somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমারে লেগেছে এত যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে...(সম্পূর্ণ)

২৩ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসের পিছনে কলেজ পড়ুয়া কিছু ছেলেমেয়ের হৈ-হুল্লর যেন মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে নীরবের। বারবার পিছনে ফিরে ভ্রু কুচকে তাকাচ্ছে সে। তাদেরকে বোঝাতে চাচ্ছে-একটু রয়ে সয়ে ফুর্তি করো'। কিন্তু নীরবের ইশারা ইঙ্গিত কেয়ার করার টাইম কই ওদের? বাংলা পপ গান, ইংলিশ মেটাল, হিপহপ যে যা পারছে বেসুরা সুরে গেয়েই যাচ্ছে একটার পর একটা। গানের তালে তালে চিৎকার তো আছেই! সেই সাথে হাসাহাসি-হাততালি-শিস দেয়া...ওফ মাথাটা একেবারে ধরেই গেল নীরবের। এদিকে বাসের অন্যান্য যাত্রীরা একেবারেই নির্বিকার। কারো চেহারার মধ্যে বিরক্তির কোনো আভাই দেখা যাচ্ছে না। কিছু মধ্য বয়স্ক ভদ্রলোক তো বেশ আগ্রহভরেই উপভোগ করছে টিনএজার তরুন-তরুনীদের উন্মাদনা। নীরবের যে ইদানিং কি হয়েছে তা সে নিজেও জানেনা। সবকিছুই কেন যেন খুব বিরক্তিকর মনে হয়। জীবনটা দিন দিন একদম বর্ণহীন হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে প্রচন্ড একঘেয়েমী লাগে এই জীবন। প্রতিদিন ৯-৫টা অফিস, অফিস শেষে দীর্ঘ ৩ ঘন্টার ট্রাফিক জ্যাম পেড়িয়ে অনেকটা আধামরা হয়ে বাড়ী ফেরা, তারপর খেয়ে দেয়ে ঘুম, পরদিন আবার অফিস...! এটাকে কি জীবন বলে? কালকে অফিস থেকে ৫দিনের ছুটি নিয়েছে সে। অনেকদিন থেকেই ভাবছিলো কক্সবাজার থেকে একটু ঘুরে আসবে। সমুদ্রের বিশালতা ও অপার সৌন্দর্য হয়ত কিছুটা হলেও তার একঘেয়েমীতে ভরা জীবনে স্বস্তি এনে দেবে! তবে ছুটি ম্যানেজ করতে বেশ ভালোই কাঠখড় পোহাতে হয়েছে তাকে। প্রাইভেট কোম্পানী থেকে ৫দিনের ছুটি ম্যানেজ করা আর হিমালয় পর্বত জয় করা তো প্রায় কাছাকাছিই একটা ব্যাপার।

বেশীক্ষন হয়নি বাস যাত্রা শুরু করেছে। এখনো অনেক সিটই খালী। সামনের স্টপেজগুলো থেকে হয়ত আরো যাত্রী উঠবে। নীরবের ঠিক পিছনের সিটে বসা এক ভদ্রলোক নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। এই চিৎকার চেচামেচির মধ্যে একটা মানুষ কিভাবে নাক ডেকে ঘুমাতে পারে নীরব কিছুতেই বুঝে উঠল না। লোকটির ঘুম দেখে নীরবেরও শরীরটা মেজমেজ করছে। হাল্কা ঘুমও পাচ্ছে। ঘুম ব্যাপারটা কি সংক্রামক ব্যাধি কিনা সেটাই ভাবছে নীরব। আর এদিকে সেই উচ্ছ্বল তরুন-তরুনীরা আগের চেয়ে একটু শান্ত হয়েছে। বোধ হয় চিল্লাতে চিল্লাতে টায়ার্ড হয়ে গেছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল নীরব। কানের মধ্যে হেডফোন গুজে দিয়ে প্রিয় শিল্পী জন ডেনভারের সেই বিখ্যাত গান “ইউ ফিল আপ লাই সেন্সেস...” শুনতে লাগল। গান শুনতে শুনতে কখন যে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল, জানেনা সে! আচমকা একটি মেয়েলী কন্ঠ শুনে হুরমুর করে জেগে উঠল...
--এক্সকিউজ মি! আপনি তো হেলতে হেলতে আমার কোলের উপর এসে পড়েছেন! আপনাদের মত যাত্রীদের জন্য বাসে “সিট” নয় “খাটের” ব্যবস্থা করা উচিৎ ছিল!

