পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। সারা পৃথিবীর দৃষ্টি সেদিকে- কোত্থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি? বর্তমান অবস্থান কোথায়, কেমন? কোথায় ছড়াবে এরপর? সংবাদ মিডিয়াগুলোতে এটাই বেশ কিছুদিন ধরে প্রধান খবর হয়ে আসছে বিশ্বজুড়ে, কিন্তু খেয়াল করে দেখলাম, বাংলাদেশের সরকার খুবই নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। প্রতিবেশির ঘরে যখন আগুন লাগে, সেই দুর্যোগে নিজঘরে হাসিমুখে বসে থাকার অবকাশ নেই। নিজের খাতিরেই এখন আমাদের সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে ইবোলার দিকে- কারণ এটা বর্তমানকালের সবচে জরুরী কনসার্ন, সারা পৃথিবীর জন্য।
প্রথমে দেখা যাক, কোত্থেকে ইবোলার জন্ম হলো। ডিসেম্বর, ২০১৩ এ এই সময়কার প্রথম রোগীটির পরিচয় পাওয়া গেছে। লাইবেরিয়া এবং সিয়েরা লিয়ন- এই দুটি দেশের খুব কাছাকাছি আরেক দেশ দক্ষিণপুর্ব গিনির একটি গ্রাম মেলিয়ান্দুতে। ২ বছরের এক শিশু জ্বরাক্রান্ত হল, বমি করতে শুরু করল, সেইসাথে কালো রঙের মলত্যাগ। ডিসেম্বরের ৬ তারিখ বাচ্চাটা মারা যায়, শিশুটির মা এক সপ্তাহ পরে মারা যান। তারপর শিশুটির বোন, তারপর দাদী। সবার সিম্পটম একই ছিল। তারপর শেষকৃত্যে যারা উপস্থিত ছিল- তাঁদের মাধ্যমে পুরো গ্রামে, এরপর গ্রামান্তরে ছড়িয়ে পড়ল এই ভাইরাস। তিনমাস পর এই ২০১৪ এর মার্চে, স্থানীয় কর্মকর্তারা কাগজে কলমে গিনির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এসব উত্থাপন করেন। সরকারীভাবে তখন থেকে সচেতনতা শুরু হয়।
ইবোলা ভাইরাস zoonosis. এই শব্দের অর্থ হলো- এই ভাইরাসজনিত ইনফেকশনটি প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। কোন প্রাণীর ভেতর কোনরকম জানান না দিয়ে দীর্ঘদিন বসবাস করতে পারে এই ভাইরাস- সেই প্রানীকে অসুস্থ না বানিয়ে। যুনোসিসের ক্ষেত্রে সেই প্রাণীটিকে বলা হবে রিজার্ভয়ের হোস্ট। ইবোলা ভাইরাসের সঠিক রিজার্ভয়ের হোস্ট ঠিক কোন প্রাণীটি- সেটা এখনও অজানা। ১৯৭৬ সালে জানামতে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল- তার ৩৮ বছর পর এখনও সঠিকভাবে হোস্টকে সনাক্ত করা যায়নি। তবে সন্দেহের তালিকায় আছে বাদুড় জাতীয় প্রাণীগুলো। হ্যামার হেডেড ব্যাট এদের মধ্যে অন্যতম। দক্ষিণ- পূর্বাঞ্চলীয় গিনিতে এই বাদুড় প্রচুর। হতে পারে কেউ সেই হোস্ট বাদুড়টিকে শিকার করেছিল, মেলিয়ান্দুর বাজারে সেই বাদুড়ের সরাসরি সংস্পর্শে গিয়েছিল দু'বছরের সেই শিশুটি। এমনও হতে পারে অন্য কারো মাধ্যমে সেই বাদুড় থেকে ভাইরাসটি শিশুতে সংক্রমিত হয়েছিল। (কঙ্গোর এক বাজারে বিক্রির জন্য ঝাঁপিভরা ফ্রুট ব্যাট)
এই ঘটনা বা দুর্ঘটনা, সন্দেহ বা অনুমানগুলো কেন আমাদের জন্য জানা দরকারি? কারণ হচ্ছে ভাইরাসের মূল জানাটা ভীষণ জরুরী। যতদিন পর্যন্ত হোস্টকে সনাক্ত করা সম্ভব না হবে- আফ্রিকার গহীন জঙ্গলে সেই লাখ লাখ বাহকের ভেতর নিশ্চিন্তে সুপ্ত থেকে যাবে এই ভয়াবহ ভাইরাসটি- আর যখন তখন মানুষ প্রজাতি এই বিপদের সম্মুখীন হবে।
