বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নতির ফলে মানুষের জীবন আজ অনেক সহজ সাধ্য । এখন ঘরে বসে শুধু মোবাইল, টেলিফোন বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুহূর্তেই এমন অনেক কাজ করে ফেলা সম্ভব যা করতে কিছুদিন আগেও আমাদের কমপক্ষে তিন/চার ঘন্টার হ্যাপা পোহাতে হতো(লাইনে দাড়ানোর কথা না হয় বাদই দিলাম) । এ ছাড়া ই-যোগাযোগের এই যুগে পুরো বিশ্ব এখন আমাদের হাতের মুঠোয় । বিজ্ঞানের অন্যতম আবিষ্কার বিদ্যুতের অবদানের কথা বলাই বাহুল্য । হরেক রকম বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বহু কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে, কমিয়ে দিয়েছে শারীরিক পরিশ্রম, মানুষকে দিয়েছে আরাম করার বাড়তি সময় । কম্পিউটারের ব্যবহার মানুষের জীবনকে অনেকাংশেই ডিজিটাল করে ফেলেছে । এখন হাতে আর কিছু লিখতে হয় না, ছবিও আঁকতে হয় না, এমনকি গায়কের গলার দুর্বলতাও ঢেকে ফেলা যায় ।
বানান মনে রাখার দরকার নেই, স্বয়ংক্রীয়ভাবেই তা সংশোধন হয়ে যাবে । পড়ার বই কিনতে হয় না, আছে গুগল অনুসন্ধান কিংবা উইকিপিডিয়া অথবা বইটার সফ্টকপি !! বানান মনে রাখার দরকার নেই, স্বয়ংক্রীয়ভাবেই তা সংশোধন হয়ে যাবে ! ! !
যাই হোক এতে আমাদের জীবন এখন অনেক আরামদায়ক আর সময়ও অনেক বেচে যাচ্ছে । সমস্যা হল মানুষের চাহিদার কোন শেষ নেই। সে আরাম চায় । বিজ্ঞানীরাও সে চেষ্টাই করে যাচ্ছেন । বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষের জীবনের দৈনন্দিন কাজগুলো যদি সহজে কম সময়ে করা যায়, তবে মানুষ অতিরিক্ত যে সময়টুকু পাবে, সে সময়টুকু উন্নতর বুদ্ধিবৃত্তির অনুশীলনে কাজে লাগাবে।
অপরপক্ষে আমরা সময়টুকু কোন কাজে লাগাচ্ছি ? আমরা অতিরিক্ত সময়টুকুকে হয় মোবাইলে অপ্রয়োজনীয় কথা বলা, নয় ফেইসবুক বা অন্যান্য এ জাতীয় মাধ্যমে ঘন্টার পর ঘন্টা চ্যাট করা, অথবা ক্যামেরা মোবাইল বা ইন্টারনেটের অপব্যবহারে লিপ্ত থাকি। গুটিকয় ব্যতিক্রমী মানুষও অবশ্য আছে । অর্থাৎ বেশীরভাগ মানুসই উদাসীন । আমরা আজকাল এত অলস হয়েছি যে, সাধারণ যোগ-বিয়োগও ক্যালকুলেটরে করি, যারা তা করে না, তাদেরকে 'ওল্ড-ফ্যাশন্ড' বলি । সামান্য পথ যেতেও রিকশা লাগে ! ! !
এটা হল প্রযুক্তির সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষদের চেহারা । আর দেশের আশিভাগেরও বেশী দরিদ্র, কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুরেরা ; যারা আধুনিক সব প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত ; যাদের পরিশ্রমেই সভ্যতা আজ এতদূর এসেছে; তারা অমানুষের মত খেটেই চলেছে।তারা রাতে ৪/৫ ঘন্টার বেশী ঘুমাতে পারেনা । তাদেরই ফলানো ফসল আমরা গ্রহণ করি, আর তারা থাকে অর্ধাহারে ! ! !
যেন মনে হয়, জগৎ সংসার টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব শুধু তাদেরই, আমরা শুধু সব সুবিধা ভোগ করে যাব, বিনিময়ে কিছুই দেওয়ার নেই । এভাবে চললে একসময় মানব জাতির এই শ্রেষ্ঠত্ব আর অটুট থাকবে না । হয়তো ভবিষ্যতে মানুষ রোবট বা এই জাতীয় কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার অধিকারী কোন যন্ত্র-সম্প্রদায়ের গোলাম হয়ে যাবে। এখনও সময় আছে, আমাদের ঘুম থেকে জেগে উঠতে হবে । যার যতটুকু সুযোগ আছে, ততটুকু অবদান রাখতে হবে । নিজের বিবেকের কাছে নিজে সৎ থাকলেই কোন কিছুই আর অসম্ভব নয় ।
বি.দ. : এটা ব্লগে আমার প্রথম লেখা । আপনাদের সাড়া পেলে আরও লিখব ।