১ম পর্বের লিঙ্ক
২য় পর্বের লিংক
হোটেলে গিয়ে সামান্য নাস্তা সেরেই বিচে চলে এসেছে নীরব। ভেবেছিল একটু ঘুমিয়ে নিবে। রুমে গিয়ে বিছানায় কিছুক্ষন গড়াগড়িও খেয়েছিল। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছিল না। প্রচন্ড অস্থির লাগছিল। সেই সকাল থেকে বিচে হাটাহাটি করছে সে। এখন তো দুপুর গড়িয়ে বিকেলই হয়ে গেছে। কক্সবাজার এসেছিল একটু মানসিক প্রশান্তির জন্য কিন্তু এখন মনে মনে ভাবছে, না এলেই বোধ হয় ভালো হত। সূচীর সাথে দেখা হওয়ারই বা কি দরকার ছিল? মেয়েটা মাথাটা পুরোপুরি এলোমেলো করে দিয়েছে। কই কখনো তো কোনো মেয়ের প্রতি এতটা ফিলিংস কাজ করেনি নীরবের! হ্যা সে একা ছিল, কিন্তু একাকীত্ব তো এভাবে কখনো তাকে গ্রাস করেনি! একাকীত্বের সাথে তো নিজেকে সে ভালোভাবেই মানিয়ে নিয়েছিল। তবে আজ কি হল? আজ কেনই বা মনে হছে সূচীকে ছাড়া তার জীবনটা একেবারেই অর্থহীন?...অথচ সূচী? কতটাই না উদাসীন ছিল নীরবের প্রতি! বিদায় বেলায় কি একটিবারের জন্যও বলতে পারত না...“আবার দেখা হবে”? মেয়েরা এত নিষ্ঠুর কেন হয়?
--আরে...নিরব সাহেব! হোয়াট এ প্লেজেন্ট সারপ্রাইস! জানতাম আপনার সাথে দেখা হয়েই যাবে!
সূচীকে দেখে ভিতরে ভিতরে আনন্দে আত্নহারা হয়ে যাচ্ছিল নীরব। কি বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছিল না! এভাবে আবার দেখা হয়ে যাবে নীরব সপ্নেও কখনো ভাবেনি!
--কি হল কিছু বলছেন না যে? নাকি এখন বলবেন, “সপ্ন দেখছি...নাকি সত্যি দেখছি বুঝতে পারছিনা”।
--না এবার তেমন কিছু বলব না। কারন আমি বিকেল বেলা সপ্ন দেখিনা...!
--হাহাহাহাহা! আপনি যে অনেক মজা করে কথা বলেন...সেটা কি জানেন? আমি কিন্তু খুব মিস করছিলাম আপনাকে। নিজেকে যাচ্ছেতাই গাল দিচ্ছিলাম আপনার ফোন নম্বরটা নিতে ভুলে গিয়েছিলাম বলে! এনিওয়ে আমি না হয় ভুল করেছি! আপনি কি একবারও আমার নম্বরটা চাইতে পারতেন না?
--সাহসে কুলোয় নি। ভাবলাম আপনি যদি আবার রাগ করে বসেন!
--ও আচ্ছা, এই তাহলে আপনার সাহসের নমুনা? আপনার কথাবার্তা শুনে কিন্তু আপনাকে এত ভীতু মনে হয়নি।
--হাহাহা! আচ্ছা আপনি একা কেন? আপনার কাজিনরা কোথায়?
--আপনাকে বলেছিলাম না, ওরা আরো ২-১দিন পরে জয়েন করবে...বাই দ্যা ওয়ে আপ্নাকে একটা মজার নিউজ দেই। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মাসে বিয়ে।
--সত্যি বলছেন? কবে ঠিক হল?
--খালাখালু নাকি অনেক আগে থেকেই পাত্র ঠিক করে রেখেছিল। আজকে আমাকে পাত্রের বায়োডাটা দেখালো। বেশ ইম্প্রেসিভ। পাত্র আমেরিকায় থাকে। পিএইছডি করছে ওখানে। এখন অবশ্য দেশেই আছে। দেখতেও বেশ ভালো। আমি সবকিছু ভেবে চিন্তে হ্যা বলে দিয়েছি।
--আপনি হ্যা বলে দিলেন?
--হুম দিলাম! আমার তো আর কোনো পিছুটান নেই। আই মিন এফেয়ার টেফেয়ার আরকি! আর বিয়ে তো আজ না হয় কাল করতেই হবে। সবসময় কি আর এত ভালো পাত্র পাওয়া যাবে বলুন?
--হুম তাও ঠিক!