ইবোলার পাঁচটি প্রজাতির সন্ধান মিলেছে। এর আরেক স্পেসিস আইভরিকোস্টে বিস্তৃত হচ্ছে। এই ভাইরাসের ভয়াবহতার আরেকটা উদাহরণ আছে। হার্ভার্ড গবেষক Stephen K. Gire এবং তার সঙ্গীরা এই অগাস্টে একটি সমীক্ষা চালান। মধ্য আফ্রিকা ইবোলার বাসস্থান ছিল। তারা দেখেন যে, এই ভাইরাস গত এক দশকে পশ্চিম আফ্রিকায় বসত গেড়েছে। এজন্য তাঁরা ধারণা করছেন, মাইগ্রেশনের জন্য ইবোলা রিজার্ভয়ের হোস্ট বদলাতে সক্ষম। তার মানে হলো, শুধুমাত্র একটি হোস্টের দিকে নজর দিলে চলবে না, তাদের হবু হোস্টের দিকেও বিশেষ নজর রাখতে হবে।
বর্তমানে ইবোলা শুধু প্রাণীর মাধ্যমে না, মানুষের মাধ্যমেও একস্থান থেকে অন্যস্থানে বাহিত হচ্ছে। সুদূর লাইবেরিয়া থেকে Thomas Eric Duncan নামক ভদ্রলোক আমেরিকায় বহন করেছেন এই ভাইরাসটিকে। দুজন স্প্যানিশ মিশনারী প্রীস্টের মাধ্যমে সিয়েরা লিওন থেকে স্পেনে পৌঁছেছে এই ভাইরাস। Patrick Sawyer নামক এক ব্যক্তি লাইবেরিয়া থেকে নাইজেরিয়াতে বহন করেছেন ইবোলাকে। এই ইবোলা-বাহকরা সবাই এখন মৃত। কিন্তু সারা পৃথিবীতে দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে ইবোলা। ওমাহা, আটলান্টা, লন্ডন, প্যারিস, হ্যামবুর্গ, ফ্র্যাঙ্কফুর্ট, অসলো- পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে- স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যাই বেশি।
ইবোলার ছড়িয়ে পড়াতে আমাদের ক্ষতি কোথায়? প্রধান ক্ষতি হল, ভূগোলগত বিস্তারের সাথে সাথে ইবোলার মিউটেশন হচ্ছে। বিভিন্ন পরিবেশের সাথে দ্রুত নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছে এই ভাইরাস। আর সেইসাথে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলছে পুরো বিশ্বকে। ইবোলা এখন পর্যন্ত সার্স বা ফ্লু ভাইরাসের মত বায়ুবাহিত না- কিন্তু অচিরেই নিজেকে সেই গোষ্ঠীর ভেতর ফেলতে পারে ইবোলা। নিজেকে বিবর্তিত করে আরও সূক্ষ্মতর, আরও কঠিনতর শত্রুতে পরিণত করার ক্ষমতা রাখে এই ভাইরাস।
Stephen K. Gire এর পাঁচ সঙ্গী ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন সমীক্ষা চালাতে গিয়ে। তাঁদের সমীক্ষায় ইবোলার ৩৪১ বার মিউটেশনের সন্ধান পেয়েছেন ইতোমধ্যে। যতবেশি ছড়াবে এই ভাইরাস, মিঊটেশনের সংখ্যা তত বেশি বাড়বে। ফলাফলঃ বাহকটি কে সেটা বুঝতেই অনেক বেশি সময় লাগবে- এর ভেতর বাহকের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে যাবে অনেক।
পরবর্তীতে কি হবে? কেউই বুঝতে পারছে না কতটুকু খারাপ অবস্থায় যেতে পারে পশ্চিম আফ্রিকার এই মহামারী। সেপ্টেম্বরের শেষদিকে U.S. Centers for Disease Control and Prevention এর এক রিপোর্টে জানা যায়, আগামী বছরের শুরুতে এই মৃত্যুর সংখ্যা ১.৪ মিলিয়ন হতে পারে, The World Health Organization বলেছে প্রতি সপ্তাহে মৃতের সংখ্যা ১০,০০০ এ দাঁড়াবে। World Bank বলেছে এই মহামারীর কারণে ৩২.৬ বিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে। আফ্রিকার গরীব দেশগুলো কতটুকু সক্ষম এই ভাইরাসের মুখোমুখি দাঁড়ানোর জন্য?
