলার:৫০ টিরও বেশী হত্যা প্রচেষ্টার শিকার....যার মধ্যে রয়েছে কিছু অদ্ভুতুড়ে হত্যা প্রকল্প
তিনি কে ছিলেন সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।তবে নিষ্ঠুর ইতিহাস পরাজিতদের কেবল কালো অধ্যায়গুলোই তুলে ধরে। হিটলারের জীবনের অন্যান্য অনেক দিক সবার অজানাই রয়ে গেছে। অসাধারন এক নেতা ছিলেন,বাগ্মী ছিলেন,তবে ব্যর্থতা সবকিছুকেই চাপা দিয়ে দিয়েছে।
তাকে মারার জন্য প্রায় ৫০ টির মতো চেষ্টা চালানো হয়েছে.....কিন্তু প্রত্যেকবারই তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন.:উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো......
*প্রথম তার উপর হামলার ঘটনা ঘটে ১৯২১ সালে।একটি বক্তৃতা দেবার সময় তার উপর কেউ গুলি চালায়।
*১৯৩২ সালে বার্লিনের হোটেল কাইসেরহরফে তার টেবিলের খাবারে বিষ মিশিয়ে তাকে মারার চেষ্টা চালানো হয়,একই বছর মিউনিখ ওয়েইমারের মধ্যবর্তি স্হানে ট্রেনে তার উপর গুলি চালানো হয়।
*১৯৩৯..ওয়ার্শো,পোল্যান্ড.....পোলিশ আর্মি হিটলারের গাড়ি বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে চেষ্টা করে,কিন্তু তাও ব্যর্থ হয়।
একই বছর তাকে হত্যা করার জন্য আরো ৬ বার চেষ্টা চালানো হয়,মিউনিখেই ২ বার,প্যারিসে ১ বার।
তাকে মারার জন্য আমেরিকান আর্মি এক মজার উপায় বের করেছিলো।
তারা হিটলারের অবকাশযাপন কেন্দ্রে পর্নোগ্রাফিক মেটেরিয়ালস পাঠানোর কথা চিন্তা করে যা পড়ে হিটলার পাগল হয়ে যাবেন আর যুদ্বে আমেরিকানরা জিতে যাবে!!!!!!!!!!!!!!তবে এই পরিকল্পনা হালে পানি পায়নি।
এক কর্নেল স্টেফানবার্গই হিটলারকে মারার জন্য ৪বার চেষ্টা করেছিলেন..
সর্বশেষ জুলাই ২০,১৯৪৪,হিটলারের বাঙ্কারে বোম ফাটে কিন্তু অলৌকিকভাবে হিটলার বেঁচে যান......স্টেফানবার্গ ঝুলে যান।
অনেক চেষ্টার পরে অবশেষে ফুয়েরার মারা যান......নিজেই নিজেকে মৃত্যুদূতের হাতে তুলে দেন ......
গ্রেগরি রাসপুটিন:বিষ খাওয়ানো হয়েছিলো,গুলি খেয়েছেন চার বার,অবশেষে মৃত্যু ঘটেছিলো..............??
বিখ্যাত রাশিয়ান জার রোমানভ পরিবারের ধংশের জন্য তাকে দায়ী করা হয়।অনেকেই আবার তাকে এন্টিক্রাইস্ট বা দাজ্জালও ভেবে নিয়েছিলো!!
আসলে তিনি কে ছিলেন আর কেমন ছিলেন পুরাটাই রহস্যাবৃত।
জুন ২৯,১৯১৪....প্রথম তাকে ছুরি দিয়ে হামলা করেন এক সাবেক পতিতা..
খিওনিয়া গুসেভা।ছুরি পুরাটাই তার বুকে ঢুকে যায়!....বুকে বিরাট এক গর্ত হয়......কিন্তু ডাক্তাররা তাকে এক জটিল অপারেশনের মাধ্যমে বাঁচিয়ে তুলেন।
১৯১৬ সালের ডিসেম্বর;
জারের উপর তার মারাত্মক প্রভাব রাজপরিবারের অন্যান্যদের মাথাব্যাথা হয়ে দাড়িয়েছিলো।তারা সিদ্বান্ত নিলেন এই মাথাব্যাথা উপড়ে ফেলতে হবে। রাজপরিবারের অত্যন্ত প্রভাবশালী প্রিন্স ফেলিক্স ইউসুপভ আরো ২ জনকে সাথে করে রাসপুটিনকে তার বাসায় নিমন্ত্রন করলেন,,তারা রাসপুটিনকে কেক খেতে দিলেন সাথে সায়ানাইডপূর্ন রেড ওয়াইন.....
খাওয়া দাওয়া শেষ করে রাসপুটিন যেমন ছিলেন তেমনই !সায়ানাইডকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে টিকে থাকলেন রাসপুটিন।
ইউসুপভ তা দেখে মারাত্মক ভয় পেয়ে তাকে পিছন থেকে ২ বার গুলি করলেন.....রাসপুটিন গুলি খেয়ে পড়ে গেলেন..সবাই উনি মারা গেছে ধরে নিয়ে চলে গেল....কেবল ইউসুপভ ফিরে এলেন তার দেহকে লুকিয়ে ফেলতে......ঘরে ঢুকেই দেখলেন রাসপুটিন দাড়ানো..মৃদু কন্ঠে ফিসফিস করে তাকে বলতে শুনলেন""খারাপ ছেলে!!""
