ক’দিন আগে অর্নীর ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার-এ একটা এড রিকোয়েস্ট এসেছে। জীবনে এরকম আজব নিক অর্নী আর দেখেনি। নিকটি ছিল-“ডেইমন নেক্রোপলিস”। এড রিকোয়েস্টটা পাওয়ার পর থেকেই অর্নীর কেন যেন প্রচন্ড কৌতুহল কাজ করছিল নিকটার প্রতি। “ডেইমন নেক্রোপলিস” শব্দটির অর্থ উদঘাটনের জন্য গুগলেও বেশ কয়েকবার সার্চ দিয়েছিল। কিন্তু কোনো লাভ হয় নি। রিকোয়েস্টটা একসেপ্ট করবে কি করবেনা এই নিয়ে মারাত্নক দ্বিধার মধ্যে পড়ে গিযেছিল অর্নী। ফেসবুকে প্রতিদিন তার কাছে প্রায় শ’খানেক এড রিকোয়েস্ট আসে অপরিচিত আইডি থেকে। কোন কিছু চিন্তা না করেই সাথে সাথে ইগ্নোর করে দেয় সেগুলো। আর সেলফোনে যে কত শত আননন নম্বর থেকে ফোন আসে তার তো কোনো ইয়ত্তাই নেই! ভুলেও কলগুলো রিসিভ করার কথা মাথায় আনে না অর্নী। সেদিন যে তার কি হয়েছিল, কিছুই বুঝতে পারছিলো না। নিজের সাথে অনেকটা যুদ্ধ করেই শেষমেষ “ডেইমন নেক্রোপলিস”-কে এড করে ফেলেছিল।
এড করার পর ৫-৬ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে অথচ এখন পর্যন্ত “নেক্রোপলিস”-কে অনলাইনে দেখতে পায়নি অর্নী। “নেক্রোপলিস”-এর উপর মারাত্নক মেজাজ খারাপ হচ্ছিল তার। মনে মনে ঠিক করল এখনই ডিলিট মারবে তাকে। অর্নী যখন ডিলিট বাটনে ক্লিক করতে যাচ্ছিল ঠিক সেই মুহুর্তেই “নেক্রোপলিস” অনলাইন হল...
--“হে অর্নী কি খবর? কেমন আছো?”
--“আজব তো! আপনি আমাকে তুমি করে কেন বলছেন? কে আপনি? আমার আইডি কোথায় পাইছেন?”
--“এই তো শুরু হয়ে গেল মেয়েদের অতি কমন ডায়লগ...”
--“দেখেন, আপনি কিন্তু কথা ঘোরানোর চেষ্টা করবেন না! যা যা জিজ্ঞেস করছি ঠিকঠাক মত বলেন নাহলে এখনই ডিলিট মারলাম...”
--“তোমার আইডি কোথায় পাইছি এটা আপাতত বলা যাবেনা। আর আমাকে কথায় কথায় ডিলিটের ভয় দেখাবানা, বুঝছ?”
--“আপনি তো দেখি একটা আস্ত বেয়াদব! চোরের মার বড় গলা-এই প্রবাদটা আপনার বেলায় ১০০ ভাগ প্রযোজ্য।”
--“হাহাহাহাহা।”
--“আরে...হাসছেন কেন? আর আপনার নিকটা এরকম উদ্ভট কেন? এর অর্থ কি?”
--“এটা একটা গথিক নিক। আমি মেটাল গানের চরম ভক্ত। তাই নিকটাও একটু মেটালিক”
--“ও তাই? আচ্ছা, মেটাল গানের মধ্যে কুকুরের মত “ঘেউ ঘেউ” আওয়াজ ছাড়া আর কি আছে বলতে পারবেন?”
--“যারা প্যানপ্যানানি ক্লাসিক মিউজিক শুনে অভাস্ত তাদেরকে মেটাল গানের মর্ম বোঝানো যাবে না।”
--“আপনি কিভাবে বুঝলেন...আমি ক্লাসিক মিউজিক শুনে অভ্যস্ত?”
--“এখানে বোঝাবোঝির কি আছে? মেয়েরা ক্লাসিক পছন্দ করবে এটাই তো স্বাভাবিক!”