পশ্চিম আফ্রিকায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন- আমরা কেউই নিরাপদ নই। একটা উদাহরণ দেই। ধরুন একজন ডাক্তার লাইবেরিয়ার রাজধানী মনরোভিয়া থেকে রওনা দিলেন। তিনি ইস্ট আফ্রিকার কেনিয়ায় যাচ্ছেন। কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে তিনি থামলেন- শরীর খারাপ লাগছে তার, এয়ারপোর্টের এক ক্যাফেতে বসে তিনি কাশলেন কিছুক্ষণ, তারপর চলে গেলেন। পাঁচ মিনিট পর সেই টেবিলে একজন আমেরিকান বিজনেসম্যান এসে বসলেন। সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন ব্যবসার কাজে, সেখানে তিনদিন থেকে এখন লস অ্যাঞ্জেলেসে নিজ বাসায় ফিরছেন। চোখ চুলকাচ্ছে, টেবিল থেকে হাতটা তুলে তিনি দু'চোখ ঘষলেন। যখন আমেরিকায় নামলেন- কাগজপত্রে তিনি সিঙ্গাপুর থেকে আমেরিকায় ফেরত আসা একজন, যার পশ্চিম আফ্রিকায় যাওয়ার কোন রেকর্ড নেই। স্বাস্থ্য ভালো। স্ক্রিনিং থেকে তাঁকে দ্রুত অব্যাহতি দেয়া হল। তিনি বাসায় ফিরলেন। কেউ জানল না, সেই টেবিলের অতিসূক্ষ্ম কাশির জীবাণু থেকে তিনি চোখের ফ্লুইডের মাধ্যমে এক মহাঘাতককে সাথী করে নিয়ে এসেছেন নিজ পরিজনের মাঝে।
এসব ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি হতে পারে? মহামারী বিস্তার রোধের জন্য যারা ভ্রমণ করছেন তাঁদের সুস্বাস্থ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া ভীষণ জরুরি। শুধুমাত্র ইবোলা নয়, নিতান্তই ঘরোয়া কিসিম থেকে শুরু করে মরণঘাতী ভাইরাসের সংখ্যা কম নয়। বাংলাদেশের নিপা ভাইরাস, উগান্ডার মারবার্গ, পশ্চিম আফ্রিকার ল্যাসা, আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলের সিন নম্বার ভাইরাস, দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার নানাপ্রকার ফ্লু ভাইরাস, এছাড়াও নাম না জানা বা এখন পর্যন্ত অজানা ভাইরাসগুলোকে প্রতিহত করা একটি দৈনন্দিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এরা শক্তিশালী হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আজকে ইবোলা, আগামীকাল আরও ভয়াবহ অন্য কোন ভাইরাস। এক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও সরকারী পর্যায়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি। ইবোলা সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে সবার মাঝেই নিশ্চিত করা জরুরী।
রোগের লক্ষণ, প্রতিকার এবং আমাদের করণীয়
১৯৭৬ সালে উত্তর জায়ারেতে ৩১৮ টি ইবোলা-কেস উদঘাটিত হয়; সেসময় ভাইরাস হিসেবে ইবোলা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়। ইবোলা hemorrhagic জ্বর হিসাবে পরিচিত। জ্বর, মাথাব্যথা , মাংসপেশি আর জয়েন্টে ব্যথা, গলাব্যথা, দূর্বলতা ইত্যাদি উপসর্গ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়। এরপর ডায়রিয়া, বমি,পেট ব্যথা শুরু হতে পারে (CDC এর ভাষ্যমতে)। কিছু কিছু ক্ষেত্রে র্যাশ দেখা দেবে, চোখ লালবর্ণ ধারণ করতে পারে, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হতে পারে, হেঁচকি হতে পারে। ইবোলা ভাইরাসের সাথে সংস্পর্শের পর ২ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত উপসর্গ দেখা নাও দিতে পারে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ৮ থেকে ১০ দিনের মাথায় লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে।