মেয়েটিকে দেখে নীরব হতবাক হয়ে গেল। তার পাশে এই পরী কোথ থেকে এল? পরী দেখতে নাকি অনেক রুপসী হয়। তবে তার পাশে বসা মেয়েটির চেয়ে রুপসী হবেনা-এই ব্যাপারে নীরব নিশ্চিত!
--আজব তো! আপনি কিছু না বলে “হা” করে তাকিয়ে আছেন কেন?
--এহেম...না মানে আমি একটা ব্যাপার বুঝে উঠতে পারছিলাম না!
--“বুঝে উঠতে পারছিলাম না” মানে? কি বুঝে উঠতে পারছিলেন না?
--আমি কি সপ্ন দেখছি নাকি সত্যি দেখছি-সেটাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তবে এখন পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম যে সপ্ন দেখছিলাম না।
--ওও তাই? তো কিভাবে নিশ্চিত হলেন?
--পরীরা চশমা পড়ে না। কিন্তু আপনার চোখে চশমা।
--আশ্চর্য!! আপনার সাহস দেখে সত্যিই অবাক হচ্ছি! আপনি আমার সাথে ফ্লার্ট করছেন???
--আমি খুবই গোবেচারা টাইপ মানুষ। ফ্লার্ট কিভাবে করে সেটা জানিনা। তবে আমি যা বলেছি একটুও মিথ্যা বলিনি।
--আপনার চেহারাটা বোকাবোকা হলেও আমি নিশ্চিত আপনি অত্যন্ত ধুরন্দর একটা লোক। আমার কপাল খারাপ...আপনার মত একটা লোকের পাশে আমার সিট পরেছে।
--আপনি কিন্তু আমাকে ভুল বুঝছেন। আপনি যা ভাবছেন আমি তা নই।
--ঠিক আছে। ঠিক আছে। আপনি যেমনি হোন না কেন সেটা নিয়ে ভাবাভাবির টাইম আমার নেই। আপনি আপনার মত থাকেন। আমি আমার মত থাকি। তবে দয়া করে দূরত্ব বজায় রাখুন। ঘুমের ভান করে যদি আবার আমার দিকে হেলার চেষ্টা করেন...খুব খারাপ হবে বলে দিলাম!
--হাহাহাহাহা! তার মানে আপনি ভেবেছেন আমি তখন ইচ্ছে করে......হলি সিট! আপনি কেন খামাখাই আমার প্রতি এতটা আক্রমনাত্নক হয়ে উঠেছেন বুঝতে পারছিনা। আপনি পুরুষ বিদ্বেষী নাতো?
--আপনি আসলে কথা বলেন বেশী। আস্ত একটা বাঁচাল লোক আপনি!
--আমি মোটেও বাঁচাল না। তবে যাকে ভালো লাগে তার সাথে অনেক বেশী কথা বলি।

নীরবের দিকে প্রচন্ড বিরক্তিমাখা দৃষ্টিতে তাকালো সূচী। কিছু বলল না। মনে মনে ভাবল, “এই টাইপ লোকের সাথে যত কম কথা বলা যায় ততই ভালো”।

পিছনে আবার হট্টগোল শুরু হয়েছে। এবার গান-বাজনা নয়। দুই বন্ধুর মধ্যে ফাটাফাটি ঝগড়া বেধে গেছে। বাকি বন্ধুরা প্রানপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে তাদের ঝগড়া থামানোর জন্য। কিন্তু কোন কাজই হচ্ছে না। বাসের মুরুব্বী টাইপ কিছু যাত্রী এবার উঠে এসেছে তাদেরকে থামানোর জন্য। অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে অবশেষে দুজনকে ঠান্ডা করা সম্ভব হয়েছে। এবার চলছে কোলাকুলি পর্ব। পুরো ব্যাপারটা বেশ ভালোভাবেই উপভোগ করল নীরব। হঠাত করে কেন যে তার সবকিছুই ভালো লাগতে শুরু করেছে...কে জানে??

সূচী ঘুমিয়ে পড়েছে। ওর ঘুমন্ত মুখখানির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নীরব। নীরবের মনে হচ্ছিল আকাশের চাঁদ যেন ঠিক তার পাশের সিটে নেমে এসেছে। এত কাছ থেকে চাঁদ দেখার সৌভাগ্য সবার হয়না। একটি মূহুর্তের জন্যও এই অকৃ্ত্রিম সৌন্দর্য উপভোগ করা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে চায় না নীরব। একটা মানুষ এত সুন্দর কিভাবে হয়? সৌন্দর্যের একটা সীমা থাকা উচিত। সীমাহীন সৌন্দর্য মোটেও ভালো না। বাসের ঝাকুনীতে হঠাত সূচী নিরবের দিকে হেলে পড়ল। নীরবের কাধে মাথা রেখে নিশ্চিতে ঘুমিয়ে আছে সে। নীরবের মনে হচ্ছিল চাদের নরম আলো বুঝি তার সারা শরীরে স্পর্শ করেছে। অন্যরকম একটা ভালোলাগা অনুভূত হচ্ছিল। জীবনের প্রতি চরম বিতৃষ্ণা চলে এসেছিল নীরবের। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে জীবনটা অনেক সুন্দর...অনেক!!

