সুনীলের কোনো একটা উপন্যাসেই মনে হয় পড়েছিলাম। চরিত্রের নামটাও ভুলে গেছি। ঊপন্যাসের নামটা মনে এসেও আসছে না। ইদানিং আমার খুব ভুলে যাওয়া রোগ হয়েছে। অনেক কিছুই কেমনে করে যেন মস্তিষ্ক থেকে একেবারে মুছে যায়। যাই হোক অন্য প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছি। গল্পের সেই চরিত্র বা নায়ক ইনকাম ট্যাক্স লইয়ার বা একাউন্টেন্ট, বেশ ব্যস্ত জীবন তার। অবিবাহিত এবং লেখক তার জন্য ডেডিক্যাটেড নায়িকার ব্যবস্থাও করেন নি। নায়ক শহর থেকে দূরে একটা দুর্গম গ্রামে ছোট্ট একটু জমিসহ ঘর কেনে। জীবনের হাজারো কোলাহল আর দায়দায়িত্ব থেকে একটু অবসর নেবার জন্য সে মাঝে মাঝে সেখানে যায়।
আমারও মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে এমন অবসর পাবার। একটা ছোট্ট উঠোনসহ টিনের দোচালা ঘর থাকবে। সে ঘরে একটা দরজা আর দুটো জানালা থাকবে। এক জানালার পাশ দিয়ে কল কল করে বয়ে যাবে ময়ূরাক্ষী নদী। সেই জানালার পাশেই থাকবে আমার ছোট্ট চকি। আর সেই ঘরে থাকবে একটা কাঠের চেয়ার, একটা টেবিল, বুক শেলফ ভর্তি বই আর একটা টেলিস্কোপ। টেবিলে থাকবে এলুমিনিয়ামের জগ ভর্তি টিউবওয়েলের ঠান্ডা মিষ্টি পানি, আর বয়াম ভর্তি মুড়ির মোয়া। আমার ঘরে এমনকি আমার আশেপাশে কোথাও কোনো বিদ্যুৎ থাকবে না। ঘরের মেঝে হবে মাটির। কোনো এক ভরা বরষার রাতে আমি জানালা খুলে দিয়ে শুয়ে থাকব। জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাসের সাথে বৃষ্টির হালকা ছাট আসবে। আমি কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে শুয়ে শুনতে থাকবো নদী বয়ে যাবার কল কল শব্দ, টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার ঝম ঝম শব্দ, থেকে থেকে বজ্রপাতের শব্দ। বৃষ্টির বেগ একটু কমে এলেই ব্যাঙ ডাকার প্রবল শব্দে চারদিক মুখরিত হয়ে উঠবে। জানালার একটু সামনেই থাকবে হাসনাহেনা ফুলের গাছ, যে ফুলের গন্ধে নাকি সাপ আসে! ঠান্ডা হালকা বাতাসের সাথে ক্ষনে ক্ষনে ভেসে আসবে সেই ফুলের ঘ্রান। ঘরের এক কোনায় টিম টিম করে জ্বলবে একটা হারিকেন।
আর কল্পনা করতে চাচ্ছি না। না হলে টেবিলে বসেই সকাল হয়ে যাবে। অনেক ভোরে উঠতে হবে। বাচ্চাকে নাস্তা করিয়ে, রেডি করে স্কুলে দিতে হবে, অনেক কাগজপত্র ঠিক করতে হবে। মৃত্যু ছাড়া জীবনে কোনো অবসর নেই! জীবনের কোলাহলে ডুবে যেতে হবে!
শুভ রাত্রি।