আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় টা বাংলাদেশের এডভার্টাইজিং এর জন্য কিছুটা সেনসেটিভ। বিষয় টি হচ্ছে-
এডভার্টাইজিং এন্ড সেক্স।
সেক্স কি আসলেই এডভার্টাইজিং এর একটা গুরুত্বপুর্ন অংশ ? একটি পন্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সেক্স কে কিভাবে কাজে লাগানো যায়, বা কাজে লাগানো হয়।
ইন্টারেস্টিং টপিক, বলা যায় এটা একটা সাইকোলজিকাল ব্যাপার। মার্কেটিং এ কনজিউমার বিহেভিয়ারের একটি গুরুত্বপুর্ন ব্যাপার ।
চলে আসি মূল কথায়।
প্রথমেই একটা প্রশ্ন করি, আপনার কি মনে হয় ? "ডাজ সেক্স সেল ? " সেক্স কি পন্য বিক্রয়ে ভুমিকা রাখতে পারে ? এখানে সেক্স বলতে সেক্স আপিল সমৃদ্ধ টিভিসি বা বিলবোর্ড, পোস্টারে সেক্সুয়াল পিকচার, ভিজুয়াল কে বুঝানো হয়েছে। প্রশ্নটি আসার কারন আছে। এডভার্টাইজিং এ সেক্স কে ব্যাবহার করা হয় সেন্ট পার্সেন্ট ক্ষেত্রে।
চিন্তা করতে করতে আসুন কিছু প্রেস এন্ড প্রিন্ট এড দেখি। সবগুলা এড ই বিয়ারের, এবং প্রতিটিতেই সেক্সচুয়ালিটিকে ব্যাবহার করা হয়েছে।
এডভার্টাইজিং এর ক্ষেত্রে আপনাকে সবসময় আপনার কনজিউমারের ইমোশন এর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। মাথায় রাখতে হবে কোন ব্যাপারটায় আপনার টার্গেট কাস্টোমার ইমোশনালি কানেক্টেড হবে। ইমোশন/ ফিলিং গুরুত্বপুর্ন। তাহলে হোয়াট এবাউট দ্যা ইমোশন অফ এরাউজাল ?
এমন অনেক পন্যই আছে, যেগুলোতে কনভিনসিং কোন ফ্যাক্টস নেই। অর্থাৎ, পন্যটা আপনাকে কিনার জন্য কনভিন্স করতে পারছেনা, যে কারনেই হোক। আপনার মনে দ্বিধা আছে, প্রোডাক্ট টি কিনবেন নাকি কিনবেন না। ইটস অল এবাউট টেস্ট। আপনার টেস্টের সাথে পন্য টি যাচ্ছেনা। একটা পন্যের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কিন্ত আপনি টেস্ট যাচাই করতে পারছেন না। একবার অন্তত ব্যাবহার করে তারপর আপনি ডিসিশন নিবেন। এবং এই টেস্ট টাই হচ্ছে ফিলিং। একটু আগেই বলেছি, ফিলিং খুব ইম্পর্টেন্ট, এন্ড টেস্ট ইজ কাইন্ড অফ ফিলিং।
যেহেতু বিয়ারের ছবি দিয়েছি, তাই বিয়ার দিয়েই উদাহরন দেই।
