ব্লগ দিবস সম্পর্কে আসছে নানা পোস্ট। সেই সব পোস্টে ব্লগারদের ভালো লাগা অথবা ক্ষোভের জায়গাটা স্পস্ট দেখা যাচ্ছে।আমি নিজেও যেহেতু ছিলাম, তাই সবার অনুভুতিটা বুঝতে সুবিধা হচ্ছে।ব্লগারদের মতামত, তর্ক বিতর্ক এবং বিভিন্ন পোস্ট থেকে উঠে এসেছে কিছু কথা। এর মাঝে ব্লগ দিবসের অনুষ্ঠান পরিচালনা, সেরা দশ নির্বাচন, ভিতর বাহিরের আড্ডা, জায়গা নির্বাচন ইত্যাদি নানা বিষয়ে অনেক রকম আলোচনাই খেয়াল করেছি।
যার মাঝে সবচেয়ে ফোকাসড ব্যাপারগুলা হলো-
১, ইহা কি ব্লগ দিবস ছিলো, নাকি সামু দিবস ?
২, ভিতরের বোরিং অনুষ্ঠানের থেকে বাইরের আলোচনাই ছিলো অনেক প্রানবন্ত।
৩, দর্শকের তুলনায় প্লেস ছিলো অনেক ছোট। সেই হিসেবে অনেক দর্শক বসার জায়গা পয়ান নি।
৪, কোশিকের উপস্থাপনা দেখে অনেকের ভালো লেগেছে, অনেকের ভালো লাগেনি। তবে এত মানুষের সামনে সাবলিল উপস্থাপনা একটু কঠিন ব্যাপার বৈকি।
৫, অন্যমনষ্ক শরৎ ভাইয়ের সহউপস্থাপনা বেশ ভালো লেগেছে। তিনি মানুষটাও অনেক আন্তরিক।
৬, অনেক ব্লগারদের যথাযত মুল্যায়ন করা হয়নি বলে মনে হয়েছে অনেকের।
৭, সেরা দশ নির্বাচন নিয়ে নিচে আলাদা করে উল্লেখ করছি।
৮, নারী ব্লগার সহ অনেক জনপ্রিয় ব্লগারদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য ছিলো না।
৯, ১ লক্ষতম ব্লগার কে পুরষ্কৃত করার উদ্দেশ্য কি নিজেদের বিজ্ঞাপন ?
১০, নিজেদের প্রিয় ব্লগারদের সাথে পরিচিত হয়ে আড্ডা মেরে ব্লগ দিবসের স্বার্থকতা ধরে রেখেছেন সবাই।
১১, অনেকে অনেক কষ্ট করে অনেক দূর থেকে এসেছেন। এদের মাঝে একজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আরো দূরের জেলা থেকে কিংবা বিদেশ থেকে আশা ব্লগা্রের কথা উল্লেখ করা হয়নি কেন তা বুঝা গেলোনা।
১২, মডারেশন প্যানেল সঙ্ক্রান্ত প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেখতে পেলাম না।
১৩, যারা অনুষ্টানে উপস্থিত হতে পারেন নি, তাদের জন্য লাইভ স্ট্রিমিং এর ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছিলো। তবে সাউন্ড কোয়ালিটি ভালো না হয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
১৫, কথা উঠেছে ইসলাম তথা ধর্ম সঙ্ক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে, এ ব্যাপারে মডারেশন এর কি করা উচিৎ এবং মডারেশন কি করছে।
১৬, রাষ্ট্রপ্রধান ভাই সবার ছবি তুলতে গিয়ে বেচারার নিজের ছবিই তোলা হলো না।
১৭, অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথীদের নিয়ে কোন অভিযোগ দেখতে পাইনি।সবাই ভালো বক্তব্য দিয়েছেন।
১৮,কিছু ব্লগের অথরিটি নিজেদের মডারেশন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সামুর মডারেশন কে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ।
১৯, একজন নতুন ব্লগারের সেফ হবার জন্য আসলে কি প্রসিডিওর ফলো করা হয়, এখনো ক্লিয়ার হলাম না।
২০,ফিফা বড়ই রস্যময় ক্যারেক্টার। তাকে নিয়ে পজেটিভ নেগেটিভ দু ধরনের তর্কই খেয়াল করেছি।
২১, ব্লগ দিবসের অনুষ্ঠান ব্লগারদের মতামতের ভিত্তিতে এবং তাদের সক্রিয় অংশগ্রহনে করা উচিৎ ছিল বলে মনে করছেন অনেক ব্লগার।
২২, অনুষ্ঠান কি একঘেয়ে হয়ে গিয়েছিল ? অনেক লেন্দি হয়েছিলো আলোচনা ও ফর্মালিটির পর্ব ?