--এক্সকিউজ মি! এখন তো আপনিই হেলতে হেলতে আমার কোলে এসে পড়েছেন!

সূচী চোখ মেলে দেখে যে তার মাথা নীরবের কাধের দিকে হেলানো। প্রচন্ড হচকচিয়ে গেল সে! লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেল। নীরবকে কি বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না...

--আমি নিশ্চিত আপনি ইচ্ছে করে আমার দিকে হেলে পড়েননি, মুচকি হেসে বলল নীরব।
--সরি আসলে কখন যে......আই এম রিয়েলী সরি!
--সরি হওয়ার কিছু নেই। আমি বুঝতে পেরেছি। আশা করি আপনিও বুঝতে পেরেছেন যে, আমি তখন ইচ্ছে করে আপনার গায়ে হেলে পড়িনি!!
--হুম। আমি খুবই লজ্জিত। না বুঝে আপনার সাথে ওরকম ব্যবহার করা আমার মোটেও উচিত হয়নি।
--ইটস ওকে। আমি কিন্তু আসলে তেমন কিছুই মনে করিনি।
--থ্যাংক্স। আর ও...আপনি কিন্তু তখন আমাকে পরী-টরী কিসব হাবিজাবি বলছিলেন যা আমার কাছে মোটেও শোভন মনে হয়নি!
--ও আই সি! আমি সরি সেজন্য। আসলে আপনাকে প্রথম যখন দেখি মাথা একদম নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কি বলতে যে কি বলে ফেলেছি! আসলে আপনি এত সুন্দর...
--প্লিজ প্লিজ স্টপ। আপনার কথাবার্তা কিন্তু আবার চিপ ফ্লার্টিং-এর দিকে টার্ন নিচ্ছে।
--হাহাহাহাহা। আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি বোধ হয় কমপ্লিমেন্টের সাথে ফ্লার্টকে গুলিয়ে ফেলেছেন। আমি কিন্তু...
--ওফ বাদ দেন। এই ব্যাপারে আপনার সাথে তর্ক করতে ভালো লাগছে না। কফি খাবেন? আসার সময় এক ফ্লাক্স বানিয়ে এনেছি। আমি আবার কফি না খেয়ে থাকতে পারিনা। পুরোপুরি কফি এডিক্টেড।
--কফি কি আপনি নিজের হাতে বানিয়েছেন?
--হ্যা, নিজের হাতে বানিয়েছি। কেন?
--না মানে...চিনি দিয়েছিলেন?
--আশ্চর্য! চিনি দেবো না কেন?
--এহেম এহেম...আপনি নিজ হাতে বানিয়েছেন আবার চিনিও দিয়েছেন...ভয়ে পাচ্ছি এত মিষ্টি একসাথে খেলে না জানি আবার ডায়বেটিস হয়ে যায়..!!

নীরবের দিকে রাগান্বিত ভংগিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল সূচী। তারপর উচ্চস্বরে হেসে উঠল। হাসতে হাসতে হাত থেকে কফির মগ উল্টে পড়ে যায় এমন অবস্থা। নীরবও হাসছে। ওদের হাসি দেখে কিছু কৌতুহলী যাত্রী বারবার উঁকি মেরে বোঝার চেষ্টা করছে...কাহিনী কি...?

--জানি না কেন এত হাসি পেল আপনার কথা শুনে। আচ্ছা আপনি কি সবসময় এভাবেই কথা বলেন?
সুচীর কথা শুনে মুচকি হাসল নীরব। কিছু বলল না। নীরবকে প্রথম প্রথম সূচীর যা মনে হচ্ছিল এখন আর তা মনে হচ্ছে না। উল্টো নীরবকে ভালো লাগতে শুরু করেছে। ওর হাসিতে অদ্ভুত রকমের একটা সরলতা আছে। সূচী মনে প্রানে বিশ্বাস করে, একটি মানুষের হাসিই বলে দেয় সে আসলে মানুষ হিসেবে কেমন।