রাসপুটিন তখন পালাতে চেষ্টা করতে গিয়ে পিছন থেকে আরো ৩ টি গুলি খেলেন,,তারপর তাকে রাবারের তক্তা দিয়ে পিটানো হল......বেঁচে রইলেন তারপরও!!!তারপর কম্বল দিয়ে মুড়ে-বেধে পানিতে ফেলে দেয়া হলো তাকে।
তার দেহ যখন উদ্বার করা হলো তখন তার হাত পাওয়া গেল খোলা.....কম্বল ছিলনা দেহে......তারমানে নিজেকে প্রায় উদ্বার করে ফেলেছিলেন।!!!পোস্ট মর্টেমে তার মৃত্যুর প্রধান কারন পাওয়া যায়......পানিতে ডুবা!!
যদিও তার দেহে প্রচুর সায়ানাইড এবং ৩ টি গুলি পাওয়া গিয়েছিলো!!!
ফিদেল কাস্ত্রো: ৬৩৮ বার মৃত্যুদূতকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়া মহানায়ক
ফ্যাবিয়ান এসক্যলান্তে,যিনি দীর্ঘদিন কাস্ত্রোর দেহরক্ষী হিসাবে ছিলেন..তিনি হিসাব করে বের করেছিলেন এই সংখ্যাটি।
৯৯ ভাগ হত্যাচেষ্টাই করে সিআইএ।
কতভাবেই না চেষ্টা করেছে তারা,সিগার ফাটিয়ে,স্কুবা ডাইভিং স্যুটে ফাংগাস লাগিয়ে,,,মাফিয়া স্টাইল শুটিং......
তার মধ্যে প্রায় কাছাকাছি চলে গিয়েছিলো তারা কাস্ত্রোর প্রাক্তন প্রেমিকা ম্যারিটা লোরেন্জের দ্বারা।সিআইএ একটা কোল্ড ক্রিমের বোতল দেয় ম্যারিটা কে......।সেটা ছিল বিষে ভরা.......কিভাবে কাস্ত্রো সেটা ধরে ফেলেন এবং তিনি তার প্রেমিকার হাতে বন্দুক দিয়ে বলেন তাকে গুলি করতে!!
স্বভাবতই সেটা করতে পারেনি..বলেই আজো বেঁচে আছেন ফিদেল.....
তার একটা বিখ্যাত বানী রয়েছে.......
"If surviving assassination attempts were an Olympic event, I would win the gold medal"
ইয়াসির আরাফাত.....
ঘটনা ১।১৯৮৫ সাল।ইসরায়েলিরা বোমা হামলা চালায় পিএলও হেডকোয়ার্টারে তাকে মারার জন্য।৭৩ জন মারা গেলেও বেঁচে যান আরাফাত।
ঘটনা ২।১৯৯২।লিবিয়ান মরুভুমিতে তার প্লেন ক্রাশ করে।পাইলট ও সঙ্গী ২ জন মারা যান......আরাফাত দিব্যি বেঁচে থাকেন।
এরকমভাবে একবার গাড়ী বোমা হামলা থেকেও রক্ষা পান ইয়াসির আরাফাত।
অবশেষে তিনি মারা যান নভেম্বর ১১,২০০৪..মৃত্যুর কারন এখোনো রহস্যে আকীর্ন
জর্দানের বাদশাহ হোসেন.........ডিটেকটিভ গল্পের নায়ক!!
পুরা জীবনে ১২ বার মৃত্যদুয়ার থেকে ফিরে এসেছিলেন বাদশাহ হোসেন।
বেশীরভাগই ১৯৫১ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে।
১৯৫১ সালের ২০ জুলাই দাদা বাদশাহ আব্দুল্লাহর সাথে জুমআর নামাজ পড়ে বের হচ্ছিলেন তিনি।এক ফিলিস্তিনি জঙ্গি তাদের উদ্দেশ্যে বন্দুক দিয়ে গুলি করে.......বাদশাহ আব্দুল্লাহ সেখানেই মারা যান। হোসেন প্রথম দফায় গুলির আঘাত থেকে বেঁচে গেলেও ২য় বার তাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়ে হত্যাকারী............গুলির আঘাত লাগলেও কোন রক্ত বের হয়নি!!!
দাদার দেয়া বীরত্বের মেডেল বাঁচিয়ে দেয় তাকে!!
এইভাবে আরো অনেকবার তাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়,১৯৭০ সালে তার মোটর শোভাযাত্রায়ও হামলা চালানো হয়......
বেঁচে যান প্রত্যেকবারই।
অবশেষে হার মানেন ক্যান্সারের হাতে..১৯৯৯ সালে।
ইতিহাসে আরো বেশ কয়েকজন ডাই-হার্ড আছেন.....আমাদের উপমহাদেশেই এরকম একজনকে ডাই-হার্ড আখ্যা না দিলে ভুল হয়ে যাবে।
পারভেজ মোশাররফ।
প্রায় ৫ বার মৃত্যুর এক্কেবারে কাছ থেকে ফিরে এসেছিলেন তিনি..
ফিরে এসে এখোনো বেঁচে-বর্তে আছেন।
সূত্র--ইন্টারনেট
[