মনে করুন আপনার একজন বন্ধু আপনাকে হ্যানিকেন নামে এক্ট বিয়ারের কথা বললো। আপনি আগে কখনো এই হ্যানিকেন ব্রান্ডের বিয়ার টেস্ট করেন নি। এখন "হ্যানিকেন" এর ছবি বা এড দেখে বা ফ্রেন্ডের কাছ থেকে খেয়ে আপনার মনে দু ধরনের কনসিডারেশন আসতে পারে। আপনি ভালো খারাপ দুধরনের এপ্রোচ ই দেখাতে পারেন। এক, আপনার কাছে মনে হতে পারে বিয়ারটা ভালো তো। খাওয়া যায়। অথবা মনে হতে পারে, বিয়ারটা দেখে খুব একটা ভালো লাগলো না। মেবি আপনার মনে হয়েছে ইটস টোটালি স্মোকি ফর ইউ। অর দিস ইস ঠু এক্সপেন্সিভ। অর্থাৎ পন্য টি কিনার প্রতি একটা রেসিসট্যান্স তৈরি হয়েছে।
এবং এখানেই চলে আসে সেক্স, ইমোশন বা এরাউজাল ফিলিং।
বলছি কিভাবে। আপনার যদি পন্যটার প্রতি ব্যাড এপ্রোচ থাকে, তাহলে সেক্সচুয়ালিট আপনাকে ডিস্ট্র্যাক করে দিবে। আপনাকে এরাউজ করবে পন্য টি কিনার প্রতি। সেক্সি এড আপনার সেই রেসিস্ট্যান্স কে ভেঙ্গে দিতে পুশ করবে।
এটা বেশ দ্বান্দিকএকটা অবস্থা। এক দিকে আপনি পন্যটি কিনবেন না বলে স্থির করেছেন, অন্যদিকে পন্যের এডের দিকে আপনি এট্র্যাক্টেড হচ্ছেন। আপনার কনজিউমার বিহেভিয়ার পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই অবস্থা টি বেশ কনফিউজিং। এই রকম ডিস্ট্রাক্টেড পরিস্থিতিতে যে কোন ক্লিশে বা পুশ ফ্যাক্টর যাদুর মত কাজ করে।
উদাহরন দেয়া যাক। নিচের ছবিটি দেখুন। "হ্যানিকেন" বিয়ারের সাদামাঠা একটি এড।
এবার একই বিয়ারের এই এড টি দেখুন। এখানে কিন্ত চলে এসেছে সেক্সুয়ালিটি।
কি বুঝলেন ? প্রথম ছবিটা একটা সিম্পল ছবি। সবুজ কালার আর সিমপ্লিসিটির জন্য এই এডটায় আপনি ফিলিং খুজে পাবেন, বাট নো সেক্স। পরের ছবিটা দেখুন। সেইম বিয়ার, সেইম কালার, সেইম টোন, কিন্ত সাথে আছে একটি হট মেয়ে। এই হট মেয়েটাই কাজ করবে ক্লিশে বা পুশ ফ্যাক্টর হিসেবে। শুধু মাত্র সেক্স আসার কারনে প্রথম এডের চেয়ে ২য় এড টা আপনি বেশি দেখবেন। রাস্তায় এই বিলবোর্ড চোখে পড়লেই থমকে দাড়াবেন। সুশীল টাইপের কেউ হলে গালিও দিতে পারেন। তবে ফ্যাক্টস হচ্ছে, এড টি আপনার নজর ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
মহাখালিতে "আড়ং" এর একটি বিল্বোর্ড আছে। পিছন দিক অনেকটা খোলা এমন ব্লাউজ পরিহিত এক মেয়ের ছবি। ঐ সিগনালে নাকি গাড়ির জ্যাম লেগে থাকে কারন ড্রাইভার রা ঐ ছবি থেকে চোখ সরাতে পারেনা। মানে হচ্ছে, ভালো বা খারাপ যাই হোক, আড়ং এর এড টি স্বার্থক।
ঠিক একইভাবে বিয়ারের ২য় এড টিও।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিয়ারটি কি আসলেই বিক্রি হবে ? বা আড়ং এর সেই শাড়িটি কি আদৌ বিক্রি হচ্ছে একর্ডিং টু এড ?