--এই দেখুন, আমরা কিন্তু এখন পর্যন্ত একে অপরের নামটাও জানিনা। আমি নীরব। আপনি?
--সূচী।
--চমৎকার নাম। বাই দ্যা ওয়ে কক্সবাজার যাওয়া হচ্ছে কেন?
--অনার্স পরীক্ষা শেষ করলাম। খুব বোরিং লাগছিল কদিন থেকে। ভাবলাম কক্সবাজার থেকে একটু ঘুরে আসি। ওখানে আমার ছোট খালা থাকে। উনার বাসাতেই উঠব। আমার আরো কিছু কাজিন ও দু’একদিনের মধ্যে ওখানে জয়েন করবে। সবাই একসাথে বিচে ঘুরব, মাস্তি করব। অনেক মজার মজার প্ল্যান আছে।
--আপনার সময়টা বেশ আনন্দে কাটবে বোঝা যাচ্ছে। বেস্ট অব লাক।
--থ্যাংক্স। আচ্ছা আপনার কি প্ল্যান?
--আমার প্ল্যান? এইতো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিচে হাটাহাটি করব। একা একা মন ভরে সমুদ্র দেখব। উদার সাগরের সাথে হৃদয়ে জমে থাকা সকল ক্লান্তি, বিষন্নতা, একাকিত্ব ভাগাভাগি করে নিব...
--বাহ! কাব্যিক মার্কা কথাবার্তাও খারাপ জানেন না দেখছি!! তো আপনি একা একা সমুদ্র দেখবেন?? আজব মানুষ তো!!
--কিছু করার নেই আসলে। ক্লোজ বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই দেশের বাইরে চলে গেছে। যারা দেশে আছে তারাও বিয়েসাদি করে পুরোদুস্তর সংসারী। বউকে সঙ্গ দিতে দিতেই একেকজন কাহিল। আমাকে সঙ্গ দেয়ার সময় কারোরই হয়ে উঠেনি।
--ফিল সো স্যাড ফর ইউ। এনিওয়ে আপনি বিয়ে করছেন না কেন?
--কাকে বিয়ে করব বলুন? কেউ তো কাছে আসেনি...কেউ ভালোবাসেনি...
--তার মানে বলতে চান, আপনি কখনো প্রেম করেননি?
--সেই সুযোগ আর পেলাম কই? হৃদয়ে ভালোবাসার সমুদ্র নিয়ে বসে আছি...কেউ তো ভুলেও উঁকি দিয়ে দেখল না।
--আপনি এখনো প্রেম না করে আছেন বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে।
--কিন্তু এটাই বাস্তবতা। প্রেম কি আর সবার কপালে থাকে বলুন?
--ঠিকই বলেছেন। প্রেম আসলে সবার কপালে থাকেনা। আমিও আপনার মতই প্রেমহীন জীবন কাটিয়ে যাচ্ছি।
--ওহ মাই গড!! বলেন কি? আপনি তো চাইলেও প্রেম না করে থাকতে পারার কথা না! আমি একশ ভাগ নিশ্চিত প্রতিদিন কয়েক হাজার রোমিও আপনার গেইটের সামনে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে থাকে শুধুমাত্র আপনাকে একপলক দেখার আশায়। কেউ-ই কি আপনার মন গলাতে পারলনা? এতটাই কঠিন আপনার হৃদয়?
--হাহাহাহা! আপনি এত কাব্যিক সুরে কথা বলবেন না তো প্লিজ। হাসি পায় শুনলে!
--আপনার এই টুকু মিষ্টি হাসির জন্য তো কবিই হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।
--এই তো আবার শুরু হয়ে যাচ্ছে কিন্তু...আমি এবার সত্যিই মাইন্ড করব!
--ওকে সরি ম্যাডাম। এবার প্লিজ বলুন কেন আপনি প্রেমহীন জীবন কাটাচ্ছেন?
--কি প্রেম করব? আমার কেন জানি মনে হয় ছেলেরা ভালোবাসার মানেই জানেনা। ভালোবাসা কি সেটাও বুঝেনা। তারা তাদের সাময়িক মোহটাকে প্রেম ভেবে ভুল করে। একটা সময় যখন মোহভঙ্গ হয়, তখন সেই রিলেশনকে তারা বোঝা ভাবতে শুরু করে। পালিয়ে বাঁচতে চায়...
--এক্সকিউস মি! এভাবে জেনারালাইজ করা বোধ হয় ঠিক হচ্ছে না। সবাই কিন্তু এক না...
--জানতাম আপনি মাঝপথে এটাই বলবেন। আমি আমার কাজিন, বান্ধবীদের অনেক ঘটনা দেখেছি...

ওদের তর্ক বেশ কিছুক্ষন চলল। এদিকে বাস নির্দিষ্ট সময়ের বেশ কয়েকঘন্টা আগেই গন্তব্যে চলে এসেছে। তখন ভোর ৪টা। ৬ টার আগে তো কোনোভাবেই পৌছানোর কথা ছিল না!