সেদিন “নেক্রোপলিস”-এর সাথে দীর্ঘ সময় কথা হয়েছিল অর্নীর। “নেক্রোপলিস”-এর আসল নাম রিগ্যান। একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যলয়ে পড়াশোনা করছে সে। পাশাপাশি একটি আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড দলের সাথেও জড়িত আছে। রিগ্যানের ড্যাম স্মার্ট এটিটিউড বেশ ভালো ভাবেই মুগ্ধ করেছে অর্নীকে। অর্নী আর রিগ্যানের মধ্যে অল্প কদিনেই বেশ ভালো একটা ফ্রেন্ডশিপ গড়ে উঠল। তো একদিন হঠাত করেই রিগ্যান অর্নীকে প্রস্তাব দিল দেখা করার জন্য। অর্নীও অমত করেনি। যথারীতি দেখা হল দু’জনের। রিগ্যানের ড্যাম স্মার্ট আউটলুক দেখে অর্নী তো পুরোপুরি ইম্প্রেসড। আর রিগ্যানও মুগ্ধ অর্নীর স্নিগ্ধ সৌন্দর্য দেখে। সেদিন অনেক কথা হল দু’জনের মধ্যে। ওরা ঘনঘন দেখা করতে লাগল সেদিনের পর থেকে। একটা সময় ওদের প্রেমও হল। অর্নী সপ্নেও কোনোদিন ভাবেনি এত শীঘ্রই প্রেমে জড়িয়ে পড়বে। প্রেমের ব্যাপারে ও সবসময়ই কিছুটা রক্ষনশীল ছিল। কিন্তু রিগ্যানের ব্যাপারটাই যেন আলাদা। অদ্ভুত এক আকর্ষন ক্ষমতা আছে রিগ্যানের যা একদম পাগল করে ফেলেছিল অর্নীকে।
রিগ্যান একদিন ওর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুর সাথে অর্নীকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য সেই বন্ধুর বাসায় নিয়ে এল। অর্নীও সরল মনে চলে এসেছে রিগ্যানের কথায়। কিন্তু এসেই অবাক হল সেই বন্ধুর ফ্ল্যাট তালামারা দেখে...
--“ব্যাপার কি? বাসা তো তালামারা! তুমি তোমার ফ্র্যান্ডকে ফোন করে কনফার্ম করনি যে আমরা আসছি?”
--“চিন্তার কিছু নেই। আমার কাছে চাবি আছে। ও একটু পরেই চলে আসবে। ক্লাসে আছে এখন”।
--“ইন্টারেস্টিং তো!” তোমার বন্ধুর ফ্ল্যাটের চাবি তোমার কাছে?”
--“ওর পুরো ফ্যামিলি ইউএসএ-তে থাকে। এখানে ও একা। আর এটাকে আমার সেকেন্ড হোম বলতে পারো। যখন খুশী হুটহাট চলে আসি। ও আমাকে ডুপ্লিকেট চাবি বানিয়ে দিয়েছে”।
--“হুম বেশ জিগড়ি দোস্তি তোমাদের মধ্যে বোঝা যাচ্ছে”।
বাসার ভেতরে ঢোকার পর অর্নী তো পুরোই অবাক। বিশাল বিশাল এক একটা রুম। বেশ পরিপাটি করে সাজানো সবকিছু। দেয়ালে সুন্দর সুন্দর পেইন্টিং। কোনো ব্যাচেলরের বাসা যে এত সুন্দর সাজানো গোছানো হতে পারে অর্নীর ধারনাই ছিল না।
--“তোমার বন্ধু বেশ গোছানো মানুষ, তাই না?”
--“তুমি আসবে বলে হয়ত আজকে একটু বেশী করেই গুছিয়েছে।”
--“কি বললা তুমি?”
