২২ বছরের তরুণী ব্ল্যাক ডালিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, তার পুরো শরীরকে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলে রাখে লস-এঞ্জেলস শহরের হলিউডে। প্রচলিত কিংবদন্তী আছে ব্ল্যাক ডালিয়ার উপর অভিশাপ পরেছিল স্বয়ং ডন এনটোনিও ফেলিজের (Don Antonio Feliz), ১৯৪৭ সালে সংগঠিত হওয়া এই নির্মম খুনের পুলিশ কোন কুল কিনারা করতে পারেনি। ব্ল্যাক ডালিয়ার আসল নাম এলিজাবেদ, তবে তিনি ব্ল্যাক ডালিয়া নামে পরিচিত। ১৯৩৬ সালেও এই একই জায়গায় ভয়াবহ আগুন লাগে এবং সেখানে অবস্থিত পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় এবং জনপ্রিয় একটি বিল্ডিং পুরে ধ্বংস হয়ে যায়। তবে ভাগ্য-ভাল বলতে হয় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এই দুটি ঘটনাসহ আরও অনেক প্যারানরমাল ঘটনা সংগঠিত হয়েছে সেই জায়গায়, প্রচলিত কিংবদন্তি মতে এগুলো সবই ডন এনটোনিও এর অভিশাপ।
প্রচলিত লোককথা আছে বর্তমানের হলিউড যেখানে অবস্থিত সেই জায়গাটির মালিক ছিল ডন এনটোনিও। মালদার ব্যক্তি ডন এনটোনিও সাথে প্রতারণা করে তার জায়গাটি লিখে নেয়া হয় ১৮৬০ সালে, ডন এনটোনিও তার মৃত্যুর আগে অভিশাপ দেন যে এই জায়গাটিকে দখল করবে, সেই অভিশপ্ত হবে এবং তার করুণ পরিণতি হবে, তারপর থেকেই সেখানে ঘটে চলেছে একের পর এক ট্রাজেডি। নতুন কোন জনপদে গেলে আমার সেই জনপদকে ঘিরে গড়ে উঠা পৌরাণিক কাহিনী, কিংবদন্তী এবং প্রচলিত মিথ আকর্ষণ করে প্রবলভাবে। আমি চাকচিক্যময় শহরের আড়ালে তার পৌরাণিক কাহিনী এবং মিথ খুঁজার চেষ্টা করি। ইতিহাস বা পাতিহাঁসে আমার আগ্রহ কম, তবে স্কুলে আমার ইতিহাস একটি কারণেই ভাল লাগত, সেটা হল স্যার যখনই ইতিহাস পড়াতেন আমার ঘুম চলে আসত, ইতিহাস ছিল আমার ঘুমের ওষুধ! যাইহোক আজকে আমার ভ্রমণের তৃতীয় দিন, আজকে আমার গন্তব্য রঙ্গিন দুনিয়া খ্যাত আমেরিকার হলিউড শহর লস এঞ্জেলস।
এই রেস্ট এড়িয়াতেই রাতে ঘুমিয়েছিলাম।
গতকাল রাতে এই রেস্ট এড়িয়াতে ঘুমিয়েছি, চারদিকে সুন্দর বাতাস এবং সকালের চকচকের রোদে মনটা ভাল হয়ে গেল। আমার ম্যাপে দেখাচ্ছে লস এঞ্জেলস যেতে প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা লাগবে, তবে আমি যেহেতু ধীরে সুস্থে যাচ্ছি তাই সময় আরও বেশী লাগতে পারে। রাস্তার ধারে কোন টুরিস্ট স্পট পেলে দাঁড়িয়ে যাব, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ভক্ষণ করায় এক ধরনের মজা আছে। লস এঞ্জেলসে আমি আগে কখনই যাইনি, তাই শহরটাকে ঘুরে দেখার সুপ্ত বাসনাতো আছেই বিশেষ করে হলিউডের প্রতি একটি ফেসিনেশন সব সময়ই ছিল! যেহেতু আমার যাবার পথে লস এঞ্জেলসে পরবে তাই এই সুযোগ ঘুরে যাবার, এক ঢিলে দুই পাখি শীকার যাকে বলে, পরে আবার লস-এঞ্জেলসে ঘুরতে চাইলে মাল পানি খরচ বেশী হবে! তাই আজকে লস এঞ্জেলসে গিয়ে এক রাত থেকে কালকে সারাদিন পুরো শহরটাকে ঘুরব বলে মনস্থির করলাম। রওনা দেবার আগে হাতির সমান একশটি ডলার দিয়ে একটি হোটেল বুকিং দিলাম।