২৩, অনেক নতুন ব্লগারদের দেখা গিয়েছিলো এবার। তারা বেশ উপোভোগ করেছে পরিচয় পর্ব এবং ব্লগারদের আড্ডা।
২৪, আগেরবার অনেক ফটোব্লগারদের উপস্থিতি দেখা গিয়েছিলো। এইবার আমি,রাষ্ট্রপ্রধান ভাই, আর এইচ সুমন ভাই ছাড়া আর কারো কথা বলতে পারছিনা। হয়তো উপস্থিত হলেও চোখে পড়েনি আমার।
---------------------------------------------------
প্রসংগ সেরা দশঃ
ব্লগার দের মাঝে সেরা শব্দটি কতটা যুক্তিযুক্ত সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকে যায় ব্লগারদের মনে। তবে সামুর অথরিটি যদি একটুখানি রিফ্রেজ করে বিভিন্ন ইস্যুতে অবদান সরুপ স্বীকৃত দশ বলতেন তাহলে এই প্রশ্ন টা নাও আসতে পারতো।
তখন প্রশ্ন আসতো আসলেই উল্লেখিত ইস্যুতে তাদের অবদান কতখানি। অলরেডি এ প্রশ্ন সবার মুখে মুখে।
ব্লগারদের প্রশ্ন, সামুর উত্তরঃ
মন্তব্যে খেয়াল করলাম অনেকেই ভুল বুঝছেন আমাকে। এখানে আমি যা লিখেছি, তা বিভিন্ন পোস্ট এবং পোস্টের মন্তব্য থেকে।। সময় করে নেকস্ট পোস্টে লিঙ্ক দিয়ে দেয়ার চেস্টা করবো।ব্লগার রা কি বলছেন তা উল্লেখ করছি এবং সেই প্রসঙ্গে সামুর উত্তর গুলো দেয়ার চেস্টা করছি মাত্র।
ইমন জুবায়ের ঃ ইমন ভাইকে সেরা দশে রাখা নিয়ে কারো কোন প্রশ্ন নাই। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসঙ্খ পোস্ট করেছেন এবং লেখার মান ধরে রেখেছেন অনবদ্য দক্ষতায়। কাজেই তাকে সেরা দশে থাকতে দেখে অবাক হইনি। উল্লেখ্য তিনি ডয়েচে ভেলে ব্লগার নির্বাচনেও সেরা মনোনয়ন পেয়েছিলেন এবং পরে বিতর্কের কারনে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়ে দুরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন।
মাহমুদুল হাসান কায়রো ঃ তার দেয়া পোস্টের সঙ্খ্যা অনেক। একটি বিতর্কিত পোস্ট ( অলরেডি ডিলিটেড) এর কারনে তাকে ছাগু ট্যাগ দেয়া হয়েছিলো। তবে সামু তাকে সেরা দশে রেখেছে লিবিয়া যুদ্ধের সময় লাইভ ব্লগিং এর মাধ্যমে সবাইকে আপডেট নিউজ জানানোর গুরুদায়িত্ব পালনের জন্য।
ফিউশন ফাইভ ঃ ফিফাকে এই লিস্টে রাখার কারনে পজেটিভ এবং নেগেটিভ দুই ধরনের মক্তব্যি খেয়াল করলাম। তিনি নাকি এটেনশন সিকার এবং প্রথম আলো দ্বারা ম্যানিপুলেটেড। ব্লগ এবং বিভিন্ন সোশ্যাল ইস্যুতে অবদান স্বরুপ তাকে রাখা হয়েছে এই লিস্টে। বিতর্কিত হলেও গবেষনাধর্মি লেখার জন্য তার কোন তুলনা নাই। অন্তত তার কাছে বিপুল পরিমানে সোর্স অফ ইনফো আছে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই।