--দেখেন তো একটা ঝামেলায় পড়লাম না? খালুকে বলেছিলাম ৬টার দিকে স্টপেজে থাকতে। এখন কি করি?
--খালুকে একটা ফোন দিয়ে বলেন যে আপনি চলে এসেছেন।
--যা ধারনা করেছিলাম তাই...ফোন ধরছে না। বোধ হয় গভীর ঘুমে এখন।
--ওয়েটিং রুমে কিছুক্ষন বসতে পারেন। আর যদি কিছু মনে না করেন, খালু না আসা পর্যন্ত আমি আপানাকে সঙ্গ দিতে পারি।
--থ্যাংক্স এ লট নিরব। কথাটা হয়ত আমিই আপনাকে বলতাম। কিন্তু আপনি খামাখা আমার জন্য কষ্ট করবেন?
--এটা একটা কথা বললেন? আপনার সাথে কাটানো প্রতিটি মূহুর্ত…
--বুঝছি বুঝছি আর বলতে হবে না। আচ্ছা আপনি কি হোটেলে উঠছেন?
--হ্যা। শৈবাল হোটেল। আগে থেকেই রুম বুক করে রেখেছি।

হঠাৎ করেই সেলফোন বেজে উঠল সূচীর। তার খালু ফোন করেছে। তিনি বাসা থেকে অলরেডী রওনাও দিয়ে ফেলেছেন। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই এখানে চলে আসবেন।
--নিরব, খালু এখনই চলে আসবেন। আপনার সাথে সময়টা খুবই ভালো কেটেছে আমার। থ্যাংক্স এ লট ফর ইউর কোম্পানী...আর আপনার “সমুদ্র দেখা” শুভ হোক। টেইক কেয়ার!
--টেইক কেয়ার টু সূচী।
--বাই।
--বাই।

হোটেলে গিয়ে সামান্য নাস্তা সেরেই বিচে চলে এসেছে নীরব। ভেবেছিল একটু ঘুমিয়ে নিবে। রুমে গিয়ে বিছানায় কিছুক্ষন গড়াগড়িও খেয়েছে। কিছুতেই ঘুম আসছিল না। প্রচন্ড অস্থির লাগছিল। সেই সকাল থেকে বিচে হাটাহাটি করছে সে। এখন তো দুপুর গড়িয়ে বিকেলই হয়ে গেছে। কক্সবাজার এসেছিল একটু মানসিক প্রশান্তির জন্য কিন্তু এখন মনে মনে ভাবছে, না এলেই বোধ হয় ভালো হত। সূচীর সাথে দেখা হওয়ারই বা কি দরকার ছিল? মেয়েটা মাথাটা পুরোপুরি এলোমেলো করে দিয়েছে। কই কখনো তো কোনো মেয়ের প্রতি এতটা ফিলিংস কাজ করেনি নীরবের! হ্যা সে একা ছিল, কিন্তু একাকীত্ব তো এভাবে কখনো তাকে গ্রাস করেনি! তবে আজ কি হল? আজ কেনই বা মনে হছে সূচীকে ছাড়া তার জীবনটা একেবারেই অর্থহীন?...অথচ সূচী? কতটাই না উদাসীন ছিল নীরবের প্রতি! বিদায় বেলায় কি একটিবারের জন্যও বলতে পারত না...“আবার দেখা হবে”? মেয়েরা এত নিষ্ঠুর কেন হয়?

--আরে...নিরব সাহেব! হোয়াট এ প্লেজেন্ট সারপ্রাইস! জানতাম আপনার সাথে দেখা হয়েই যাবে!

সূচীকে দেখে ভিতরে ভিতরে আনন্দে আত্নহারা হয়ে যাচ্ছিল নীরব। কি বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছিল না! এভাবে আবার দেখা হয়ে যাবে নীরব সপ্নেও কখনো ভাবেনি!

--কি হল কিছু বলছেন না যে? নাকি এখন বলবেন, “সপ্ন দেখছি...নাকি সত্যি দেখছি বুঝতে পারছিনা”।
--না এবার তেমন কিছু বলব না। কারন আমি বিকেল বেলা সপ্ন দেখিনা...!
--হাহাহাহাহা! আমি কিন্তু খুব মিস করছিলাম আপনাকে, জানেন? নিজেকে যাচ্ছেতাই গাল দিচ্ছিলাম আপনার ফোন নম্বরটা নিতে ভুলে গিয়েছিলাম বলে! এনিওয়ে আমি না হয় ভুল করেছি! আপনি কি একবারও আমার নম্বরটা চাইতে পারতেন না?
--সাহসে কুলোয় নি। ভাবলাম আপনি যদি আবার রাগ করে বসেন!
--ও আচ্ছা, এই তাহলে আপনার সাহসের নমুনা? আপনার কথাবার্তা শুনে কিন্তু আপনাকে এত ভীতু মনে হয়নি।
--হাহাহা! আচ্ছা আপনি একা কেন? আপনার কাজিনরা কোথায়?
--আপনাকে বলেছিলাম না, ওরা আরো ২-১দিন পরে জয়েন করবে...বাই দ্যা ওয়ে আপ্নাকে একটা মজার নিউজ দেই। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মাসে বিয়ে।
--সত্যি বলছেন? কবে ঠিক হল?
--খালাখালু নাকি অনেক আগে থেকেই পাত্র ঠিক করে রেখেছিল। আজকে আমাকে পাত্রের বায়োডাটা দেখালো। বেশ ইম্প্রেসিভ। পাত্র আমেরিকায় থাকে। পিএইছডি করছে ওখানে। এখন অবশ্য দেশেই আছে। দেখতেও বেশ ভালো। আমি সবকিছু ভেবে চিন্তে হ্যা বলে দিয়েছি।
--আপনি হ্যা বলে দিলেন?
--হুম দিলাম! আমার তো আর কোনো পিছুটান নেই। আই মিন এফেয়ার টেফেয়ার আরকি! আর বিয়ে তো আজ না হয় কাল করতেই হবে। সবসময় কি আর এত ভালো পাত্র পাওয়া যাবে বলুন?
--হুম তাও ঠিক!
--মজার ব্যাপার কি জানেন? আমি হ্যা বলার সাথে সাথেই খালু পাত্রপক্ষকে ফোন করে এঙ্গেজমেন্টের দিন-তারিখ ঠিক করে ফেললেন। আর আমার বাবা-মা তো আমার বিয়ের দায়িত্ব খালাখালুর উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন। তাদের কিছুই বলার নেই। আগামী সপ্তাহেই আমার এঙ্গেজমেন্ট!