এগিয়ে চলছি লস-এঞ্জেলসের দিকে। খোলা প্রান্তর আর সকালে মিঠে রোদ মেখে দ্রুত গতিতে চলছি এগিয়ে। আমার যাত্রার প্রথম এবং দ্বিতীয় দিনে যে বৃষ্টি পেয়েছিলাম আজকে আর তার কোন ছিটেফোটাও নেই! আমি গাড়ির জানালা খুলে দিয়েছি, সকালের মিষ্টি বাতাস আঁচড়ে পরছে শরীরে। আট দশ মাইল এর মত চালানোর পরেই দেখলাম একটি টুরিস্ট স্পট দেখাচ্ছে, নাম ভিস্তা ভিউ পয়েন্ট।ভূমি থেকে কয়েকশত ফুট উপরে এই ভিউ পয়েন্ট, গাড়ি নিয়ে উপরে যাওয়া যায়। আমেরিকায় প্রায় হাইওয়ের পাশে পর্যটকদের জন্য এরকম স্পটের ব্যবস্থা থাকে। আমি ভিস্তা পয়েন্টের উপরে গিয়ে গাড়িটি পার্কিং করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখলাম পুরো দৃশ্য, উপর থেকে পাখির চোখে পুরো জায়টি দেখার এক অসাধারণ ব্যবস্থা, যত দূরে চোখ যায় শুধু পাহাড় আর খোলা প্রান্তর, এখানকার পাহারে তেমন গাছ নেই, কিছুটা ড্রাই ওয়েদার, বাতাসে জলীয় বাস্পর অভাবে হয়ত বড় গাছ হয়না। আমি ছাড়াও আরও কয়েকজনকে দেখতে পেলাম যারা দাঁড়িয়ে পুরো দৃশ্য উপভোগ করছে! আমি কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি এবং কিছু ফটোসেশন করে পুনরায় রওনা দিলাম গন্তব্যে।
ভিস্তা ভিউ পয়েন্ট এর একটি ছবি
কয়েক ঘণ্টা গাড়ি চালানোর পর দেখলাম ক্ষুধায় পেট চো-চো করছে। যাবার পথে একটি ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের সাইন দেখে এক্সিট নিলাম, নাম "দ্যা টেস্ট অব ইন্ডিয়া", ভাবলাম জম্পেশ একটি খানাদানা হবে আজ, নাম টেষ্টি তার খাবার টেষ্টি না হয়ে উপায় আছে! আমি কায়দা করে নান,তন্দুরি চিকেন এবং ম্যাংগো লাচ্ছি অর্ডার করলাম। সময়মত খাবার পরিবেশন করল, তন্দুরি চিকেন দেখেই আর দেরি না করে ধপাস করে একটি জোরে কামুড় বসিয়ে দিলাম মুরগির ঠ্যাং এ, পরক্ষনেই হতাশ হলাম প্রবলভাবে! চিকেন তন্দুরি মনে হল দরদ দিয়ে রান্না করেনি, তবে পরিমাণে অনেক দিয়েছে। খাবার নিয়ে ধরা খেয়ে গেলাম! ২২ ডলারই মনে হল গচ্চা খেলাম! মালপানি খরচ করে খাবার নিয়েছি তাই ডলারের মায়ায় চোখ বন্ধ করে খেয়ে নিলাম। আমি নান আর দু-পিস চিকেন পেটে চালান করে বেরিয়ে পরলাম সেখান থেকে, খাবার খেয়ে যুত পেলাম না, স্বাদের ভিতর ম্যাংগো লাচ্ছিটি অসাধারণ ছিল। এবার সিদ্ধান্ত নিলাম রাস্তায় আর থামাথামি নেই, একবারে চলে যাব লস-এঞ্জেলসে!
বিখ্যাত সিরিয়াল কিলার রিচার্ড হোটেলটিতে উঠেছিল ৮০ এর দশকে। অস্ট্রেলিয়া সিরিয়াল কিলার জ্যাক আনটাওয়েগার ১৯৯১ সালে হোটেলটিতে একটি রুম বুকিং দিয়েছিল! জ্যাক আনটাওয়েগার তিনজন মহিলার ভবলীলা সাং করেছিল। সম্প্রতি ২০১৩ সালে কানাডিয়ান পর্যটক এলিসা লাম হোটেলটিতে উঠেছিল তবে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় হোটেলটিতে, তার দেহ কয়েকদিন পরেছিল হোটেলের ছাদের এক পানির টাংকিতে। এই পর্যন্ত প্রায় ১৬জন আদম এই হোটেলে রহস্যজনক-ভাবে মারা গেছে, লস এঞ্জেলস শহরের এই হোটেলটির নাম হোটেল সেসিল, কিংবদন্তি আছে এটি একটি অভিশপ্ত হোটেল, পুরনো কোন ভাটাকতে হুয়ে আতমা আছে হোটেলটিতে। পাঠকদের বলা প্রয়োজন অনেক আমেরিকান ভাটাকতে হুয়ে আতমা, হাউন্টেট হাউজ এবং অভিশাপে বিশ্বাস করে,অনেক হাউন্টেট বাড়ি আছে আমেরিকায়, তারা বিশ্বাস করে কোন অশরীরী আছে বা শত বছরের পুরনো বাড়ির মালিকের আত্তা হয়ত থাকে সেইসব পরিত্যক্ত বাড়িগুলোতে। তাই আমেরিকান অনেক বেষ্ট সেলার উপন্যাস, মুভি সিরিয়ালও গড়ে উঠেছে এই ধরনের হাউন্টেড হাউজকে ঘিরে। সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে "দ্যা ওয়াচার" সিরিয়ালটি দেখা শেষ করলাম, সিরিয়ালটির গল্প রহস্যময় একটি বাড়িকে ঘিরে গড়ে উঠেছে, সেখানে দেখানো হয় এক দম্পতি তাদের সন্তানসহ এক বাড়ি কিনে, বাড়িতে থাকার পরই থেকেই শুরু হয় অদ্ভুত ঘটনা, শত বছর ধরে কোন এক অশরীরী বাড়িটিকে পাহারা দিচ্ছে এবং তাদের বাড়িটি ছাড়ার জন্য ক্রমাগত চিঠি পাঠায় । বর্তমানে আমি আরেকটি সিরিয়াল দেখছি নেটফ্লিক্সে "দ্যা হান্টিং অব হিল হাউজ", এটাও একটি হাউন্টেট হাউজ নিয়ে নির্মিত কাহিনী। যাইহোক লস-এঞ্জেলসের নামটি নিলেই অবধারিতভাবে হোটেল সেসিলের নামটি এসে যায়। এখানে বলে রাখা ভাল হোটেল সেসিলকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে চিরতরে।
লস এঞ্জেলেস শহরের কোলাহল মুক্ত একটি ছবি।
কোন জনপদকে জানার জন্য সেখানকার ইতিহাস জানার পাশাপাশি মিথ বা প্রচলিত কিংবদন্তি জানা ফরজ বলে মনে হয় আমার কাছে। লস-এঞ্জেলস ইতিহাস সমৃদ্ধ একটি শহর, এই শহরের অধিবাসীদের ইতিহাস সহস্র বছরের, তবে ১৫৪২ সালে স্পেন থেকে আগত জুয়ান (Juan Rodriguez Cabrillo) সর্বপ্রথম ইউরোপিয়ান হিসেবে লস এঞ্জেলসে পা রাখে। পরবর্তীতে ১৮৪৮ সালে এই এলাকা নিয়ে মেক্সিকো এবং আমেরিকার রক্ত ক্ষয়ী যুদ্ধ হয়, যুদ্ধে আমেরিকা জয়ী হয়ে মেক্সিকোর কেলি-ফোর্নিয়া, নেভাডা, উটা-হ, এরিজোনা, নিউ মেক্সিকো এবং টেক্সাসসহ প্রায় দশটি