
সামুর পুরাতন পোস্টগুলা ঘুরে ঘুরে পড়া আমার অনেক দিনের একটা অভ্যাস। এমন করেই চোখে পড়ে যায় অনেক আগুন পোস্ট, অনেক আগুন মন্তব্য। আবার কিছু কমেন্ট পড়ে মনে হয়, এই কথাগুলা যেন আমারই বলার কথা ছিলো। সেই রকম কিছু পোস্ট আর মন্তব্য নিয়ে এই সিরিজটি লেখার চেষ্টা করবো। সামুর নতুন পাঠকদের সাথে পুরোন লেখকদের পরিচয় করিয়ে দেয়াই এ সিরিজের উদ্দ্যেশ্য। আপনারাও শেয়ার করতে পারেন আপনাদের ভালো লাগা পোস্ট এবং কমেন্ট। আমি তাহলে মুল পোস্টের সাথে আপডেট করে দিতে পারবো।
আজ দিচ্ছি প্রিয় ব্লগার দিনমজুর এর একটি মন্তব্য। পোস্টের লেখক ফাহমিদুল হক। উনি সামুর বেশ পুরাতন ব্লগার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আর দিনমজুর ভাইকে নিশ্চই নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার দরকার নেই। পোস্ট এবং কমেন্টের বিষয় "এক্টিভিজম"।
"একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় চুটিয়ে রাজনীতি করেছি, পুলিশের মুখোমুখি হওয়া-মাইর খাওয়া- এরেস্ট হওয়া সবই হয়েছে; একটি মামলার জের এখনো টানতে হয় (ছাত্রদল নেতা মোকাম্মেল হায়াত খান মুকির চেলা তৎকালীন বুয়েটের রশীদ হলের সভাপতির করা মামলা)। সেসময়ও সবই এনজয় করেছি- এখনও মনের মধ্যে ঐ কটি বছর খুব উজ্জল হয়েই আছে। রাজনীতির একটা পর্যায়ে স্বপ্ন দেখতাম অনেক, নিজের ভবিষ্যতের ব্যাপারে ৮টা-৫টা চাকুরির কথা কল্পনা করতে পারতাম না, মনে মনে ভাবতাম রাজনীতিই করবো- কোন অঞ্চলে- শ্রমিকদের মধ্যে বা কৃষকদের মধ্যে বা কোন জেলায় বা কোন জায়গায়- মানুষদের মধ্যে রাজনীতিকেই এগিয়ে নিয়ে যাবো.......
সবকিছুই পাস্ট টেন্সে লেখা, ফলে বুঝতেই পারছেন- যা কিছু স্বপ্ন ছিল, কোনটাই পূরণ হয়নি- আমি বলবো, আমি পূরণ করিনি। ৮টা-৫টা চাকুরি করছি, ঘর সংসার করছি, বিয়ে করেছি- বাচ্চা হয়েছে- বউ বাচ্চা নিয়ে চাকরি-ঘরসংসার সবই করছি, একসময় যেটাকে নিজের জীবনের জন্য অপ্রয়োজনীয় ভেবেছিলাম তাই আজ হয়ে গেছে খুব প্রয়োজনীয়। পাশ করার কয়েক মাস আগে বাবার অবসরে যাওয়া, মধ্যবিত্ত সংসারটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য চাকুরি করার ব্যাপারে মায়ের আকুতি- এগুলোকে আমার অজুহাতই মনে হয়; আসলে নিজের ব্যাপারে যখন ভাবি- তখন এটাই মনে করি- আমার স্বপ্ন গুলোর পেছনে আমার ডেডিকেশনের অভাবটাই ছিল বেশী- এই অভাবের কারণ আজকে এসে ভাবি- সেসময়কার চিন্তাকে সুসংগঠিত না করা, সে অনুযায়ি আগে থেকেই যথাযথ প্রস্তুতি না নেওয়া, আদর্শিক ভিত্তির দুর্বলতা ইত্যাদি নানাকারণই চোখে পড়ে।
হ্যা! মাঝে মধ্যে হতাশা- প্রচণ্ড হতাশাই আসে। কিন্তু হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে আরো নিজেকে হারানোর ইচ্ছা হলো না, তাই নতুন করে ভাবা- কি করা যায়। সে জায়গা থেকে কিছু পড়া, কিছু লেখা লেখি করা, আরো দু বন্ধু - পুরোনো কমরেড, তাদের সাথে পত্রিকা বের করার চেষ্টা......., এসবে ব্যস্ত থাকা আরকি। যতখানি যা করা, যতখানি সম্ভব কিছুটা ডেডিকেটলি করা......., এই আরকি।