সূচী যখন কথাগুলো বলছিল, নীরবের মনে হচ্ছিল কেউ তার বুকে ছুরি দিয়ে একের পর এক আঘাত করেই যাচ্ছে। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। নিজের আবেগকে অনেক কষ্টে নিয়ন্ত্রন করে রেখেছে সে। সূচী যদি একটি বারের জন্যও বুঝত ওর কষ্টটা!!
--নীরব, আপনাকে এতটা বিমর্ষ দেখাচ্ছে কেন? এনিথিং রং?
--নো নো আই এম ওকে!
--কাম অন...নীরব! আপনি কি আমার বিয়ের খবর শুনে খুশী হননি? আমাকে তো কনগ্রেটুলেটও করলেন না!!
--কনগ্রেটস সূচী! আমার খুশি হওয়া দিয়ে কিই বা আসে যায় বলুন? আপনি খুশী এটাই সবচেয়ে বড় কথা!
--আই গেস সামথিং ফিসি গোয়িং অন! আর ইউ হাইডিং সামথিং? ডোন্ট ট্রাই টু ফুল মি নীরব!

নীরব মনে মনে একটা সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। পুরুষ হয়ে জন্মেছে সে! কেন নিজের ফিলিংসটা মেয়েদের মত চেপে রেখে রেখে কষ্ট পাবে? সূচী হয়ত তাকে রিফিউস করবে। করুক না! নিজের ভিতরে এতবড় একটা খুতখুতি বয়ে বেড়াতে নারাজ নীরব! যা বলার সে এখনি বলবে...এই মুহুর্তেই...
--আই লাভ ইউ সূচী।
নীরবের কথা শুনে সূচী হতবাক হয়ে গেল। মাথায় যেন আকাশ ভেংগে পড়েছে...
--কি বললেন আপনি?? ইউ আর কিডিং...রাইট?
--ইটস নট এ জোক সূচী। আই মিন ইট...আই সিরিয়াসলি মিন ইট!
--ইউ আর কিডিং নিরব...ইউ মাস্ট বি কিডিং! মাত্র কয়েক ঘন্টার পরিচয়ে......ওহ মাই গড! আই কেন্ট বিলিভ মাই এয়ারস! আপনি ভাবলেন কিভাবে...! যাক খোলশ তাহলে শেষমেষ উন্মেচিত হয়েই গেল। এই না হলে ছেলে?? আপনাদের সমস্যা কি জানেন? মেয়েরা একটু সুন্দর করে কথা বললেই আপনারা তাদের প্রেমে গলে পড়েন। আসলে কিন্তু আপনি আমার প্রেমে পড়েননি। এটা আপনার সাময়িক মোহ! আপনি হয়ত এখন সেটা বুঝতে পারছেন না!
--এটা মোহ না সূচী! প্রেম আর মোহের মধ্যে পার্থক্য বোঝার বয়স আমার হয়েছে। আমি আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না হাউ মাচ আই ফিল ইউ...হাউ মাচ আই এডর ইউ!
--হাহাহাহা! মনে হচ্ছে কেউ আমাকে বাংলা সিনেমার সংলাপ শোনাচ্ছে! নিরব আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না আপনার প্রতি আমার কতটা রাগ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে...! মানুষ যে এতটা ছ্যাবলা হতে পারে আমার ধারনাই ছিল না!...স্টুপিড কোথাকার!!