এবার তাহলে আরেকটি ছবি দেখাই। কিছু টা পরিসঙ্খান ও দেখা যাতে পারে।
পরিসঙ্খ্যান বলে, প্রথম নজরে ৩০ % মানুষ মেয়েটির বুকের দিকে তাকাবে। এবং মেয়ে কনজিউমার দের মধ্যে ১৪ % তাকাবে মেয়ের বুকের দিকে, কিন্ত ৩০ % তাকাবে, মেয়েটির মুখের দিকে। অর্থাৎ মেয়েটি কি পরে আছে, তা দেখবে। মেয়েটি যদি প্রোডাক্ট টি না পরে হাতে রাখতো, তাহলে ফিমেইল দর্শক রা প্রথমে তাকাবে মেয়ের মুখের দিকে, সেকন্ডে তাকাবে মেয়েটি কোন দিকে চেয়ে আছে সেদিকে, অর্থাৎ প্রোডাক্টের দিকে। মাত্র ১১% দর্শক তাকাবে হেডলাইন বা পন্যটির নামের দিকে। কি লেখা আছে, তার দিকে তাকাবে ৪ % মানুষ। লোগো দখেবে শতকরা ৫ জন।
তার মানে দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ মানুষ ই এড থেকে ম্যাসেজ টা নেয়ার আগেই ডিসট্রাক্টেড হয়ে যাবে সেক্সি মেয়েটিকে দেখে। এবং শুধু মাত্র সেক্সি এড হলেই হবেনা, সেক্সের সাথে সাথে প্রোডাক্ট প্লেসমেন্টের দিকেও নজর দিতে হবে। ভিজুয়াল এমন ভাবে বানাতে হবে যেন, মেয়েটির দিকেও চোখ পড়ে, আবার ফিমেইল কাস্টোমার ধরে রাখার জন্য মেয়েটির হাতে বা প্রোডাক্টের দিকে তাকিয়ে থাকার ছবি দিতে হবে। ড্রেসআপ এবং এটিচিউড যেন এমন হয়, মেয়েরাও সেটাকে ফলো করার সুযোগ পায়।
একটা জরীপ আপনাদের মাঝেই চালানো যেতে পারে। মনে করে দেখুন তো, কোন ব্রান্ড টি আপনার বেশি মনে থাকবে ? সেক্সুয়াল এডের ব্রান্ড টি, নাকি নন সেক্সুয়াল এডের ব্রান্ড টি ?
দেখা যায় ২৫% কাস্টোমার সেক্সি এডের ব্রান্ড টি কিনতে চায়। কিন্ত ছেলে কাস্টোমার রা ব্রান্ডটির নাম মনে রাখতে পারেনা। অর্থাৎ রিকল করতে পারেনা। বিকজ দে আর মোর ডিসট্রাক্টেড বাই সেক্স। কিন্ত মজার ব্যাপার হচ্ছে সেইম ফর গার্লজ ইটস ভাইস ভার্সা। মেয়েরাও সেক্সি এড টা বেশি রিকল করতে পারে এবং বেশি কিনতে চায় ।যেই কারনে পুরুষেরা এড টি মনে রাখবে, সেই একই কারনে মেয়েরাও পুষদের এট্রাক্ট করার জন্য পন্য টি কিনবে।
তাহলে সারকথা দাড়াচ্ছে, সেক্স কনজিউমার দের ব্রান্ড টি কিনার ব্যাপারে হেল্প করে, কিন্ত ব্রান্ড টি মনে রাখার ব্যাপারে সমস্যা করতে পারে। সো এড হতে হবে একই সাথে সামাঞ্জস্যপুর্ন, সুন্দর, এবং এট্রাক্টিভ। কাজেই সো মাচ সেস্কুয়ালিটি ক্যান মেক মোর ডিস্ট্রাকশন এন্ড এট দা সেইম টাইম মোর সেল (সব পন্যের বেলায় আবার না) ।
আজ এ পর্যন্তই থাক। পরের পর্বে এডভার্টাইজিং এর অন্য কোন মজার স্ট্রাটেজি নিয়ে আলোচনা করবো।
সবাই ভালো থাকুন। আগের পোস্ট গুলোর ও লিঙ্ক দিয়ে দিলাম। পড়লে নিশ্চই উপকৃত হবেন।
বিজ্ঞাপনের গুষ্টি উদ্ধার, পর্ব ১ ( এডভার্টাইজিং এবং ব্রান্ডিং কি )
বিজ্ঞাপনের গুষ্টি উদ্ধার -২ ( এডভার্টাইজিং এর কমন কিছু স্ট্রাটেজি)
বিজ্ঞাপনের গুষ্টি উদ্ধার-৩ ( এড এজেন্সি কি জিনিস, কিভাবে কাজ করে)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪২