somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল সফটওয়্যার

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা: বাংলা ভাষায় ব্রেইলের ব্যবহার আরো একধাপ এগিয়ে গেল। এটি সম্ভব হয়েছে এক ধরনের সফটওয়্যারের মাধ্যমে। এ সফটওয়্যার সরাসরি বাংলা থেকে ব্রেইলে অনুবাদ করে দেবে ভাষাকে। এতে দেশে ব্রেইলের বইয়ের যে অভাব রয়েছে তা অনেকাংশে কমে যাবে বলে আশা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলা থেকে ব্রেইলে অনুবাদের এ যুগান্তকারী আবিষ্কারটি করেছেন ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। ব্রেইলের এ সফটওয়্যারের কল্যাণে এ সংক্রান্ত বই সহজে কম খরচে এখন সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। স্বাভাবিক মানুষের জন্য লেখা বই দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা পড়তে পারে না। এ জন্য প্রয়োজন ডিজিটাল বই। এ ডিজিটাল বইয়ের মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা পড়তে সক্ষম হবে। বর্তমানে যে ব্রেইল পদ্ধতিতে অন্ধরা পড়াশোনা করে থাকে তার উদ্ভাবন ১৮২৫ সালে। ফ্রান্সের এক অন্ধ ব্যক্তি লুইস ব্রেইল এটি আবিষ্কার করেন এবং পরে এটার উন্নয়ন ঘটে। ব্রেইল যে পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেন তার অনুপ্রেরণা আসে নেপোলিয়নের সময়ে চার্লস বারবিয়েরের মাধ্যমে। বারবিয়ের এক ধরনের চিহ্নভিত্তিক ভাষা বের করেন যেটি নিশ্চুপে বা রাতে সৈন্যরা একে অপরের কাছে পাঠাতে পারে। হাতের স্পর্শের মাধ্যমে বিভিন্ন ডট দিয়ে এ ভাষা বোঝা যেত। এ ভাষার নাম ছিল নাইট লেখনি। পরে বারবিয়েরের নাইট লেখনিকে মডিফাইড করে ব্রেইল সৃষ্টি করেন ব্রেইল সিস্টেম। এ ব্রেইল সিস্টেম অন্ধদের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি ভাষা ব্যবস্থা। স্পর্শের মাধ্যমে উপলব্ধি করার এ পদ্ধতি আসলেই অসাধারণ। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে সব বইয়েরই ব্রেইল সংস্করণ পাওয়া যায় না। আর যে কোনো বইয়ের ব্রেইল সংস্করণের মূল্যও একটু বেশি। তাই যে কোনো বইয়ের ব্রেইলে রূপান্তরের যে সফটওয়্যার আবিষ্কার করেছেন তা সত্যই প্রশংসার দাবি রাখে। বাংলা থেকে ব্রেইলে রূপান্তরের এ পদ্ধতি চেষ্টা করলে অন্য যে কোনো ভাষার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে আশা করা যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা

যারা চোখে দেখতে পান না তাদের বলা হয় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। এসব ব্যক্তি যখন নিজের চেষ্টায় উচ্চ পর্যায়ে উঠে আসেন তখন তারা হন দেশের সম্পদ ও গর্ব। সাহসী, মেধাবী ও পরিশ্রমী এমনই এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর নাম বাদল কুমার দাশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। পড়াশোনার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন কিভাবে এমন প্রশ্নের উত্তরে বাদল বলেন, ছোটবেলায় পড়াশোনায় প্রচুর আগ্রহ ছিল কিš‘ কিভাবে, কোথায় পড়ব তা জানতাম না। একদিন গ্রামের এক শিক্ষক এসে জানালেন স্কুলে পড়াশোনার কথা। তারপর বাবা নিয়ে গেলেন এক স্কুলে। তারপর থেকে অনেক কষ্ট করে আজ এখানে এসেছি। বাদলের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে পড়াশোনা করছেন তাদের সবারই অনুপ্রেরণা, পরিবার ও গল্প প্রায় একই। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩৬। ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে পড়াশোনা করেন তারা। এসব ছাত্রছাত্রীর মধ্যে আইন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইংরেজি, ইতিহাস, ইসলাম শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীই বেশি। বাংলাদেশে উ”চশিক্ষা গ্রহণের জন্য এসব শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এসব শিক্ষার্থীকে প্র¯‘তি নিয়ে এবং পরীক্ষা দিতে হয় শ্রুতিলেখনী পদ্ধতির মাধ্যমে। এখানে শিক্ষার্থীরা একমাত্র মানবিক বিভাগের অধীনে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারেন। সাধারণ শিক্ষার্থীর মতো এদের পরীক্ষার সময় এক হওয়ায় কোনো সমস্যা হ”েছ কিনা এবং এদের সময় বাড়িয়ে দেয়া উচিত কিনা এমন প্রশ্নে ইতিহাস বিভাগের ছাত্র শামসুল আলম জানান, যেহেতু শ্রুতিলেখন পদ্ধতিতে আমরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি এবং শুনতে ও বলতে দু’জনের সমন্বয়ে বেশি সময় দরকার হয় সেহেতু আমাদের সময় একটু বাড়িয়ে দেয়া উচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই ক্লাস করতে হয় এসব প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে। ক্লাসে উপস্থিতির হারও একই। এদের জন্য বিশেষ কোনো সুবিধা নেই। ক্লাসে আসতে অনেকটা সমস্যায় পড়তে হয় রাস্তায় এসব শিক্ষার্থীকে।

ব্রেইল পদ্ধতি উদ্ভাবন

এই পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছেন-ভাগ্য যাদেরকে চোখে দেখার ক্ষমতা দেয়নি, কিংবা হয়তো তারা দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন কোন দুর্ঘটনায়। মনে দৃঢ় এক প্রত্যয় নিয়ে, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু করার আকাঙ্খা নিয়ে। উদ্ভাবন করলেন ব্রেইল পদ্ধতি। এই ব্যক্তিটির নাম লুইস ব্রেইল (৪ জানুয়ারি ১৮০৯-৬ জানুয়ারি ১৮৫২)।

ব্রেইলের জন্ম ফ্রান্সের প্যারিসের এক ছোট্ট শহরতলীতে। জন্মের পর যখন হাঁটতে শিখলেন, সেই ছোট বয়সেই তিনি চলে যেতেন তার বাবার ওয়ার্কশপে, সেখানকার বিভিন্ন যন্ত্রপাতিই ছিল তার খেলনা। খেলতে খেলতেই তিন বছর বয়সে একদিন তুরপুন (মুচিদের জুতো সেলাইয়ের কাজে ব্যবহৃত সুঁচ) এক টুকরো শক্ত চামড়াতে ঢুকাতে গিয়ে দুর্ঘটনাক্রমে তার চোখে ঢুকে যায়। স্থানীয় ও প্যারিসের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অনেক চেষ্টা করেও চোখটি সারিয়ে তুলতে পারেননি, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ব্রেইলের অন্য চোখেও সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ে এবং এক সময় তিনি পুরোপুরিভাবে অন্ধ হয়ে যান। তার মেধা ও সৃজনশীলতা তার এলাকার শিক্ষক ও পাদ্রীদের মুগ্ধ করে, যারা ব্রেইলের বাবাকে অনুরোধ করেন ব্রেইলকে যেন উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেয়া হয়।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল সফটওয়্যার
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×