এই রোগের ভ্যাকসিন এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। এই রোগে আক্রান্ত ৯০% মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে (National Institute of Health এর মতে)। যে ১০% সৌভাগ্যবান বেঁচে যান, বোঝা যাবে তাঁরা নিজ শরীরে অ্যান্টি-বডি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এই অ্যান্টি-বডি অন্ততঃ ১০ বছরের জন্য তার শরীরে রোগ প্রতিরোধে সক্ষম ভূমিকা পালন করবে। তবে অন্য প্রজাতির ইবোলার মাধ্যমে তিনিই আবারো অসুস্থ হতে পারেন। সৌভাগ্যবান ১০% এর কেউ কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদী কিছু জটিলতায় ভুগতে পারেন। এর মধ্যে দৃষ্টিশক্তি এবং জয়েন্টের সমস্যা অন্যতম।
মধ্য আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ- গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, গ্যাবন, সুদান, আইভরি কোস্ট, উগান্ডা ও কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, এবং এখন পশ্চিম আফ্রিকার গিনি, সিয়েরা লিওন এবং লাইবেরিয়াতে এই রোগ অতিদ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশনের (WHO) দেয়া নতুন উপাত্ত অনুসারে, ২০১৪ এর ইবোলা আউটব্রেকে ৭৪০০ জন আক্রান্ত হয়েছে, এদের ভেতর ৩৪০০ জন মারা গেছেন।
এখন দেখা যাক, ইবোলা কিভাবে সংক্রমিত হয়? বায়ু, পানি বা খাদ্যের মাধ্যমে ইবোলা ছড়ায় না বলে এখন পর্যন্ত জানা গেছে। মশা মাছি বা অন্যান্য কীটপতঙ্গ এই ভাইরাসের বাহক নয়। শুধুমাত্র স্তন্যপায়ী প্রানীরা ( যেমন মানুষ, বাদুড়, বানরজাতীয় প্রাণীগুলো) এই ভাইরাসে আক্রান্ত এবং বাহক হতে পারে। এই সংক্রমণের কয়েকটি পথ আছে-
১। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের চামড়ার যে কোন কাটাছেঁড়া অথবা চোখ, নাক এবং মুখ- গহবরের সাথে সরাসরি সংস্পর্শ ।
২। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত বা যে কোন ধরণের শারীরিক ফ্লুয়িড ( মূত্র, লালা, ঘাম, সর্দি, মল, বমি, মায়ের বুকের দুধ, বীর্য) এর সংস্পর্শ । আক্রান্ত ব্যক্তি যদি সুস্থও হয়ে উঠেন, তবু তার বীর্যে অন্ততঃ ৩ মাস এই ভাইরাসের অস্তিত্ব থেকে যায়। সুতরাং সুস্থ হওয়ার পর অন্ততঃ ৩ মাস যৌনকার্য থেকে বিরতি নেবার কথা CDC সুপারিশ করেছে। একান্ত প্রয়োজনে কনডম ব্যবহার জরুরী।
৩। ব্যবহৃত ইঞ্জেকশনের সূচ, ব্যবহৃত মেডিকেল ইকুইপমেন্ট, রোগীর জামাকাপড়, বিছানার সংস্পর্শ ।
৪। ভাইরাস-বাহক প্রানীর সংস্পর্শ।
প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন ছাড়া এই রোগকে মোকাবেলা করা যাবে না। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি? সংক্রমণের পথগুলোকে যে কোন ভাবে বন্ধ করে দেয়াটাই আমাদের করণীয়-
১। আক্রান্তকে অন্য সবার থেকে যত দ্রুত সম্ভব আলাদা করে বিচ্ছিন্নভাবে রাখতে হবে (quarantine), এবং নিজের (এবং এর মাধ্যমে অন্যদের) নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সেবা প্রদান করতে হবে।
২। সঠিক স্বাস্থ্যবিধি চর্চা। সাবান এবং কুসুমগরম পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার সঠিক স্বাস্থ্যবিধির প্রথম শর্ত। এলকোহল- বেইসড হ্যান্ড স্যানিটাইযার ব্যবহার করা যেতে পারে। স্টেরিলাইজেশন সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।হাসপাতালে ব্যবহৃত জীবাণুনাশক কেমিকেলস বা ঘরে ব্যবহার করা জীবাণুনাশক ব্লীচ ইবোলাকে মেরে ফেলতে সক্ষম।
৩। আক্রান্তের রক্ত এবং শরীরের যে কোন ফ্লুয়িডের সংস্পর্শ এড়ানো।
