".... তোমার তো দেখি নীতি নাই। রাখলাম।" ইহা ছিল এক বন্ধুর সাথে ফোনালাপের শেষাংশ। কেন এহেন বাক্যবাণ, তাহা বলিবার পূবে নিজের আয়নায় নিজেকে একটখানি দেখিয়া লই।
আমি নামাজ পড়িনা, রোজা রাখি না। শেষবার কবে নামাজ পড়িয়াছিলাম তাহা মনে হয় চেষ্টা করীলেও বলিতে পারিব না। আর রোজার সময় যা করি উহাকে রোজা না বলিয়া উপাস বলাই শ্রেয়। অথচ এদিকে মুসলিম নাম নিয়া দিব্বি চলাফেরা করিতেছি, কোন শরম নাই।
- আসলেই তো! আমার কোন নীতি নাই।
অথচ আমার বন্ধুটিকে দেখেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজানে সবকয়টা রোজা রাখে, এমন কি তারাবীর নামাজও বাদ যায় না। বছর শেষে ক্যালকুলেটরে হিসাব করিয়া জাকাত দেয় নিয়মিত।
এতোকিছু করিবার পরও তাহার মন শান্ত হয় না। বেহেশত নিশ্চিত করিবার জন্য প্রয়াত পিতার পদাংক অনূসরণ করিয়া এক পীরের মূরীদ হইয়াছে। বর্তমান পীরের প্রয়াত পিতা বড় পীরের সহিত সাক্ষাতের এক বিরল সৌভাগ্য হইয়াছিল এই অধমের। বন্ধুটির বিবাহ পড়ান হইয়াছিল সেই পীরের খানকায়। শনির আখড়ার নিকটে সেই খানকায় গিয়া কিছু জ্ঞানার্জন করিয়াছিলাম। এককোনায় একখানা মসজিদ রংহীন, পলেস্তারায় শ্যাওলা জমিয়া আছে - দেখিলেই বুঝা যায় তেমন যত্নআত্তি নাই। ভিতরের অবস্থা আরো করুণ। সাধারন কংক্রিটের মেঝের উপর চট বিছানো, ধূলায় মাখামাখি। মসজিদের ঠিক পাশেই আরেকখানা স্থাপনা। চারকোনা বেদীর উপর চারটি স্তম্ভ ধারণ করিয়া আছে একটি সুউচ্চ মিনার। মিনারটি দামি টাইলস দ্বারা কারুকার্য খচিত। বেদী আর স্তম্ভ সবগুলিই দামী গ্রানাইট পাথরে আচ্ছাদিত। বেদীর মাঝামাঝি জায়গায় সাড়ে তিন হাত এর কিছু বেশী লম্বা একটুকরা জায়গা খালি, মাটি দেখা যাইতেছে। আমি অধম একটু ফাপড়ে পড়িলাম - ইহা আসলে কি ? ইহা কি আজান দিবার জায়গা ? কিন্তু মসজিদ হইতে ইহার জৌলুস এত বেশী কেন ? তিষ্টিতে না পারিয়া এক খাদেম কে জিজ্ঞাসা করিলাম। এলান হইলো ইহা পীর ছাহেবের মাজার। মাজার ??? কিন্তু উনি তো বহার তবিয়তেই বর্তমান - আমার দিকে চাহিয়া খাদেম উত্তর দিয়াছিল - ইন্তেকাল ফরমাইলে সেখানে গোর দেয়া হইবে। মাজারে সম্মূখে মিনার সদৃশ চ্যাপ্টা একখানা প্রস্তরখন্ড দন্ডায়মান দেখিয়া উহার দিকে নজর দিলাম। কিছুই নাই - খালি। এক বন্ধু বলিল - আরে গাধা ইহা হইলো এপিটাফ। গোর দিবার পর লিখিবে। ফিরিবার পথে পিছনে তাকাইয়া বার বার দেখিতেছিলাম দীনহীন আল্লাহর ঘরের পাশে তাহার এক বূজূর্গ বান্দার ভবিষ্যতের রাজপ্রাসাদ।
