পর্ব- ১
পর্ব- ২
পর্ব- ৩
পর্ব- ৪
পর্ব- ৫
পর্ব- ৬
পর্ব- ৭
পর্ব- ৮
পর্ব- ৯
পর্ব- ১০
গভীর রাত। রাত ৩টা কি সাড়ে ৩টা বাজে। তিতলি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ভীষন ব্যাস্ত ছিল সে আজকে। সারাদিনের কাজ শেষে এতটাই ক্লান্ত ছিলো মেয়েটা যে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যে ডুবে গেলো.........
হঠাৎ করে সেলফোনটা বেঁজে উঠলো। প্রথমবার বাঁজতে বাঁজতে থেমে গেলো। দ্বিতীয়বার ফোন আসতেই কয়েকবার রিঙ হবার পর ঘুম জড়ানো কন্ঠে তিতলি কলটা রিসিভ করলো।
> হ্যালো
> ভালো আছো?
> হুম কে?
> ঘুমুচ্ছিলে?
> কে বলছেন আপনি?
> স্যরি তোমার ঘুমের ডিস্টার্ব করলাম। তুমি বরং ঘুমাও, পরে কথা হবে......
ওপাশ থেকে লাইন কেঁটে দিলো। তিতলি ফোনটা বালিশের পাশে রাখতে না রাখতেই আবার গভীর ঘুমে ডুবে গেলো.........
তিতলির ঘুম ভাঙলো ভোরবেলায়। প্রায় সাড়ে ৬টায়। হাত, মুখ ধুয়ে চায়ের মগ নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসলো। এসময় চারপাশটা দারুন লাগে, অদ্ভুত এক ভালোলাগা মিশে থাকে চারপাশে, অসাধারন এক স্নিগ্ধতা আশপাশ ঘিরে রাখে........
চায়ের মগ হাতে পায়চারি করতে করতে হঠাৎ গতরাতের কথা মনে হলো। তেমন কিছুই মনে পড়লো না তার, শুধু মনে পড়লো কেউ একজন তাকে গভীর রাতে ফোন করেছিলো।
তিতলি রুমে গিয়ে ফোনটা হাতে নিলো। চার্জ শেষ হয়ে ফোনটা অফ হয়ে গেছে। তিতলি ফোন চার্জে দিয়ে ডাইনিং রুমের দিকে গেলো। রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখলো চুলায় চায়ের পানি ফুটছে। বোঝা যাচ্ছে বাবা ঘুম থেকে উঠেছে আর ফুলির মা চুলায় চায়ের পানি চড়িয়ে ঘর ঝাড়ু দিচ্ছে।
"ফুলির মা টেবিলে নাশতা দাও" জোরে একটা ডাক দিয়েই নিজের রুমে গেলো তিতলি। একটু পরই রেডি হয়ে বের হতে হবে। তিতলি রুমে গিয়ে রেডি হতে থাকলো........
..........................................
লাঞ্চ আওয়ারের পরই মিথুন অফিস থেকে বেরিয়ে গেলো। আজকে অফিসে আর তেমন একটা কাজ নেই।
বের হওয়ার পর বাইরের আবহাওয়াটা বেশ ভালো লাগলো মিথুনের। ভীষনভাবে দমকা হাওয়া বইছে, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বোঝা যাচ্ছে বৃষ্টি নামলে বেশ জোড়েসোড়েই নামবে। মিথুন গাড়ি নিয়ে ধানমন্ডির দিকে রওনা হলো.......
ঝিরঝির বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে। মিথুন এটিএম ব্যুথে ঢুকলো, কিছু ক্যাশ-আউট করা লাগবে।
এটিএম ব্যুথ থেকে বের হয়ে মিথুন তো ভীষন অবাক হয়ে গেলো। ধুমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। একে তো জোড়েসোড়ে বৃষ্টি পড়ছে তার ওপর তুফানের বেগে বাতাস.......!!!
রাস্তায় নেমে কয়েক কদম এগোতেই ভিজে নেয়ে একাকার হয়ে গেলো ছেলেটা। রাস্তার ওপারে চোখ যেতেই মিথুন অবাক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকলো। এইতো সেই মেয়েটা, আবার আজকে এখানে কিভাবে এলো? মেয়েটা পুরো ভিজে জুবুথুবু হয়ে দাড়িয়ে আছে। মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব টেনশনে আছে নাহয় খুব বিরক্ত হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে রিকসা খুঁজছে, খুব তাড়া আছে মনে হয়।
মেয়েটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। আজকে সাদা রঙের একটা জামা পড়েছে, ভেজা চুলগুলো একটু পর পর মুখের ওপর এসে পড়ছে। মেয়েটার ওপর থেকে একটুও চোখ সরাতে পারছে না মিথুন.....
কি করবে কিচ্ছু ভেবে পাচ্ছে না মিথুন। রাস্তা পুরো ফাঁকা। কোনো রিকসা নেই, মানুষ নেই, মাঝেমাঝে দু একটা গাড়ি সাঁইসাঁই করে চলে যাচ্ছে।
মিথুন গাড়ি নিয়ে মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো.......