সূচী রেগেমেগে চলে যাচ্ছে। এতটা খারাপ বিহেভ সূচী করবে নীরব তা আশা করেনি। তবে তার মনে এখন আর কোনো কষ্ট নেই। ভিতরটা অনেক হাল্কা হাল্কা লাগছে! আজ রাতেই সে ঢাকা ব্যাক করবে। সূচীর সাথে হয়ত আর কখনো ওর দেখা হবেনা! তবে নীরবের সারাজীবন জন্য একটা আফসোস থাকবে এজন্য যে সূচী মেয়েটা বুঝতেই পারলনা, নীরব তাকে কতটা ভালোবাসে! নীরবের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। ব্যাপার কি তার মনে তো কোনো কষ্ট নেই তারপরও চোখে পানি কেন?......ধ্যাত্তিরি প্রেম মানুষ করে!!!!

কাল সারারাত নির্ঘুম কাটিয়েছে সূচী। প্রচন্ড কষ্ট পাচ্ছিল। নিজের প্রতি রাগও লাগছিল খুব! নীরব কি-ই বা এমন অপরাধ করেছে? কাউকে ভালোলাগা তো দোষের কিছু না! এটা ঠিক, হুট করে এভাবে অফার দিয়ে বসাটা মোটেও ঠিক হয় নি নীরবের। তাই বলে এতটা খারাপ বিহেভ কি সে ডিজার্ব করে? তাছাড়া ও তো লাফাঙ্গা টাইপের কোনো ছেলে না। যথেষ্ট ভদ্র, মার্জিত এবং শিক্ষিত একটা ছেলে। না না...কাজটা একদমই ঠিক হয়নি! নীরবকে সরি না বলা পর্যন্ত কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেনা সুচী। নীরবের খোজে তাই পরদিন সকালেই বিচে চলে এসেছে!

এদিক ওদিক খোজাখোজি করতে করতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল অথচ এখনো নীরবের দেখা পায়নি সূচী। নীরব কি তাহলে বিচে আসে নি আজ? অস্থির লাগছিল সূচীর। নীরবের শরীর খারাপ করল নাতো? ওর তো বিচে না এসে হোটেলে বসে থাকার কথা না! কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না সূচী! নীরবের সাথে যোগাযোগ করারও তো কোনো ওয়ে নেই! সেলফোন নম্বরটা নেবে নেবে করেও আর নেয়া হল না! অবশ্য সেই পরিস্থিতিও ছিল না একটা সময়!...হঠাত সূচীর মাথায় একটা বুদ্ধি এল। নীরব যে হোটেলে উঠেছে, সেখানে চলে গেলে কেমন হয়? “শৈবাল হোটেল” স্পষ্ট মনে আছে নামটা! আচ্ছা সূচী কি একটু বেশীই অস্থির হচ্ছে না? আজ না হয় কোনো কারনে দেখা হয়নি! কাল নিশ্চয়ই দেখা হবে!

কিন্তু সূচীর মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে, যদি কালও দেখা না হয়? যদি আর কখনোই দেখা না হয়? সূচীর মনটা হঠাত এত খারাপ লাগছে কেন, কে জানে? মনে হচ্ছে নীরবকে এখনই না দেখে সে থাকতে পারবেনা...

--এক্সকিউজ মি! আমি মিঃ নিরবের সাথে একটু দেখা করতে চাই।
--ম্যাডাম ওনার রুম নম্বরটা প্লিজ?
--সরি রুম নম্বরটা বলতে পারছিনা। তবে উনি কাল ভোরে এই হোটেলে উঠেছেন। আপনি কাইন্ডলি এটেন্ডেস বুকটা চেক করুন।
--ওয়ান সেকেন্ড ম্যাডাম, দেখছি...হ্যা পাওয়া গেছে। সাজিদ হাসান নীরব...রাইট? ওনার রুম নম্বর হচ্ছে...ও আই সি! উনি তো কাল সন্ধ্যায় হোটেল লিব করেছেন...
--হোয়াট? আপনি বোধ হয় ভুল করছেন। উনার তো আরো ৪-৫দিন এখানে থাকার কথা!
--আমি ভুল করছিনা ম্যাডাম। উনার একটা রুম বুকিং দেয়া ছিল ৫দিনের জন্য। কাল সন্ধ্যায় যেকোনো কারনেই হোক...

সূচী যেন চোখে মুখে অন্ধকার দেখতে লাগল। এখন কি হবে? নীরবের সাথে কি তার আর কখনো দেখা হবেনা...?
--আপনি প্লিজ দেখুন না, উনার কোন কনট্যাক্ট নম্বর বা এড্রেস এখানে মেনশন করা আছে কিনা? উনাকে আমার খুব দরকার। প্লিজ...