আলিম আল রাজি ঃ রাজি যে একজন ভালো রম্য লেখল এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই।তবে তাকে শ্রেষ্ঠ ব্লগার ঘোষনা করা হয়েছে ভিকারুন্নেসা ইস্যুতে শক্তিশালি লেখা এবং তথ্য প্রদানের জন্য।পরিমল ইস্যুতে তার লেখাগুলোকে সাংবাদিকরাও সোর্স হিসেবে নিয়েছে বলে জানা যায়।
জাহাজী পোলা ঃ সেরা দশে জাহাজীকে রাখা হয়েছে সোমালিয়ার জলদস্যু এবং তেল, জাহাজ,পরিবেশ নিয়ে সামাজিক সচেতনতা তৈরির লক্ষে। সেরা দশের এক্মাত্র তিনিই উপস্থিত ছিলেন অনুষ্টানে।
শায়মা ঃ ব্লগার শায়মা কে নিয়ে লক্ষ করা গেছে তুমুল বিতর্ক। ব্লগারদের ভাষ্য হলো- অন্যান্য ব্লগারদের তুলনায় শায়মার লেখা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপুর্ন। তবে সামুর বক্তব্য, ব্লগে স্বতস্ফুর্ত উপস্থিতির জন্য এবং বিপুল জনপ্রিয়তার কারনে তাকে রাখা হয়েছে সেরা দশে। রান্না-বান্না, কবিতা, গল্প, ডায়েরি, এবং তথ্যমুলক অনেক লেখাই আছে তার ঝুলিতে। কাজেই ভার্সেটাইলিটিও একটা কারন।
রেজোওয়ানা ঃ প্রথমে পি আর তৈরি এবং পরবর্তিতে ভালো ভালো তথ্য ও আলোচনামুলক লেখার মাধ্যমে তা ধরে রেখেছে এই ব্লগার। অপ্রাবাস্তব এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের কারনে সেরা দশে রাখা হয়েছে ব্লগার রেজোয়ানাকে।
আরিয়ানা ঃ অনেক নবীন ব্লগার হয়তো শুনেন নি আরিয়ানার নাম। তিনি দেশের বাইরে থাকেন এবং ব্যাক্তিগত জীবনে একজন গ্রাফিক ডিজাইনার। বিদেশ হতে রেগুলার(!) ব্লগিং এবং সুন্দর সুন্দর ভ্রমন ব্লগের কারনে তাকে রাখা হয়েছে সেরা দশের মাঝে। আমি অবশ্য আরিয়ানার ব্যাপারে ঠিক ক্লিয়ার না।এই ব্লগারকে নিয়েই দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক।
ডিসকো বান্দর ঃ এই ব্লগার এর ব্যাপারে একটা মজার ব্যাপার খেয়াল করলাম। অনেকেই ওনার ব্লগে গিয়ে উচ্ছসিত প্রশংসা করেছেন যাদের আজ দেখছি চটি ব্লগার হিসেবে তাকে আখ্যায়িত করতে।তার লেখায় হিউমার নিয়ে কোন সন্দেহ নাই, তবে প্রশ্ন হচ্ছে লেখার মান নিয়ে। রম্য বিভাগে তাকে পুরষ্কৃত করা হয়েছে। বাস্তব জীবনে তিনি বেশ ট্যালেন্ট একজন মানুষ, তবে অন্য ব্লগে তাকে কমেন্ট করতে দেখা যায় অনেক কম।