রাজ্য দখল করে নেয়। তবে আমেরিকার দিল নরম, এই জায়গাগুলো মাগনা নেয়নি, এই বিশাল রাজ্যগুলো দখলের বিনিময়ে মেক্সিকোকে ১৫ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিল! যাইহোক সন্ধ্যার আগেই আমি এই ইতিহাস সমৃদ্ধ, হাউন্টেট, ভৌতিক এবং হলিউডের চাকচিক্যময় শহর লস-এঞ্জেলসে এসে পৌঁছলাম, উঠলাম হোটেল "হলিউড ইন সুইট" এ। সারাদিন গাড়ি চালিয়ে এসেছি, ক্লান্ত লাগছে বেশ, তাই খাবার জন্য আর বাইরে বের হলাম না, অনলাইনে একটি রেস্টুরেন্ট থেক বিরয়ানী অর্ডার দিয়ে পেটপুজো করলাম।
ভ্রমণের ৪র্থ দিন। ইতিহাস সমৃদ্ধ রাজ্য লস-এঞ্জেলসে আছি তাই ভাবলাম শহরটাকে একটু ঘুরাঘুরি না করলে গুনা হয়ে যাবে! সকালে ঘুম থেকে উঠলাম, হাতে সময় নেই, প্ল্যান অনুসারে আজকে শহরটাতে ঘুরাঘুরি করে বিকেলেই এই শহরটি ছেড়ে বেরিয়ে যাব বলে ঠিক করলাম। হাতে সময় কম তাই চিন্তা করলাম নিজের গাড়িতে না ঘুরে একটি ট্রুর বাসের সাথে ঘুরব, এতে খুব অল্প সময়েই শহরের মূল পর্যটন স্পটগুলো দেখতে পারব, তাছাড়া ট্রুর বাসের সাথে আরও অনেক পর্যটক এবং ট্রুর গাইডও থাকবে। আমি অনলাইনে "২-আওয়ারস হলিউড" ট্রুর নামের একটি প্যাকেজ অর্ডার দিলাম ৩৫ ডলার দিয়ে, ট্রুর শুরু হবে সকাল এগারটায়। আমি হোটেল থেকে একেবারে চেক আউট করে বেরিয়ে পরলাম, আর টুরিস্ট কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে জেনে নিলাম কোথায় গাড়ি পার্কিং করব। তাদের কথামত একটি পাবলিক পার্কিং স্পেসে ২০ ডলার দিয়ে সারাদিনের জন্য গাড়ি পার্কিং করলাম!
এই রাস্তার আশেপাশের কোন এক পয়েন্ট থেকে বাস ছারে।
আমার কাছে লস-এঞ্জেলসে গাড়ি এবং মানুষ অনেক বেশী মনে হল, পুরো রাস্তায় যানজট, গাড়ি খুব সাবধানে চালাতে হয় যদি কারো শরীরে লাগে তাহলে খবর আছে!, মেডিকেল বিল, মেন্টাল ট্রমা, এক্সিডেন্টের জন্য কাজে যেতে পারবে না অনেকদিন ইত্যাদি বলে হাজার রকমের বিল ধরিয়ে দিবে! সেই হিসেবে বাঙ্গালিদের আমার সাহসী জাতি মনে হয় বিশেষ করে পুরাণ ঢাকায় জনগণ নবাবী কায়দায় বুক ফুলি রাস্তায় হাটে, গাড়িকে সাইট দেয়ার কোন প্রয়োজন মনে করে না, উল্টো গাড়ি মানুষ দেখে একে-বেকে চলে আর যদি গাড়ি শরীরে লেগেই যায়, বাঙ্গালী বড় জোর বুক চেতিয়ে বলে “হারামজাদা গাড়ি দেখে চলতে পারিস না?” ড্রাইভারও পাল্টা হুংকার মেরে পথচারিকে ধরাশায়ী করে, তারপর মিটমাট! সহজ হিসাব, সাক্ষি দুর্বল, মামলা ডিসমিস, যে যার পথ ধর!
এই বাসের ভিতরে আমরা ১৪-১৫ জন পর্যটক।
এই সেই মেয়েটি। আমারই মতই এক হতভাগা সিঙ্গেল, আমরা দুজন একসাথে ঘুরছিলাম!
