আজ যীশু খৃষ্টের জন্মদিন; গতরাতে বিশ্বের ২০০ কোটী খৃষ্টান তাঁর জন্মদিন পালন করেছেন; ইহা এখন মোটমুটি পারিবারিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান। বিশ্বে এত বড় জন্মদিন আর কারো নেই; প্রায় সারা বিশ্বে দিনটি সরকারী ছুটির দিন, একমাত্র ইহুদীরা ছাড়া অন্য ধর্মের লোকেরাও দিনটিকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে থাকে। পশ্চিমের দেশগুলোতে ইহা পুরো বছরের সবচেয়ে বড় ফাইন্যান্সিয়াল কর্মকান্ডের ঘটনা, খৃষ্টান বিশ্বের প্রায় সকল শিশুই এই দিনে উপহার পেয়ে থাকে।
শুরুতে যীশুর জন্মদিন ধর্মীয় থাকলেও, আজকে ইহা ধর্মীয় গন্ডি পেরিয়ে পারিবারিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ধর্মীয় কারণেই ইহুদীরা দিনটিক পালন করে না; তারা যীশুকে পয়গম্বর হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি, তারা মুসা (আ: )'এর পর, আরেকজন পয়গম্বরের আগমণের জন্য অপেক্ষা করছে, এবং তাদের মতে যীশু সেইজন নহে।
যীশুর জন্মকে ধর্মীয় দিক থেকে অলৌকিক ঘটনা হিসেবে প্রচার করা হলেও, ইহাতে কোন অলৌকিকতা ছিল না; তিনি যেরুসালেম থেকে ৯০ মাইল দুরে, বেথেলহাম গ্রামের এক সাধারণ গরীব ইহুদী পরিবারে জন্ম গ্রহন করেছিলেন; মায়ের বিয়ের আগেই যীশুর জন্ম হয়েছিলো, যথাসম্ভব। ইহুদীদের একাংশ ও অন্য ধর্মের লোকেরা যীশুকে পয়গম্বর হিসেবে মেনে নেয়ার পর, উনার জন্মদিনটিক অলৌকিক করে তোলা হয়েছে।
যীশু আসলে কি পয়গম্বর ছিলেন, নাকি ইহুদী জাতীয়তাবাদী ধর্মীয় নেতা ছিলেন? তিনি আসলেই ইহুদী জাতীয়তাবাদী, ইহুদী ধর্মীয় নেতা ছিলেন, যিনি রোমান শাসকদের বিপক্ষে ও ইহুদী ধর্মীয় নেতাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষের সমর্থন পেয়েছিলেন। যীশুর জন্ম হয়েছিলো একটি ইহুদী পরিবারে, বাবা ছিলেন সুতার মিস্ত্রি। বাল্যকালে তিনি অন্য ইহুদী শিশুদের মতো পড়ালেখা করেছিলেন, বাবাকে কাঠের কাজে সাহায্য করেছিলেন। কৈশোরে তিনি যেরুসালেম যান ও সেখানে রোমান শাসন দেখে তিনি রোমান-বিরোধী হয়ে যান; সাথে সাথে ততকালীন ইহুদী ধর্মীয় নেতারা রোমানদের বশ্যতা স্বীকার করে নেয়াকে পছন্দ করেননি। যৌবনে কিছু সময় তিনি আশপাশে ভ্রমণ করেন ও ইহুদী ধর্মকে আরো সহজভাবে উপস্হাপন করার জন্য স্হানে স্হানে বক্তব্য রাখেন। যেরুসালেমের আশপাশের ইহুদীরা উনার সংস্কারের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে।
আনুমানিক ৩৩ বছর বয়সে তিনি নিজ গ্রাম থেকে যেরুসালেম অভিমুখে রওয়ানা হন, উদ্দেশ্য ছিলো: রোমানদের বিরুদ্ধে মানুষকে জাগিয়ে তোলা ও ইহুদী ধর্মীয়নেতাদের বিপক্ষে আন্দোলন গড়ে তোলা। পথে প্রায় ৩ মাস সময় ব্যয় করে তিনি যেরুসালেম পৌঁছেন ইহুদী ধর্মীয় অনুষ্ঠান "পাসোভার"এর সময়। তিনি যেরুসালেম যাওয়ার পথে রোমান-বিরোধী ও ইহুদী ধর্মীয় নেতাদের বিরোধী যেসব বক্তব্য রেখেছিলেন, ইহুদী নেতারা এই তথ্য জানতো। উনি যখন যেরুসালেম পৌঁছেন বেশকিছু পরিমাণ মানুষ উনাকে অভ্যর্থনা জানায়; তিনি যেরুসালমের ভগ্ন ইহুদী টেম্পলে যান ও মানুষজনের সামনে বক্তব্য রাখেন। ঠিক একই সময়ে একটি ছোট ইহুদী বিপ্লবী দল রোমানদের উপর আক্রমণ চলায়, এবং হতাহতের ঘটনা ঘটে; ফলে,যেরুসালেমে রোমান সৈন্যদের তৎপরতা খুবই বেড়ে যায়।
ইহুদী ধর্মীয় নেতারা যেরুসালমের এই অস্হির সময়ে যীশুকে থামানোর জন্য রোমানদের সাহায্য চায়; যীশু এই সময় উনার কিছু সাগরেদসহ জেরুসালেমে অবস্হান করছিলেন; রোমানরা উনাকে সহজেই গ্রেফতার করে। ইহুদী ধর্মনেতারা রোমান প্রশাসকের কাছে যীশুর প্রাণদন্ড দাবী করে; রোমান প্রশাসক সেটাই করে, ক্রুশবিদ্ধ করে উনাকে হত্যা করার আদেশ দেয়।
হতে পারে, ক্রুশে যীশুর মৃত্যু হয়নি; যীশুর মৃত্যুর পর, কিংবা পলাতক থাকা অবস্হায়, উনার সাগরেদরা উনার বক্তব্য ও ভাবনাগুলোকে লিখে সংস্কার-করা এক নতুন ইহুদী ধর্ম প্রচার করতে থাকে; কঠিন ইহুদী ধর্মের বাহিরে, এই নতুন সংস্করণ শীঘ্রই খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করে, বিশেষ করে ইউরোপে বেশ গ্রহনযোগ্যতা পায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২১ ভোর ৬:২০