> এক্সকিউজ মি, আপনি কি রিকসা খুঁজছেন?
মেয়েটা ভ্রু কুঁচকে তাঁকালো। প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করেই মিথুন বুঝতে পারলো কথাটা একেবারেই বোকার মত হয়ে গেছে।
> আপনি জেনে কি করবেন?
> আসলে অনেকক্ষন ধরে দেখছি বৃষ্টিতে ভিজছেন, আপনি চাইলে আমি আপনাকে হেল্প করতে পারি।
> থ্যাংকইউ। বাট আমার কারো হেল্প লাগবে না।
> কি আশ্চর্য! আপনি এমন রেগে রেগে কথা বলছেন কেন? আমি কি রাগ করার মত এমন কিছু বলেছি আপনাকে?
মেয়েটা অন্যদিকে তাঁকিয়ে চুপ করে থাকলো।
মিথুন এখন গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। একটু পর পর গলা খাকাড়ি দিয়ে মেয়েটার দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা করছে।
> আচ্ছা আপনি কোথায় যাবেন জানতে পারি?
> বাসায়।
> ও আচ্ছা, বাসাটা কোথায়?
মেয়েটা আবারও চোখ গরম করে তাঁকালো।
> আচ্ছা ঠিক আছে, বলতে না চাইলে থাক।
> মোহাম্মদপুর [কিছুক্ষন পর মেয়েটা বললো]
> ও আচ্ছা। চলুন না আপনাকে নামিয়ে দেই ওদিকে, আমি আসলে ওদিকেই যাবো।
> ওদিকে যাবেন তো এখানে কি করছেন?
> না এমনি আরকি, আপনি একা একা দাঁড়িয়ে আছেন......
মেয়েটা আবারও চোখ গরম করে তাঁকালো
কিছুক্ষন পর মিথুন বললো,
> দেখুন আপনি চাইলে আমি আপনাকে লিফট দিতে পারি। এভাবে রাস্তায় একটা মেয়ের দাঁড়িয়ে থাকাটা ঠিক না। অনেক আজে-বাজে লোক চলাফেরা করে......
কি ভেবে মেয়েটা মিথুনের সাথে যেতে রাজী হলো.......
ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসেছে তিতলি। হঠাৎ করে কেন যেন তার ভীষন লজ্জা লাগলো, পুরোপুরি ভেজা অবস্থায় একটা অপরিচিত ছেলের পাশে বসে আছে.......
সারাটা রাস্তায় তারা কোনো কথা বললো না। মিথুন তো ভীষন নার্ভাস হয়ে আছে আর ওদিকে তিতলি তো লজ্জায় ডুবে যাচ্ছে........
বাসার গেটের সামনে আসতেই তিতলি যেই নামতে যাবে তখন মিথুন কথা বলে উঠলো,
> আচ্ছা, আপনার নামটাই তো জানা হলো না
> তিতলি
> বাহ্ সুন্দর নাম। আমি মিথুন, একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে আপাতত জব করছি। এইযে আমার কার্ড, ফোন নাম্বার দেয়া আছে। যেকোন দরকারে ফোন করতে পারেন, বান্দা হাজির হয়ে যাবো।
তিতলি হেসে ফেললো....
> গেট থেকেই চলে যাবেন? বাসায় আসুন, এক কাপ চা তো অন্তত খেয়ে যান।
মিথুন মুচকি হেসে বললো,
> আরেকদিন এসে আপনার হাতে বানানো এক কাপ চা খেয়ে যাবো.......
.................................
হঠাৎ রাত সাড়ে বারোটায় ঐ নাম্বারটা থেকে ফোন আসলো।
> হ্যালো
> কেমন আছো তিতলি?
কন্ঠটা অনেকটা পরিচিত মনে হলো তিতলির কাছে...
> কে বলছেন?
> চিনতে পারছো না? আমি বর্ষন
> বর্ষন? এতদিন পর? কোথায় ছিলে? আমার নাম্বার পেলে কোথায়?
> হা হা হা... এতো অস্থির হচ্ছো কেন? সব বলবো, আগে বলো কালকে কি ফ্রি আছো?
> হ্যা আছি।
> তাহলে কালকে আমাদের দেখা হচ্ছে। এখন ঘুমিয়ে পড়ো, বাকি কথা কালকে দেখা হলে বলবো। গুড নাইট....
বর্ষন ফোন রেখে দিলো। তিতলির তো মহা আনন্দ, আনন্দে তো তার লাফাতে ইচ্ছা করছে....!!!
..........................................
ইকবাল সাহেব ঘুমুচ্ছিলেন। হঠাৎ করে তার ঘুম ভেঙে গেলো। তিনি টেবিল হাতড়ে চশমাটা নিয়ে চোখে দিলেন।
> একি মীরা তুমি?
ইকবাল সাহেবের স্ত্রীর ডাকনাম ছিলো মীরা।
> ইকবাল তোমার মেয়ের সামনে বিপদ,ভীষন বিপদ......
> মীরা তুমি কোথায় যাচ্ছো? দাঁড়াও মীরা......
ইকবাল সাহেবের স্ত্রী হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো.............
(চলবে......)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৪:৪৫