যথারীতি এগারটায় বাসে উঠলাম, আমি ছাড়াও আরও প্রায় ১৪-১৫ জন পর্যটক এসেছে এই বাসে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। আমাদের ভ্রমণ শুরু হয়েছিল লস-এঞ্জেলসের হলিউডের রাস্তার এক প্রান্ত থেকে। ট্যুর গাইড মহিলাটি ভাল এবং সদা হাস্যোজ্জ্বল, প্রতিটি জায়গায় যাচ্ছিল আর খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা দিচ্ছিল জায়গাগুলোর। আমাদের হলিউড স্টারদের বাসা বাড়ি, হলিউডের বিভিন্ন স্টুডিও, মুভি শুট হয় যেই বাড়িগুলোতে সেগুলোর সামনে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। লস এঞ্জেলস শহরটা অসাধারণ, আবহাওয়া এবং এখানকার শহর বেশ চাকচিক্যময়, সবাই বেশ ব্যস্ত, অনেক পর্যটক প্রতিনিয়ত সাড়া পৃথিবী থেকে এই শহরে আসে ভ্রমণ করতে। গাড়িতে যারা ছিল তাদের বেশির ভাগের সাথেই কেউ না কেউ এসেছে, বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে আর নামিয়ে দিচ্ছে শহরের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য। গাইড মহিলাটি আমাকে একা দেখে জিজ্ঞেস করল "তোমার সাথে আর কেউ কি আছে?" আমি ডানে-বামে মাথা নাড়লাম যার অর্থ না। মহিলাটি হতাশ হল মনে হল, মুখে একটি দুখিভাব ফুটিয়ে তুলে বলল "তোমাকে ছবি তুলে দিবে কে? একা এলে-তো ছবি তুলে দেবার জন্য কাউকে পাওয়া যায় না!" আমি বললাম "হক কথা", মহিলাটির দুখী ভাব দেখে ভাবলাম আমারও মুখে দুখী ভাব করা উচিৎ, এতে তিনি খুশী হবেন। আমিও মুখে কৃত্রিম একটি বিরহী ভাব ধরলাম। মহিলাটি খুশি হয়ে আমাকে ইচ্ছে করে কিছু ছবি তুলে দিলেন! তবে আমাকে বেশীক্ষণ একলা থাকতে হল না, এই গ্রুপটার সাথে আমারই-মত এক হতভাগা আমেরিকান মেয়েকে দেখলাম একা, সে এসেছে আমেরিকান আরেক রাজ্য হাওয়াই থেকে, আমি মেয়েটিকে বললাম চল আমরা দুজন মিলে ঘুরাঘুরি করি, মেয়েটি খুশী হয়ে আমার সাথেই ছিল সারাক্ষণ, দুজন দুজনের ছবি তুলে দিচ্ছিলাম।
এই পয়েন্টে আমাদের ৩০ মিনিটের জন্য বাস থেকে নেমে ঘুরার সময় দিয়েছিল।
এই পথ ধরেই আমাদের ঘুরিয়েছিল।
লস এঞ্জেলসে আসলে আমার ইচ্ছে ছিল হলিউড সাইনটিকে কাছ থেকে দেখব, আমাদের ট্রুর গাইড বলল বাসটি সেখান দিয়েই যাবে তবে একেবারে কাছে যাওয়া যাবে না! বাসটি হলিউড সাইন থেকে অনেক দূরের একটি পয়েন্টে থামাল এবং আমাদের সময় দিল কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করার, জায়গাটি বেশ উঁচু, তাকালে হলিউড সাইন এবং শহরটাকে এক নজরে দেখা যায়। দূর থেকে জগত বিখ্যাত সেই সাইনটি দেখে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটালাম। আমার ট্রুর শেষ হতে হতে প্রায় দুটার-মত বেজে গেল, আমি একটি ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে বেগুন ভর্তা এবং ভাজি দিয়ে জম্পেশ একটি খানাদানা দিলাম, এবং সাথে রাতের জন্য খাবার কিনে নিলাম। প্রায় তিনটার দিকে লস-এঞ্জেলস থেকে বেরিয়ে পড়লাম আমার ফাইনাল ডেসটিনেশন এরিজোনার উদ্দেশ্য।
আরো কিছু ছবিঃ
চলবে ....
নতুন একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলেছি। আমার আমেরিকান লাইফ, অভিজ্ঞতা এবং ভ্রমণ নিয়ে ভিডিও ব্লগও করব।
ইউটিউব চ্যানেলের লিংক সরাসরি।
আগের পর্বগুলো
আমেরিকার অরিগণ থেকে এরিজোনায় রোড ট্রিপ (পর্ব তিন): পৌছে গেলাম ক্যালিফোর্নিয়ার সান-ফ্রানসিসকো
আমেরিকার অরিগণ থেকে এরিজোনায় রোড ট্রিপ (পর্ব দুই): যাত্রা শুরুর দিন
আমেরিকার অরিগণ থেকে এরিজোনায় রোড ট্রিপ (পর্ব এক): ভ্রমনের ইতিকথা