শুনে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। গাছটির নাম স্টেভিয়া। বিস্ময়কর এক উদ্ভিদ। বিস্ময়কর এ জন্য যে, এ উদ্ভিদের পাতার ১০০ গ্রাম নির্যাস থেকে ৪০ কেজি চিনির সমপরিমাণ মিষ্টি পাওয়া যায়। স্টেভিয়ার নির্যাসে ক্যালরি ও কার্বোহাইড্রেড না থাকায় এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা নিশ্চিন্তে এটা দিয়ে তৈরি খাবার খেতে পারেন। এসব কারণে এ গাছটি মানুষকে শুধু বিস্মিতই করেনি বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোড়নও সৃষ্টি করেছে।
চিনির চেয়ে ৩০০ গুণের বেশি মিষ্টি। বলা যেতে পারে মধুগাছ কিংবা মিষ্টিগাছ। গাছটির আদিবাস প্যারাগুয়েতে। পরে আমেরিকা, চীন, কানাডা, কোরিয়া, ব্রাজিল, থাইল্যান্ড মেক্সিকোসহ আরো অনেক দেশে চাষ শুরু হয়েছে।
জাপান সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারি। তারা তাদের মোট চিনি চাহিদার ৪০% এই স্টেভিয়া বা চিনি গাছ থেকে সংগ্রহ করে।
ব্রাজিলের অধ্যাপক সিলভিয়ো ক্লাউডিও দা কস্তা মনে করেন, স্টেভিয়া ভোজ্যপণ্যের বাজারে এক বিপ্লব আনতে পারে৷ তিনি বলেন, ২৫ বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছি আমি৷ এটি একটি প্রাকৃতিক পদার্থ, যাতে ক্যালরি নেই, উচ্চ রক্তচাপ ও বস্নাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে। যকৃত ও প্লীহায় পুষ্টি সরবরাহ করে। ত্বকের ও দাঁতের ক্ষয়রোধসহ খাদ্য হজমে সহায়তা করে। চিনির বিকল্প হিসেবে সবাই খেতে পারেন। সম্পুর্ণ নিরাপদ।
বাংলাদেশেও বাণিজ্যিকভাবে চাষের প্রস্তুতি চলছে। এ গাছটি সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস প্রতিরোধক হিসেবে জনপ্রিয়। নিয়মিত স্টেভিয়া সুগার সেবনে নিয়ন্ত্রনে থাকে ডায়াবেটিস।
এর পাতা সবুজ অবস্থাতেই চিনির চেয়ে ৩০০ গুণের বেশি মিষ্টি। পাতা শুকিয়ে প্রসেস করলে মিষ্টির পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। স্টেভিয়া ইংরেজি নাম। বৈজ্ঞানিক নাম ংঃবারধ ৎবনধঁফরহধ এটি পড়সঢ়ড়ংরঃব পরিবারের উদ্ভিদ।
অনেক অনুসন্ধান ও গবেষণা করে যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা চিনির বিকল্প হিসেবে স্টেভিয়াকে খুজে পেয়েছেন। যা জিরো ক্যালোরি, জিরো কার্বোহাইড্রেট ও রক্তে চিনির পরিমাণ বা শর্করার মাত্রা বাড়ায় না। এটি খাদ্য ও পানীয়তে ব্যবহার করা হয়। এতে শরীরের ক্যালোরির মাত্রা বহুলাংশে কমে যায়। সুখবর হচ্ছে এখন পর্যন্ত স্টেভিয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা এর কোনো খারাপ দিক চিহ্নিত করা যায়নি। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান। উপাদানটিতে অ্যাসপার্টেম, সেকারিন, সুক্রলস বা কৃত্রিম মিষ্টি জাতীয় কোনো জিনিস নেই। যে কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা অনায়াসে খেতে পারেন। বিজ্ঞানীদের মতে, স্টেভিয়া উচ্চ রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে। যকৃত ও প্লীহায় পুষ্টি সরবরাহ করে। ত্বকের ও দাঁতের ক্ষয়রোধসহ খাদ্য হজমে সহায়তা করে। চিনির বিকল্প হিসেবে সবাই খেতে পারেন। এটি খাওয়া সম্পুর্ণ নিরাপদ। পাতার গুড়ো চিবিয়ে কিংবা চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। অনেকে পানের সঙ্গে মিষ্টি জর্দ্দার পরিবর্তে স্টেভিয়া গুঁড়ো ব্যবহার করেন। অল্প একটু স্টেভিয়াতেই অনেক মিষ্টি হয়ে যেতে পারে খাবার। চিনির বদলে যে কোন খাবারে ব্যবহার করা যেতে পারে স্টেভিয়া। কিন্তু এটা যেহেতু চিনির চাইতে অনেক বেশি মিষ্টি, তাই ব্যবহার করতে হবে অল্প পরিমাণে।