--মজার ব্যাপার কি জানেন? আমি হ্যা বলার সাথে সাথেই খালু পাত্রপক্ষকে ফোন করে এঙ্গেজমেন্টের দিন-তারিখ ঠিক করে ফেললেন। আর আমার বাবা-মা তো আমার বিয়ের দায়িত্ব খালাখালুর উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন। তাদের কিছুই বলার নেই। আগামী সপ্তাহেই আমার এঙ্গেজমেন্ট!
সূচী যখন কথাগুলো বলছিল, নীরবের মনে হচ্ছিল কেউ তার বুকে ছুরি দিয়ে একের পর এক আঘাত করেই যাচ্ছে। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। নিজের আবেগকে অনেক কষ্টে নিয়ন্ত্রন করে রেখেছে সে। সূচী যদি একটি বারের জন্যও বুঝত ওর কষ্টটা!!
--নীরব, আপনাকে এতটা বিমর্ষ দেখাচ্ছে কেন? এনিথিং রং?
--নো নো আই এম ওকে!
--কাম অন...নীরব! আপনি কি আমার বিয়ের খবর শুনে খুশী হননি? আমাকে তো কনগ্রেটুলেইটও করলেন না!!
--কনগ্রেটস সূচী! আমার খুশি হওয়া দিয়ে কিই বা আসে যায় বলুন? আপনি খুশী এটাই সবচেয়ে বড় কথা!
--আই গেস সামথিং ফিসি গোয়িং অন! আর ইউ হাইডিং সামথিং? ইয়া ইয়া আই এম সিউর...নাও প্লিজ গো এহেড। ডোন্ট ট্রাই টু ফুল মি!
নীরব মনে মনে একটা সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। পুরুষ হয়ে জন্মেছে সে! কেন নিজের ফিলিংসটা মেয়েদের মত চেপে রেখে রেখে কষ্ট পাবে? সূচী হয়ত তাকে রিফিউস করবে। করুক না! নিজের ভিতরে এতবড় একটা খুতখুতি বয়ে বেড়াতে নারাজ নীরব! যা বলার সে এখনি বলবে...এই মুহুর্তেই...
--আই লাভ ইউ সূচী। আই লাভ ইউ সো মাচ!
নীরবের কথা শুনে সূচী হতবাক হয়ে গেল। মাথায় যেন আকাশ ভেংগে পড়েছে...
--কি বললেন আপনি?? ইউ আর কিডিং...রাইট?
--ইটস নট এ জোক সূচী। আই মিন ইট...আই সিরিয়াসলি মিন ইট!
--ইউ আর কিডিং নিরব...ইউ মাস্ট বি কিডিং! মাত্র কয়েক ঘন্টার পরিচয়ে......ওহ মাই গড! আই কেন্ট বিলিভ মাই এয়ারস! আপনি ভাবলেন কিভাবে...! যাক খোলশ তাহলে শেষমেষ উন্মেচিত হয়েই গেল। এই না হলে ছেলে?? আপনাদের সমস্যা কি জানেন? মেয়েরা একটু সুন্দর করে কথা বললেই আপনারা তাদের প্রেমে গলে পড়েন। আসলে কিন্তু আপনি আমার প্রেমে পড়েননি। এটা আপনার সাময়িক মোহ! আপনি হয়ত এখন সেটা বুঝতেছেন না!
--এটা মোহ না সূচী! প্রেম আর মোহের মধ্যে পার্থক্য বোঝার বয়স আমার হয়েছে। আমি আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না হাউ মাচ আই ফিল ইউ...হাউ মাচ আই এডর ইউ!
--হাহাহাহা! মনে হচ্ছে কেউ আমাকে বাংলা সিনেমার সংলাপ শোনাচ্ছে! নিরব আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না আপনার প্রতি আমার কতটা রাগ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে...! মানুষ যে এতটা ছ্যাবলা হতে পারে আমার ধারনাই ছিল না!...স্টুপিড কোথাকার!!
সূচী রেগেমেগে চলে যাচ্ছে। এতটা খারাপ বিহেভ সূচী করবে নীরব তা আশা করেনি। তবে তার মনে এখন আর কোনো কষ্ট নেই। ভিতরটা অনেক হাল্কা হাল্কা লাগছে! আজ রাতেই সে ঢাকা ব্যাক করবে। সূচীর সাথে হয়ত আর কখনো ওর দেখা হবেনা! তবে নীরবের সারাজীবন জন্য একটা আফসোস থাকবে এজন্য যে সূচী মেয়েটা বুঝতেই পারলনা, নীরব তাকে কতটা ভালোবাসে! নীরবের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। ব্যাপার কি তার মনে তো কোনো কষ্ট নেই তারপরও চোখে পানি কেন?......ধ্যাত্তিরি প্রেম মানুষ করে!!!!
---চলবে