আহত হয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে রিয়াজ। প্রচন্ড রাগ আর ক্ষোভে ফুঁসছে সে! মাত্র কয়েকমাস আগে নিজের জমানো কিছু টাকা আর ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের লোন নিয়ে একটি গাড়ী কিনেছিল। ইন্সুরেন্স করাবে করাবে বলে শেষ পর্যন্ত সেটাও করানো হয়নি। আজ অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথেই ঘটে গেল এক দূর্ঘটনা। গাড়ী যখন শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করছিল, হঠাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র তার গাড়ীটি ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলল। অবশ্য শুধু রিয়াজের গাড়ীই না, আরো অনেকের গাড়ীই ভেঙ্গেছে। কিছুক্ষন আগে নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র গাড়ী চাপা পড়ে মারা গেছে। সেটার প্রতিবাদ করতেই গাড়ী ভাঙ্গলো ছাত্ররা! ঘটনার সময় রিয়াজের সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু ফয়েজও রিয়াজের সাথে ছিল। ফয়েজের কিছু হয়নি তবে গাড়ী ভাঙ্গার সময় কাঁচের আঘাতে সামান্য আহত হয়েছে রিয়াজ।
--“দোস্ত, কি অবস্থা এখন? খুব বেশী ব্যাথা করতাছে?”
--“আরে...রাখ তোর ব্যাথা! বজ্জাত পোলাপাইনগুলি কেমনে গাড়ীটা টুকরা টুকরা করলো দেখলি?”
--“বাদ দে দোস্ত! যা হওয়ার হইছে। মন খারাপ করিছ না।“
--“মন খারাপ করমু না মানে? তুই তো জানছ, কত কষ্ট কইরা গাড়ীটা কিনছিলাম। ব্যাংক থেকে কতগুলি টাকা লোন নিছি। আইচ্ছা দোস্ত, ওগোর লাভটা কি হইল গাড়ীটা ভাইঙ্গা ক্ তো আমারে? ওগোর সহপাঠী মরছে, তাই বইলা ওরা আমার গাড়ী কেন ভাঙ্গবো? আমার কি দোষ?”
--“সেইটা ওরা এখন বুঝব না রে দোস্ত! যেদিন নিজের গাড়ী হইব, সেদিন ঠিকই বুঝব!”--দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল ফয়েজ।
কথাটা শোনার পর মাথাটা ঝিম মেরে উঠল রিয়াজের। পুরোনো এক স্মৃতি মাথাচারা দিয়ে উঠল। এই তো, মাত্র কয়েকবছর আগের কথা। এত তাড়াতাড়ি কিভাবে ভুলে গেল সে? ডিপার্টমেন্টের ছোট ভাই নাসির যেদিন এক্সিডেন্টে মারা গেল, নিজ হাতেই তো কমপক্ষে ৭-৮টি গাড়ী ভেঙ্গেছে সে! কই সেদিন তো একটি বারের জন্যও মনে হয়নি...সেই নির্দোষ গাড়ী মালিকদের কথা!! কি অপরাধ ছিল তাদের?? মনে মনে খুব হাসি পাচ্ছে রিয়াজের! নিজের ভিতর যে রাগ আর ক্ষোভ এতক্ষন পুষছিল সেটাও কোথায় যেন উবে গেল।