বিশ্বের খাদ্য ও পানীয় উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোও ইতোপূর্বে চিনির একটি বিকল্প খোঁজার জন্য লাখ লাখ পাউন্ড ব্যয় করছে। যদিও যুগ যুগ ধরে খাদ্যদ্রব্য মিষ্টি করতে চিনি ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু চিনির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আজ আর কারও অজানা নেই। অনেকে আবার সাদা চিনিকে স্লো পয়জন হিসেবেও মনে করেন। কেননা, স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে চিনি মহামারি নিয়ে আসতে পারে। কাজেই চিনির বিকল্প খোঁজার জোর প্রচেষ্টায় স্টেভিয়ার আবিস্কার বড় ধরনের আশার বাণীই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিমাত্রায় চিনি খেলে তা চর্র্বি আকারে লিভার/যকৃতের চারপাশে জমা হয়। ওজন বাড়াতে কার্যকরী এবং অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সেই সঙ্গে চিনি ডায়াবেটিসের দু’টি ধরনকে বাড়িয়েও দিতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, চিনি মানুষের মস্তিষ্কে কোকেনের মতো প্রভাব ফেলতে সক্ষম। যার একমাত্র সমাধান চিনির বিকল্প কিছু খুঁজে বের করা। গবেষকরা স্টেভিয়া নামের এই প্রাকৃতিক চিনিকে সাধারণ চিনির চেয়ে শতগুন ভালো বলে মনে করেন। ব্রিটিশ নিউট্রিশন ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞানী ব্রিগেট বেনেলাম বলেন, ক্যালোরির মাত্রা কমিয়ে দিতে কাজ করে বলে মানুষ এ দ্রব্যটি পছন্দ করবেন, তাছাড়া এটা প্রাকৃতিকও। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (হু) মানুষের খাদ্য তালিকা থেকে চিনির পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে। স্টেভিয়া কি এক্ষেত্রে সমাধান হতে পারে? খাদ্যদ্রব্য মিষ্টি করতে জাপানে ৪০ বছর ধরে স্টেভিয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। দক্ষিণ আমেরিকাতেও দীর্ঘদিন ধরে স্টেভিয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১১ সালে ইউরোপিয় ইউনিয়ন (ইইউ) স্টেভিয়া ব্যবহারের ছাড়পত্র দিয়েছে।
যুক্তরাজ্য সরকারের পুষ্টি বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা ডা. মার্গারেট অ্যাশওয়েল গবেষণায় দেখেছেন, চিনির বিকল্প হিসেবে স্টেভিয়া ব্যবহার করা হয় তাতে ওজন কমে। বিদেশে এর অনেক বড় বাজার রয়েছে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে প্যাকেটজাত স্টেভিয়া পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে আমাদের দেশে স্টেভিয়ার চাহিদা বাড়ছে। বিদেশী যেকোন ব্র্যান্ডের স্টেভিয়াই আপনি ব্যবহার করেন না কেনো তাতে স্টেভিয়া নির্যাসের পাশাপাশি থাকতে পারে অন্য কোনো সুইটনার। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা যে স্টেভিয়ার নির্যাস ভোক্তাদের দিচ্ছি তা শতভাগ পিওর। বাংলাদেশ আখ গবেষণা ইনস্টিটিউট দ্বারা প্রস্তুত । বিস্তারিত দেখুন Click This Link
এই লিঙ্কে
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:১৪