--“আরে একটু জোক্স করলাম। তুমি এভাবে তাকিও না প্লিজ...আমার কিন্তু ভয় লাগছে”।
রিগ্যানের কথা শুনে হেসে ফেলল অর্নী।
--“কি খাবা জান? আমি কিন্তু বেশ ভালো কফি বানাতে পারি। একটু বসো কফি বানিয়ে আনছি।”
--“আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। তুমি প্লিজ আমার পাশে একটু বসো সোনা”।
রিগ্যান অর্নীর চোখে চোখ রাখল। ওর কপালের রেশমী চুলগুলোতে আলতো করে হাত বোলাতে লাগল। অর্নীর সারা শরীর যেন কাঁপছে। চোখ বুজে ফেলল সে। রিগ্যান অর্নীকে জাপটে ধরে চুমু খেতে লাগল। চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগল অর্নীর সারা দেহ। রিগ্যানের কাছে নিজেকে পুরোপুরি সমর্পন করে দিল অর্নী।
রিগ্যানকে জড়িয়ে ধরে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিল অর্নী তা বলতে পারবেনা। প্রচন্ড হাসাহাসির শব্দ শুনে হঠাত ঘুম ভেঙ্গে গেল ওর। বোধ হয় রিগ্যানের ফ্রেন্ড চলে এসেছে। নিজেকে একটু গুছিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে এগিয়ে গেল অর্নী...
--“ভালো আছো অর্নী? আমাকে চিন্তে পেরেছো”?
সাম্যকে দেখে হতবাক হয়ে গেল অর্নী। কলেজ লাইফে অর্নীর লাইফটা হেল করে ফেলেছিল এই সাম্য। অর্নীর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য এমন কোনো কাজ নেই যে সাম্য করতে বাকি রেখেছে। অর্নী কখনোই সাম্যকে পাত্তা দিত না। সাম্যের প্রতি অর্নীর ক্রমাগত অবজ্ঞা পাগল করে তুলেছিল সাম্যকে। কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে বিশ্রি ভাবে একদিন গালাগালি করেছিল অর্নীকে। অর্নীর ক্লোজ কিছু ছেলে বন্ধু সেদিন বেদম প্রহার করেছিল সাম্যকে। এর পর থেকে সাম্য অবশ্য প্রকাশ্যে কখনো অর্নীকে বিরক্ত করেনি। তবে মাঝে মাঝে ফোন করে অর্নীকে বলত, “এই অপমানের প্রতিশোধ একদিন আমি নিয়েই ছাড়ব”। মূলত সাম্যের কারনেই আননন নম্বর থেকে কোন কল এলে অর্নী রিসিভ করত না।
--“তুমি তো ধরা খেয়ে গেলে অর্নী”।
--“কি বলতে চাও তুমি?”
সাম্য হো হো করে হাসতে লাগল। সাম্য-এর সাথে রিগ্যানও হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে।
--“রিগ্যান তোমাকে কখনো ভালোবাসেনি। ও তোমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করেছে মাত্র। পুরো ব্যাপারটাই আমার প্ল্যান ছিল। আমি জানতাম রিগ্যানই আমার কাজটা করতে পারবে। হি ইজ এ প্রফেশনাল লেডিকিলার ইউ নো। তোমার আর রিগ্যানের সেক্সের মোমেন্টটা গোপনে ভিডিও বন্দী করা হয়েছে। এই ভিডিও আমি এখন ইন্টারনেটে ছেড়ে দিব। তোমাকে আমি মডেল প্রভার চেয়েও বেশী জনপ্রিয় করে তুলব কথা দিলাম।”--কথাগুলো বলে হো হো করে হাসতে লাগল সাম্য।
--“আমাকে তুমি এত বড় শাস্তি দিও না সাম্য। আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। এই ভিডিও প্রকাশিত হলে আমার আত্নহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবেনা”।--কথাগুলো বলে কাঁদতে কাঁদতে সাম্যের পা জড়িয়ে ধরল অর্নী।
--“ঠিক আছে যাও, এক শর্তে তোমার ভিডিও আমি ছাড়ব না। শর্তটা হল আমি যখনই তোমার দেহ ভোগ করতে চাইব, সাথে সাথে তোমার রাজী হয়ে যেতে হবে। কি রাজী আছো? রাজী হওয়া ছাড়া তোমার আর তো কোনো উপায়ও নেই সোনা।”--কথাগুলো বলে হাসতে হাসতে অর্নীকে ভোগ করার জন্য এগিয়ে গেল সাম্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৩