হোটেল কর্মকর্তা হোটেলের রুলস-রেগুলেশন্স-প্রাইভেসি এসবের দোহাই দিয়ে কোনভাবেই নীরবের ব্যাক্তিগত তথ্য সূচীকে দিতে রাজী হচ্ছিল না। সূচী অনেক কষ্টে শেষমেষ তাকে কনভিন্স করেছে। নীরবের তেমন কোনো তথ্য যদিও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। শুধু ওর ইমপ্লয়্যার কোম্পানির নাম জানা গেছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সূচী। যাক নীরবকে খুজে পেতে এর চেয়ে বেশী তথ্য দরকার হবেনা ওর।


পরদিনই নীরবের অফিসে গিয়ে হাজির হল সূচী। গেস্টরুমে সূচীকে দেখার পর নীরবের তো ফিট খেয়ে যাওয়ার মত অবস্থা! ৫ মিনিট বাকরুদ্ধ অবস্থায় সে শুধু সূচীর দিকে তাকিয়েই রইল...
--আপনি এখানে!!! আমার ঠিকানা...আই মিন কোথায়??...কিভাবে??
--সেটা না জানলেও চলবে। আপনি এভাবে হুট করে ঢাকা চলে আসলেন কেন?
--না মানে...আমার ব্যাক্তিগত একটা কাজ...
--মিথ্যা বলবেন না...প্লিজ
--না না...সত্যি বলছি। হঠাত করেই খুব জরুরী একটা কাজ পড়ে গেল তাই...
--আচ্ছা আচ্ছা বাদ দেন। আপনার সাথে ইমপর্টেন্ট কিছু কথা আছে। চলুন বাইরে কোথাও বসি।

বাইরে একটা রেস্টুরেন্ট-এ বসল ওরা। সূচী অনেকক্ষন ধরে কিছু না বলে মাথানিচু করে বসে আছে। নীরবের মারাত্নক অস্বস্তি লাগছে। কিভাবে কথা শুরু করবে কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় কথা, সূচী সামনে বসে আছে...এই ব্যাপারটা এখনো তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। “এটা কোন সপ্ন নাতো?”-মনে মনে ভাবছে নীরব।
--নীরব, আমি খুবই সরি। আপনার সাথে ওরকম বিহেভ করা আমার মোটেও উচিত হয়নি।
--ছিঃ ছিঃ কি বলছেন আপনি? সরি তো আমার বলা উচিত। আপনি প্লিজ এই ব্যাপারটা নিয়ে মোটেও টেন্সড হবেননা। আমাকে নিয়ে একদমই ভাববেন না। আই এম পারফেক্টলি অলরাইট। আর সামনে তো আপনার বিয়ে। দোয়া করি আপনি যাতে জীবনে অনেক সুখী হন! আমার স্মৃতিটা মেমোরি থেকে ডিলিট করে দিয়েন। আমি যে কেন খামাখা আপনার জীবনে ঝামেলা পাকাতে আসলাম??
--হুম আপনি আসলেই আমার জীবনে মারাত্নক ঝামেলা পাকিয়ে দিয়েছেন। এমন ঝামেলাই পাকিয়েছেন যে আপনাকে ছাড়া একটি মুহুর্তও আমার থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

সূচীর কথা নীববের মাথার একহাত উপর দিয়ে চলে গেছে। সুচীর দিকে “হা” করে তাকিয়ে আছে সে...

--আই লাভ ইউ নীরব!
--কি বললেন? আমি শুনতে পাইনি। আবার বলবেন প্লিজ?
--আই লাভ ইউ! আই লাভ ইউ! আই লাভ ইউ! আই লাভ ইউ সো সো মাচ নীরব!

সূচীর কথা শুনে নীরব দাঁড়িয়ে গেল। তারপর রেস্টুরেন্টের গেইটের সামনে গিয়ে পাগলের মত এদিক ওদিক তাকাতে লাগল।

--আজব তো! কি হল আপনার? কি খুজছেন পাগলের মত?
--আশেপাশে হাসপাতাল আছে কিনা দেখছিলাম। আমার তো মনে হয় আমি এখনই ফিট হয়ে যাবো!

নীরবের কথা শুনে হাসতে হাসতে সূচীর হুমরি খেয়ে পড়ে যাওয়ার অবস্থা! অনেক চেষ্টা করেও হাসি থামাতে পারছেনা!

--জান আমার এখন কি ইচ্ছা করছে জানো? তোমাকে জড়িয়ে ধরে যদি ইচ্ছেমত চুমু খেতে পারতাম!!

--থাপ্পর খাবা অসভ্য কোথাকার!! বিয়ের আগে এসব কথা মুখে আনলে খুন ফেলব একেবারে!

সূচীর ঝাড়ি শুনে মুখটা একেবারে ভোতা হয়ে গেল নীরবের। সূচী দুষ্টুমীভরা একটা হাসি দিয়ে বলল, “আমাকে কবে বিয়ে করবা...সুইটু?”

নীরব কোন কিছু না ভেবে সংগে সংগে বলল, “চল এখনি করি”।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৫৭
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×