চাকরি করি, একটা মাল্টিন্যাশনালে- আমার আমাদের লেখালেখির অধিকাংশই মাল্টিন্যাশনালের বিরুদ্ধেই, একটা মোবাইল কোম্পানীতে চাকুরি করি- বিদেশী বিনিয়োগের বিরুদ্ধে সিরিজ লিখে যাচ্ছি, মোবাইল ব্যবসার বিরুদ্ধে লিখছি। এসবকে কি অসততা বলবো? ভণ্ডামি বলবো? ঠিক এভাবে নিজেকে বিচার করতে ইচ্ছা করে না। তবে, উল্টোদিকে "যার নুন খাই- তার গুন গাই", এমন অবস্থানও আমার নয়, সুযোগে থাকি- কোম্পানির/মোবাইল ব্যবসার খুটি নাটি ধরার চেস্টা করি- তাদের বিরুদ্ধে লেখালেখিতে সেসব জিনিস কাজে লাগাই, সে অর্থে এটাও ঠিক- যার নুন খাই তার দুর্নাম গাই।
অস্বস্তির জায়গাও আছে- এরা একটা পরিবেশ তৈরী করে, যেটা হলো মাল্টিন্যাশনাল ইনভারনমেন্ট- বা বলতে পারেন কর্পোরেট কালচার; এসমস্ত কিছুর একটা মাঝামঝি অবস্থায় আছি, এসি রুমে থাকা- এসি গাড়িতে চলা এসবে অভ্যস্ত হয়ে আগের মত করে ৯ নম্বর, ১৩ নম্বর, ৭ নম্বর বাসে গাদাগাদি করে চলাচল এখন এড়িয়েই চলি- হাটাহাটির বদলে রিকশা বা সিএনজিতে চড়ে বসি, অফিস এনভারনমেন্টে চাকুরিতে প্রমোশন, উপার্জন বৃদ্ধি এসবের জন্য চোখ চকচক করে, নিজেকে টেকনিকলি এফিসিয়েন্ট করে তোলার ব্যাপারে কলিগের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হই। উল্টোদিকে আগের কিছু ন্যাক-অভ্যাস থাকার কারণে সেভাবে স্মার্টও হতে পারিনা, মাঝে মধ্যে প্রচণ্ড ঘাড় ত্যাড়ামিও করতে ইচ্ছা করে, অফিস আওয়ারের বাইরে, হলিডেগুলোতে মোবাইল ফোন বন্ধ করে বসে থাকি (টেকনিক্যল সাপোর্টের লোকদের জন্য এটি কিন্তু গর্হিত অপরাধ!!).......
কর্পোরেট টাকা হাতে পেতে খারাপ লাগে না। দেদারসে বই কিনছি- নিজস্ব লাইব্রেরী গড়ে তুলছি- ভালো কনফিগারেশনে পার্সোনাল ডেস্কটপ কিনছি- বিজ্ঞাপন ছাড়াই লস দিয়ে পত্রিকা বের করছি, অফিসে বসে হাই স্পিডে নেটে বসে থাকছি...... এগুলোকেই লাভ মনে হয়........., তারপরেও মনে হয় এই আরাম আয়েশের মধ্যে কাটিয়ে এভাবে সহজলভ্য লাভ কি আমি চেয়েছিলাম? আমি আসলেই কি চাই?
এখনো স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন মরেনি, মরেনা। ভাবি হয়তো কোনদিন এই চাকুরিকে গুড বাই জানাতে পারবো। গুড বাই জানিয়ে হয়তো পুরোদস্তুর কোন কিছুতে ইনভল্ভ হবো....
নিজেকে পুরোদস্তুর এক্টিভিস্ট মনে করিনা, সেরকম মনে করাটাকে ঔদ্ধত্য মনে হয়। কিন্তু এটাও মনে করি, মাল্টিন্যাশনালে চাকুরি করলেও- তাদের কাজ করলেও- তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা অকৃত্রিম, পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের পতন চাওয়াটা সত্য।"
পোস্টের লিঙ্ক, ৩৫ নম্বর মন্তব্য।
সবাইকে ধন্যবাদ। সাথে থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১২ ভোর ৪:০৮