যে ঘটনাটা লিখতে যাচ্ছি এমন ঘটনা পত্রিকায় আপনার মত আমিও পড়েছি অনেক বার। তবে এটা একটু ব্যতিক্রম, কেন সেটা লেখা শেষ হবার আগেই আপনি জেনে যাবেন।
আমার বোন ধরা যাক তার নাম শ্রাবনী, পড়ছিল ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ও আমার কাছে থাকত, আমি, আমার বউ আর শ্রাবনী তিনজন। আমি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে বেশ ভাল চাকরী করি, বাবা অবসরে, থাকেন ঢাকার অদুরে নিজের বাড়িতে মা সহ।
বছর তিন আগে অনলাইনে শ্রাবনীর সাথে একটি ছেলের পরিচয় হয়। পরিচয় ঘনিষ্ঠতায় রূপ নেবার পর শ্রাবনী আমাকে জানায় ছেলেটিকে, ধরুন রাশেদকে, সে বিয়ে করতে চায়। ছেলেটি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে আমি জানতে পারি ছেলেটি প্রবাসী, ব্যারিষ্টারী পড়ছে বেশ দীর্ঘ সময় নিয়ে। তার বাবা একজন আঞ্চলিক রাজনৈতিক নেতা, এলাকায় তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তি কম নয়। ছেলেটি যেহেতু তার পাঠ শেষ করেনি তাই সত্যিকার প্রতিষ্ঠিত ছেলে বলতে যা বোঝায় তা এখনো হয়ে ওঠেনি সে, এদিকে শ্রাবনীরও গ্র্যাজুয়েশন হতে দু বছর বাকি। আমার বাবার আপত্তির পেছনের আরেকটা বড় কারন ছিল দু জনের বয়সের ১২ বছরের তফাৎ। শ্রাবনীকে বাবা জানালেন ছেলে ব্যারিষ্টারী পড়া শেষ করে আসলে বিয়ের বিষয়টি বিবেচিত হবে।
শ্রাবনী এবং রাশেদ এই অহেতুক বিলম্বে একেবারেই আগ্রহী না থাকায় নিজেরা বিয়ে করে ফেলে। শ্রাবনীকে রাশেদের সাথে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা আর হয়ে ওঠে না। শ্রাবনীকে রাশেদ রেখে যায় এক আত্মীয়ের বাসায়। এরপর থেকে রাশেদ বদলে যেতে থাকে। নানান তুচ্ছ থেকে তুচ্ছতর কারনে শ্রাবনীর উপর নেমে আসে দুঃব্যবহারের বন্যা। শ্রাবনীকে জানিয়ে দেওয়া হয় তার লেখাপড়ার কথা ভুলে যেতে। মাঝে মাঝে প্রবাস থেকে ফিরে যেটুকু সময় রাশেদ দেশে থেকেছে তখন সম্পর্কের বাঁধন শক্ত হওয়ার বদলে খারাপই হয়েছে শুধু। পরিস্থিতি খারাপ হতে হতে শ্রাবনী একদিন একগুচ্ছ ঘুমের ওষুধ খায়।
আমার মায়ের একান্ত প্রয়াসে সে যাত্রা শ্রাবনী বেঁচে গেলেও রাশেদের সাথে শ্রাবনীর সম্পর্কের অবনতি ঠেকানো যায়নি। এর কিছুদিন পর রাশেদ লম্বা সময়ের জন্য দেশে ফিরে শ্রাবনীর সাথে একটি ফ্ল্যাটে ওঠে। শ্রাবনীকে আমার বা আমার বাবা মায়ের সাথে যোগাযোগের উপর নিষেধ জারী হয়। আর শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। শ্রাবনীকে হুমকি দেওয়া হয় তার বাবা ও ভাইয়ের উপরও হামলা চালানো হবে।
আজকে দুপুরে আমার বোনটা আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল। আমরা অনেকক্ষন কাঁদলাম। ও বললো "ভাইয়া ওরা আমাকে মেরেও ফেলতে পারে। আমি যদি ওকে ছেড়ে আসি ও তোমার একটা ক্ষতি করবে। ও অনেক প্রতিহিংসাপরায়ন”।"
এই লেখাটা আলাদা কারন আমার বোনটা এখনো বেঁচে আছে। কি করবো এখন বলতে পারেন?