- আসলেই তো! আমার কোন নীতি নাই। নিজে ধর্ম-কর্ম করি না। অন্যে করিলে আবার চোখ টাটায়।
আমার এই বন্ধুটি বৈবাহিক জীবনেও শরিয়ত মোতাবেক চলিবার চেষ্টা করে। যেমন স্ত্রীর সহিত একান্ত মূহুর্ত গুলি সে রাতের অন্ধকারে মশারীর ভিতর এবং চাদরের নিচে উপভোগ করে। ইহাই নাকি শরিয়ত সম্মত নিয়ম। নিজের স্ত্রী'র বস্ত্রহীন অবয়ব সে নাকি শুধূমাত্র স্পর্শে চিনিয়াছে, চাক্ষুষ নয়। তবে সুমনের সিডি কাহারো নিকট আছে শুনিলে সে উহা দর্শন করিবার জন্য ব্যাকুল হইয়া উঠে।
- আসলেই তো! আমার কোন নীতি নাই। লোকের কি সাধ আহ্লাদ বলিয়া কিছু থাকিবে না।
বন্ধুটি ঘুষ খায় না, দূর্নীতি করেনা। যদিও দূর্নীতি করিবার স্কোপ তাহার যথেষ্টই আছে। এমন কি ঘুষ প্রদানের ক্ষেত্রেও সে কঠিন এবং শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে ঘুষ প্রদান না করিয়া কার্য উদ্ধারে সে সক্ষম। অথচ তাহার বস প্রজেক্টের টাকা আত্মসাত করিতে সিদ্ধহস্ত এবং আমার এহেন বন্ধুটিকে তাহার সেই সব মহৎ কর্মে সাক্ষী গোপাল হইতে হয়।
- আসলেই তো! আমার কোন নীতি নাই। বেচারি এই দূর্মূল্যের বাজারে চাকরি রক্ষা করিয়া চলিবে না তো কি পরিবার সহ উপবাস করিবে।
এইবার আসুন আসল কথাটি বলি। কথা হইতেছিল বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়া। খালেদা-হাসিনার গুষ্টি উদ্ধারের পর বন্ধুটি জানাইলো সেনাবাহিনী যে প্ল্যান করিয়াছে তাহাতে এরশাদের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়া নাকি ঠেকান যাইতেছে না। বন্ধুর প্রিয় রাজনৈতিক নেতা হইলো এই এরশাদ। আপনি এরশাদের দূর্নীতি, নারীপ্রীতি নিয়া যতোই সমালোচনা করেন না কেন সব কথার শেষ কথা এরশাদের উপর নেতা নাই। কারণ ??? ছাত্রাবস্থায় বন্ধুটির পিতা দূর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারান। এই এরশাদের আমলেই নাকি সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি করা হইয়াছিল, ফলে বন্ধুর পরিবার অধিক হারে পেনশন পাইয়াছিল এবং তাহা তাহাদের বিশাল উপকারে আসিয়াছিল। সুতরাং তখন হইতে দূর্নীতিগ্রস্থ নারী লোলুপ এরশাদ তাহাদের প্রিয় নেতা।
আমি বলার চেষ্টা করিলাম সেনাবাহিনী কে দেশের শাসন ক্ষমতায় অংশীদার করিলে সেনাবাহিনীকে আসলে ধ্বংস করিয়া ফেলা হইবে। সে বলিয়া উঠিলো তাহা হইলে কি তুমি চাও রাজনৈতিক নেতারাই সব লুটিয়া খাক ? আমি বলিলাম হ্যাঁ। সে উত্তর করিল "তোমার আসলে কোন নীতি নাই। রাখলাম।"
- আসলেই তো! আমার কোন নীতি নাই। কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:৫৯