৪। আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান সীমিত করা।
৫। ভাইরাস- বাহক প্রাণীগুলোর সংস্পর্শে না যাওয়া।
৬। আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা নেয়া।
৭। ইবোলা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নেয়া।
ইবোলা জীবাণুমুক্ত করতে কি আমরা কি ব্যবহার করতে পারি? কম তাপমাত্রায় (বিশেষ করে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায়) ইবোলা সক্রিয় থাকে বেশি। প্রাণী/মানবদেহের বাইরে রক্ত আর দূষিত পরিবেশেও ইবোলা কয়েক সপ্তাহ বেঁচে থাকে।
১। WHO এর সুপারিশ মতে, ঘরে ব্যবহৃত ৫.২৫% ব্লিচ বা সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইটের ১:১০ পরিমাপের মিশ্রণটি অন্ততঃ ১০ মিনিটের জন্য সিমেন্ট এবং ধাতু সারফেসে রক্ত বা ফ্লুয়িড পরিষ্কারের জন্য ব্যবহার করা। dilutions (1:10-1:100 for ≥10 minutes) of 5.25% household bleach (sodium hypochlorite), and calcium hypochlorite (bleach powder)
২। ১% glutaraldehyde
৩। এলকোহলজাতীয় জীবানুনাশক পণ্য
৪। ৩% অ্যাসিটিক অ্যাসিড
৫। ৩০- ৬০ মিনিট সময়ে ৬০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ইবোলা নিষ্ক্রিয় হবে।
৬। ৫ মিনিট সেদ্ধ অবস্থায় ( boiling condition) জীবাণু মারা যাবে।
৭। UVC রেডিয়েশনে ইবোলা মাঝারিভাবে সেনসিটিভ।
কারা বেশি ঝুঁকিতে আছেন? বলা বাহুল্য, প্রথমতঃ সেবাদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীরা এবং আত্মীয়স্বজন। হেলথকেয়ার সেটিংগুলো ( হাসপাতাল, ক্লিনিক) রোগ ছড়ানোর সবচে সুবিধাজনক এলাকা। সেজন্য সেখানে নিরাপত্তামূলক পোশাক পরা অতি আবশ্যক। মাস্ক, গাউন, গ্লাভস আর চোখের আবরণসহ protective hazmat suit এর সাথে হয়ত ইতোমধ্যে আপনাদের পরিচয় হয়ে গেছে। ডিস্পজেবল নিডলস এবং সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে। যদি সেটি ডিস্পজেবল না হয়, তাহলে সঠিক উপায়ে স্টেরিলাইজড করতে হবে, সেইসাথে ব্যবহৃত মেডিকেল ইকুইপমেন্টগুলোও । স্টেরিলাইজেশন ঠিকমত না হলে এই রোগ ছড়িয়ে পড়বে।
ইবোলার ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি- প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে রোগীকে কি সেবা দেয়া হয়? বর্তমানে রোগীদেরকে মূলতঃ সাপোর্টিভ থেরাপি দেয়া হচ্ছে- শরীরের ফ্লুইডের ব্যালান্স রক্ষা, শরীরের অক্সিজেন লেভেল, ব্লাড প্রেশার এবং যে কোন ইনফেকশানকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। তবে ইবোলা নিয়ে রিসার্চ চলছে। Mapp Biopharmaceutical Inc. একটি পরীক্ষামূলক চিকিৎসা ZMapp ডেভেলপ করেছে, সীমিতপর্যায়ে, যেটি মানবদেহে এখনো এপ্লাই করা হয়নি। ZMapp ভ্যাকসিন নয়, একটি থেরাপিউটিক প্রডাক্ট। আরও দুটো কম্পানি Tekmira এবং Biocryst Pharmaceuticals, ইবোলা নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে The Department of Defense এর ফান্ডিং নিয়ে । BioCryst এই বছরের শেষদিকে একটি অ্যান্টি ভাইরাল ড্রাগের ফেজ ওয়ান টেস্ট করবে বলে আশা করা যাচ্ছে , সেটি ইবোলার ক্ষেত্রেও কার্যকরী হবে বলে ভাবা হচ্ছে। সুতরাং আতংকিত বা হতাশ হবার কিছু নেই,আপাততঃ আমাদের করণীয় এই ভাইরাসটার বিস্তৃতি যে কোন ভাবে ঠেকানো।
সূত্রঃ
http://www.cdc.gov/
http://www.who.int/csr/disease/ebola/en/
Ebola: The Natural and Human History of a Deadly Virus by David Quammen