আসিফ মহিউদ্দীন ঃ আসিফ মহিউদ্দিনের ব্যাপারে আসলে আমার কিছু বলার নাই। সেরা দশের সবচেয়ে বিতর্কিত ব্লগার। তবে যে উদ্দেশ্যে তাকে সিলেক্ট করা হয়েছে সে ব্যাপারে আমার কোন আপত্তি নাই। বিষয়টি হলো- শিক্ষাকে বানিজ্যিকরনের উদ্দেশ্যে এক্টিভিজম।ব্লগে এবং ফিল্ডে দু জায়গাতেই সমানে দেখা গেছে তাকে। তাকে নিয়ে মুল বিতর্ক হলো, ধর্ম নিয়ে আক্রমন। মজার ব্যাপার হলো - বিপরিত যুক্তি দেয়ার চেয়ে তাকে গালিগালাজ করার পরিমান অনেক বেশি। যাই হোক- সেরা দশের এক হয়ার পরও নিজেকে সবার থেকে আলাদা করার পক্ষে নন আসিফ।
ব্যাক্তিগতভাবে আমার কোন সমস্যা নেই সেরা দশে। যারা নির্বাচিত হয়েছে সবাইকে অনেক অনেক অনেক অভিনন্দন।
সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছে রম্য বিভাগে ব্লগার দূর্যোধন এবং ছোট গল্প বিভাগে ব্লগার হাসান মাহবুবের নাম না থাকায়।এ ব্যাপারে আমিও একমত। সেই সাথে বলতে হয়, কবিতা বিভাগে স্বদেশ হাস নাইনের নামও থাকা উচিত। তবে এ ব্যাপারে সামু নিজেকে আগেই ক্লিয়ার রেখেছে- সেরা দশ নির্বাচন করা হয়েছে বিভিন্ন ইস্যুতে ব্লগারদের অবদান বিবেচনা করে।
----------------------------------------
যে ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি আলোচনা সমালোচনাঃ
১, ব্লগার দূর্যোধন এবং হামাকে সেরা লিস্টে না রাখা।
২, এক লক্ষ্তম ব্লগার কে ল্যাপ্টপ দেয়ার বিজ্ঞাপনি দৃষ্টিভঙ্গি।(আমি অবশ্য এটাকে খারাপ চোখে দেখছিনা)
৩, অনুষ্ঠানে স্বতস্ফুর্ততা ও ব্লগারদের আগ্রহ ধরে রাখতে না পারা।
৪, উপস্থিত ব্লগারদের পরিচয় এবং দর্শক পর্ব দীর্ঘায়িত না করা।
৫, বাইরের ব্লগাড্ডা।
-----------------------------------------------
সর্বোপরি এই কথা বলতেই হবে ব্লগ দিবস তেমনভাবে গৃহিত না হলেও সবার সাথে দেখা হয়া, পরিচয় হওয়া এবং আড্ডার মধ্য দিয়ে সাধারন ব্লগাররাই এই দিনটিকে করে রেখেছে গতিময়।ব্লগার রাই যে সামুর প্রান এই কথাটা আবারো প্রমানিত হয়েছে নিসন্দেহে।
পোস্ট উৎসর্গঃ দীর্ঘদিন ধরে ব্লগে আছেন এবং ভালো লিখেন, অথচ এখনো সেফ হননি, এমন ব্লগারের সঙ্খ্যা কম নয়।এমনি একজন হলেন ফারজুল আরেফিন , তিনি এমনকি জেনারেল ও হন নি।আরেফিন ভাই সহ অন্য ব্লগার যারা ভালো লিখার পরো সেফ হয় নি , তাদের উৎসর্গ করা হলো এই পোস্ট।
পরবর্তি পোস্ট আসবে ব্লগ দিবসের ছবি এবং বিভিন্ন লিঙ্ক এবং আমার অভিজ্ঞতা নিয়ে। অপেক্ষায় থাকুন। হাতে সময় না থাকার কারনে এখন ছবি পোস্ট দিতে পারছিনা বলে দুখিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৩৬