প্রতি বছর ৮ই মার্চ বিশ্বজুড়ে ভিন্ন আঙ্গিক থেকে আন্তর্জাতিক নারীদিবস পালিত হয় । এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে নারীর প্রতি সহিংস মনোভাব, ভ্রান্ত বা নেতিবাচক ধারণামুক্ত একটি স্বাভাবিক সুন্দর পৃথিবী পেতে প্রথমেই দরকার নারী এবং পুরুষের সম অধিকার এবং সমান সুযোগ। যে কারণে দরকার প্রতিটি নীতি নির্ধারণের টেবিলে পুরুষের পাশাপাশি একজন নারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
কোভিড-১৯ প্যানডেমিক এখনো চলমান। এই বাস্তবতার নিরিখে ২০২১ সালের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়, “Women in leadership: Achieving an equal future in a COVID-19 world,” মহামারী আক্রান্ত বিশ্বকে সচল করার জন্য বিভিন্ন সেক্টরে নিয়োজিত নারীর অবদান কোনভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। ঐকান্তিক চেষ্টা আর অবদানের পরও নেতৃত্বে নারী কেন পুরুষের পাশাপাশি সমগতিতে এগিয়ে আসতে পারছে না- সেটার প্রতি আলোকপাত করাই এই বছরের নারীদিবসের মূল লক্ষ্য।
জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের রিপোর্টে দেখা যায়, নীতিনির্ধারণে নারীর ভূমিকা এখনো অনেক পিছিয়ে। কিছু পয়েন্ট এখানে উল্লেখ করার মত।
এক, বর্তমানে পুরো বিশ্বে বাইশটি দেশে সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নারী নিযুক্ত আছেন, জাতীয় সংসদে আছেন ২৪.৯ শতাংশ। অগ্রগতির এই ধারা বজায় থাকলে রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান হিসেবে নারী এবং পুরুষের ভেতর সমতা আসবে আগামী ১৩০ বছরে।
দুই, কোভিড-১৯ এর প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে নারীর ভূমিকা উল্লেখ করার মত। স্বাস্থ্যকর্মী, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, তত্ত্বাবধায়কসহ সবক্ষেত্রে নারী সমানভাবে উপস্থিত থাকলেও তারা পুরুষের তুলনায় বিশ্বব্যাপী ১১ শতাংশ কম বেতন পাচ্ছেন।
তিন, ৮৭ টি দেশের কোভিড -১৯ টাস্কটিম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, এদের মধ্যে মাত্র ৩.৫ শতাংশে লিঙ্গসমতা রয়েছে।
চার, কোভিড ১৯ মহামারিতে বিভিন্ন দেশে আমরা নারী নেতৃত্বের ইতিবাচক ফলাফল দেখতে পেয়েছি। এছাড়াও সামাজিক ন্যায়বিচার, সাম্যতা প্রতিষ্ঠায় বা পরিবেশগতসহ বিভিন্ন আন্দোলনে তরু্ণরা স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ করেছে। এখানে তারা ছেলে বা মেয়ে বলে নিজেদেরকে বিভাজিত করেনি। তবু দেখা যাচ্ছে যে, বিশ্বব্যাপী ৩০ এর নিচের বয়সী পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে নারীর উপস্থিতির সংখ্যা এক শতাংশেরও কম।
উল্লিখিত কারণে এই বছর Generation Equality কে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ বছরের ২৯ থেকে ৩১ শে মার্চ মেক্সিকো সিটিতে Generation Equality Forum
( https://forum.generationequality.org/about )শুরু হবে এবং ২০২১ সালের জুনে প্যারিসে সমাপ্ত হবে। এই ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন দেশ থেকে নেতা, এক্টিভিস্ট, বক্তারা এক হবেন এবং লিঙ্গ সমতায়নের ক্ষেত্রে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পরিবর্তিত ও দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনের জন্য আলোচনাসহ বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ নেবেন। এই প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণ করতে চাইলে রেজিস্ট্রেশন করুন। লিংক এখানে।
প্রতিদিন আমরা সামাজিক বা রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে জ্ঞাত বা অজ্ঞাতভাবে সামিল হই। সোশ্যাল মিডিয়াতে হোক, টিভিতে বা বাস্তবে হোক- বিভিন্ন ঘটনা দুর্ঘটনা সম্পর্কে নিয়ত অবগত হই। কেউ সজোরে প্রতিবাদ করছি। কেউ সায় দিচ্ছি, কেউ না বলছি। কেউ নীরব থেকে সেটা নিয়ে নিজস্ব একটা মতামত নিজের ভেতর সৃষ্টি করছি। কোন না কোনভাবে আমরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছি। যখন বুঝি, প্রচলিত আইনে বা নিয়মে সেটার সমাধান সম্ভব নয়, আমরা সেটার সংশোধন আশা করি, সেই লক্ষ্যে কাজ করতে চাই। প্রতিদিন আমরা এইসব অসঙ্গতি নিয়ে কেন প্রশ্ন তুলি? উত্তর হয়ত একটাই- আমরা বসবাসের জন্য একটি বেটার পৃথিবী চাই।
এই বেটার পৃথিবীর ধারণা আমাদের কাছে হয়ত অনেকটাই অস্পষ্ট। আমার থেকে আপনার ধারণাও হয়ত অনেকটা আলাদা। জেনারেশন ইক্যুয়ালিটি ফোরাম সেই অস্পষ্টতা দূর করার জন্য একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্ম হতে পারে। লিঙ্গ-ভিত্তিক বৈষম্যহীন বিশ্ব গঠন একটি বৈশ্বিক আন্দোলন- নিজের অংশ গ্রহণের পাশাপাশি অন্যকে এতে উদ্বুদ্ধ করাও জরুরী।
Campaign: Act for Equal